২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রকৃত লেখকের কাজ বা দায়িত্ব কী...

-


সাহিত্যের অনেক শাখা আছে। যেমন- কেউ প্রবন্ধ, কেউ গল্প, কেউ কাব্য, কেউ কলাম, কেউ উপন্যাস লেখে। সক্রেটিস থেকে শুরু করে আজকের আমি তুমি আপনি পর্যন্ত বিষয় একটিই। তবে সব লেখকের কাজ একটিই হওয়া উচিত। সমাজ ও রাষ্ট্রের রোগ নির্ণয় করে তার ওপর প্রেসক্রিপশন করা। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, যদি পাশ কেটে যায়, তবে সে লেখক হলেও ক্ষণিকের লেখক। সময়ের হোঁচট খেলেই এসব লেখক কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়। আপনার লেখায় যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের অসঙ্গতি তুলে আনতে পারেন, কিঞ্চিৎ হলেও তবে আপনি লেখক; কালজয়ী লেখক। রাষ্ট্র নিয়ে লেখাটি অনেক কঠিন কাজ। অনেক বিধিনিষেধ আছে, থাকবে। যদি আপনি এতে ব্যর্থ হন তবে সমাজ নিয়ে লিখুন।
কাল্পনিক, অস্তিত্বহীন লেখা ক্ষণিকের জন্য আনন্দের খোরাক। চেষ্টা করুন, মানুষের ভেতরে প্রবেশ করতে,সমাজের ভেতরে প্রবেশ করতে। রাষ্ট্রের গভীরতা জানতে। এরপর লিখুন। সময় নিয়ে লিখুন। লেখার ধরনে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে- ইতিবাচক ও নেতিবাচক।
নেতিবাচক সমালোচনায় লেখাটা খুঁজে বের করে লেখার চেষ্টা করুন। সবাই ইতিবাচক লেখে এখন। এতে সাহিত্য লজ্জা পায় কি? যেমন ধরি ওপার বাংলার কবি নবারুণ ভট্টাচার্য লিখেছেন একটি কবিতায়- এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।
লেখার গভীরতা অতলান্তিক। একটি দেশে নাগরিকদের বসবাস নিরাপদ না হলে কী ভয়ানক হয় এই বাক্যটিতে তার জ্বলন্ত উদাহরণ। মানুষকে দেশ উপহার দেয় না; বরং মানুষ দেশ উপহার দেয়।


কত রক্ত, প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে দেশ গড়ে ওঠে। সেই দেশ যদি না নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে ব্যর্থ হয়, মৌলিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হয় তখন সাহিত্যিকরা ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে গর্জে উঠতে হয়।
সেই লেখাটি তখন অ্যাটমিক শক্তিকে ছাপিয়ে যায়।
অল্প লিখে গল্প হওয়া নন্দিত কবি হেলাল হাফিজ তার কালজয়ী কবিতায় লিখেছেন- যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার সময় তার, যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার।
এই কবিতাটি কবি স্বাধীনতার সময় লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালিকায় তখন তরুণ-যুবাদের উদ্বুদ্ধ করতে লেখা থাকত এই কবিতার অমর পঙ্ক্তি। এই কবিতা স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় অগণিত শিক্ষার্থী, স্বশিক্ষিত মানুষকে যুদ্ধে যাওয়ার চরমভাবে প্রেরণা জোগাত।
এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর পার হয়েছে। যুদ্ধে যাওয়ার সময় নেই। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদে জেগে উঠতে তরুণ যুবাদের শক্তি, সাহস ও প্রেরণা জোগাবে। সেই হিসেবে আমার চিন্তা ও দর্শনে চির বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম সবচেয়ে এগিয়ে। তিনি তার নতজানুহীন কলমে দোর্দণ্ড প্রতাপে লিখেছেন অত্যাচারী শাসন ও শাসকদের বিরুদ্ধে।
তার অ্যাটমিক শক্তিসম্পন্ন লেখায় অত্যাচারী শাসকদের মসনদ কাঁপিয়ে দিতেন। ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে এ নিয়ে কবি কারাবন্দী ছিলেন তদানীন্তন সময়ে। তাই তো তিনি অনমিত মস্তকে কলমের দুর্নিবার সাহসে লিখেছেন- বলো বীর/ বলো উন্নত মমশির, শির নেহারি আমারি, নতশির /ওই শেখর হিমাদ্রির।
তিনি চির উন্নত মমশির। তিনি আজ নেই তার অমর কালজয়ী লেখা মানসপটে শক্তি ও সাহস জোগাবে যুগে যুগে, শতাব্দী থেকে শতাব্দী। অন্যতম শক্তিশালী কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লøাহ তার ‘সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি’ কবিতায় সুন্দর সুচারুভাবে মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। এখনকার নবীন লেখকরা মানুষের অধিকার নিয়ে লেখার যে দায়িত্ববোধ আছে সেটি ভুলেই গেছে।


যুগে যুগে লেখক বা সাংবাদিকের লেখায় দেশের প্রতি, মানচিত্র রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এভাবেই। লেখার মাধ্যমে তরুণ যুবাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে হৃদয় জাগিয়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রাচীর হতে- এ কথা নির্দ্বিধায় লিখতে হবে। আরো কিছু লেখক আছে যারা সময়ের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের পক্ষে কলমকে অস্ত্রে পরিণত করতে পেরেছেন। আমার পড়া হয়নি এমন লেখকও আছে। তারা মানুষের পক্ষে লিখেছেন, মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লিখেছেন।
আর আমার মতে যারা ধর্মে আঘাত করে লিখেন, রাষ্ট্রকে আঘাত করে লিখেন বা লিখছেন, তারা তো লেখক নন। এই ঘৃণ্য কাজটি অনেক লেখক সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় করেছেন বা লিখেছেন।
রাষ্ট্র বা ধর্মের বুকে আঘাত করে কিংবা চটকদার লেখা লিখে অনেক লেখক সস্তা জনপ্রিয়তা লুফে নিয়েছেন।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
ইমেইল : hussaain82@gmail.com

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল