১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পাঠ্যক্রমে হিন্দুত্ববাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ

-

একটি ভালো শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যেমন আদর্শ নৈতকতা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক জাতি গঠন করা সম্ভব বিপরীতে শিক্ষাব্যবস্থা ভালো না হলে জাতির ধ্বংস অবধারিত। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে যে নতুন শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে তা জাতির মেরুদণ্ডকে ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ২০১০ সাল থেকে নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা-নীতি-নৈতিকতা মুছে ফেলে মুসলমান সন্তানদের হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা গড়ে তোলার অপচেষ্টা চলছে। নি¤েœ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যবইয়ে হিন্দুত্ববাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রাইমারিতে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং তৃতীয় শ্রেণিতে ‘খলিফা হজরত আবু বকর রা:’ শিরোনামে সংক্ষিপ্ত জীবনী বাদ দেয়া হয়েছে, চতুর্থ শ্রেণিতে ‘হজরত ওমর’ শিরোনামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী আর পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘বিদায় হজ্ব’ নামে নবীজির জীবনী। পঞ্চম শ্রেণিতে আরো বাদ দেয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যা বাদশাহ আলমগীর মহত্ত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিল। বাদ দেয়া হয়েছে ‘শহীদ তিতুমীর’ নামক একটি জীবন চরিত।
এ প্রবন্ধটিতে শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ ছিল এবং তার দেশপ্রেম ফুটে উঠেছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ড. মুহম্মদ শহীদ্ল্লুাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষণীয় ঘটনা বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে মুসলিম দেশ ভ্রমণ কাহিনী- ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’। একই শ্রেণিতে আরো বাদ দেয়া হয়েছে মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটিও। সপ্তম শ্রেণিতে বাদ দেয়া হয়েছে ‘মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত। অষ্টম শ্রেণিতে বাদ দেয়া হয়েছে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি। নবম/দশম শ্রেণিতে সর্বপ্রথম বাদ দেয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি। দেয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আলাওল এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি। এরপর আরো বাদ দেয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি। বাদ দেয়া হয়েছে গোলাম মোস্তাফার লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি। আরো বাদ দেয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতাটিও। উক্ত প্রবন্ধ ও কবিতাগুলোর মাধ্যমে আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী মানুষ তৈরি হতো।

ইসলাম সম্পর্কিত লেখাগুলো শুধু বাদই দেয়া হয়নি এগুলো বাদ দিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে যুক্ত করা হয়েছে ‘বই’ নামে একটা কবিতা যেটা ধর্মীয়গ্রন্থ কোরআন বিরোধী কবিতা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামে একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে; এই গল্পে মুসলিম শিক্ষার্থীকে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ, এখানে শেখানো হচ্ছে ‘হিন্দুত্ববাদ’। সপ্তম শ্রেণিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটা গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালী পূজা ও পাঁঠা বলীর কাহিনী। নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১৪৯ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি মানচিত্র দেয়া হয়েছে সেখানে সন্ত্রাসী ইসরাইলের নাম থাকলেও বাদ দেয়া হয়েছে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের নাম। ৭ম শ্রেণির বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে বহুল আলোচিত ‘শরিফ থেকে শরিফা’ ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামিতার গল্প। ৩য় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে হিন্দুদের মূর্তির ছবি। পরে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বই ফেরত নেয়া হয়। এছাড়া মাদরাসার বইগুলোর প্রচ্ছদে ছেলেমেয়েদের বিতর্কিত ছবি যুক্ত করা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে নাচ, গান ও সঙ্গীত। ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বই এ ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে এমনভাবে তোলে ধরা হয়েছে, যাতে স্বভাবজাত লজ্জা শরম কারো মাঝে থাকে না। ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় একটি ছেলে বন্ধু তার মেয়ে বন্ধুকে স্পর্শ করাকে নিরাপদ স্পর্শ বলা হয়েছে। নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১০ পৃষ্ঠায় ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের কোনো অবদান নেই এবং শুধুমাত্র হিন্দুদের অবদান ছিল বুঝানো হয়েছে। নতুন এ শিক্ষানীতিতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে, যা আগে আবশ্যক ছিল। এগুলো কিসের আলামত, তা জাতিকে অনুধাবন করতে হবে এবং অবিলম্বে এগুলো বাতিল করা একান্ত দরকার বলে জাতি মনে করে।

এই বিষয়গুলো সরাসরি প্রমাণ করে যে, দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জোর চেষ্টা চলছে। যাতে নতুন প্রজন্মের নৈতিক এবং আত্মিকভাবে দুর্বল করে দিয়ে দেশের জনগণকে শোষণ করা যায়। তারা জানে ইসলামিক মূল্যবোধের শিক্ষিত একটি জাতিকে কোনোভাবে দমন করা সম্ভব নয়। তাই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চাপিয়ে দিয়ে আমাদের কোমলমতি শিশুদের ইসলামবিদ্বেষী বানানোর আয়োজন চূড়ান্ত করেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০-১৫ বছর মধ্যে বাংলাদেশে এক হিন্দুত্ববাদী প্রজন্ম গড়ে উঠবে।
বর্তমানে আামাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি ইসলামকে মুছে ফেলার চেষ্টা নিয়ে সুকৌশলে এগোচ্ছে। এখন বলতে গেলে হিন্দুত্ববাদীরাই পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে বপন করছে হিন্দুত্ববাদের বীজ যাতে করে নৈতিক চরিত্র শিক্ষার্থীরা হারিয়ে ফেলে তার আয়োজন করা হয়েছে বলে জনগণ মনে করে।
নতুন এ শিক্ষাব্যবস্থায় সরাসরি কোরআন হাদিস উল্লেখ করে কোন ধর্মীয় শিক্ষা তো স্থান পায়নি, বরং কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধের মাধ্যমে ন্যূনতম যতটুকু ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছিল তাও এই শিক্ষানীতিতে বাদ দেয়া হয়েছে। একইসাথে যুক্ত করা হয়েছে ইসলামবিদ্বেষী লেখকদের বিভিন্ন গল্প ও কবিতা। সাথে যুক্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন প্রবন্ধ ও কবিতা। আজকের লেখায় বর্তমান পাঠ্যকক্রমে হিন্দুত্ববাদের প্রসার ও আদর্শিক তথা ইসলামবিদ্বেষ অন্তর্ভুক্ত করণের সামান্য উদাহরণ উপস্থাপন করা হলো।
এটি এদেশের মুসলিমদের ঈমান ও আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। তাই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাব্যবস্থা বাদ দিতে বাংলাদেশের মুসলিমদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। এখনই সময় সবাই মিলে ধর্মহীন এই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতিকে সরিয়ে ফেলার এবং ইসলাম ও মুসলিম মূল্যবোধ রক্ষা করার। তা না হলে নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা মানবিক গুণাবলি ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement