০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১৫ জিলকদ ১৪৪৪
`

ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হোক

-

মানব জাতির সমস্যা অনেক। আমরা ইচ্ছে করলেও সব সমস্যার সমাধান করতে পারব না। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান করা যেত। পৃথিবীর কোনো ধর্মই অনৈতিকতাকে উৎসাহিত করেনি; বরং নৈতিকতা ও মানবতার কথা বলে, ভালো কাজ করার তাগিদ দেয়। এ ক্ষেত্রে ইসলাম সবচেয়ে বেশি ভালো কাজের প্রতিযোগিতার উৎসাহ দেয়। যেন আরশের মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ভালো কাজের প্রতিযোগিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে, দুর্নীতি ও অসৎ কাজ থেকে দূরে রাখে। ভালো কাজ আমরা কেন করব? ভালো কাজ করলে আমাদের লাভ কী? ইত্যাদি প্রশ্ন মনে জাগ্রত হতে পারে! আমরা আমাদের স্বার্থের জন্যই ভালো কাজ করব। কারণ আমরা কেউ চিরস্থায়ীভাবে দুনিয়াতে থাকব না। আমাদের সফর খুবই সংক্ষিপ্ত। কখন কার জীবনের সফর সমাপ্তি হয়ে যাবে, এটি কেউ আমরা জানি না। সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হবে জীবনের আলো নিভে যাওয়ার আগে ভালো কাজের মাধ্যমে পরকালীন প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। এটি করতে পারলে বক্তির কল্যাণ হবে, সমাজ ও রাষ্ট্রে কল্যাণের সুবাতাস বইবে।
একটি ভালো কাজ হতে পারে ছোট! কিন্তু তার পরিধি আকাশের চেয়ে বিশাল হতে পারে। ভালো কাজের ফলাফল সব সময়ই অর্থবহ হয়। কিন্তু আমরা অনেকে তা অনুধাবন করি না। সে জন্য মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- আমরা নিজেরা ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করব, অন্যকেও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করব। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ সা: তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লøাহ তায়ালা উঁচু ও মহৎ কাজ এবং সৎ মানুষকে পছন্দ করেন, নিকৃষ্ট কাজ অপছন্দ করেন।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস-২৮৯৪) যখন একটি ভালো কাজ সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে করা হয় তখন একাধিক মানুষ তার সুফল ভোগ করে। আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ভিন্নমতের কারো ওপর জুলুম-নিপীড়নের খড়গ প্রয়োগ করা হলে তখন শুধু ওই ব্যক্তি কিংবা পরিবার নিপীড়নের শিকার হয় তা কিন্তু নয়, তার পরিবার,আত্মীয় স্বজন ও সমাজ বেদনাভারাক্রান্ত মনে আরশের মালিকের কাছে ফরিয়াদ জানায়। মানুষের চোখের পানি আল্লাহ তায়ালার আরশ নাড়ায়। সুতরাং কারো চোখের পানি আমার অন্যায় সিদ্ধান্তের কারণে যেন না ঝরে সে বিষয়ে খেয়াল রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমরা কিভাবে ভালো কাজ করতে পারি? এমন প্রশ্ন কারো কারো মনে জাগতে পারে! ভালো কাজ করার জন্য বেশি শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু একটু সদিচ্ছা ও মানবিক মূল্যবোধ থাকলেই মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা সম্ভব। আমরা সবাই কমবেশি ক্রিকেট খেলা পছন্দ করি। ক্রিকেট খেলায় জিতলে আমরা আনন্দমিছিল করি। হারলে খেলোয়াড়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করি। খেলায় র‌্যাংকিং হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খেলায় একজন খেলোয়াড় র‌্যাংকিংয়ে কখনো কখনো সেরা হয়, এ নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। আর র‌্যাংকিং কৃতিত্ব ধরে রাখার জন্য কখনো দেশ, কখনো খেলোয়াড়, কখনো কোচ সবাই চেষ্টা করেন। একজন খেলোয়াড়কে তার র‌্যাংকিং পয়েন্ট ধরে রাখার জন্য ক্রমাগত ভালো পারফর্ম করতে হয়। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়েও র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু আছে। সেখানে অ্যাকাডেমিক জরিপের ওপর নির্ভর করা হয়। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে র‌্যাংকিং করা হয়। সেখানে তুমুল প্রতিযোগিতা হয় শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে। এ ছাড়াও পরীক্ষায় পাস ও চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু ভালো মানুষ ভালো সমাজ কিংবা ভালো রাষ্ট্র গঠন নিয়ে প্রতিযোগিতা হয় না। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

ক্রিকেট খেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‌্যাংকিং প্রতিযোগিতা আছে। অর্থাৎ ভালো করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেরা রাজনৈতিক দলের, সেরা রাজনীতিবিদের, সেরা ব্যবসায়ীর, সেরা চিকিৎসকের, সেরা হাসপাতালের, সেরা আমলার, সেরা টিলিভিশনের, সেরা পত্রিকার, সেরা এমপির, সেরা মন্ত্রীর, সেরা মেয়র কিংবা চেয়ারম্যানের র‌্যাংকিং নেই। খেলার র‌্যাংকিং জাতি গঠনের মেসেজ দেয় না। মেসেজ দেয় কোন দেশে কেমন মানের খেলোয়াড় আছে তার। কিন্তু দেশে যদি খেলার মতো জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি আমলা ও নেতা-নেত্রীদের প্রতি বছর র‌্যাংকিং করা হতো, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে ভালো মানুষের তালিকা দীর্ঘ হতো। নীতিহীন মানুষের সংখ্যা কমে আসত। জনগণ ভালো কাজের সুফল উপভোগ করতে পারত। যে দেশে রাজনৈতিক শিষ্টাচার যত বেশি উন্নত সে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ তত বেশি উন্মুক্ত। রাজনীতিকে বাদ দিয়ে একটি দেশ বেশি দূর এগোতে পারে না, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। কিন্তু যখন অপরাজনীতির চাষাবাদ শুরু হয় তখন উন্নয়নশীল দেশেও হতাশার মিছিল দেখা যায়। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে না। সুস্থ রাজনীতির প্রতিযোগিতার র‌্যাংকিং হবে। তখন সত্য ও সুন্দরের কথা জাতি জানতে পারবে। রাজনৈতিক দস্যুতার পরিবর্তে রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে মানুষ গর্ববোধ করবে। কিন্তু যে রাজনীতি মানুষের কল্যাণের কথা ভাবে না, মানুষের মনের ভাষা বোঝে না, সেটিকে আর যা-ই হোক রাজনীতি বলা যায় না। অথচ একটা সময় এমন ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতের অমিল থাকলেও পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সেখানে সম্প্রীতির কথা আশা করা যায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে আমাদের অবশ্যই ভালো কাজের প্রতিযোগিতা রুট লেভেল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চর্চার সুযোগ বাড়াতে হবে।
আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে পেশিশক্তির প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হয় না। আমরা অনেকে অবয়বে মানুষ হলেও চিন্তা-চেতনায় অমানুষের মতো কাজ করি। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর জন্য ভালো কাজের প্রসার বাড়ানো দরকার। বিশ্বব্যাপী কত প্রতিযোগিতা হয় কিন্তু বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রতিযোগিতা হয় না। উচিত ছিল বিশ্ববাসীর কল্যাণের প্রতিযোগিতা হওয়া। কিন্তু কল্যাণ বয়ে আনে এমন জিনিসের প্রতিযোগিতা চোখে পড়ে না। প্রতিযোগিতা হয় অ্যাটম বোমার, প্রতিযোগিতা হয় পরমাণু অস্ত্রের। অ্যাটম বোমার আবিষ্কার পৃথিবীবাসীকে রক্ষা করার জন্য করা হয়নি; বরং কিভাবে একটি দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া যায় সে লক্ষ্যে অ্যাটম বোমার আবিষ্কার। প্রযুক্তি আমাদের জন্য কল্যাণকর হলেও তার অপব্যবহার বাড়ছে, কারণ ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হয় না।
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যদি আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতাম তাহলে উন্নয়নের রোলমডেল সর্বত্র বিরাজ করত। একটি ভালো কাজ সরকার করলে রাজনৈতিক কারণে তার সমালোচনা হয় কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা হয় না। বিরোধিতার খাতিয়ে বিরোধিতা করা হয়। ফলে অনেকে ভালো কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। উচিত ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রের সব স্তরে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা চালু করা। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি কিংবা আমলাদের র‌্যাংকিং প্রতি বছর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে দুর্নীতি-প্রবণতা কমে আসত। জাতির স্বার্থে আসুন আমরা ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করি। সোনার বাংলাকে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলায় পরিণত করার চেষ্টা করি।


আরো সংবাদ


premium cement
সেনাবাহিনী আমার দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে : ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন তখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী ১১ মাসে রফতানি থেকে ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার আয় : ইপিবি সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের ১ বছর : বিচার, ক্ষতিপূরণ, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন কাটেনি নাঙ্গলকোটে রেল ক্রসিং নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রংপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ২ সন্তানের জনক গ্রেফতার প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব হয়নি : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাউখালীতে বিষ পানে জেলের আত্মহত্যা প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব নয় : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কুমিল্লায় স্কুলছাত্র হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড নিম্নমানের সিগারেট বন্ধসহ বিড়ি শ্রমিকদের ৪ দাবি

সকল