০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`
দৃষ্টিপাত

শ্রম আইন এতই অক্ষম!

-


দৃশ্যত জাঁকজমক পূর্ণ হলেও, একজন শ্রমিকের ন্যূনতম স্বার্থ সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হলে তাকে কিভাবে সক্ষম আইন বলা যায়? এমনি একটি বাস্তব ঘটনা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
রাজধানীর একটি হাসপাতালের ফার্মেসিতে কাজ করতেন একজন ফার্মাসিস্ট, এ প্রতিষ্ঠান কাউকে নিয়োগপত্র বা বিদায়পত্র দেয় না। কিন্তু প্রয়োজনের সময় শ্রম অফিস তা-ই দেখতে চায়। মালিক পক্ষ এটি না দিলে শ্রমিক তা দেখবে, দেখাবে কিভাবে? আর তা দেখাতে না পারলে, মালিক পক্ষের কিছু না হলেও শ্রমিকের কথার সত্যতা, সম্মান, চাকরি, পাওনা সবই শেষ। সবই শূন্য। মালিক পক্ষ অসত্য বললেও তাই ঠিক, তাই কার্যকর। সেটাই হয়েছে তাদের কোনো প্রমাণ লাগে না।
দীর্ঘ ২২ মাস কাজ করার পর ঈদুল আজহা ’২৩ এর ঠিক আগের দিন সহকর্মীদের বলে আসার পরও যেতে দেরি হওয়ায় মালিক পক্ষ মোবাইল ফোনে অকথ্য কথা এবং এ সামান্য কারণে অমানবিকভাবে ‘ধুম্ করে’ তাৎক্ষণিক তাকে ‘চাকরিচ্যুত’ করে। কিন্তু অনেক দিন পাওনা পরিশোধ না করায় (এবং অতীতে অন্যদের পাওনা পরিশোধে তালবাহানা করায়) ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য শ্রম অফিসের বিশেষ ফোন নং- ১৬৩৫৭ এ ফোন করে, যার শনাক্ত নং ২০২৩০৭৫৫৩৭ তাং ২২-৭-২৩।
কিন্তু অতীব দুঃখজনক ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, সম্পূর্ণ সত্য অভিযোগের পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কারণ মালিক পক্ষ ২২ মাসকে মাত্র ‘২ মাস (অস্থায়ী)’ এবং চাকরিচ্যুতিকে ‘না বলে চলে গেছে’ বলে ডাহা অসত্য কথা বলে। তার কাছে নিয়োগপত্র বা বিদায়পত্র নেই, তাই মিথ্যা জয়যুক্ত হলো, এ কেমন নিরীহ শ্রমিকবান্ধব আইন! অথচ এ ছাড়াও অভিযোগ প্রমাণ করার অনেক উপায় ছিল, কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। যেমন, মানব সাক্ষী, সরেজমিন তদন্ত, হিসাবের রেজিস্টার দেখা, গণশুনানি, ফোন রেকর্ড ইত্যাদি। এটাই যদি আইন বা নিয়ম হয়, তাহলে অনেক শ্রমিকই তার সত্য অধিকার লাভ করতে পারবে না।

এখানে কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না, ঈদের মাসে প্রায় লক্ষ টাকা শুধু ফার্মেসির আয় হলেও (আয়কর বিভাগ যাচাই করে দেখতে পারেন) কোনো উৎসব ভাতা ছিল না, টানা ১২ ঘণ্টা কাজে নাস্তা ছিল না। অক্লান্ত পরিশ্রম করে এতদিন কাজ করে আসার পরও এই প্রতিদান আইনের ফাঁক সব মালিকের পক্ষেই চলে যায়, এতে শ্রমিকরা চরম অরক্ষিতই হয়ে যায়, এ কেমন আইন! যে প্রমাণ শ্রমিকের কাছে নেই শুধু সে প্রমাণই দেখাতে বলছে। এ ছাড়া অনেক প্রমাণ থাকলেও তা গ্রহণ করা হয় না। বলা বাহুল্য, এ ঘটনায় যেসব প্রমাণ রয়েছে তা শ্রমিককে কিছু জিজ্ঞাসা করেই প্রমাণ করা যায়। কিন্তু কেন তা করা হয়নি বা আইনে নেই, সেটাই বড় আশ্চর্য। শ্রমিক যেন তার কাজ, পাওনা, সম্মান ইত্যাদির পক্ষে বিচার ফিরে পেতে পারে শ্রম অফিসকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিশেষে বলতে হবে, প্রতিষ্ঠান ছাড়া শ্রমিক কাজ পাবে না, আবার শ্রমিক ছাড়াও প্রতিষ্ঠান চলবে না। কিন্তু নিবেদিত শ্রমিক এবং মালিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মো: আবুল কাশেম
দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement