১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
স্ম র ণ

ওয়াজেদ আলী খান পন্নী

-

১৮৭১ সালের ১ রমজান ঠিক চাঁদের কান্তি নিয়ে জন্মেছিলেন বলেই তার দাদী ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর নাম দিয়েছিলেন চাঁদ মিয়া। তার পিতা ছিলেন সুপণ্ডিত (অন্ধ অথচ কুরআনের হাফেজ) মাহমুদ আলী খান পন্নী। তিনি গৃহশিক্ষকদের কাছে আরবি, ফার্সি, উর্দু, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ দক্ষতা লাভ করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গভঙ্গের জন্য গঠিত মোহামেডান প্রভিন্সিয়াল ইউনিয়নের সহসভাপতি, লর্ড কার্জনের বিদায়সম্ভাষণ সভার সভাপতি, প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি। করটিয়া হাইস্কুল, সা’দৎ কলেজ প্রতিষ্ঠা তার অবিস্মরণীয় কীর্তি। তিনি যে ওয়াক্ফ দলিল করেন তাতে শিক্ষা ও সংস্কারের জন্য তার বার্ষিক দানের পরিমাণ বর্তমানের প্রায় এক কোটি টাকা। কবি গোলাম মোস্তফা তাকে বলেছেন, ‘বাংলার দ্বিতীয় মুহসীন।’ প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ তাকে জেলখানায় দেখতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই লোহার কপাটটি সামনে না থাকলে আজ পায়ের ধুলা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতাম।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান বলেছিলেন, ‘তার মতো লোক বিরল। তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন।’ সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘তিনি নিজেকে রিক্ত করিয়া তাহার সর্বস্ব জনহিতকর কাজে ব্যয় করিয়াছেন।’ ড. আবদুল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সম্ভবত একমাত্র জমিদার, যার ভাগ্যে জুটেছিল দীর্ঘ দিনের কারাবরণ।’ লন্ডন মিউজিয়ামে চাঁদ মিয়ার তৈলচিত্রের নিচে লেখা আছে, "ঙহব যিড় ফবভরবফ ঃযব ইৎরঃরংয." মওলানা ভাসানী বলেন, ‘জমিদাররা যদি সবাই চাঁদ মিয়ার মতো হতো তবে কখনোই জমিদারবিরোধী আন্দোলন করতাম না।’ তিনি এতটা জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাকে গ্রেফতারের সময় ১৭ ডিসেম্বর ১৯২১ সালে টাঙ্গাইলে প্রায় ১০ হাজার বিক্ষুব্ধ লোক এবং মোমেনশাহী স্টেশনে প্রায় ৩০ হাজার লোক একত্র হয়েছিল। তাকে গ্রেফতারকারী দু’জন পুলিশ চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিল। ১৯৩৬ সালের ২৫ এপ্রিল তার মৃত্যুর পর করটিয়ার মতো এক নিভৃত গ্রামে প্রায় ১০-১২ হাজার লোক নামাজে জানাজায় শামিল হয়েছিল। আমরা সেই গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে ভুলতে বসেছি। আমরা অকৃতজ্ঞ! তাই মহান পুরুষদের শিক্ষা ও সংগ্রামকে ভুলে যাচ্ছি।
- ড. আহসান হাবীব ইমরোজ


আরো সংবাদ



premium cement