২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হামদুল্লাহ আল মেহেদী

স্ম র ণ : শুয়ে ছেন মাটির ঘরে

-

একুশে মে ২০১৭ সকালে আমার ঘুম ভেঙেছিল বাংলাদেশ লেবার পার্টির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমান মহাসচিব) সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের ফোনে। জানতে পারলাম, চিরবিদায় নিয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। তার আকস্মিক মৃত্যুসংবাদে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম। ভেসে উঠল হাজারো স্মৃতি।
জাতীয় রাজনীতিতে আপসহীন চরিত্রের সমার্থক হয়ে গিয়েছিলেন শফিউল আলম প্রধান। আপসহীন চরিত্রের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাকে জীবনভর। মার্টিন লুথার কিং তার অ ঞবংঃধসবহঃ ড়ভ ঐড়ঢ়ব : ঞযব ঊংংবহঃরধষ ডৎরঃরহমং ধহফ ঝঢ়ববপযবং গ্রন্থে লিখেছেন : ঞযবৎব পড়সবং ধ ঃরসব যিবহ ড়হব সঁংঃ ঃধশব ধ ঢ়ড়ংরঃরড়হ ঃযধঃ রং হবরঃযবৎ ংধভব, হড়ৎ ঢ়ড়ষরঃরপ, হড়ৎ ঢ়ড়ঢ়ঁষধৎ, নঁঃ যব সঁংঃ ঃধশব রঃ নবপধঁংব পড়হংপরবহপব ঃবষষং যরস, রঃ রং ৎরমযঃ... বিবেকের তাড়নায় সেই অনিরাপদ, অরাজনৈতিক এবং অজনপ্রিয় পথই বেছে নিয়েছিলেন মরহুম শফিউল আলম প্রধান। ১৯৭৪ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েও তৎকালীন দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের তালিকা প্রকাশ করে ব্রাত্য হয়েছিলেন নিজ দলের কাছে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় কারাবরণ করতে হয়েছিল তাকে।
প্রখ্যাত রাজনীতিক মিজানুর রহমান চৌধুরী তার রচিত ‘রাজনীতির তিনকাল’ বইয়ে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একদলীয় বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করতে না পারার তীরটিও ছুড়ে মারেন শফিউল আলম প্রধানের গায়ে। অনন্যা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেনÑ ‘নদীভাঙন দেখাতে একবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চাঁদপুর যাই। তার সাথে অন্য মন্ত্রীরাও ছিলেন। সরকারি জাহাজ চাঁদপুরে ভিড়ার সময় ছাত্রলীগের এক বিরাট গ্রুপ সে দিন স্লোগান দিয়েছিল, “প্রধান ভাইয়ের মুক্তি চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই।” তৎকালীন সরকারি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক শফিউল আলম প্রধান সেভেন মার্ডার কেসের অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে সে সময় কারাগারে আটক ছিলেন। যদিও এই ঘটনা বাকশাল গঠিত হওয়ার আগে কিন্তু আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, রাজনৈতিক হত্যার সমর্থনে স্লোগান শুনে সেদিন বাকশালবিরোধী সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে ভীত হয়ে পড়েছিলাম।’
আদর্শ বিসর্জন না দিতে শফিউল আলম প্রধান ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল গঠন করেন একটি রাজনৈতিক দল। সেই দল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি তথা জাগপার সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নানা পালাবদলের সাক্ষী ছিলেন। শফিউল আলম প্রধানের বড় গুণ ছিল তার অসাধারণ বাগ্মিতা। তিনি যখনই কোনো মঞ্চে উঠতেন, মাইকের সামনে এসে দাঁড়াতেন, সবাই একটু নড়েচড়ে বসতেন। ভরাট কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। বক্তব্যের একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল, যা তাকে আর দশজনের থেকে আলাদা করে নজর কাড়ত।
ইসলামী চেতনা ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন পুরোধা হিসেবে সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন। মাঝে মধ্যে অবমূল্যায়িতও হয়েছেন তারা। স্বাভাবিকভাবে এ নিয়ে তার কিছুটা নীরব অভিমান ছিল। কিন্তু দায়িত্ব পালন থেকে একচুল পিছপা হননি কোনো দিন। জাতির দুঃসময়ে রাজপথে নেমে এসেছেন বারবার। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের সাথে যতটুকু দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হয়েছে তাতে পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলোর দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনের যোগ্যতা তার আছে বলে মনে হয়েছে। বনানীতে চিরদিনের জন্য শুয়ে আছেন তিনি।
নীরবে শুয়ে আছেন, যদিও তা তাকে মানায় না। তাকে মানাতো মঞ্চ কাঁপানো বক্তৃতায়, কিংবা রাজপথের সরব মিছিলে, মানাতো আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রখর উত্তাপ ছড়ানো আন্দোলনে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, তাকে নীরবে শুয়ে থাকতে হচ্ছে মাটির ঘরে যে মাটির জন্য সারা জীবন তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। এ মহান নেতার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করি ও রূহের মাগফিরাত কামনা করি। হ
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার অবৈধ গাড়ি কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগে বিভেদ শরীয়তপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার আবাদ মিরসরাইয়ে ৩ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আলুতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা ফরিদপুরের পদ্মাপাড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ২৩ এস্কেভেটর ও ৮ ট্রাক ফেলে পালালো বালুদস্যুরা বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা গলাচিপায় নির্বাচনী মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাটোরে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে শোকজ হোসেনপুরে গ্রামের গ্রাহকরা দিনে এক ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না ঈদগাঁওতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ৭ প্রার্থীকে জরিমানা গাজীপুরে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন

সকল