২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাকাত ব্যবস্থা ও তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

-

জাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যা ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনন্য প্রতিষ্ঠান। জাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, অন্য দিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার। জাকাত যেমন সম্পদ পবিত্র করে তেমনি বিত্তশালীদেরকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য মোচন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা এবং সমাজে শান্তি আনা যায়। জাকাতব্যবস্থা অতীতের সব নবী-রাসূল সা:-এর উম্মতের ওপর ফরজ হিসেবে পালনীয় ছিল। সম্পদের পরিমাণ ও ব্যয়ের খাত অবশ্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছিল। তবে মুসলমানদের ওপর, ধনীদের সম্পদ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে প্রতি বছর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে এবং সেই সম্পদে তার পূর্ণাঙ্গ মালিকানা রয়েছে; সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর ঋণমুক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। জাকাত প্রদানের খাত হিসেবে আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেই সব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উসুলের কাজে নিয়োজিত ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। আর দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটি আল্লাহর বিধান। অল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৬০)। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া অপরিহার্য; ফলে মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করা যায় না। তবে মাদরাসায় এতিম, অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রদের ভরণপোষণের জন্য জাকাত দেয়া যাবে। সমাজের দারিদ্র্যকে ঐশী নিয়মে সমূলে দূরীকরণই জাকাতের কাজ। জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো যাকে জাকাত দেবে, তার মৌলিক অভাব পূরণ করে দিতে চেষ্টা করবে। তাকে যেন আর কারো কাছে হাত বাড়াতে না হয়।

জাকাত আদায় করার পদ্ধতি
জাকাত আদায় হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া অপরিহার্য। সাময়িক অভাব পূরণের জন্য জাকাত নয়; বরং এ জন্য ইসলাম সদকা, ফিতরাসহ অন্যান্য দানের বিধান রেখেছে। অথচ শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে জাকাত আদায়ের একটি ধারা প্রচলিত আছে বাংলাদেশের ধনাঢ্য শ্রেণীর মধ্যে। সাধারণত এলাকার শিল্পপতি ও বিশিষ্টজনরাই রমজানের শেষ ভাগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি দেয়ার ঘোষণা দেন। সকাল থেকে মানুষ লাইনে অপেক্ষার পর শাড়ি বা লুঙ্গি পায়। কেউ আবার খালি হাতেও ফেরে। জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি নিতে এসে পদপিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও দেখা যায়। রমজান মাসে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের সামনে ‘এখানে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি পাওয়া যায়’ মর্মে নোটিশ ঝোলাতে দেখা যায়; যার অর্থ এই শাড়ি-লুঙ্গিগুলো সাধারণ মানের চেয়েও নিন্মমানের।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগদ টাকা দিয়ে জাকাত আদায় করা উত্তম, যেন জাকাতগ্রহীতা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। গ্রহীতার প্রয়োজন বিবেচনা না করে ঢালাওভাবে শাড়ি-কাপড় ইত্যাদি দিলে দেখা যায়, এক গরিব একাধিক কাপড় পায়, অথচ তার চাল-ডাল বা অন্য কিছুর প্রয়োজন ছিল। তখন সে তার কাপড়টি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে যার অর্থ দাঁড়ায়, গরিব ব্যক্তি পুরো টাকাটা পেলো না। একইভাবে জাকাত আদায়ের আগে ব্যাপক প্রচারণা, জাকাত দেয়ার দৃশ্য ধারণ করে গণমাধ্যমে প্রচার করা এবং সাধারণ মানের চেয়ে নিন্মমানের কাপড় দেয়া জাকাতের মহিমাকে ক্ষুণ্ন করে। ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রচার এবং প্রদর্শন নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। আর সাধারণ মানের চেয়ে নিন্মমানের কাপড় দেয়া মানুষের প্রতি অসম্মানের শামিল। অথচ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সম্মানিত করেছেন। ধনী-গরিব সবারই মানুষ হিসেবে এই সম্মান প্রাপ্য।

সুফল পেতে প্রয়োজন জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
সাধারণত শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে জাকাত আদায় করলে দরিদ্র আজীবন দরিদ্র থাকে; এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতা আসে না। ফলে জাকাতের মূলমন্ত্র দরিদ্র ব্যক্তিকে সচ্ছল করা অধরাই থেকে যায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ জাকাত দেয়ার সামর্থ্য রাখে এবং তাদের থেকে বছরে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা জাকাত আদায় করা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে তার খুব সামান্য অংশই আদায় করা হয়।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, উদ্যোগ ও বাধ্যবাধকতা না থাকায় জাকাত দেয়া ফরজ এমন বহুসংখ্যক মানুষ জাকাত দিচ্ছে না। অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় করব্যবস্থা জাকাতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় জাকাত সাধারণ মানুষের ওপর বোঝায় পরিণত হচ্ছে। একইভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংগৃহীত জাকাতের অর্থের পরিমাণ ও তা ব্যয়ের খাত সম্পর্কেও মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থাশীল হতে পারছে না। অথচ সঠিক ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে ৮০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারত। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেত। গবেষকদের দাবি, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনায় জাকাতের অর্থ বণ্টন করা হলে মাত্র ১০ বছরে দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। এমনই একটি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এখানে আলোচনা করা হলো।

সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত দেয়ার ব্যবস্থা খুবই কম। সরকারি উদ্যোগে জাকাত ব্যবস্থাপনার জন্য নামেমাত্র একটি ব্যবস্থা থাকলেও তা তেমন কার্যকর নয়। এ ছাড়া জাকাত ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, বারাকা ফাউন্ডেশনসহ যে দু-চারটি বেসরকারি উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থা করে থাকে, সিজেডএম তার মধ্যে অন্যতম। সিজেডএম ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি দরিদ্রবান্ধব সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার অন্যতম কাজ হলো জাকাতের তাৎপর্য সবার কাছে তুলে ধরা এবং জাকাত তহবিল সংগ্রহ করে তা বঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনে বিতরণ করা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হলেও দেশব্যাপী এর কার্যক্রম রয়েছে। প্রতিষ্ঠা থেকে অদ্যাবধি প্রায় ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটি জাকাত তহবিল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে প্রায় ১২ লাখ সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে জাকাতের মাধ্যমে ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করার উপায় হিসেবে দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে বড় বড়, আয়বর্ধক ও জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি ‘জীবিকা’; বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘জিনিয়াস’ বৃত্তি কর্মসূচি; জরুরি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি চালু; সুস্থ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি, শিশুদের জন্য শিক্ষা ও পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি; দরিদ্র ও বেকার যুবকদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি ‘নৈপুণ্য বিকাশ’ চালু; সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা; রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদান; হাওরের দরিদ্র জেলেদের মধ্যে নৌকা ও জাল বিতরণ; করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করা এবং সর্বোপরি দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে কিডনি ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্টের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জাকাতের গুরুত্ব প্রচার করে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত প্রদানের উৎসাহ দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে, চলতি বছরের ১১ ও ১২ মার্চ সিজেডএম জাকাত মেলার আয়োজন করেছে। দু’দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে দেশের সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা, নারী উদ্যোক্তা ও দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের আলোচকরা বলেন, ব্যক্তি ও করপোরেট অফিসগুলো নিজস্ব উদ্যোগে জাকাত দেয়ায় দরিদ্র ব্যক্তি সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও জাকাতের দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের কাক্সিক্ষত সুফলও আসছে না। সেমিনারে আলোচকরা জাকাত ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়, প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেন। এভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি জাকাত মেলার আয়োজন করে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে জাকাত ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করে আসছে। এর ফলে আরো অনেক উদ্যোগ এগিয়ে আসছে।

জাতিসঙ্ঘ জাকাত তহবিল ও শরণার্থীদের সহযোগিতা
বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। জাকাত ইসলামী অর্থব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে যাতে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। জাকাত এখন ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যতালিকা স্থান পেয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, সঙ্ঘাত ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শরণার্থী ও আশ্রয়হীন হওয়া মানুষের সহায়তার জন্য ‘জাতিসঙ্ঘ জাকাত তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। জাতিসঙ্ঘের এ উদ্যোগ মুসলমানদের মানবিক ও দাতব্য কার্যক্রমকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ তহবিল সম্পূর্ণ ইসলামী শরিয়াহ ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের ফতোয়া অনুযায়ী পরিচালিত।
অনুমান করা হয়, সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর জাকাত হিসাবে ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে থাকে। যদি প্রত্যেক সচ্ছল মুসলমান সঠিকভাবে তার জাকাত আদায় করেন তাহলে এই অর্থের পরিমাণ ৩৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, সারা বিশ্বের উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ওআইসিভুক্ত দেশগুলোতে। সব মিলিয়ে বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮০ মিলিয়নেরও বেশি। করোনা মহামারীর সময়ে তাদেরকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাকাত তহবিলে অনুদান বেড়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইউএনএইচসিআর। এই সংগৃহীত জাকাতের বড় অংশই এসেছে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
জাতিসঙ্ঘের এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে তারা ২১ লাখ শরণার্থীকে জাকাত তহবিলের মাধ্যমে সহায়তা করেছে। ইউএনএইচসিআর এ কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে জাকাত ও সদকা হিসাবে ৬১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। এই অর্থের এক-তৃতীয়াংশই ব্যয় করা হয়েছে যেসব দেশে জাকাতের অর্থ বিতরণ করা হয় সেখানে। এ ছাড়াও জাকাত তহবিলের অর্থ দিয়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে উদ্বাস্তু হওয়া প্রায় ৪০ লাখ তুরস্কে আশ্রিত মানুষের জন্য, ইয়েমেন, ইরাকে মানবেতর জীবনযাপন করা শরণার্থীদের জন্য এবং বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্যসামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করে। করোনা মহামারীতে কর্মহীন ও আর্থিক সঙ্কটে পড়া ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকেও এই তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।

জাকাত ফান্ডে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ দিন দিন বাড়লেও ইউএনএইচসিআর সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, এই অর্থের চাহিদা দিনে দিনে আরো বেশি বাড়ছে। রমজান মাস চলছে; এই মাসে মুসলিম শরণার্থীরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রোজা রাখতে বাধ্য হচ্ছে। সংস্থাটি বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার নির্বিশেষে সব দাতার প্রতিই আরো বেশি জাকাত সহযোগিতা দেয়ার মাধ্যমে বর্তমান বিশ্ব সঙ্কটের সময়ে শরণার্থীদের দুরবস্থার প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। সহজভাবে জাকাতের হিসাবের জন্য ‘গিভজাকাত’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে ইউএনএইচসিআর। দাতারা এই অ্যাপের মাধ্যমে জাকাত দিয়ে সেটি কোথায় কিভাবে ব্যয় হয় তাও জানতে পারবেন। এ ছাড়া এককালীন অনুদান ও মাসিক সদকাও দেয়া যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। পাশাপাশি সংস্থাটির জাকাত তহবিল সংক্রান্ত বিভিন্ন ফতোয়াও যাচাই করা যাবে।
জাকাতের অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণ করার ক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আর্থিক সহায়তা দেয়ার মতো বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছে। এর প্রতিটি পদক্ষেপেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ও পাওয়ার যোগ্য পরিবারগুলোকেই বাছাই করা হয়। এদের মধ্যে নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলতে হয়, জাকাত মূলত সরকারি উদ্যোগে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করাই উদ্দেশ্য। অথচ তথ্য বলছে, এখনো খুব কম মুসলমানই জাকাত দেয়; যারা দেয় তারাও সঠিকভাবে না দিয়ে শাড়ি-লুঙ্গির মাধ্যমে জাকাত দিয়ে থাকে। এতে জাকাত গ্রহীতার সাময়িক উপকার হলেও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ খুবই কম। আশার কথা, ধীরে ধীরে জাকাত ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশেও সিজেডএমের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাকাতের প্রকৃত দাবি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের ইউএনএইচসিআর প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগও প্রশংসার দাবিদার। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য মূলত জাকাত সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের সাময়িক সমস্যার সমাধান করা; এর মাধ্যমেও ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করার সুযোগ কম। তারপরও তাদের উদ্যোগ জাকাত ব্যবস্থার এক ধরনের স্বীকৃতি, যা অনৈসলামিক ভাবধারায় পরিচালিত বিশ্বব্যবস্থায় ইসলামের একটি সফলতা; আলহামদুলিল্লøাহ।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
ইমেইল : mizan12bd@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত

সকল