২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন

-

হাজী মুহম্মদ মুহসীনের জন্ম হুগলিতে, ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, দানবীর ও মহান জনহিতৈষী। তার মা জয়নাব খানমের প্রথম বিয়ে হয়েছিল হুগলির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আগা মোতাহারের সাথে। মন্নুজান ছিলেন তাদের সন্তান। তার সব অর্থসম্পত্তি মন্নুজান খানমের নামে উইল করে যান। আরবি-ফারসি ভাষাশিক্ষায় মুহসীন অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। কুরআন, হাদিস, সাহিত্য, গণিত, ইতিহাস, দর্শন- সব কিছুতেই অসামান্য ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। সে যুগের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ভোলানাথ ওস্তাদের কাছে মুহসীন কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত শিক্ষা করেছিলেন। দক্ষ সেতার বাদক হিসেবে চার দিকে তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। মুহসীন ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। সেই সাথে মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালা প্রভৃতি পবিত্র স্থানে যান। পবিত্র হজ পালন করেন। এরপর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আগা মোতাহারের ভ্রাতুষ্পুত্র, হুগলির নায়েব ফৌজদার মির্জা সালাহউদ্দীনের সাথে মন্নুজান বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিদ্বান, কবি, রাজনীতিক সালাহউদ্দীনের সাথে বিদুষী, বুদ্ধিমতী, সঙ্গীতশিল্পী মন্নুজানের মিলন ঘটল। চৌত্রিশ বছর বয়সে মুহসীন আবার হুগলি থেকে ভ্রমণের জন্য যাত্রা শুরু করেন। আরব, ইরান, তুরস্ক, মিসর, ইরাক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করে বিপুল জ্ঞান অর্জন করেন। এ দিকে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়া নিঃসন্তান মন্নুজান তার বিশাল সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য মুহসীনকে দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানালে তিনি দীর্ঘ সাতাশ বছর পর ফিরে আসেন। মৃত্যুকালে মন্নুজান সব সম্পত্তি ভাই মুহসীনকে দান করে যান। এ সময় মুহসীনের বয়স ছিল সত্তর বছরেরও বেশি। চিরকুমার মুহসীন বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়ে চিন্তিত হলেন। কঠোর তপস্বী মুহসীন ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল ট্রাস্ট গঠন করে দুইজন মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত করেন। মুহসীন খুব সাধারণ ও ধর্মীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। অবিভক্ত বাংলায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় মুহসীনের সম্পত্তি থেকে সে সময়ের লাখ লাখ টাকা বিভিন্ন সৎকাজে ব্যয় করা হয়েছে। মুহসীন শিক্ষা ফান্ড থেকে সাহায্য পেয়েছেন বহু শিক্ষিত মুসলমান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, হুগলি ও যশোরের মাদরাসা মুহসীনের অর্থে পরিচালিত হয়েছে। তার সম্পত্তির উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে হুগলি কলেজেরও সূত্রপাত। সুদীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর এ কলেজের জন্য মুহসীনের ফান্ড থেকে বার্ষিক পঁচাত্তর হাজার টাকা ব্যয় হতো। বাংলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ও সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র, সাহিত্যিক ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বাংলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট খান বাহাদুর দেলওয়ার হোসেন (১৮৬১), বিচারপতি সৈয়দ আমীর আলী, স্ত্রী শিক্ষার অগ্রনায়িকা বেগম রোকেয়া স্বামী খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ কলেজে মুহসীনের অর্থে শিক্ষালাভ করেছেন। সে কালে বাংলার অনেকখানি গড়ে উঠেছে মুহসীনের দানের ছায়ায়। মানবদরদি মুহসীন ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর হুগলিতে ইন্তেকাল করেন। ইমামবাড়ার পাশের বাগানে তাকে দাফন করা হয়। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
মো: জোবায়ের আলী জুয়েল


আরো সংবাদ



premium cement