১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষা, জাতীয়করণই হোক মূলনীতি

-

দেশের ৯৭ ভাগ শিক্ষকই এমপিভুক্ত আর ৩ শতাংশ সরকারি। প্রতি বছর ফলাফলে এমপিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারে কাছেও থাকে না সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উচ্চমানের বেতনভাতা পাচ্ছেন। আর এমপিভুক্ত শিক্ষকরা নিম্নমানের জীবনযাপন করছেন। সরকারি শিক্ষকদের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব থেকে নয়, বরং যৌক্তিক দাবি থেকে বলছি শুধু এ কারণেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমতা তথা জাতীয়করণ করা আজ জরুরি দাবি। এ কথাগুলো সবার মুখস্থ যে, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে এক ঘোষণায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ১২ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। ১৯৮০ সালে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করার পর রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর ৫০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়।। শিক্ষকদের রাজপথে দাবির মুখে ১৯৯০ সালে ৫০ শতাংশ বেতনকে ৭০ শতাংশে, ১৯৯৬ সালে ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে, ২০০১ সালে ৯০ শতাংশে এবং ২০০৫ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগে উন্নীত করা হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন। ওই ফলাফল অর্জনে শিক্ষকদের সময় লেগেছিল সংগ্রামময় ২০ বছরের বেশি। অর্থাৎ সব সরকার ই যেন শিক্ষকদের রাস্তায় না নামালে শান্তি খুঁজে পায় না। অথচ শিক্ষকরাই কেবল সবার স্যার। ওরা আজ স্যার শব্দটা নিজেরা ভাগিয়ে নিয়ে শিক্ষকদেরই তাদের দরবারে স্যার স্যার করাতে খুব আনন্দিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর মতো বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ২০১৫ সালে যেমনি চমকজাগানো বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করেন তেমনি তা থেকে আবার অবসর ও কল্যাণ তহবিলের জন্য ৪ শতাংশ হারে কর্তন করে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের হতভম্ব করেন। অস্বীকার করার কোনো কারণ নাই যে শিক্ষকদের জীবন সংগ্রামে শ্রমিকদের মতো কিংবা তার ও কম। এ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট শিক্ষকদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা শিক্ষকদের জন্য বেঁচে থাকার আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু ২০ বছর ধরে লজ্জাজনক ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা সেই মূল স্কেল হারেই অব্যাহত থেকে শিক্ষক লজ্জার মাত্রা বাড়িয়ে দিলো। অথচ সরকারের রুচিহীন নির্লজ্জরা কি জানেনা যে, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে সর্বনিম্ন একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে হলে প্রয়োজন কমপক্ষে ৫০০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা এবং শহরাঞ্চলে তা সর্বনিম্ন ১২০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকা।
বর্তমান সরকারের ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কুপ্ররোচনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতায় সেটা আজ আলোর মুখ দেখেনি। মাদরাসার ক্ষেত্রে অধিদফতরের দু-চারজন ঘৃণিত পরিচালকের কুদৃষ্টি ও আলোচিত বিষয়।

যার ফল হলো এমপিভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার এই নাজুক পরিবেশও দৈন্যদশা। এমপিভুক্ত শিক্ষকদের মানহীন অতি সাধারণ জীবনযাপন দেখে অন্য পেশার থেকে শিক্ষকতা পেশা থেকে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়তই। ফলে দেশের শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক অগ্রগতি হুমকির মুখে পড়ছে। মেধাবীদের অনাগ্রহের রোষানলে পড়ে কোনো শিক্ষানীতি কিংবা নতুন শিক্ষা কারিকুলামই আলোর মুখ দেখছে না। ক্যারিশম্যাটিক লিডার শিক্ষা এবং শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে এক ঘোষণায় ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে ডিগ্রি কলেজ ও ১টি হাইস্কুল জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু একটি মাদরাসাও তিনি জাতীয়করণ করেননি। মাদরাসার প্রতি এটি তার বৈষম্য নীতি কিনা তাও আজ ভাবনার বিষয়।
ঠাণ্ডা মাথার জ্ঞানপাপী কিছু মানুষের কারণে স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮-এর সাথে মাদরাসার জনবল কঠামো ও এমপিও নীতিমালার বেশ কিছু বৈষম্য জেনে বুঝে করা হয়েছে। যেমন- ক. স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে বিএড স্কেল বাদেই সহকারী শিক্ষকরা চাকরি জীবনে দু’টি উচ্চতর গ্রেড পাবেন। কিন্তু মাদরাসার সংশোধিত ২৩ নভেম্বর ২০২০ জনবল কাঠামোতে এমপিও নীতিমালায় এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেয়ায় হয়নি।

খ. স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক পদ নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হলেও মাদরাসায় তা রাখা হয়নি।
গ. স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির কারণে কোনো শিক্ষকের বেতন কমে গেলে কিংবা গ্রেড না মিললে পরবর্তী উচ্চ গ্রেডে বেতন প্রদানের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হলে ও মাদরাসার নীতিমালায় এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া নেই।
ঘ. স্কুল-কলেজের নীতিমালায় ৫০ শতাংশ হারে প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একজন বেশি হলে পরবর্তী পূর্ণ সংখ্যা বিবেচনা করে পদোন্নতির স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার নীতিমালার ক্ষেত্রে তা অস্পষ্ট এবং এক্ষেত্রে কোনো ব্যাখ্যাও নেই।
ঙ. স্কুল-কলেজের নীতিমালায় চাকরিকাল ১৬ বছর পূর্ণ হলে সকল প্রভাষককে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেয়া কার্যকর হয়েছে; কিন্তু মাদরাসার নীতিমালায় ১৬ বছরপূর্তিতে প্রভাষকদের পদোন্নতির এ সুযোগ রাখাই হয়নি।
চ. স্কুল-কলেজের নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হলে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদটি পরিবর্তন হয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে পরিবর্তন হবে বলা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার নীতিমালায় সমমানের ভিত্তিতে আলিম মাদরাসা ফাজিল মাদরাসায় উন্নীত হলে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ সহকারী অধ্যাপক পদে পরিবর্তন হবে এমন ব্যাখ্যাই দেয়া হয়নি।

ছ. স্কুল-কলেজের নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার নীতিমালায় আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকদের আবেদনের সুযোগ রাখা ই হয়নি। অন্য দিকে এই নীতিমালায় প্রভাষক থেকেও নিম্ন গ্রেডের যেমন ইবতেদায়ি প্রধান, দাখিল মাদরাসার সহ-সুপার ও সুপারকে উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সুযোগ রেখে প্রভাষকদের বঞ্চিত করে শিক্ষার ইতিহাসে একটি নির্লজ্জ অধ্যায় তৈরি করা হয়েছে।
জ. মাদরাসার প্রশ্নবিদ্ধ এ নীতিমালায় কামিল/মাস্টার্স সমমান হওয়া সত্ত্বেও মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত ও চালুকৃত মাদরাসা থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাসকারীরা কিংবা জেনারেল (নন অ্যারাবিক) শিক্ষকদেরকে আবেদনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) নং অনুচ্ছেদ বিরোধী। এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার বৈষম্যহীন দূরদর্শী শিক্ষানীতিকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে।
এমপিভুক্ত শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে অনেকেই ব্যর্থ মনে করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা যেখানে ডিগ্রি পাস সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা এইচএসসি এটি হাস্যকর দুর্বল শিক্ষা পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।
এমতাবস্থায় স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের ছয়টি সংগঠন জোট ‘বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের’ ব্যানারে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমরণ অনশন আন্দোলন বেগবান হচ্ছে। অন্য দিকে মাদরাসাতে বিএমজিটিএ ছাড়া কাউকেই শিক্ষা জাতীয়করণ বাস্তবায়নে ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। চলমান প্রেস ক্লাবের আমরণ অনশন আন্দোলনে অদ্যাবধি

পর্যন্ত ৬৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী চুপচাপ। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, আসন্ন ঈদুল ফিতরে শতভাগ উৎসবভাতা প্রদান, সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া, বদলিসহ নানাবিধ সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ২৮ মার্চ ২০২৩ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের (BMGTA হারুন অর রশিদ ও শান্ত ইসলামসহ ১০টি শিক্ষক সংগঠন) ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে যেন শিক্ষকরা শতভাগ উৎসব ভাতা পান সে ব্যাপারে জোরালো দাবি জানানো হয়। এ ছাড়াও আসন্ন বাজেটে শিক্ষায় ২০% বরাদ্দ এর দাবি জানানো হয়। ওই সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের এর সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু স্যার। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: হারুন অর রশিদ, মহাসচিব মো: শান্ত ইসলাম স্যারসহ ফেডারেশনের ১০ কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বর্তমানে এমপিভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও উৎসব ভাতা বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে প্রায় ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। এটাকে ১৫ হাজার কোটি টাকায় নিতে পারলে জাতীয়করণ অনায়াসে সম্ভব। জাতীয়করণ বিরোধী জ্ঞানপাপীদের হয়ত প্রশ্ন বাকি টাকার উৎস কোথা থেকে হবে? তাদের জন্য ব্যানবেইসের তথ্য থেকে বলছি, ২০২১ সালে দেশে মাদরাসা ছিল ৯ হাজার ২৯১টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি। বাকিগুলো বেসরকারি মাদরাসা। দেশের মাদরাসাগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৫২ জন। ২০২০ সালে মাদরাসায় শিক্ষার্থী ছিল ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ জন। আর মোট মাদরাসা ছিল ৯ হাজার ৩০৫টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। এই তথ্য বলছে, মাদরাসা কমলেও বেড়েছে শিক্ষার্থী।

ব্যানবেইসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজারের বেশি।
বর্তমানে সারা দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। শিক্ষা গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে বেতন, সেশন ফি ও অন্যান্য টাকা আদায় হয় তার সাথে অতিরিক্ত কিছু অর্থ সরকার বরাদ্দ দিলেই অনায়াসে একযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব। সারা দেশে ৩৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ শিক্ষক রয়েছেন।
দেশের অনেক অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে প্রচুর আয় রয়েছে। জাতীয়করণ করা হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার বিপুল অর্থ জমা পড়বে। সাথে সাথে কমিটির পেছনে খরচ হওয়া বাড়তি টাকা (বোঝা) কমিয়ে এনে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে, সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের বেতন সমন্বয়ের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে জাতীয়করণের সূচনা করা যেতে পারে। প্রেস ক্লাবে শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি অবশ্যই যৌক্তিক
জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা মিলিয়ে মোটের ওপর আরো ৫০ ভাগ বাড়বে। ফলে বেতন খাতে প্রায় বর্তমান এক হাজার কোটি টাকার খরচ বেড়ে গিয়ে তা দেড় হাজার কোটি টাকা হবে। এর সাথে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের মাসিক পেনশন এবং এককালীন অবসর ভাতা বাবদ আরো কিছু খরচ বাড়বে। এই ব্যয়ভার সমাধানে এক কোটি ৬২ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যদি যৌক্তিক পরিমাণ বেতন ও ভর্তি ফি আদায় করা যায় তাহলে সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান থাকবে না তা খোদ শিক্ষামন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেন।

জাতীয়করণের জন্য যখন দেশের ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী একটি শ্রেণী জাতীয়করণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, কিছু পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলকারীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ভাগবাটোয়ারাকারীরা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা, মাদরাসা অধিদফতরের কিছু পরিচালক ও নিয়োগ বাণিজ্যকারীদের অনেকেই জাতীয়করণের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে এবং সরকারকে ভুল বুঝাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী বেতন ১২ টাকা, নবম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত ১৮ টাকা এবং একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ২৫ টাকা। গড় বেতন ১৫ টাকা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০ টাকা করলে। নবম থেকে দশম পর্যন্ত ৭৫ টাকা করলে এবং একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১০০ টাকা ধরলে গড়ে তা শিক্ষার্থী প্রতি বেতন দাঁড়ায় মাসে ৭৫ টাকা; যা বাস্তব সম্মত যৌক্তিক দাবি।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ, ৬৩ হাজার ৭২৪ জন। তাদের সবার কাছ থেকে যদি গড়ে ৭৫ টাকা করে বেতন আদায় করা হয় তাহলে মাসে ১২২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে যোগ হবে। এর সাথে যোগ হবে ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পত্তি থেকে বার্ষিক আয়। বর্তমানে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ৪০২ কোটি ৪৯ লাখ ৩০০ টাকা রিজার্ভ রয়েছে, মাদরাসাতে ও কাছাকাছি, যা জাতীয়করণ করা হলে তা সরকারের কোষাগারে যাবে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ কিংবা মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরে কমপক্ষে যথাক্রমে ৫০ কোটি টাকা আয় করে নিজস্ব সম্পত্তি থেকে। এটাও পাবে সরকার।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বেতন দেয় সরকার। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো আয় পায় না সরকার। সে আয় নানাভাবে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় কিছু পরিচালনা পরিষদের লোকজন। অথচ বরাদ্দ পায় না শিক্ষকেরা।
তাই পরিশেষে বলব আমরা এদেশের এমপিভুক্ত শিক্ষকরা সিএনজিচালক, সাধারণ শ্রমিক কিংবা সরকারি পিয়নের সমতুল্য ও বেতন ভাতা পায় না। এটা তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় জুলুম। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই সমস্যার সমাধান না হলে হয়ত শ্রমিকদের মতো শিক্ষকদের ও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। এটি বাংলাদেশের শিক্ষক, সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মোটেও সুখকর হবে না নিঃসন্দেহে।
ইমেইল alamferoz4525@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে!

সকল