১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোভিড-১৯, হার্ড ইমিউনিটি কি সম্ভব

-

হার্ড শব্দের অর্থ পশুপাল এখানে জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হচ্ছে। ইমিউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ভ্যাকসিন নিয়ে বা ন্যাচারাল ইনফেকশনের মাধ্যমে সমাজের জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষের এমন সুরক্ষাবলয় তৈরি হওয়া, যার কারণে অন্য সব আনভ্যাকসিনেটেড বা আনইনফেক্টেড ব্যক্তিদেরও সুরক্ষা পাওয়া। এটি একটি নির্দিষ্ট ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ থেকে পরোক্ষভাবে একটি সমাজকে রক্ষার পদ্ধতি।
একসময় ভেড়ার পালকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে টিকা দেয়া হতো। ১০০টি ভেড়ার মধ্যে যদি ৮০টিকে টিকা দেয়া হতো তা হলে সংক্রমণ আর ওই ভেড়ার পালে ছড়াত না। যদিও ১০০টির প্রতিটিকে টিকা দেয়া হয়নি, তার পরও তাদের মধ্যে একধরনের সুরক্ষাবলয় কাজ করত। এটিই হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি।
হার্ড ইমিউনিটি তত্ত্বে¡র মূল শর্তই হলো- মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগের শরীরে একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়া, যাতে ভাইরাসের সংস্পর্শে এলেও তারা আক্রান্ত হবেন না
হার্ড ইমিউনিটি অর্জন এবং সাধারণ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের মধ্যে পার্থক্য কী?
হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হলে নতুন সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু সাধারণভাবে চালানো ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে কখনো সংক্রমণ, উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত করোনা বন্ধ হবে না। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঢিলেমি দেয়া যায় না। কিন্তু হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হলে স্বাস্থ্যবিধির তেমন একটি প্রয়োজন হয় না।
হার্ড ইমিউনিটি গড়ার মাধ্যমে সবচেয়ে উপকৃত জনগোষ্ঠী হলো অনেক বেশি অসুস্থ, অতিশয় বৃদ্ধ রোগী, কেমোথেরাপি ও অন্যান্য ইমিউনো সাপ্রেসিভ ড্রাগ প্রাপ্ত রোগী, নবজাতক, প্লীহায় অপারেশন করা রোগী, ক্যান্সার আক্রান্ত, রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট করা ও চলমান ডায়ালাইসিস প্রাপ্ত রোগী। এ ছাড়াও খোদ ইমিউন সিস্টেমকে আক্রান্ত করে, দুর্বল করে বা ফাঁকি দেয় যেমন- এইচআইভি, মাল্টিপল মায়েলোমা ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত রোগী হার্ড ইমিউনিটির ভালো সুবিধাভোগী।
ফলে ভ্যাকসিন ছাড়াই জনপদের বয়স্ক, দুর্বল, ইমিউনো কম্প্রোমাইজড ও কো-মর্বিড রোগীরাও ভ্যাকসিন ছাড়াই করোনা থেকে রক্ষা পাবে। আর সে ক্ষেত্রে ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর ওই নির্দিষ্ট ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকবে না; অর্থাৎ ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে।
এভাবে কোনো জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কার্যকর ওই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে ভাইরাসও আর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কোনো বাহক খুঁজে পাবে না।
অথচ সাধারণ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে এসব দুর্বল সাসেপ্টিবল হোস্টগুলোকে বরং আগেভাগেই টিকা নিশ্চিত করতে হয়।
জনসংখ্যার কতটা অংশে রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হলে তা গোষ্ঠীবদ্ধ অর্থাৎ হার্ড ইমিউনিটি তৈরিতে সহায়ক হয়, এ নিয়ে গাণিতিক মডেলও রয়েছে।
দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার গতি নির্ভর করে রিপ্রোডাকশন নম্বরের ওপর (একজন সংক্রমিত মানুষ গড়ে কতজন সুস্থ মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে তার পরিমাপ)। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে মূল দু’টি পথ। একটি হলো স্বাভাবিক সংক্রমণ, আরেকটি হলো টিকার প্রয়োগ।
স্বাভাবিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভাইরাসবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। সুস্থ হয়ে ওঠার পর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা বিভিন্ন মাত্রার। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগ ছড়ানোর সুযোগের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি সৃষ্টি করাটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে তুলনা করেছে।

হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের কৌশল
সমাজকে হার্ড ইমিউনিটির আওতায় নিয়ে আসতে হলে যথাযথ পদ্ধতিতে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
প্রক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ :
ক্স টিকা কার্যক্রম শুরু করতে হবে একটা ভৌগোলিক এরিয়ার সর্বত্র একসাথে এবং সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক সাসেপ্টিবল হোস্ট দিয়ে।
ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড যত শর্ট হবে, সংক্রমণ ক্ষমতা এবং আরো নম্বর যত বেশি হবে তত দ্রুত টিকা কার্যক্রম চালাতে হবে।
টিকা কার্যক্রম এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব যদি বেশি হয় তা হলেও অধিকসংখ্যক জনগণকে সম্পৃক্ত করে টিকা কার্যক্রম চালাতে হবে।
টিকা কার্যক্রম চালানোর আগে ওই এলাকায় যদি মহামারী চলমান থাকে তা হলে দ্রুত রোগ শনাক্ত করে আইসোলেশনে নিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। শনাক্তকৃত রোগীর ক্লোজ কন্টাক্টে যারাই আসবে তাদের প্রত্যেককেই ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। শনাক্তকৃত রোগীর রোগ সারার পরে এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগী ১৪ দিন পরই ভ্যাকসিন নিতে পারবে। গুচ্ছাকারে ও বিচ্ছিন্নভাবে টিকা দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা কঠিন।
ক্স সংশ্লিষ্ট এলাকার মহামারী রোগটি যে বয়সের এবং যে ধরনের লোকদের বেশি আক্রান্ত করে সেই বয়সের এবং সেই ধরনের লোকদের দিয়েই টিকা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
ক্স জীবাণুর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির ক্ষমতা সমাজে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠতে বাধা দেয়। এলাকার জনঘনত্ব, স্বাস্থ্যবিধি যত মানার হার এবং টিকা কার্যক্রমের আওতার ব্যাপ্তির ওপর নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্ভর করে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট মানেই নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং টিকার কার্যকারিতা কমে যাওয়া। ফলে প্রতিটি নব উদ্ভাবিত ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেই যদি নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায় তা হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন সহজ হয়।

হার্ড ইমিউনিটির থ্রেসোল্ড লেভেল
একটি সমাজে একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়তে মিনিমাম যে পারসেন্টেজের ভ্যাকসিনেশন হলে অন্যরা ভ্যাকসিনেশন ছাড়াই সুরক্ষা পায় তাকেই থ্রেসোল্ড হার্ড ইমিউনিটি বলে।
যে সংক্রামক রোগ যত বেশি ছোঁয়াচে তার থ্রেসোল্ড হার্ড ইমিউনিটি তত বেশি।
এ জন্য বিভিন্ন রোগের জন্য হার্ড ইমিউনিটির সংখ্যা নির্ধারণ করা আছে; অর্থাৎ একটি রোগের জন্য কোনো একটি কমিউনিটির কত সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে হবে, যার কারণে অন্যরা আর আক্রান্ত হবে না তার সংখ্যা নির্ধারণ করা আছে।
একজন হাম আক্রান্ত রোগী গড়ে ১৮ জনকে ইনফেকশন ছড়ায় এবং এর হার্ড ইমিউনিটি থ্রেসোল্ড হলো ৯০-৯৫ শতাংশ; অর্থাৎ হামের ক্ষেত্রে প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকেই (৯৫ শতাংশ) যদি প্রতিষেধক দেয়া যায় তা হলে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। হার্ড ইমিউনিটি গড়তে শতভাগ লোককে যেমন টিকা দেয়া সম্ভব নয় আবার প্রয়োজনও নেই।
উহানে আবিষ্কৃত অরিজিনাল সারসকভ-২ রিপ্রোডাকশন নম্বর ছিল গড়ে ২.৫। বারবার ভ্যারিয়েন্ট ফরমেশনের কারণে বর্তমানে একজন করোনাক্রান্ত রোগীর গড় রিপ্রোডাকশন নম্বর ৭-১০। নতুন ভ্যারিয়েন্ট যত বেশি হবে, হার্ড ইমিউনিটি গড়তে তত বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। এ জন্যই করোনার হার্ড ইমিউনিটি থ্রেসোল্ড নম্বর এখনো জানা যায়নি। তবে ভ্যারিয়েন্ট স্পেসিফিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলে তার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে হার্ড ইমিউনিটির ভবিষ্যৎ।

করোনার ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি সম্ভাবনা
প্রথমত, হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ফ্যাক্টরের উপস্থিতি থাকার কথা তার সব বর্তমানে বিরাজমান নেই।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। দিন যতই যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অনেকটা এন্ডেমিক ফ্লুর রূপ ধারণ করছে। তবে এখন সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুহার আগের চেয়ে কমছে। ১৯১৮ সালের প্যান্ডেমিক ফ্লু-এর বিদায়কালীন ঘটনার সাথে এই প্যান্ডেমিকের মিল এখানে যথেষ্টই বিদ্যমান। একটা নতুন করোনা ভ্যারিয়েন্টের তিনটি বৈশিষ্ট্য এমন যে, তা দিয়ে প্যান্ডেমিসিটির ভবিষ্যৎ খুব ভালোমতোই প্রেডিক্ট করা যায়। এন্টিবডিকে ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা, এর রিপ্রোডাকশন নম্বর অর্থাৎ ইনফেকসাসনেজ এবং এর রোগ মারাত্মক করার বা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কতটুকু। প্রথমোক্ত দু’টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে রোগজীবাণু অধিকসংখ্যক মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তৃতীয় বৈশিষ্ট্য ডিটারমাইন করে কত মারাত্মক এ ভ্যারিয়েন্টটি। সৌভাগ্য ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে প্রথমোক্ত দু’টি বৈশিষ্ট্য পুরোমাত্রায় থাকলেও রোগ মারাত্মক করার ক্ষমতা অনেক কম। আবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক এবং মডারেট ধরনের রোগ মারাত্মক করার ক্ষমতা থাকার কারণে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ভয়ঙ্কর ছিল। কিন্তু ডেল্টার সংক্রমণশীলতা ওমিক্রনের চেয়ে বেশ কম।
দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেয়া ব্যক্তি কিংবা এর আগে কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের সংক্রমণে আগের ধরনগুলোর চেয়ে বেশি মাত্রায় সফল হচ্ছে অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন; যে কারণে ভবিষ্যতেও এ ভাইরাস মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পারবে- এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, এটি মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই যে, বর্তমান বিশ্বব্যাপী চলমান ঢেউ কেবল ওমিক্রনের আবির্ভাবের ফসল। ওমিক্রমনের মতো ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব না হলেও ভাইরাসের স্বাভাবিক চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের কারণেই এরকম একটি সংক্রমণ ঢেউ এ সময়েই অবশ্যম্ভাবী ছিল, যা বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন। কাজেই বর্তমান সংক্রমণ ঢেউ মূলত ডেল্টা-ওমিক্রনের একযোগে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ফসল।
চতুর্থত, সমাজে বা রাষ্ট্রে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির পূর্বশর্ত হলো- টিকা বৈষম্য থাকতে পারবে না, তা বর্তমান বিশ্ব পুরোমাত্রায় আছে। তদুপরি বিশ্বের খুব কম দেশই ৮০ শতাংশ লোক টিকা পেয়েছে।
পঞ্চমত, মহামারীর শুরুর মতো স্বাস্থ্যবিধি বাস্তব কারণেই মানা যাচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ওলিভিয়ার লে পোলেইন বলেন, ‘মহামারীতে যে অভিজ্ঞতা আমরা পেয়েছি তাতে বলা যায়, একটি সীমার পর সংক্রমণ থেমে যাবে এমন তত্ত্বীয় মীমাংসায় পৌঁছানো বাস্তবসম্মত নয়।’
প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ টিকাগুলোর বাজারজাতই করা হয়েছে সংক্রমণ ঠেকানোর চেয়ে বরং রোগের কারণে মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা রোধের ন্যূনতম উদ্দেশ্যে। সুতরাং শুধু টিকার মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন সম্ভব নয়।
তবে সমাজে হার্ড ইমিউনিটি যদি নাও আসে, অন্তত নিয়ন্ত্রণে আসবে এতটুকু বলা যায়। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড হেইমান বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরন এবং ভবিষ্যতের ধরনগুলোর বিরুদ্ধে জনসাধারণের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভাগ্যবান এবং এ রোগের চিকিৎসা আওতার বাইরে যাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনেটেড ব্যক্তিরা আনভ্যাকসিনেটেড ব্যক্তিদের চেয়ে ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন।

হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে বর্তমান বিশ্বের অবস্থান
এ পর্যন্ত বিশ্বে টিকা প্রাপ্তির হার খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্বে ১৯৭টি দেশে মোট ৯০০ কোটি টিকার ডোজ সম্পন্ন হলেও তা মোটেই সুষম নয়। সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন ও ভারতে যথাক্রমে ৮৫ ও ৪৭ শতাংশ টিকার পুরো দুই ডোজ সম্পন্ন করেছে। কোনো কোনো দেশ বুস্টার হিসেবে চতুর্থ ডোজ টিকাও দিয়ে ফেলেছে। হার্ড ইমিউনিটি গড়তে টিকা দেয়ার গতি হতে হবে খুব দ্রুত, সুষম ও টিকা বৈষম্যহীন। কোনো একটি দেশ টিকা দান ৯০ শতাংশ হলেই যে তাতে হার্ড ইমিউনিটি এসে যাবে ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। যেমন- সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিব্রাল্টার, ব্রুনেই ও পর্তুগালে এক শ’ থেকে ৯০ শতাংশের ওপর লোকের টিকা দান সম্পন্ন হওয়ার পরও সেখানে সংক্রমণ হচ্ছে; কারণ গ্লোবালাইজেশনের যুগে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ অন্য দেশের সাথে আকাশ, নৌ কিংবা স্থলপথে যুক্ত। আজ যাকে ভ্যাকসিনেটেড করা হচ্ছে তার এন্টিবডির কার্যকারিতা তিন মাস পর নিঃশেষ হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মারাত্মক টিকা বৈষম্য তো আছেই।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্র্রোলের শীর্ষ ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষজ্ঞ পাসি পেনটিনেন বলেন, ‘যেসব টিকার উন্নয়নে কাজ চলছে, সেসব যদি করোনাভাইরাসের আগামী ধরনগুলো কিংবা একাধিক ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, তখন এ পরিস্থিত বদলাতে পারে। তবে সে জন্য সময় লাগবে। ওমিক্রন আসার আগ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এবং ০.৫-১ শতাংশ মারা গেছে। করোনার এই মৃত্যুহার বর্তমানে চলমান ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত মৃতুহারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
এতটুকু খুব ভালোমতোই বলা যায়, আমরা এবার হয়তো প্যান্ডেমিক থেকে এন্ডেমিক অবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তবে এটিও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে যে, দিন যতই যাচ্ছে ততই হার্ড ইমিউমিটির আশা ফিকে হয়ে আসছে। সুতরাং আপাতত ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো করোনার প্যান্ডেমিসিটি থেকে এন্ডেমিসিটিতে উত্তরণ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভাইরাসটি এমনভাবে দ্রুত রূপ বদল বা মিউটেট করতে পারে যে, আগের সংক্রমণ বা টিকা গ্রহণের ফলে তৈরি হওয়া সুরক্ষা এড়িয়ে যেতে পারে- এমনকি প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল না হলেও।
এ জন্যই করোনার সংক্রমণ বৈশিষ্ট্য, ভ্যারিয়েন্টগুলোর চরিত্র এবং টিকার এন্টিবডির স্থায়িত্ব ইত্যাদি সব বিবেচনায় নিয়ে বলতে হচ্ছে- সম্ভবত আমাদেরকে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো করে করোনার সাথে সহাবস্থান সহনীয় পর্যায়ে বসবাসে অভ্যস্ত হওয়ারই প্রস্তুতি নিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল