২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচন মোকাবেলা করুন নতুবা সমঝোতার সন্ধান করুন

-

নতুন ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতিকে সরকারের জন্য মাস্টার স্ট্রোক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ভিসানীতি ঘোষণা মহাস্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে আমাদের জনগণের জন্য। আশা করা হচ্ছে, এ ঘোষণায় সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের নিপীড়নের মাত্রা কমবে এবং অধিকতর সভ্য হবে।
নির্বাচনে কারচুপি করাটা ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না; এ কথা সরকারি কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে। উপরন্তু ভোটচোরাদের থামাতে আমরা কেন জনগণের পাশে দাঁড়াব না? সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট কারচুপিতে অংশ নেয়া যেকোনো সত্যিকার রাজনীতিকের জন্য অবমাননাকর।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না পাওয়া এবং নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে না পারাটাও জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কম লজ্জাকর নয়। কারচুপির নির্বাচনের কারণে দেশে অপশাসন ও দুর্নীতি প্রকট হয়েছে। দেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি, সঙ্ঘাত ও বিভক্তি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সরকারের কিছু সদস্যের নির্লজ্জ আচরণ ও জঘন্য কর্মকাণ্ড এমন ধারণা দিয়েছে যে, এ দেশে শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি নেই, যা আমাদের জাতীয় ভাবমর্যাদাকে মলিন করেছে। জনগণকে তাদের পছন্দ মতো সরকার নির্বাচন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং এ ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ সরকার ও জনগণের জন্য অবমাননাকর হয়েছে।
একজন প্রকৃত রাজনীতিককে জানতে হয় যে, তার ক্ষমতার উৎস জনসমর্থন। কিন্তু এ সরকার নির্ভর করছে আমলাদের ওপর, গুপ্ত হত্যা, অপহরণ, ফৌজদারি মামলা দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়ভীতি ও অসহায়ত্ব সৃষ্টির ওপর। সরকার ভাবছে, এসব সত্য অন্যান্য দেশের সরকার অবহিত নয়।

স্বাধীন বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের অবর্তমানে এটা দাবি করা সম্ভব নয় যে, জনগণের আইনের সুরক্ষা রয়েছে। একইভাবে আমরা বলতে পারি না যে, আমাদের সরকার জনগণের স্বার্থ রক্ষার সরকার। সে জন্য জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমেরিকার ভিসানীতি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে, শুধু সরকারি কর্মকর্তারা নন, যে কেউ নির্বাচনী কারচুপির সাথে জড়িত হলে তার ওপর এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ছাড় দেয়া হবে না।
আমরা আশা করি, এই নীতির দ্বারা ভোট চুরির লোভনীয় ব্যবসার ইতি ঘটবে। জনগণ ফিরে পাবে নিজেদের সরকার, যে সরকার তাদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
আমেরিকার এ ভিসানীতি ঘোষণার আগে নির্বাচন কারচুপিতে কোনো ঝুঁকি ছিল না, কেবল লাভ ছিল। এ লাভের চিন্তা থেকে সরকার বেপরোয়া হয়ে শাসনতন্ত্রের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নেতাদের সরকার পরিচালনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা আছে কি না তা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কিছু উচ্চাভিলাষী আমলার খপ্পরে পড়ে এবং আমরা যে সরকার লাভ করি তাকে কর্তৃত্ববাদী আমলাতান্ত্রিক সরকার বলা যায়। সহজ ভাষায় বলা যায়, আমাদের ওপর আমলাতান্ত্রিক স্বৈরাচার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নানাভাবে উপেক্ষিত। আমাদের মতো একটি শিক্ষিত দেশে যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই দলীয় প্রধান হতে পারেন। দলীয় প্রধান হিসেবে সরকার প্রধান হতে পারেন। সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকলে তিনি তো রাজনীতিবিদই নন। যেখানে সরকার পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই; সেখানে গণতন্ত্রের নামে আমলাতান্ত্রিক গণবিরোধী সরকার পাওয়াই তো স্বাভাবিক। তাই জনগণের নিজেদের নির্বাচিত সরকার পাওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।

ভোট চুরির নির্বাচন সহজ হওয়ায় তাদের পক্ষে ক্ষমতা ত্যাগ করা কঠিন, ভীতিকর ও দুশ্চিন্তার বিষয়। ভোট চুরির সরকার হওয়ার পরও দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাওয়ায় সরকারের আশপাশের এমনকি পরিবারের সদস্যদের পক্ষেও প্রচুর অর্থসম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব হয়েছে। তাদের জন্য সরকারের পতন তথা ক্ষমতার পালাবদল বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন এমনভাবে আনা হয়েছে যে, বিরোধী পক্ষ যদি নির্বাচনে বিজয়ীও হয় তবুও নির্বাচন-পরবর্তী তিন মাস বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু কী জন্য? এ সময়টাতে ক্ষমতাসীন সরকারের সুযোগ থাকবে নির্বাচনী ফল বানচাল করা এবং ক্ষমতায় থেকে যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হিসাব-নিকাশ খুব সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্ট যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মচারীরা সরকারের পক্ষে নির্বাচনে ভোট চুরি করবে।
মার্কিন প্রশাসনের নতুন এই ভিসানীতি কোনো দলের পক্ষে বা বিরুদ্ধে নয়। এ নীতি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার অনুকূলে ভোটাধিকার রক্ষার নীতি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যদি দেখা যায়, মন্ত্রী বিশেষ অর্থসম্পদ করেছেন, তা হলে তাকে ধিক্কার জানানো হয়। একই সাথে তিনি মন্ত্রী থাকতে পারেন না। যুক্তরাজ্যে মিথ্যা বলায় একজন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। মন্ত্রী হন আর প্রধানমন্ত্রী হন আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করলেই হবে না, নৈতিক মানও উঁচুতে থাকতে হবে।

জনগণের শাসনব্যবস্থা থেকে বিচ্যুতির কারণে আওয়ামী লীগকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছে এ কথা দলটির ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না।
আমরা আশা করছি, আমেরিকার নতুন ভিসানীতি জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এ ছাড়া পুলিশও তাদের শক্তি প্রয়োগে সংযমী হবে। সরকারের জন্য বিভ্রান্তির ধূম্রজালে থাকা ঠিক হবে না। আগামী নির্বাচন সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠান করা জাতীয় দায়িত্ব। আমেরিকান পলিসি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করেছে। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আমেরিকার সরকার নতুন ভিসানীতি প্রবর্তন করেছে। এটা বলার সুযোগ নেই যে, আমেরিকা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি নেতা গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সরকার পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন তা তো নয়। দলীয় সমর্থন পেয়ে তারা নেতৃত্বের আসনে বসেছেন। নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আওয়ামী লীগের কাছে নতুন নয়। শাসনতন্ত্রে এ সংক্রান্ত ধারা আওয়ামী লীগসহ সব দলের সম্মতিতে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকাতে শাসনতন্ত্রে নতুন পরিবর্তন এনেছে। এখনো সরকার ভোট চুরির ব্যবস্থা সুরক্ষায় অতি উৎসাহী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোট চুরি করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার নি-িদ্র ব্যবস্থা করে রেখেছে।
বিভ্রান্তির ফাঁদে পা না দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে; আমেরিকার ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নতুবা তাদের জানা বিকল্প অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতার পথ অনুসরণ করা।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল