নারী যখন করপোরেশনের ফাঁদে বন্দী
- ড. মো: কামরুজ্জামান
- ৩০ মার্চ ২০২৪, ০১:০২
গত ৪ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়। লেখাটির শিরোনাম ছিল- ‘শরীফ থেকে শরীফা : নব্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আদি তত্ত্ব’। ওই লেখায় বলেছিলাম, পৃথিবীর সেরা চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্ট এজেন্সির (সিআইএ) মাধ্যমে মুসলিম বিশ্ব এক ধরনের জালে বন্দী হয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবারটির নাম রূপাঞ্জন গোস্বামী রথচাইল্ড। পরিবারটির নাম শুনে সবাই চমকে ওঠেন। কারণ পরিবারটি বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ইহুদি পরিবার। বিশে^র অর্ধেক সম্পদের মালিক তারা। বিশে^র সব অর্থনীতি পরিবারটি পরিচালনা করে থাকে। রথচাইল্ডের মতো আরেকটি শক্তিশালী ফাউন্ডেশন ‘রকফেলার’। এর প্রতিষ্ঠাতা জন ডেভিসন রকফেলার একজন আমেরিকান ইহুদি। তিনি প্রথম আমেরিকান যিনি সর্বপ্রথম এক বিলিয়ন ডলারের মালিক হন। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ফাউন্ডেশন বাহ্যত দাতব্য প্রতিষ্ঠান হলেও মানববিধ্বংসী কাজে নিয়োজিত। সিআইএ, রথচাইল্ড ও রকফেলার ফাউন্ডেশনের মতো অসংখ্য সঙ্ঘ গোটা দুনিয়াকে জালের মতো আটকে রেখেছে। এরা সারা দুনিয়ায় নিয়মের নামে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছে। এ সব সঙ্ঘ মূলত ‘লুসিফারিজম’ মতাদর্শে বিশ^াসী। লুসিফারিজম একটি পথভ্রষ্ট শয়তানি মতাদর্শ।
সিআইএ, রকফেলার ও রথচাইল্ড ফাউন্ডেশনের মতো সঙ্ঘগুলো একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং কার্টেলের আয়ত্তাধীন। এর কর্তাব্যক্তিরা শয়তানের পূজারি। তাদের সবার মতাদর্শ লুসিফারিজম। ব্যাংকিং কার্টেল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেক্সুয়াল লিবারেশন নারীকে পরিবারের প্রতি নিরুৎসাহিত করে। মা, বোন ও স্ত্রীদের পরিবারে ভূমিকা পালনের অযোগ্য করে তোলে। অথচ বিগত শতকেও মা ও স্ত্রীকে একটি পরিবারে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হতো। পরিবারবান্ধব বাংলার কোটি কোটি ঘরে আজো মা সবার মধ্যমণি হিসেবে বিবেচিত। এমনও অনেক পরিবার আছে যেখানে মা-ই পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। এমন বহু পরিবার আছে যেখানে শুধু বাবার কর্তৃত্বে পরিবার চলে না, মায়ের নির্দেশনা প্রাধান্য পায়। মা-ই সেখানে মুখ্য গার্ডিয়ান। মাকে ঘিরে ওইসব পরিবারে ভালোবাসা, মায়া-মমতার বন্ধন গড়ে উঠেছে। বাবার উপস্থিতিতেও সে পরিবারের মা-ই সর্বেসর্বা। বলতে গেলে আমাদের দেশেও প্রতিটি পরিবার মা ছাড়া একেবারে অচল। মা সত্যিই আল্লাহ প্রদত্ত এক বড় নিয়ামত। কিন্তু ব্যাংকিং কার্টেল এ নিয়ামত ধ্বংস করতে চায়। তারা এ মাতৃত্বকে নষ্ট করে তদস্থলে যৌনতাকে সহজ ও স্বাভাবিক করতে চায়। তাদের স্বাধীনচেতা হিসেবে জাগিয়ে তুলে পুরুষের মতো জীবন যাপনে উৎসাহ দেয়। তাদের এ স্বাধিকারের অন্তরালে বর্তমানের যৌন সহজলভ্যতা ব্যাংকিং কার্টেলর মতাদর্শের ফল। এসব মতাদর্শীর তাই বিয়ে করার দরকার হয় না। বিয়ে করলেও একজনের প্রতি সন্তুষ্ট ও বিশ্বস্ত থাকার প্রয়োজন পড়ে না। আধুনিক কিশোরী, তরুণীদের এ ব্যাপারে মগজ ধোলায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা খাবার খাওয়ার মতো সেক্সকেও স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এটি সত্য যে, খাদ্যের মতো সেক্সও প্রয়োজনীয় দৈহিক চাহিদা।
মানুষের দেহজগত বস্তু দিয়ে তৈরি। এ বস্তুসমগ্র অস্থায়ী উপাদানের সমষ্টি। তাই অস্থায়ী উপাদানের আবেদনও অস্থায়ী। বস্তুর তৈরি দেহের চাহিদা চিরস্থায়ী হয় না। খাবার খেলে ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়। তেমনি যৌনতাও একটি দৈহিক চাহিদা। শারীরিক এ চাহিদা সাময়িক। যৌবনের এ উত্তাপ সময়ের সাথে সাথে শীতল হয়। এ উত্তাপ মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। অথচ ব্রেনওয়াশড মেয়েরা এটিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ইন্দ্রিয়পরায়ণ পুরুষরা একজনকে নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারছে না। তারা ইন্টারনেটে হাজার হাজার নগ্ন তরুণীর দেহসৌষ্ঠব উপভোগ করছে। এর ফলে অবাধ শারীরিক সম্পর্কের জন্য নারী সহজলভ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, জীবনে যৌনতা ছাড়াও চমৎকার, আনন্দদায়ক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু করার আছে। ব্যাংকিং কার্টেল বলতে গেলে পুরো পৃথিবীকে কব্জা করে ফেলেছে। ফেমিনিজম বা নারীবাদ আমাদের মা, বোন ও স্ত্রীদের ঘরের বাইরে টেনে নিয়ে করপোরেশনের দাসী বানিয়ে নিয়েছে। যে স্বামী তাকে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখে, স্ত্রী তার কথা শুনতে নারাজ! কিন্তু অফিসের বসের কাছে সে যেন পরিপূর্ণ দাসী! সংসারের দায়িত্ব পালন করলে নারী পরজীবী, পরাধীন, মূর্খ, নির্যাতিত! কিন্তু করপোরেটের গোলামির ভূমিকায় নারী স্মার্ট, আধুনিক, স্বনির্ভর ও স্বাধীন! এদের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। তারা মিডিয়ায় পণ্য হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। পণ্যের বিক্রি বাড়াতে বিজ্ঞাপনে তাদের শরীর দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সমকামিতা (হোমোসেক্সুয়ালিটি) হচ্ছে একটি বর্ধনশীল দুরারোগ্য ব্যাধি। এ ব্যাধি বিপরীত লিঙ্গের সাথে স্থায়ী বন্ধন তৈরিতে পরিপূর্ণ অক্ষম। ফেমিনিস্ট ও সমকামী অ্যাক্টিভিস্টরা একত্র হয়ে সমাজ বিধ্বংসী কাজে যুক্ত। তারা পুরুষত্ব, নারীত্ব, বিয়ে ইত্যাদি সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার করে ফেলতে শুরু করেছে। বিপরীত লিঙ্গের বৈবাহিক মিলনে পারস্পরিক চমৎকার নৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ সেক্স। এ সেক্স দু’জনের মানসিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানসিক সুস্থতা ও মনুষত্ব। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠিত বিয়ের মাধ্যমে সেটি অর্জিত হতে পারে। বিয়ের মধ্য দিয়ে অন্তরঙ্গ দৈহিক আচরণের মাধ্যমে দু’টি বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আবেগময় আধ্যাত্মিক সংযোগ নিশ্চিত করা হয়। ফলে বিয়ের পর তারা পারস্পরিক দায়বোধ থেকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে পারে। বৈবাহিক জীবন নৈকট্য, বিশ্বাস ও সন্তান জন্মদানের মতো নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
সমকামিরা নৈতিক সেক্সকে অগ্রাধিকার দেয় না। শক্তিশালী মিডিয়া সমকামী জীবনের নেতিবাচক দিকগুলো গোপন রেখেছে। এসব এলিট শ্রেণী সমকামিতার ক্ষতিকর তথ্য ও বাস্তবতা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এলিট শ্রেণী চায়, মানুষ পুরো জীবনভরে সেক্স-সম্পর্কিত অস্থিরতায় সময় পার করুক! তারা চায় মানুষ সেক্স অস্থিরতায় ভুগে জীবনের অপব্যয় করুক! তাদের এ আন্তর্জাতিক মিশন মানবতার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে সংগঠিত করেছে। দিনে দিনে তাদের আক্রমণাভিযান তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অথচ আমরা বুঝতে পারছি না যে, আমরা তাদের বিশ^ময় বিস্তৃত অবিনাশী বাণিজ্যের জালে অবরুদ্ধ। মূলত নারীবাদ হচ্ছে সমকামী একটি আন্দোলন। প্রকৃতিগতভাবে মেয়েরা একগামী এবং একান্ত গোপনীয়তা রক্ষাকারিণী। নারীবাদিরা অতি জোরেশোরে প্রচার করে যে, চাকরি ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ ও পরাধীন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, নারীর জীবন পূর্ণতা পায় মাতৃত্বে, স্বামীর ঘরে। একজন স্ত্রী অথবা মা পরিবারের সব সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে স্বামী-সন্তানের সাথে জীবন পার করে দেয়। দুরবস্থায় একে অপরের পাশে দাঁড়ানো প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচায়ক। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের একজন বধূ দুরবস্থার সময় স্বামীর পাশে থাকে। স্বামীর ব্যর্থতার সময় আশ্বাসবাণী শোনায়। এমন জীবনসঙ্গীকে তো মানুষ প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে। অবশ্য স্বামী বাছাইয়ে নারীর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।
নারীবাদ জেন্ডার কনফিউশন তৈরি করে, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে। তারা মানুষকে শারীরিকভাবে উপবাসী করে রাখছে। দৈহিক উপবাসী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। এ জাতীয় সমিতিগুলো চায়, নারী পরিবার ছেড়ে খোলামেলাভাবে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসুক। অতঃপর তারা জীবনঘনিষ্ঠ দক্ষতা, মূল্যবোধ, আত্মমর্যাদা ইত্যাদি অর্জন করুক। তারা চায়, নারীরা এসব যোগ্যতা অর্জন করার পর সে বিয়ে না করে ক্ষমতাবান পুরুষদের মন জয় করুক! তারা স্বেচ্ছাচারী হোক এবং ঘরসংসার না করুক। সংসার করার বিপরীতে নারীরা নিজের যৌনতার ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে সমাজকে কলুষিত করুক। এরা বিশ^ময় এ যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে চলেছে। এটি মানুষের নৈতিক, সামাজিক, শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি ধ্বংস করে ফেলেছে। কোমলমতি মেয়েরা ফাঁদে পড়ে গেছে।
নারীরা আল্লাহপ্রদত্ত চক্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু রকফেলার ও রথচাইল্ডের সহযোগীরা নারীজাতিকে সেটি ভুলিয়ে দিচ্ছে। আধুনিক হলিউড, বলিউড, নেটফ্লিক্স ইত্যাদির প্রতি মানুষ ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে। বর্তমান প্রজন্ম এসব মুভি থেকে জীবনের আদর্শ ও মানদণ্ড গ্রহণ করে! এগুলো নারী-পুরুষকে পশুর পর্যায়ে টেনে এনেছে। পর্নোগ্রাফি লাখ লাখ পরিবার ধ্বংস করছে। পর্নোগ্রাফি তরুণীদের অবচেতন মনে এ ধারণা প্রবেশ করায় যে, তারা শুধু দেহের সৌন্দর্য মেলে ধরলে অসংখ্য পুরুষ তাকে ভালোবাসবে! তখন মেয়েরা নিজেদের খোলামেলা রাখতে চায়। এভাবে একটি সুখী জীবন পাওয়ার স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায় তাদের। মিউজিক ভিডিও, মুভি আর সেক্সযুক্ত ক্লাসগুলো টিনএজ মেয়েদের বিয়ে ও মাতৃত্বের অযোগ্য করে ফেলার জন্য তৈরি হয়।
স্বামীর জন্য যেমন স্ত্রীর প্রেম দরকার, তেমনি স্ত্রীর জন্য স্বামীর প্রেমের পাশাপাশি অভিভাবকত্ব দরকার। আবার সন্তানদের সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য মায়ের ভালোবাসা প্রয়োজন। কমনীয়তা নারীর এক গূঢ় শক্তি। প্রকৃত নারী নিজেকে স্বামীর সহযোগী হতে কুণ্ঠাবোধ করে না। নারী প্রেমময়ী। এ স্বীকৃতি পেলে একজন নারী পরিবারের কাছে জীবন বিলিয়ে দিতে মোটেও দ্বিধা করে না।
একটি তরুণীর সৌন্দর্য তার দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সরলতার বহিঃপ্রকাশ। চরিত্রবান পুরুষের কাছে এ সরলতা অত্যন্ত আকর্ষণীয়, আবেদনময়। ৯০ শতাংশ বিয়েবিচ্ছেদের নেপথ্যের মূল কারণ একটি। আর তা হলো- স্বামীর সাথে ব্রেনওয়াশড মেয়েদের সমঅধিকার নিয়ে তর্ক-বিবাদে জড়িয়ে পড়া। পুরুষ চায় ক্ষমতা আর নারী চায় প্রেম। প্রেমময় নারী স্বামীত্বে বিশ্বাস রেখে নিজেকে তার সহযাত্রী করে। যদি পুরুষ বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সম্পর্ক ভেঙে যায়। তখন পুরুষ ক্ষমতা হারায়।
সামাজিক ক্ষেত্রে বর্তমান বিশৃঙ্খলার জোয়ারে পুরুষরা অনেকটা পৌরুষ হারিয়ে হীনম্মন্য, আত্মমর্যাদাহীন এবং অধঃপতিত হয়ে পড়েছে। আধুনিক শিক্ষিত একজন স্মার্ট নারী করপোরেশনের দাসী হলেও পরিবারের সর্বেসর্বা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামছে। স্বামী বা সন্তানের দায়িত্ব এড়িয়ে বাইরের জগত নিয়ে মেতে থাকছে। ফলে পরিবারের বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের পরিবারবান্ধব সমাজে এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
e-mail: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা