১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন

-

এবারের বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে তুলনাহীন ভয়াবহ ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে। এত বেশি মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একেবারেই নজিরবিহীন। বন্যার পানিতে ৭২ লাখেরও বেশি মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলাদি, গবাদিপশু ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। যা গবাদিপশু রয়েছে সেগুলোর খাদ্য সরবরাহের সমস্যা রয়েছে। মানুষের খাবার আর পশুর খাবারের সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
বন্যার পানিতে বহু কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে আমন বীজ বপন করতে পারেননি। তাদের জন্য নতুন করে বীজ বপন করে কৃষিকাজে ফিরে যাওয়া কঠিন কাজ। বীজ নেই, নেই ফসল ফলানোর সার, নেই হালের গরু, নেই কৃষিযন্ত্র ও উপকরণ। এখন প্রয়োজন কৃষকদের বীজ সরবরাহ ও সারের জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করা। বন্যার সময় সরকারি-বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে বানভাসি মানুষের পাশে ছিলেন। কিন্তু এখন তেমনটা দেখা যায় না। ওই সময় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও তাৎক্ষণিক সাহায্য-সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্তদের আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
সরকারি হিসাবে সিলেট জেলায় ৪০ হাজার ও সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ভেতর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়েছে ২০ হাজারের মতো পরিবার। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত সবার পুর্নবাসন জরুরি। দেশের ১৭টি জেলায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু সেতু ও কালভার্ট ভেঙে গেছে যা এখনো যোগাযোগের অনুপযোগী। যোগাযোগ ব্যবস্থায় পুনর্বাসন কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য হলেও এ দিকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।
সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত। বন্যার পানিতে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের বিকল্প বই দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন তাদের পড়াশুনায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। মাউশির ভাষ্যমতে, দেশের ১৮টি জেলার ৮৫টি উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এক হাজার ১২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজের) প্রায় পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৪ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বন্যার কবলে পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের বাড়ি নেই, থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, স্কুল নেই, নেই পাঠ্যবই। সব কিছু গুছিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি একরকম অসম্ভব; বিশেষ করে যারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এসব ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করা এককভাবে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ।
বানভাসি মানুষের বাঁচার এই সংগ্রামে সরকার, এনজিও, ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা মঞ্জুরি দিয়েছে। ক্ষতির তুলনায় এই ১০ হাজার টাকা কিছুই নয়। যার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, বাড়ি নষ্ট হয়েছে, গবাদিপশু হারিয়ে গেছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে তারা এই ১০ হাজার টাকা দিয়ে কী করবে? এই ১০ হাজার টাকায় তার কিছুই করার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সবার সমন্বিত চেষ্টার। এভাবেই আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। এ ব্যাপারে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সীমানা পেরিয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজনৈতিক দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মিলেমিশে কাজ করার। একক জাতীয় চেতনার পরিচিতি এবং প্রকাশ ঘটানোর এখনই সর্বোত্তম সময়। সবাই মিলে বন্যাপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচার স্বপ্ন দেখানোর এটাই একমাত্র পথ।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement