আমাদের গন্তব্য কোথায়
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ষাটের দশকের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা ড. মাহবুব উল্লাহকে দাওয়াত দিতে গণঅধিকার পরিষদের এক কেন্দ্রীয় নেতা ও দু’জন মহানগর নেতাকে নিয়ে গেলাম তার বাসায়। অসুস্থ স্ত্রীর দেখভালের ফাঁকে আমাদের সাথে বসতেই পরিচয় করানোর জন্য আমাদের একজনের ‘ঈসমাইল বন্ধন’ নাম শুনে বললেন পুরো নাম কী? পুরো নাম শুনেই মন্তব্য করলেন- এটি একটি সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রকল্প সফল হচ্ছে।
তার কথার ইঙ্গিতে বুঝলাম, আহম্মদ ঈসমাইল বন্ধন এখন ঈসমাইল বন্ধন, তরিকুল ইসলাম সবুজ থেকে তরিকুল সবুজ, মোহাম্মদ নুরুন্নবী থেকে ম. নবী ইত্যাদি একটি প্রকল্প। সাংস্কৃতিকভাবে বোধহীন জাতি তার স্বাধীনতা হারানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। যদিও তারা নামে স্বাধীন থাকে কাজের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্বতা থাকে না। এই নিজস্বতাই সার্বভৌমত্ব। আমরা প্রায়ই শুনি, মরদেহ এসেছে। আগে শুনতাম, লাশ এসেছে। নাম সংক্ষিপ্ত করার প্রচলন গণমাধ্যম ও অনুকরণ প্রিয় তথাকথিত প্রগতিবাদী রাজনীতিতে বেশি দেখা যায়।
আমরা এমনও শুনেছি, মা-বাবার দেয়া নামকে গোপন করে একটি নতুন নাম দিয়ে গণমাধ্যমে কাজ করতে নীতিনির্ধারকরা বাধ্য করেছেন তা অধস্তনকে।
আমাদের ঐতিহ্যগতভাবে বাবা-মা আত্মীয়দের মধ্যে কিংবা এলাকার জ্ঞানী-গুণীজনের পরামর্শে মুসলিম রীতিতে আকিকা দিয়ে আবার ধনীরা অনুষ্ঠান করে নাম রাখে। সে ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ও তৎপূর্ব সরকারের আজ্ঞাবহরা চৌধুরী, ভূঁইয়া, পাটোয়ারী ইত্যাদি যোগ করে। আবার আলেমরা এলাকার নাম কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে আজহারী, মদিনায় পড়লে মাদানী, মক্কায় মাক্কী, দেওবন্দে পড়লে কাসেম নানুতুবীর নামে কাসেমী বা দেওবন্দী যোগ করে।
কেউ কেউ আবার নিজ এলাকার বর্তমান বা ঐতিহাসিক নামও যোগ করে যেমন- চট্টগ্রামের এক এলাকর লোক বাবুনগরী, ইসলামাবাদী, শরীয়তপুরের লোক শরীয়তপুরী, নোয়াখালীর লোক সুধারামী, রংপুরী, ফরিদপুরের লোক ফরিদপুরী ইত্যাদি যোগ করে। কেউ কেউ তাদের পীরের ত্বরিকার নামও ধারণ করে যেমন- জৈনপুরী, ভাণ্ডারী, চিশতি ইত্যাদি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পেশাভিত্তিক জাত বা বর্ণ অনুযারী শীল, কর্মকার, দাস, চক্রবর্তী, সুতার, বসু, ইত্যাদি ব্যবহার করে।
নামে আবার বাবা-দাদা, নানার সম্পর্ক পরিচয়ও ঐতিহ্যগত যেমন- সোহরাওয়ার্দী, গান্ধী, শেখ, জিয়া, ইত্যাদি নামের আগে বা পরে ব্যবহার হয়।
প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশে মুসলিমদের নামের ধর্মীয় অংশ ইসলাম, উদ্দীন, রহমান, আলী, উল্লাহ ইত্যাদি বাদ দিতে হবে কেন? সাংস্কৃতিকভাবে বোধহীন করার কোন পর্যায়ে এসে এরূপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়? আমরা ক্রমেই লাশের বদলে মরদেহ জাতীয় শব্দের পরিবর্তনের সাথে নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে জাতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? প্রবীণ শিক্ষক ধরিয়ে দিলেন এটি একটি প্রকল্প। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারীরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?
মোহাম্মদ শামসুদ্দীন
আহ্বায়ক, নাগরিক পরিষদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা