১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাদী বনাম ইসলামী অর্থব্যবস্থা

-

বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাবলি প্রায় একই রকম। সীমাহীন অভাব পূরণের উদ্দেশ্যেই সীমিত সম্পদের নিয়োগ-বিন্যাসই হলো অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ; অর্থাৎ সম্পদে স্বল্পতা ও অভাবের অসীমতা থেকে অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলোর উদ্ভব হয়। অর্থনীতিবিদ পি এ স্যামুয়েলশনের মতে, অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা তিনটি-
১. কী ও কতটুকু উৎপাদন করা হবে।
২. কী উপায়ে উৎপাদন করা হবে।
৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে।
প্রতিটি দেশের সম্পদের পরিমাণে তারতম্য রয়েছে। সম্পদের এই তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক দেশ তাদের অর্থব্যবস্থা পছন্দ করে থাকে। বর্তমানে চারটি অর্থব্যবস্থা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে- ১. ধনতন্ত্র; ২. সমাজতন্ত্র; ৩. মিশ্র অর্থব্যবস্থা ও ৪. ইসলামী অর্থব্যবস্থা।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতিগুলোর মধ্যে আংশিক মিল দেখা যায়। যার ফলে অর্থনীতির প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠকরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন এবং উভয়ের কনসেপ্টগুলো একাকার করে ফেলেন। তাই, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও ইসলামী অর্থব্যবস্থার স্বরূপ সন্ধান ও নির্মোহ পর্যালোচনা জরুরি।

মনে রাখতে হবে, পুঁজিবাদ নিছক একটি অর্থব্যবস্থা নয়; বরং একটি জীবনদর্শন ও জীবনব্যবস্থা। পুঁজিবাদ অর্থব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানার অবাধ অধিকার। ব্যক্তি সব প্রকার উৎপাদন উপকরণ, যন্ত্রপাতি ইচ্ছামতো ব্যবহারের সুযোগ লাভ করে। সে আইনের মধ্যে থেকে ইচ্ছামতো যেকোনো পন্থায় অর্থোপার্জন করতে পারে। আবার যেকোনো পথে নিজ ইচ্ছামতো ব্যবহার ও ব্যয় করতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করার অবকাশ রাখে না। এখানে পুঁজিবাদ ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করে নিয়ে মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানে তাদের কোনো গলতি নেই। তাদের গলতি হচ্ছে তারা ব্যক্তিমালিকানা ও মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে সামগ্রিক কল্যাণের দিকে লক্ষ রাখেনি। তারা অর্থোপার্জন ও অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ কোনো সীমা নির্ধারণ না করে জুলুম, শোষণ ও অপচয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
পুঁজিবাদের দ্বিতীয় মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে জোগান ও চাহিদার স্বয়ংক্রিয় বিধি। এই মূলনীতিতে বলা হয়েছে- বাজারব্যবস্থাকে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় বা কোনো গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। এটিকে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ যদি এটিকে কোনো গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে উৎপাদনের স্বাভাবিক গতিশীলতা ব্যাহত হবে এবং মেধা ও শ্রমের ব্যাপক অপচয় ঘটবে।
তাদের এই মূলনীতিটি আপন স্থানে ঠিক থাকলেও এতে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে এবং কোনো শর্তাদি রাখা হয়নি। যার কারণে এতে সমূহ সম্পদ গুটিকতক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এই দু’টি মূলনীতিই মূলত পুঁজিবাদের ভিত্তি। বাকি মূলনীতিগুলো এ দু’টি থেকে উদ্ভূত।
পুঁজিবাদের তৃতীয় মূলনীতি হলো- অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার ফলে পণ্যের উৎপাদন গতিশীল হয়, উৎপাদনে স্বতঃস্ফূর্ততা আসে ও মুনাফা অর্জন বেশি হয় সত্য, তবে একজন উদ্যোক্তা অন্যজনকে পরাস্ত করার জন্য যে জঘন্য ও অমানবিক পন্থা অবলম্বন করে তা বর্ণনাতীত। শর্তহীন অবাধ প্রতিযোগিতায় অল্প পুঁজির উদ্যোক্তারা পুঁজিপতিদের মোকাবেলায় টিকে থাকতে পারে না। যার ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে এবং অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য তারা অসাধু উপায় অবলম্বন করে। যেমন- পণ্যে ভেজাল দেয়া, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যা কথা বলে পণ্য বিক্রয় করা। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ে জনজীবনে।

পুঁজিবাদের চতুর্থ মূলনীতি হচ্ছে- মালিক ও শ্রমিকের অধিকারে মৌলিক পার্থক্যকরণ। একদল এতে নিজেদের একক ব্যবস্থাপনায় পণ্য উৎপাদন করে এবং উৎপাদন-উপকরণ সরবরাহ করে। এতে পুরো লাভ ও মুনাফা তারা নিজেদের পকেটে ভর্তি করে এবং লোকসানও তারা একাই বহন করে। আরেকদল নামমাত্র মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে। উৎপাদনের লোকসান তারা বহন করে না। এ প্রক্রিয়ায় মালিকের হাতে পুরো মুনাফা পুঞ্জীভূত হয় এবং শ্রমিক তার ন্যায্য হক থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য হয় এবং মালিক-শ্রমিকের মধ্যে বিশাল মেরুকরণ তৈরি হয়।
পুঁজিবাদের পঞ্চম ভিত্তি হচ্ছে- রাষ্ট্র বা সরকার জনগণের অর্থনৈতিক লেনদেন, আয় ও উৎপাদনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না; বরং ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাদের কথা হলো, যদি রাষ্ট্র ব্যক্তির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে ব্যক্তির উৎপাদনস্পৃহা হ্রাস পাবে এবং উৎপাদনের গতিশীলতা বিনষ্ট হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলকালীন এই মূল নীতিটি বাস্তবানুগ হলেও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় এটি গলার কাঁটা হয়ে ধরা দেবে। কারণ পুঁজিবাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো অধিক মুনাফা অর্জন। যদি ব্যবসায়ীদের অসাধু কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ না থাকে তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের মোহে পড়ে সমন্বিতভাবে বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা বিনষ্ট করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে। যা দেশে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে।
পুঁজিবাদের অন্যতম একটি ভিত্তি হলো সুদ, জুয়া ও ধোঁকাবাজির কারবারি। এ প্রক্রিয়ায় তারা অবাধ ও স্বাধীন। কাউকে বিনাসুদে ‘এক পয়সা’ ধার দেয়া পুঁজিবাদে চরম বোকামি; বরং এর উপযুক্ত বিনিময় অবশ্যই আদায় করে নিতে হবে। এর হার ও পরিশোধের মেয়াদ পূর্বনির্ধারিত থাকবে। পুঁজিবাদে সুদবিহীন লেনদেন একবারেই অসম্ভব।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির উল্লিখিত মূল নীতিগুলো একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা মূল লক্ষ্যই হলো অধিক মুনাফ অর্জন। এটি সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করতে ব্যর্থ। এটি প্রতিষ্ঠার পর জনমনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করলেও প্রথম অধ্যায় অতিক্রান্ত হওয়ার পর এর ধ্বংসকারিতা সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি জনগণকে একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক দিকর্নিদেশনা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। যে সব অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে এর জন্ম হয়েছিল তার সিকি ভাগও এটি পূরণ করতে পারেনি; বরং পুরো সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জন্ম হয় সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা।
অন্য দিকে ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতিগুলোর সাথে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার মূলনীতির আংশিক মিল দেখা যায়। এ কারণেই সমাজতন্ত্রের ধারকরা বর্তমান ইসলামী অর্থব্যবস্থাকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার আপডেট ভার্সন বলে অবহিত করেন এবং উভয় অর্থব্যবস্থার পরিণাম একই হবে বলে থাকেন। অথচ উভয় অর্থব্যবস্থার সাফল্য, যুগোপযোগিতা ও পরিণামের মধ্যে বিশাল ফারাক স্পষ্ট।

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একটি জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রতিটি বিষয় নিয়ে ইসলাম আলোচনা করেছে। মানবজীবনের প্রতিটি সমস্যা সমাধানে ইসলাম দিয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। আল্লাহ সব কিছুর একচ্ছত্র মালিক ও অধিপতি। আল্লাহ বলেন- ‘তুমি কি জানো না, যে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের আধিপত্য একমাত্র আল্লাহর।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১০৭) বান্দাকে তিনি সম্পদের আমানতদার বানিয়েছেন এবং প্রয়োজনমতো যথোপযুক্ত খাতে ব্যয় করার এবং তা বৈধ প্রক্রিয়ায় আয় করার স্বাধীনতা দিয়েছেন। তবে, তিনি বান্দাকে একচ্ছত্র মালিকানা দেননি যে, সে যেভাবে ইচ্ছে ব্যয় করবে এবং যেভাবে ইচ্ছে আয় করবে।
ব্যক্তিমালিকানা মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। যে বস্তুকে মানুষ নিজের মনে করবে সে বস্তু উৎপাদনে মানুষ আগ্রহ পায় এবং তা সংরক্ষণে যতবান হয়। তার জন্য হাজারো কষ্ট স্বীকার করতে সে কুণ্ঠাবোধ করে না। অন্য দিকে, যে বস্তুতে ব্যক্তির মালিকানা থাকে না, সে বস্তুর প্রতি সে যতশীল হয় না এবং তার জন্য যৎসামান্য শ্রম দিতে সে আলস্য বোধ করে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। তাই ইসলাম উৎপাদনে মানুষের শ্রম ও মেধাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগাতে ব্যক্তির মালিকানাকে স্বীকার করে নিয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘পুরুষরা যা উপার্জন করবে তা তাদের জন্য। মহিলারা যা উপার্জন করবে তা তাদের জন্য।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৩২) তবে ইসলাম ব্যক্তিমালিকানার অবাধ স্বাধীনতা দেয়নি। ব্যক্তিমালিকানায় যেন সম্পদ গুটিকতকের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে এবং ব্যক্তির সঞ্চয় যেন সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার ওপর প্রভাব না ফেলে তাই ইসলাম উপার্জনের ক্ষেত্রকে ও ব্যয়ের খাত হালাল-হারামের বিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছে। যাতে জুলুম ও অবৈধ পন্থায় সম্পদ কুক্ষিগত হয় না পড়ে।

ইসলামী অর্থব্যবস্থা চাহিদা ও জোগানের স্বয়ংক্রিয় বিধানটিকে স্বীকার করে নিয়েছে। অর্থব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কিংবা কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণকে ইসলাম জুলুম মনে করে। কারণ এতে ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের বিষয় না থাকায় ব্যক্তির মেধা ও শ্রম সে পর্যায়ে কাজ করে না, ব্যক্তিস্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকলে যে পর্যায়ে কাজ করে। আনাস রা: থেকে বর্ণিত- ‘লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বেঁধে দিন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ মূল্য নির্ধারণকারী এবং তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। আমি আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হতে চাই যে, লোকেরা যেন দাবি করতে না পারে যে, আমি তাদের জানমালের ওপর হস্তক্ষেপ করেছি।’ (সহিহ, ইবনে মাজাহ-২২০০) বর্ণিত হাদিস থেকে জোগান ও চাহিদাবিধির সুস্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়। তবে সব কিছুকে পুঁজিপতিদের হাতে তাদের স্বাধীন ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দেয়া যায় না। কারণ অবাধ স্বাধীনতার দিয়েই মূলত পুঁজিবাদের জন্ম হয় এবং সব সম্পদ গুটিকতকের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। ফলে সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব পড়ে। যদি তাদেরকে স্বাধীনভাবে উৎপাদন ও পণ্য বাজারজাত করার অধিকার দেয়া না হয় তাহলে উৎপাদনের গতিশীলতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা বিনিষ্ট হবে এবং মেধা ও শ্রমের ব্যাপক অপচয় ঘটবে।
তবে, তাদের অবাধ স্বাধীনতা যেন সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে ও বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে না পারে সে জন্য ইসলাম তাদের কর্মকাণ্ডকে কিছু শর্ত ও বিধির আওতাধীন করে দিয়েছে। যেমন- ধারণার ওপর অস্পষ্ট ক্রয়-বিক্রয়, পণ্যবিহীন বেচাবিক্রি, সুদি লেনদেন ইত্যাদি হারাম হওয়া।
মুনাফা অর্জনে পুঁজিপতিদের সব লেনদেন এসব প্রক্রিয়ার ওপরই নির্ভরশীল। ইসলাম উৎপাদনের গতিশীলতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা বজায় রাখতে ব্যক্তির মালিকানা এবং জোগান ও চাহিদার স্বয়ংক্রিয় বিধি স্বীকার করে নিলেও ব্যক্তিগত মালিকানা যেন অর্থনৈতিক আবর্তনে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে সুনির্ধারিত শর্তাবলির আওতাধীন করে রেখেছে। এভাবে ইসলাম মানবজীবনের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা আবর্তন করেছে।

তা ছাড়া সম্পদ যেন পুঁজিপতিদের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে সে জন্য ইসলাম ধনীদের ওপর কিছু আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্পণ করেছে। যেমন- জাকাত, ফিতরা, কাফফারা, দম, মিরাস ইত্যাদি। এ সব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ গরিব, মিসকিন, অভাবী বা ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হয় এবং সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
এর পরও যদি কোনো ব্যক্তির কাছে কিছু সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়ে তাহলে ইসলাম তার ওপর কিছু নৈতিক দায়িত্ব আরোপ করেছে। ইসলাম তাকে নফল, দান, সদকা ও কর্জে হাসানার প্রতি বিশেষভাকে উৎসাহিত করেছে। মানুষের বিপদাপদ ও জরুরি অবস্থায় পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ জন্য তার জন্য বিশেষ পুরস্কারও ঘোষণা করেছে।
বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সব অর্থব্যবস্থার মোটামুটি মৌলিক ভিত্তি দু’টি- ১. ব্যক্তিমালিকানার অধিকার ও ২. জোগান ও চাহিদার স্বয়ংক্রিয় বিধি। সব অর্থব্যবস্থাই মৌলিকভাবে এ দু’টি মূল নীতি নিয়ে আলোচনা করেছে। এ দু’টি থেকেই পর্যায়ক্রমে আরো বহু শাখাগত মূল নীতির উদ্ভব হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতির পর্যালোচনায় শুধু মৌলিক মূল নীতিদ্বয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো বহু শাখাগত মূল নীতি রয়েছে। শাস্ত্রীয় অর্থনীতির আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণার স্বার্থে আরো বহু শাখাগত মূল নীতির উদ্ভব হতে পারে। তবে সবগুলোই দিন শেষে উপরিউক্ত দুই মৌলিক মূল নীতিকে সাব্যস্ত করবে এবং এগুলোর দিকেই ফিরবে।
লেখক: শিক্ষার্থী


আরো সংবাদ



premium cement

সকল