২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
দৃষ্টিপাত

আতশবাজিতে বর্ষবরণ : এ কেমন আচরণ

-

ইংরেজি ২০২২। শুরু ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিটে। প্রতি বছর ওই দিন গভীর রাতে আতশবাজির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। ঢাকা শহর উড়ন্ত বোমার আওয়াজ এবং আগুনের ফুলকিতে ছেয়ে যায়! ইংরেজি নববর্ষ বরণের নামে অপসংস্কৃতির সয়লাব বয়ে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরাঞ্চলে। বর্তমানে দেশের শহরাঞ্চলে বাস করে কোটি কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে অসুস্থ ও বয়স্ক যারা ঘুমিয়েছিলেন তাদের ঘুম ভাঙে আতশবাজির শব্দে। রাজধানীর ১০টি স্থানে আগুন লেগেছিল, মাতুয়াইলে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দু’টি ইউনিট নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশন আগুনের ফুলকির বিরুদ্ধে কোনো বিধিবিধান জারি করেনি। পুলিশ প্রশাসন ২০০০ সালের বাঁধনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কোনো ডিক্রি জারি করেনি। মধ্যরাতে রাজধানীর লাখ লাখ মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়া কি সংস্কৃতি! দেশের অগণন মানুষ সারারাত ঘুমাতে পারেননি। নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে করণীয় কি কিছুই নেই? তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মেট্রোপলিটন এলাকার পুলিশের। পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি এ দায় এড়াতে পারে?
সেদিন অসংখ্য মানুষ সারারাত ঘুমাতে পারেননি। খেটেখাওয়া মানুষের শান্তি বিনষ্ট করেছে একশ্রেণীর অবাধ্য তরুণ-তরুণী। বর্ষবরণের নামে কোটি কোটি টাকার আতশবাজি ফোটানো হয়েছে। নাগরিক জীবনে শান্তি বিনষ্ট হয়েছে, বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে। এসবই সামাজিক অপরাধের নামান্তর। কিন্তু কিশোর তরুণদের সে কথা বোঝানোর মতো কেউ নেই আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে! আতশবাজি ফোটানোর নামে সমাজবিরোধী প্রশিক্ষণ পেয়েছে তারা। ঢাকা শহরের প্রতিটি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণী অপসংস্কৃতির ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইংরেজি বর্ষবরণ উৎসবের নামে মুহূর্তের মধ্যে আতশবাজি পুড়িয়ে যখন বিপুল অর্থ হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তেই লাখ লাখ বুভুক্ষু শিশু-কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা খাবার অভাব ও ক্ষুধার যন্ত্রণা বুকে চেপে ঘুমাতে যাচ্ছেন। সেই মুহূর্তেই তাদের ঘুম ভেঙে যায় ইংরেজি বর্ষবরণের উৎসব পালনের নামে বিকট আতশবাজির শব্দে। আমরা দেখি ধনীরা জন্মদিন পালন, অনেক নেতা-নেত্রীর শুভেচ্ছা শুভকামনা করে পোস্টার টাঙায়, বিজ্ঞাপন দেয়, আতশবাজি ফুটিয়ে বিপুল টাকা টাকা অপচয় করেন। বিলাসিতায় এ অর্থ অপচয় না করে অভাবী গরিব পথশিশু কিশোর-কিশোরী উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে ধনীরা দেশের উন্নয়ন এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে পারে।
২০০০ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকার টিএসসি চত্বরে বাঁধন নামের এক মেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। বিষয়টি তখন সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। দিনের পর দিন পত্রিকার শিরোনাম ছিল বিষয়টি। সংসদেও এক সংসদ সদস্যের আলোচনায় সারা দেশে ব্যাপক হইচই হয়েছিল। থার্টিফার্স্ট নাইটে যারা বাঁধনকে লাঞ্ছিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছিল। রাসেল নামের এক ছেলে ও তার সাথীদের সর্বোচ্চ দাবি পর্যন্ত করা হয়েছিল। সরকার ও পুলিশ প্রশাসন ওই ঘটনার জন্য বিপাকে পড়েছিল। সংসদে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। একজন সংসদ সদস্য তো শুধু রাসেল নয়, বাঁধনেরও বিচার দাবি করেছিলেন।
ইংরেজি বর্ষবরণ, থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে মাতামাতি করতে দেশে বিপুলসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণীর সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের ফুলকির উড়ন্ত আতশবাজি নিক্ষেপ নতুন প্রজন্ম প্রশিক্ষণ পেয়েছে। কোটি কোটি টাকা অপচয় করে অপসংস্কৃতির আমদানি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অভিভাবক সুশীলসমাজ, রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ সব পর্যায়ের নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement