প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় শিক্ষাবোর্ড
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও গলাবাজি থাকলেও এ বছর জাতীয় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত বইয়ের বাঁধাই ও ব্যবহৃত কাগজের মান যেন দুর্নীতির পরিচয়ই বহন করছে। সেই সাথে ক্ষুণœ করা হলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অধিকার। এ দিকে বিগত বছরের বইয়ের সাথে তুলনা করে যেসব পরিবর্তন মাদরাসা বোর্ড ও সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বইগুলোতে পাওয়া গেছে তা রীতিমতো অপ্রয়োজনীয় এবং অসৎ উদ্দেশ্যমূলক।
কী প্রয়োজন ছিল ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণীর বইয়ের মলাট পরিবর্তন করার? হিজাব তুলে দেয়া? সেই সাথে বইয়ের শুরুতেই শ্রেণীকক্ষে পরিচয় পর্বে সালাম বিনিময়ের রীতিটাও উধাও! এটা খোদ মাদরাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ইসলামের একটা সংস্কৃতি থেকে সুকৌশলে বের করে আনার ফন্দি। অথচ এই সংস্কৃতির শিক্ষা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন। ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে, অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী’। (সূরা নিসা, আয়াত-৮৬)
এবার ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে আসি। আমরা জানি, হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম এভাবে বিভিন্ন ধর্মের শাসক ও রাজারা বিভিন্ন সময় বাংলা শাসন করেছে। সুতরাং বিভিন্ন ধর্ম ও সেই সম্পর্কীয় সংস্কৃতির প্রভাব বাংলায় থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বইটির ৯৭নং পৃষ্ঠা পড়ে দেখবেন ‘হাজার বছর আগে এই ভূমিতে প্রথম বসতি স্থাপনের সময় যে রীতিনীতি, প্রথা ও সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছিল সাধারণ মানুষ তা কখনোই সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেনি’। এভাবে উল্লেখ করে শুধু নির্দিষ্ট একটা ধর্ম ও তার সংস্কৃতিকে হাইলাইট করে ইসলামকে চাপিয়ে দেয়া একটা ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করাই যেন উদ্দেশ্য।
এবার সপ্তম শ্রেণীতে আসি। বইটির ৫১-৫৬ পৃষ্ঠা পড়ুন। এখানে সূক্ষ্মভাবে সমকামিতাকে প্রচার করে, হিজড়া সম্প্রদায় ও তাদের চাঁদাবাজিকে দোয়া আশীর্বাদের প্রাপ্তি বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। চিন্তা করতেই লজ্জা লাগছে যে, একটা দেশের জাতীয় বোর্ডের বইয়ের দশা এমন বেহাল হতে পারে! প্রশ্ন জাগে- জাতীয় শিক্ষাবোর্ড পরিচালনা করে কারা?
দেখুন-এখানে ট্রান্সজেন্ডার তথা শরিফ আহমেদ (যার দৈহিক কোনো সমস্যা নেই) নিজেকে মানসিকভাবে মেয়ে ভাবা শুরু করেছে, তাহলেই কি সে মেয়ে হয়ে গেল? যে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা আছে, যে সমস্যা দূর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়- সেক্ষেত্রে শরিফের ‘শরীফা’ নাম ধারণ, নিজ পরিবার ও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া এবং তার মতো যারা মানসিক রোগী তাদের সাথে হাত মিলিয়ে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রচারণা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবে? নিজের পরিবার ত্যাগ করো, তাই তো? দৈহিকভাবে ছেলে হয়েও আমার এখন নিজেকে মেয়ে মনে হচ্ছে, তাই এখন আমার মতো যারা এক লিঙ্গের হয়ে ভিন্ন লিঙ্গের মতো ভাবছে তাদের সাথে মিশতে হবে, থাকতে হবে। এতো প্রকাশ্যে অবৈধ সম্পর্ক ও সমকামিতার দিকে আগামী প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে! ইতিহাস সাক্ষী, লুত আ:-এর জাতি ধ্বংস হয়েছিল সমকামিতার জন্য। ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদের উপরকে নিচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথর বর্ষণ করলাম’ (সূরা হুদ, আয়াত-৮২)
মনে রাখবেন- ট্রান্সজেন্ডার আর ইন্টারসেক্স (হিজড়া) এক জিনিস নয়। ট্রান্সজেন্ডার তথা মানসিক সমস্যার পাশাপাশি ইন্টারসেক্স তথা হরমোনাল সমস্যার চিকিৎসা আছে। সুতরাং বইয়ের লেখক ও নিয়ন্ত্রকদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অভিভাবকদের উচিত পারিবারিক সচেতনতা তৈরি করা।
অবশেষে, নবম-দশম শ্রেণীর ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইতে, ‘১৯৭১ সাল’ উল্লেখ না করা (১৮১ পৃষ্ঠা), নতুন রাষ্ট্রপতির নাম উল্লেখ না করা (পৃষ্ঠা-২০০), বইটির ২০৩ পৃষ্ঠায় আইনসভার স্থলে জাতীয় সংসদ লেখাসহ আরো কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা ও ঘটনাস্থল নিয়ে করা ভুলের দায় যেভাবে স্বীকার করা হয়েছে, তেমনি বইগুলোর লেখক, সম্পাদক এবং এর সাথে জড়িত জাতীয় বোর্ডের কর্মকর্তাদের উচিত- বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, শাসন, মানবজাতির অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয় নিয়ে যেসব কল্পকাহিনী রচনা করা হয়েছে সেসবেরও দায় স্বীকার করে সংশোধন করা।
ফাতেমা মাহফুজ, ঢাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা