২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামী ব্যাংক ২০১৭ সালে বাঙালি ঋণখেলাপিদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে

-


বিরোধী রাজনীতি শায়েস্তা করা ও কথিত মৌলবাদী জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধ করার অজুহাতে ২০১৭ সালে সরকার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানা কথিত মৌলবাদী জঙ্গি সমর্থকদের কবজা মুক্ত করে সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট বাঙালি ঋণখেলাপি ‘জঙ্গি’দের হাতে তুলে দিয়েছিল। কারণ সোনালী ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা হলমার্কের ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা অ্যানন টেক্সের ৫ হাজার কোটি টাকা ও ক্রিসেন্ট লেদারের ৩ হাজার কোটি টাকা ও বিসমিল্লাহ টাওয়েলের ১ হাজার কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের মুন গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি ও ২০১৯ সালের ভয়ঙ্কর ডিসেম্বরের ২৪শ’ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান জাপার সাবেক এমপি আব্দুল হাইয়ের ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি এবং রূপালী ব্যাংকে সরকারের পছন্দনীয় আতাউর রহমান প্রধান দীর্ঘদিন এমডি থাকায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাবেক অর্থমন্ত্রী ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট হতে এসব ব্যাংককে জোগান দেয়ার পরও যখন ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঢালাওভাবে বিতরণকৃত ঋণগুলো পর্যায়ক্রমে খেলাপি হতে শুরু হওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে মূলধন ঘাটতি বৃদ্ধি পেলেও বাজেট হতে অর্থজোগান বন্ধ হয়ে গেলে সরকারি ব্যাংকগুলো বড় ঋণদানের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলায়, বাঙালি ঋণখেলাপি জঙ্গিদের লোলুপদৃষ্টি পড়েছিল সবচেয়ে বেশি আমানতের অধিকারী ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওপর। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের ২ জন মালিক ব্যাংকটির পরিচালক থাকায় সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক মিলিতভাবে প্রতি মাসে যত কোটি ডলার প্রবাসী রেমিট্যান্স আহরণ করে থাকে, ইসলামী ব্যাংক তার চেয়ে বেশি প্রবাসী রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে থাকে। ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। তা কমে বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা হওয়ায় পূর্বের আমানতের বিপরীতে আগ্রাসীভাবে ঋণ প্রদান করায় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৭ শতাংশ সিআরআর (নগদ জমার হার) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমার হার) সংরক্ষণ করতে হলেও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে ছাড় দেয়ায় তাদের সাড়ে ৯ শতাংশ সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে হয় বিধায় তফসিলি ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ৮ শতাংশ বেশি ঋণ দিতে পারে। ব্যাংকটির আমানত ১৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পাওয়ায় ও নামসর্বস্ব ৮টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণের নামে যে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে, তার দুই হাজার ৪৬০ কোটি টাকাই গত নভেম্বরের ১ তারিখ হতে ১৭ তারিখের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ওই সব কথিত প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হতেও নিয়েছে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা (দৈনিক প্রথম আলো)।


ইংরেজি দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ হতে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের নতুন মালিক গোষ্ঠী এই ব্যাংক হতেই ঋণ নিয়েছেন ৩০ হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক ২০১২ সালে তুলে নিয়েছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। এর তুলনায় ১০ বছর পরে ১০ গুণ বেশি টাকাই ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক হতে তুলে নেয়া হলেও দীর্ঘমেয়াদি শক্তিশালী সরকারের শক্তিশালী মুদ্রা টাকার বর্তমান বাজারমূল্যের নিরিখে অর্থমন্ত্রী তার পূর্বসূরির মতো বলতে পারেন, ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা হওয়ায় এর তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ‘কোনো টাকাই নয়’। কিন্তু গত ১৪ বছরে উন্নয়নের জোয়ার বৃদ্ধির লক্ষ্যে গরিবের ঘোড়া রোগের মতো নাম ফোটানোর জন্য পদ্মাপাড়ে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার কাছ থেকে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে প্রতি ডলার ৮০ টাকা দরে। বর্তমানে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে টাকার মূল্য ক্রমেই নিম্নমুখী হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে অন্তর্বর্তীকালীন সুদসহ প্রকল্প ব্যয় দেড় লাখ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। কারণ যমুনা সেতু নির্মাণে ৪০.৭০ টাকা দরে ৬০ কোটি ডলার বা ২৫৭৩ কোটি টাকা ১৯৯৪ সালে ঋণ নেয়া হয়েছিল। ডলারের মূল্য দ্বিগুণ হতে আড়াই গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পর্যন্ত ৩৩৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করার পরও বর্তমান হারে কিস্তি পরিশোধ করে যেতে হবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। তেমন অবস্থা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধকালীন হলে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে। এতদ্ব্যতীত পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পে চীনা ঋণ ৩১৪ কোটি ডলার হলেও প্রতি বছর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ৩০ শতাংশ বর্ধিত হারে পরিশোধ করতে হবে বিধায় এর পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলারের বেশি হতে পারে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৭১ কোটি ডলার ঢেলে বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকায় মাথার ওপর দিয়ে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের জন্য জাপানি ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা। ভূমিতে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু -কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প ১৫০ কোটি ডলার ঋণে ছাড়াও মাতারবাড়ি ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কোটি কোটি ডলার বিদেশী ঋণ নেয়া হয়েছে। পায়রা বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় চ্যানেল ড্রেজিং করতে রিজার্ভ হতে হাজার হাজার কোটি টাকা বঙ্গোপসাগরে ঢালতে হচ্ছে। আচমকা রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করায় যুদ্ধের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরোক্ষ আঘাতে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সাথে ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় ১৩ বছরের সঞ্চিত রিজার্ভ হ্রাস পেতে থাকায় ২০১২ সালে যে বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল তাদেরই প্রতিষ্ঠান ঋণদাতা আইএমএফের কাছে ৩ বছরের কিস্তিতে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের আবেদন করা হয়েছে, যা পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় প্রবাসীরা পাঠিয়ে থাকেন তার সমপরিমাণ। ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ হতে নভেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা সফর করেন।


তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, সরকারি আয় ও ব্যয়ের হিসাবরক্ষণকারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের সচিব পর্যায়ের প্রধান প্রধান কর্মকর্তাদের সাথে ম্যারাথন বৈঠক করে সবার পেশকৃত হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক নর্মস মেনে রিজার্ভের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় ও খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী তার সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়ন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সার ও খাদ্যে ভর্তুকি হ্রাসের পরামর্শ দেয়ায় যেহেতু ২০০৭-০৮ সালে হবু ঋণখেলাপিরা জেনারেল মঈনকে ম্যানেজ করে সরকারকে আজীবন ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করতে প্রশাসন, পুলিশ ও পোলিং অফিসারদের পেছনে প্রণোদনা বিনিয়োগ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সফল ও সরকারি দলের শতভাগ জয় নিশ্চিত করতে তারা অনন্য ভূমিকা রেখেছিল, সেহেতু খেলাপি ঋণ আদায় না করে নতুন ঋণ বিতরণের মাধ্যমে খেলাপির হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেই ইসলামী ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংক থেকেও ঢালাওভাবে নতুন ঋণ দিয়ে ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে খেলাপি ঋণ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করে সুদ মওকুফ অন্তে অন্য ব্যাংক থেকে আরো বেশি পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে আগের ঋণ পরিশোধ দেখানোর কাজ ২০১৫ সাল হতেই শুরু করা হলেও বর্তমানে তা আরো জোরালোভাবে শুরু করা হয়েছে।


৩১-১২-২০০৮ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা, তন্মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে খেলাপির হার ছিল ১০.৬ শতাংশ। ৩১-১২-২০১৯ তারিখ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে খেলাপির হার দাঁড়িয়েছিল ১১.৫৬ শতাংশ। কোভিডের কারণে ২০২০ সালে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি করা না হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ১ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করায় ৩১-১২-২০২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করায় ৩১-১২-২০২০ তারিখে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.৫৬ শতাংশ হওয়ায় খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ হ্রাস পাওয়াকে অর্থমন্ত্রী সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবি করে ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করলেও তারা খেলাপি ঋণের ১টি টাকাও আদায় না করেও নতুন ঋণ বিতরণ ও পুনঃতফসিল করে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে এনেছিলেন।


কোভিডের কারণে ২০২১ সালেও খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে ছাড় অব্যাহত থাকায় ৩১-১২-২০২১ তারিখ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে খেলাপি দেখানো হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণের হার আরো কমে ৭.৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা হওয়ার পাশাপাশি ৯ মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা হওয়ায় খেলাপি ঋণের হার ৯.৩৬ শতাংশ হওয়ার বিষয়টি আইএমএফকে অবহিত করে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকার তথ্য দেয়া হয়েছিল। আইএমএফের কাছে তথ্য ছিল ৩০-০৬-২০১৯ তারিখে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা থাকলেও ৬ মাস পরে ৩১-১২-২০১৯ তারিখে তা দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা অর্ধেকেরও কম। তাই আইএমএফ খেলাপি ঋণ নির্ণয়ে আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুসরণ করে ঋণের শ্রেণিবিন্যাস করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে খেলাপি ঋণের প্রকৃত হার নির্ণয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। খেলাপি ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা দুর্নীতি কমার মতো জিরো পার্সেন্ট হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের আমানত যেহেতু অনেক বেশি তাই বৃহৎ ঋণখেলাপিরা ইসলামী ব্যাংকের ওপর সওয়ার হয়েছে। তারা ভিন্ন নামে নামসর্বস্ব নতুন কোম্পানি খুলে ঋণ নেয়ার উৎসবে মেতে উঠেছেন। কারণ মূল কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি হওয়ায় তাদের নামে আর ঋণ নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না, তাই নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কাগুজে কোম্পানি খুলে ওই কোম্পানির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এতে দোষের কিছুই নেই।


ফলে ইসলামী ব্যাংক তার ঋণদানের ক্ষমতার চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ দেয়ায় ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ঋণ প্রদানের জন্য তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টো তাদের ইতোমধ্যেই ৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছেন। এদিকে কোভিডের কারণে ও ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য ধপাস করে হ্রাস পাওয়া আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের মূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ও আমজনতার আয় হ্রাস এবং জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হওয়ায় বাধ্য হয়ে ব্যাংক হতে টাকা তুলতে হচ্ছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী ঋণের সুদ ও আমানতের সুদের হার নয়ছয় করে দেয়ায় আমানতের সুদের হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার ৩ হতে ৫ শতাংশ বেশি হওয়ায় লাখ কোটি টাকার আমানতকারীদের ব্যাংকে রাখা আমানতের পরিমাণ ক্ষয়ে যাওয়ায় তারা তা উত্তোলন করে জমি ক্রয় বা সোনাদানা ক্রয়ে বিনিয়োগ করছেন। এতদ্ব্যতীত প্রতি বছর উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে যে দেড় দুই লাখ কোটি কালো টাকা উৎপাদিত হচ্ছে তার মধ্যে প্রায় লাখো কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মতো যাদের অবৈধ উপার্জন কোটি টাকা বা তার নিচে অথবা যারা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেও তা বিদেশে পাচার করতে পারেননি, তা তাদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের নামে-বেনামে প্রতি বছর ব্যাংকে চলে আসত বিধায় কোভিডের মধ্যেও ব্যাংকগুলোর আমানত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ২ বছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার নতুন ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছিল। সরকার আগামী নির্বাচন ক্ষমতায় থেকে করতে পারবেন কি না সেই সম্পর্কে তারা শঙ্কায় থাকায় ভবিষ্যতে ধরা খাওয়ার ভয়ে অনেকে তাদের টাকা ব্যাংক হতে তুলে নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকের আমানত দ্রুত কমে যাওয়ায় সহসা আমানতের এই খরা কাটার সম্ভাবনা কম। মন্ত্রীবর্গ একে গুজব বলে আখ্যায়িত করলেও তাদের কথায় কেউ আস্থা রাখতে না পারায় স্বয়ং সরকার প্রধানকে বলতে হচ্ছে, গুজবে কান দিবেন না।


২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে ছাত্রলীগ যুবলীগের সাবেক নেতাদের, দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ী ও আমলাদের সরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ করায় এবং দলীয় বিবেচনায় এমডি নিয়োগ ও জিএম ডিজিএম পদে পদোন্নতি দেয়ায় সবাই মিলেমিশে ঢালাওভাবে ঋণ প্রদান করায় ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণগুলো পর্যায়ক্রমে ২০১২ সাল হতে খেলাপি হওয়া শুরু হওয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করলে তা মোট ঋণের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বেসিক ব্যাংকের ২ টার্মের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর কারণে ঋণের নামে বেসিক ব্যাংক হতে ৫ হাজার কোটি টাকা চলে গেলেও অদ্যাবধি ব্যাংক কোনো আদায় মামলা করতে পারেনি। সোনালী ব্যাংক হলমার্কের বিরুদ্ধে মাত্র ৯৯৩ কোটি টাকা আদায়ের জন্য মামলা করতে পেরেছে, অথচ ঋণ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুদক মামলা করলেও তাতে ঋণ আদায় হবে না। ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংককেই অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। টাকা পাচারকারী ও ঋণখেলাপিরা যদি সত্যই সরকারের সুহৃদ হয়ে থাকেন তাহলে এখন সময় এসেছে তার প্রতিদান দিয়ে সঙ্কট থেকে উত্তরণে সরকারকে সহযোগিতা দান করার। কালো ডলার ধবল ধোলাই করার জন্য যে সুযোগ অর্থমন্ত্রী বাজেটে দিয়েছেন সেই সুযোগ গ্রহণ করে তারা যদি ১৪ বছরে পাচারকৃত ডলারের ২০ শতাংশও দেশে ফেরত এনে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেন তাহলে রিজার্ভ এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে ৬ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে আর সরকার তখন আইএমএফকে বলতে পারবেন, ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রয়োজন বাংলাদেশের নেই। প্রয়োজন মনে করলে আইএমএফ আমাদের কাছ থেকেই ঋণ নিতে পারে। আর ঋণখেলাপিরা যদি সুদ মওকুফের সুবিধা নিয়ে মাত্র ৩ বছরের সুদ পরিশোধ করে তাদের খেলাপি ঋণগুলো নিয়মিত করেন তাহলে ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের ৩ বছর সুদ বাবদ ব্যাংকগুলো প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা সুদখাতে আয় করবে। তা হতে ব্যাংকের যে মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এর ৩৫ শতাংশ সরকার কর হিসেবে পাওয়ায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকার এখনই ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কোভিডের কারণে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে তাদের টেনে তুলতে পারবেন। দেখা যাক, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকারের শুভবুদ্ধির উদয়ের পাশাপাশি টাকা পাচারকারী ও ঋণখেলাপিদের শুভ বুদ্ধি জাগ্রত হয় কি না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ ‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি

সকল