২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : টেন্ডার দুর্নীতি এবং কিছু কথা

-

আমরা শুনে আসছি দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। যদিও খোদ রাজধানীতেই অনেক জায়গায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক খুব দুর্বল। ইন্টারনেট সেবায় আমরা উগান্ডারও পিছনে। এই উদাহরণটা দিয়েছি এজন্য যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার দেয়া হয় অনলাইনে। কিন্তু টেন্ডারে দুর্নীতি কমেনি। বলতে পারেন, আগে টেন্ডার বক্স ছিনতাই হতো, গোলাগুলি হতো। এখন হয় না। এখন সব প্রক্রিয়া ডিজিটাল সিস্টেমে হয়। তাই দুর্নীতির সুযোগ নেই। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।
গত ১০ মে ২০২২ ইং দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে একটি খবরের শিরোনাম ছিল-তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম কেনা/একটি ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ কোটি টাকার দরপত্র।
এই খবরের প্রতিবেদন থেকে কিছু কথা তুলে ধরছি: বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) তাদের একটি প্রকল্পের জন্য অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করেছে। সেখানে পণ্যের বিবরণ বোঝাতে গিয়ে সরাসরি একটি ব্র্যান্ডের নাম তারা অন্তত ৩৩ বার উল্লেখ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এতে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমবে এবং অন্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ সঙ্কুচিত হবে। ব্যানবেইস সরকারি খরচে ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছর মেয়াদি ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস)’ নামে একটি প্রকল্প করতে যাচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে তারা দুই ধাপে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন সরঞ্জাম অর্থাৎ হার্ডওয়্যার, সার্ভার কক্ষের সরঞ্জাম, রাউটার, ফায়ার ওয়াশ, কানেকটিভিটি সুইচ, ইউপিএস, এভিআর, ডিজেল জেনারেটর ইত্যাদি কিনবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার ঘুষ ছাড়া পাবেন এবং কমিশন ছাড়া সেখানের পার্চেজ অর্ডার বা ওয়ার্ক অর্ডার পাবেন এটা কল্পনা করাও কঠিন। ঘুষ লেনদেন ছাড়া বৈধ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি টেন্ডার পেয়েছে এমন উদাহরণ খুবই কম। শুধু সরকারিই নয়, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়, কমিশন তো আছেই।
আমি বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনেক বছর চাকরি করেছি। টেন্ডার নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়েছে। সেসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কখনো ভুলতে পারব না। দেশের নামকরা এক সরকারি প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। আমি সব ডকুমেন্ট নিয়ে যথাসময়ে টেন্ডার বক্সে টেন্ডার ফাইল জমা দিই। টেন্ডার মিটিংও হয়। সেখানকার এক সৎ অফিসার এর আগেই আমাকে ওখানে টেন্ডার জমা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। বলেছিলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়াটা আইওয়াশমাত্র। পরবর্তীতে সেটাই প্রমাণিত হয়। সেখানকার কর্মকর্তারা আগেই একটি নি¤œ মানের প্রতিষ্ঠানকে সিলেক্ট করে রেখেছিলেন বিশেষ স্বার্থে। উল্লেখ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিত।
পরে আমি অনেক কষ্টে জামানতের নব্বই হাজার টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হই। যদিও আমি ২০০৯ সালে সেই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিতে ছিলাম না। ডকুমেন্ট নিয়ে লড়াই করেছিলাম। ওই সরকারি প্রতিষ্ঠান আমাকে এনলিস্টেড করেছিলেন, কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় ওয়ার্ক অর্ডার দেননি।
দেশের নামকরা কয়েকটি সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার নিয়ে বেশ কাজ করেছি। বহু মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। তাদের কারো সাথে আমার তর্ক পর্যন্ত হয়েছে। যেমন ঢাকার রমনাতে অবস্থিত দেশের অত্যন্ত নামকরা এক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন কেন তাকে স্যার সম্বোধন করি না। এটা তিনি আমার কলিগকে বলেছিলেন।
বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেও বহু ঝামেলা পেয়েছি। মতিঝিলে অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এক বেসরকারি ব্যাংকের হেড অফিসে টেন্ডার জমা দিয়েছিলাম। তারা একটু ভদ্র কালচারের। তাদের অনেক নীতিনৈতিকতার চর্চা আছে এটা অনেকেই মনে করেন। তো সেখানে টেন্ডার ডকুমেন্ট জমা দিলাম। ব্যাংক ড্রাফট করলাম। অভিজ্ঞতায় টিকে গেলাম। লিস্টে নাম এলো। এনলিস্টেড হলাম। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার তারা পাঠাননি। খোঁজ নিলাম। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে জানালাম। তিনি তোষামুদি খুব পছন্দ করেন। স্যার স্যার ডাক খুব পছন্দ করেন। এসব আমাদের থেকে করা হয়নি। এজন্য আমরা দুই বছরে ওয়ার্ক অর্ডার পাইনি। এখন নিজে ব্যবসা নিয়েছি। আগারগাঁও অ্যাডমিন এরিয়াতে সরকারি বড় এক প্রতিষ্ঠান থেকে পত্রিকা দেখে টেন্ডার শিডিউল কিনলাম। সে সময়ও এক কর্মচারী ঘুষ চাইলেন। আমরা দুটি টেন্ডার শিডিউল কিনলেও একটিও সাবমিট করিনি। ঘুষ দিতে পারবো না বলে।
এই চৌদ্দ বছরে দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। প্রভাবশালীদের আত্মীয়স্বজন এবং আরো নানা সুবিধাভোগীরা সেসব পেয়েছেন। মিডিয়ায় আসেনি। অনেকে ভয়ে চেপে গেছেন।
আইসিটি বিভাগে কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি এটা অনেকেই বলেন। এই বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা নানা কৌশলে লুট হয়েছে। এক সময়ের রিকশাচালক এয়ারলাইনের মালিক হয়েছেন এমন কথাও শোনা যায়। রাষ্ট্রে সুশাসন না এলে এসবের তদন্ত এবং বিচার হওয়া খুব কঠিন। হ


আরো সংবাদ



premium cement