১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দৃষ্টিপাত

সঙ্গীতের শিক্ষক নিয়োগ কার স্বার্থে

-

গত ৮ মে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- ‘প্রাথমিকে নিয়োগ হচ্ছে পাঁচ হাজার সঙ্গীতের শিক্ষক’। ২০২২ সালের ডিজিটাল জনশুমারি অনুসারে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১.০৪ শতাংশ মুসলমান। এত মুসলমানের দেশে উপরিউক্ত সংবাদটি লজ্জার ও বেদনার বটে। প্রাথমিক পর্যায়ে কোমলমতি শিশুদের ইসলামিক শিক্ষার বিপরীতে হারাম গান-বাজনা শিক্ষা দেয়া কিসের আলামত, এ প্রশ্ন ওঠা অবান্তর নয়।
উল্লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘সঙ্গীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে শিশুদের আগ্রহী করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হবে পাঁচ হাজার সহকারী শিক্ষক। ইতোমধ্যে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ের পাঁচ হাজার ১৬৬ জন শিক্ষকের পদ সৃজনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি।’
সূত্রটি আরো জানিয়েছে যে, ‘সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ের পাঁচ হাজার ১৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগে পদ সৃজনের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসনিক উন্নয়ন কমিটির সভার পর অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়ে সচিব কমিটিতে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। সচিব কমিটিতে প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ায় এখন সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।’ কিন্তু ইসলামী শরিয়াহর পরিপন্থী এসব গান-বাজনার প্রশিক্ষণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কিসের আলামত; কার স্বার্থে এ ব্যাপক অপচয়?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে সেসব লোকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন, যারা বেহুদা কাজে (গান-বাজনায়) নিজেদের জীবন কাটিয়ে দেয়। তাদের ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে যে, অর্থহীন ও বেহুদা কর্মকাণ্ড (গান-বাজনা) খরিদ করে, যাতে করে সে (মানুষকে নিতান্ত) অজ্ঞতার ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, সে একে হাসি, বিদ্রƒপ, তামাশা হিসেবেই গ্রহণ করে; তাদের জন্য অপমানকর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। (সূরা লুকমান-৬)
দেড় হাজার বছর আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা জেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে (বুখারি-৫৫৯০)।
কিছু অন্ধ, বধির ও মূক আছে, তারা গায়- ‘কোন কিতাবে লেখা আছে হারাম বাজনা গান’। অথচ গান-বাজনা সমাজে কত মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা বর্ণনা করে এ থেকে বাঁচার চেষ্টা করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর সাহাবিরা আমাদের জন্য সেই উত্তম নমুনা রেখে গেছেন। কুরআন-হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব সব ধরনের অন্যায়-অসুন্দর ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, প্রতিবাদ করা; কমপক্ষে অন্তরে ঘৃণা করা।
নাফি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একবার ইবনু উমার রা: বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফি তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত সরিয়ে বললেন, একসময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরনের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন (আবু দাউদ-৪৯২৪)।

সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর ইসলাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশে বলেন, (হে নবী) তুমি বলো, এ সত্য (দ্বীন) তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে এসেছে। সুতরাং যার ইচ্ছা সে (এর ওপর) ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে (তা) অস্বীকার করুক, আমি এ অস্বীকারকারী জালেমদের জন্য এমন এক আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের পুরোপুরিই পরিবেষ্টন করে রাখবে; যখন তারা (পানির জন্য) ফরিয়াদ করতে থাকবে তখন এমন এক গলিত ধাতুর মতো পানীয় তাদের দেয়া হবে, যা তাদের সমগ্র মুখমণ্ডল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, কী ভীষণ (হবে সে) পানীয়; আর কী নিকৃষ্ট হবে তাদের আশ্রয়ের স্থানটি।
আর যারাই আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে (তাদের কোনো আশঙ্কা নেই), আমি কখনো তাদের বিনিময় বিনষ্ট করি না যারা নেক কাজ করে, এদের জন্য রয়েছে এমন এক স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত হবে, তাদেরকে সেখানে স্বর্ণের কাঁকন দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের পোশাক, (উপরন্তু) তারা সমাসীন হবে (এক) সুসজ্জিত আসনে, কত সুন্দর (তাদের এ) বিনিময়, কত চমৎকার (তাদের) আশ্রয়ের (এ) স্থানটি (সূরা আল-কাহাফ-২৯, ৩০, ৩১)!
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement