০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১৫ জিলকদ ১৪৪৪
`

আরাভ খান ও গুপ্ত শক্তিমানেরা

-

ষাট কেজি ওজনের বাজপাখির লোগো দেখে নয়, আমার চিন্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল, এই অজ্ঞাতনামা যুবকের গহনার দোকান উদ্বোধনে সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটের সুপার স্টার কেন যোগ দিয়েছিলেন? দুবাইয়ের একটি মার্কেটে প্রায় অজ্ঞাত এক যুবক আরাভ খানের সোনার দোকান উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গোটা দেশের মিডিয়ায় ও নাগরিক সমাজের কর্ণগুহা ও চোখের রেটিনায় তুলকালাম সংবাদ পরিবেশন করে আলোচনা এখন কেন্দ্রীভূত।
এসব নিউজ ও সচিত্র প্রতিবেদনের পেছনের অংশে কী আছে আমরা জানি না। পুলিশের বরাতে আমরা জানলাম যে ওই যুবকটি খুনি। তিনি, পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের এক অফিসারকে খুন করে পালিয়েছেন। আবার আরেক খবরে জানলাম, সেই খুনের মামলার বিচারে আসামির জেল হয়েছে। কিন্তু তিনি জেলে না গিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন অন্য একজনকে, নাম তার আবু ইউসুফ, ভরণপোষণের ওয়াদা দিয়ে। ৬ মাস ওয়াদা মোতাবেক টাকা দেবার পর প্রক্সি হাজতি আবু ইউসুফ জেলের পুলিশকে সত্য জানিয়ে দিয়েছেন এবং তারাও আবু ইউসুফের বয়ান বিশ্বাস করে তাকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি এখন প্রক্সি থেকে মুক্ত হয়ে মুক্তজীবনযাপন করছেন।
এক আরাভ খানের দোকান চালুর নিউজ থেকে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়া জগতের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, এসব সংবাদের পেছনে রয়ে গেছে কৃষ্ণসাগরের মতো দখলদারিত্বের কালো ইতিহাস ও নির্মম কাহিনী।
আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে অগাইরা অগাইরা অগাইরা... পুলিশ হত্যার আসামি। প্রক্সি আসামি ঠিক করে জেলে ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। পশ্চিমবঙ্গের একটি এলাকায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে নামধাম পাল্টিয়ে একজন ইন্ডিয়ান যুবক হিসেবে দরকারি সরকারি কাগজপত্র তৈরি করে দুবাইতে চলে যান। দুবাইতে তিনি কত টাকার অধিকারী যে প্রকাশ্যে সোনার দোকান দিতে পারেন? সেই দোকান উদ্বোধনের জন্য সাকিবের মতো সেলিব্রেটি যোগ দিতে পারেন এবং পুলিশের ভাষ্যে জানা গেল তাকে আরাভের আসল পরিচয় ও খুনের মামলার আসামি ও পলাতক মানুষ হিসেবে জানানোর পরও কোন আকর্ষণে সাকিব সেই পুলিশি সতর্কতার তোয়াক্কা না করে দুবাই গেলেন? তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ২০১৯ সাল থেকে আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম খ্যাত যুবক মাত্র তিন বছরে সোনার খনির মালিক হলেন কেমন করে, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। সেই সোনার খনিটি কি বাংলাদেশেরই কোনো সোনা পাচারকারী বা মাদক সম্রাটের বা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুটে নেয়া অর্থে গড়ে উঠেছে? যারা মানিলন্ডারিং করছেন স্বাধীনতার পর থেকেই, বহু কষ্টেই তা করছেন, তাদেরই কেউবা তাদেরই একটি সিন্ডিকেট কি আরাভ নামের খান সাহেবের পেছনে লুকিয়ে আছেন? কে জানে? আমি ধারণা করি, পুলিশ সেই তথ্যও তালাশ করবে। কেন না, আরাভ খানকে রবিউল হিসেবে পরিচিত করে, যা তার আসল নাম হিসেবে পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে, তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরে দেশে আনবে। কিন্তু তিনি তো কথিত ইন্ডিয়ান নাগরিক। তার তো ওই দেশের নাগরিকের পরিচয়পত্রসহ যা যা থাকা দরকার তা আছে। ফলে আরাভ খান নামের মানুষটিকে রবিউল হিসেবে অতি সহজে দেশের মানুষ, খুনি ও পলাতক ইত্যাদি তকমা দিয়ে আনা যাবে না। এ ছাড়াও আরো নানা জটিলতা আছে। যে চক্রের তিনি সোনা সেলিব্রেটি হয়েছেন মাত্র কয়েক বছরে, ভাঙাড়ির দোকানির ছেলে ও একজন কথিত খুনি হয়েও আন্ডারওয়াল্ডের একজন কারবারি হিসেবে তার নিশ্চয় খ্যাতি আছে। তবে, সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, পুলিশের নজরদারি ও তৎপরতা থাকার পরও একজন খুনি ও জেলের আসামি কেমন করে জেলের বাইরে থাকল এবং একজন আবু ইউসুফকে প্রক্সি রবিউল হিসেবে জেলে ঢুকিয়ে দিয়ে পালাল, তার পেছনে কারা ছিল। তার এসব নাটকীয় ও রহস্যময় অপতৎপরতার পেছনে যে অসৎ পুলিশের যোগসাজশ ও তৎপরতা ছিল বা এখনো আছে, তা যে কেউই বুঝতে পারবেন।
প্রথমত, একজন পুলিশ সদস্যকে খুন, দ্বিতীয়ত সেই খুনের মামলার বিচারে জেলজীবন ভোগ করার কথা থাকলেও তিনি কিভাবে এবং কাদের ইশারায় প্রক্সি ঠিক করলেন এবং রবিউলের জেলবাসকে অন্যজনের কাঁধে সোপর্দ করে পলাতক হলেন। এই প্রক্রিয়ার সাথে পুলিশ জড়িত। কেননা আসামিকে জেল পর্যন্ত নিয়ে যায় যে পুলিশ তারাই রবিউলের বদলে আরেকজনকে রবিউল হিসেবে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই যে প্রক্সি হাজতি, তিনি বিনিময়ে টাকা পান এবং এর সঙ্গে জেলের পুলিশও জড়িত। অর্থাৎ একটি অবৈধ পথ রচনার সঙ্গে আইনি লোকেরা জড়িত। এই আইনি লোকেরা কেন, কিসের জোরে বেআইনি কাজে নিয়োজিত, সেটাই আসল প্রশ্ন। জেলে প্রক্সি আসামি আসল আসামির বদলে জেল ভোগ করার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট না হলেও তারা সর্বতোভাবে ওয়াকিবহাল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ-রকম প্রক্সি জেল অনেকেই খেটেছেন, সে সবের খবরও সংবাদপত্রে এসেছে। আরেকটি প্রশ্ন, যিনি প্রক্সি হিসেবে জেল খাটছিলেন, তিনিই যে আসল রবিউল ইসলাম নন, সেটা জেলার ও পুলিশ কর্তারা বিশ্বাস করলেন কেন? বা কিভাবে বুঝলেন যে এই যুবক সত্য বলছে? তিনি তো সত্য রবিউল হিসেবেই জেলে ঢুকেছেন। এখন কিভাবে তিনি প্রমাণ করলেন যে তিনি আসল নন, নকল? আর জেল-কর্তৃপক্ষ কী করে তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন আসল আসামি পলাতক?
এই প্রক্রিয়াটি যে কত পালা গানের ভেতরে রয়েছে, সেসব গানের মাথা বের করা জরুরি। কারণ ওখানেই লুকিয়ে আছে সব অবৈধ কাজের বেআইনি শক্তিধরদের লুকোচুরির বিদ্যা ও অর্থবিত্তের কারবার। এই কারবার ওপেন সিক্রেট।
২.
কারো পক্ষে মাত্র তিন বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার তেমন কোনো শর্টকাট পথ নেই। একমাত্র পথ হলো ব্যাংকের টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে তা ফেরত না দেয়া। অথবা, বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুদ্রার কিছু অংশ বিদেশে রেখে দিয়ে সেই টাকার পাহাড় কাজে লাগানো। অথবা মানিলন্ডারিংয়ের টাকা, মাদক ও সোনা পাচারকারীদের অবৈধ টাকা ছয় মাসেই কয়েক হাজারগুণ বেড়ে যেতে পারে। হতে পারে, আরাভ খান আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের খপ্পর থেকে ওই টাকার মালিক হয়েছেন। আরো বহু খাত আছে অবৈধ অর্থবিত্ত কামানোর। যেমন ক্যাসিনো সম্রাট ও কোভিড সাহেদ কী উপায়ে হাজার হাজার ও শত শত কোটি টাকা কামাই করেছেন, সে তথ্য তো আমরা সংবাদপত্রেই পড়েছি।
তবে, আমাদের ধারণা, আরাভ খান নামের ওই যুবককে আগে প্রমাণ করতে হবে তিনি কোন দেশের নাগরিক। দ্বিতীয় ধাপে তিনিই রবিউল ইসলাম, সেটাও প্রমাণ করতে হবে। তৃতীয়ত তিনি দুবাই নামক শহরের যে মালিক দেশ ইউএই-র নাগরিক হয়ে থাকলে, সেটাও পরিষ্কার করতে হবে। তিনি, আরাভ খান মাত্র তিন বছরে যতবার নাম পাল্টেছেন, নাগরিকতা নিয়েছেন বেশ কয়েকটি দেশের, তাতে করে তার কৃতিত্ব যতটা না, তারও চেয়ে গোয়েন্দা দফতরের নামী সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের মতোই। বন্ডকাহিনীর ০০৭-এর মতো অনেক দেশের পাসপোর্টই তার দখলে। সব কিছু মিলিয়ে তাকে, মানে যুবক আরাভ খানকে জেমসবন্ড হিসেবেও চিত্রিত করা যায়।
এই সব রহস্যময় সেলিব্রেশনের পেছনে কারা জড়িয়ে আছেন, আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ কি তাদের মুখ উন্মোচন করতে পারবেন?
আমরা চাই আরাভ খানের এই বড়লোক হবার পেছনে কোন কোন বাংলাদেশী তাদের অবৈধ সম্পদ ঢেলেছেন, তা বের করাই পুলিশের প্রধান দায়িত্ব।
আমরা কেবল এই কাহিনীর গতিপথ লক্ষ রাখব এবং চেনার চেষ্টা করব আমাদের গোয়েন্দাদের ক্যারিশমেটিক তৎপরতার।


আরো সংবাদ


premium cement
সেনাবাহিনী আমার দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে : ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন তখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী ১১ মাসে রফতানি থেকে ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার আয় : ইপিবি সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের ১ বছর : বিচার, ক্ষতিপূরণ, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন কাটেনি নাঙ্গলকোটে রেল ক্রসিং নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রংপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ২ সন্তানের জনক গ্রেফতার প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব হয়নি : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাউখালীতে বিষ পানে জেলের আত্মহত্যা প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব নয় : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কুমিল্লায় স্কুলছাত্র হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড নিম্নমানের সিগারেট বন্ধসহ বিড়ি শ্রমিকদের ৪ দাবি

সকল