২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্মরণ

মোহাম্মদ মোস্তফা

-

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা একজন আদর্শ সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। জন্ম ফেনী জেলাস্থ সোনাগাজী উপজেলার পশ্চিম ছাড়াইতকান্দি গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫১ সালে। পিতার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনিই একমাত্র পুত্রসন্তান। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল ফাজিলপুরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন এ বরেণ্য শিক্ষাবিদ। শহীদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন সোনাগাজী মাদরাসা প্রাইমারি স্কুল থেকে। ভর্তি হন সোনাগাজী ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এ স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ থেকে ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ফেনী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে পাস করেন ফেনী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএ ইন এডুকেশন (শিক্ষায় স্নাতক) বিষয়ে পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে প্রথম পর্ব সমাপ্ত করেন। এ গুণীজন শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহে তিনি সোনাগাজীর কিছু শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রাম সমাজের সহযোগিতায় ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আল-হেলাল একাডেমি সোনাগাজী’। এটি জেলায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম কিন্ডারগার্টেন। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে শাহাদাতের আগ পর্যন্ত শাহীন একাডেমির অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০৩ সালের শেষের দিকে তিনি শাহীন একাডেমিকে কারিগরি ও কলেজ শাখায় উন্নীত করেন। প্রতিষ্ঠান গড়ার এ বরেণ্য কারিগর এরপর একে একে প্রতিষ্ঠা করেন সোনাগাজীর জামেয়াতুল উলুম মাদরাসা (বর্তমানে এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসা) এবং মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠা করেন সোনাগাজীর প্রাণকেন্দ্রে ‘সোনাগাজী খাদিজাতুল কুবরা দাখিল মাদরাসা।’
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা ছিলেন সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক জীবনের অধিকারী। তার প্রাইমারি স্কুলের গৃহ শিক্ষক মরহুম রহমত উল্লাহ স্যারের মাধ্যমে ইসলামী ছাত্র সংগঠনের দাওয়াত পান। হাইস্কুল জীবনে তার শিক্ষক এ বি এম শামছুদ্দিন বাশারের ছোঁয়ায় এবং ছাত্রশিবিরের তত্ত্বাবধানে ১৯৭৮ সালে সাথী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৮০ সালে এ সংগঠনের কর্মী হন। ১৯৮২ সালে সোনাগাজী থানা জামায়াতের নাজেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে জামায়াতে ইসলামীর রুকন হন। একই বছর তিনি ফেনী মহকুমা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা ঘোষণার পর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২০ বছর তিনি ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারির দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি ফেনী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে স্বৈরাচার হঠাও বিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। মোহাম্মদ মোস্তফা সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার বীরত্ব ও সাহসিকতা, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, সমাজের চাহিদার আলোকে ত্বরিত কাজ, কঠোর পরিশ্রমপ্রিয়তা তাকে একজন আদর্শ সমাজসেবকে পরিণত করেছে। সোনাগাজীতে তিনি ‘পাঞ্জেরী সংঘ’ ও ‘সোনাগাজী সমাজ কল্যাণ পরিষদ’ নামে দু’টি সংস্থা গঠন করেন।
মোহাম্মদ মোস্তফা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনি শিক্ষার প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসার কারণে তাকে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ফেনী আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসার’ গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনার দিন মূলত ফালাহিয়া কামিল মাদরাসার ভবন নির্মাণের কাজে ইট সংগ্রহ করতে কমিটির অন্য সদস্যসহ ফাজিলপুর গিয়েছিলেন এবং আসার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে দ্বীনদরদি এ ব্যক্তিত্ব। এই প্রিয় মর্দে মুজাহিদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ তায়ালা তাকে যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।
মো: মুজাহিদুল ইসলাম


আরো সংবাদ



premium cement