২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমাজ বিনির্মাণে গ্রামীণ নেতৃত্ব

-

বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর মানচিত্রে এক স্বাধীন, সার্বভৌম ও উন্নয়নকামী রাষ্ট্র। বিশ্বায়নের যুগে এদেশে উন্নয়নে সবিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে শহরা ও গ্রামাঞ্চল। শহর ও গ্রাম এই দু’টি কাঠামো নিয়েই আমাদের সোনার বাংলা। একটি দেশের শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলও আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একটি রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণে যেমন দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন; তেমনি গ্রামীণ সমাজের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গঠন, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে চাই দক্ষ ও ন্যায়বান গ্রামীণ নেতৃত্ব।
গ্রামীণ সমাজের সহজ, সরল ও নিরক্ষর মানুষকে সচেতন জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে আসে গ্রামীণ নেতৃত্ব। জনগণ তাদের অসচেতনতা, অজ্ঞতার কারণে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রামীণ নেতাদের দ্বারস্থ হয় এবং তাদের সিদ্ধান্তের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাস্তব প্রেক্ষাপটে একজন নেতা সামাজিক উন্নয়নে কতটুকু অবদান রাখে তা আজ প্রশ্নসাপেক্ষ।
খেয়াল করলে দেখা যায়, গ্রামীণ উন্নয়নে একজন নেতা কার্যকর ও বহুমুখী ভূমিকা পালন করেন। ঐতিহ্যগতভাবেই গ্রামীণ জনগণ স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথা মান্য করে। কারণ তারা গ্রামের মাথা বা বাবা-মা হিসেবে পরিচিত। গ্রামের সাধারণ মানুষ কোনো সমস্যার পতিত হলে নেতাদের কাছে পরামর্শ চায়। নেতারা সুপরামর্শ দিয়ে তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ অনেক কিছুর ব্যাপারে সবিশেষ জানে না। তবে গ্রামীণ নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবে শিক্ষিত ও সচেতন। তারা সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সীমাহীন সমস্যা অতিক্রম করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়। গ্রামীণ অনগ্রসর অংশ সচেতন হয়। সমাজ এগিয়ে যায়।
গ্রামীণ নেতৃত্ব সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির কাজ করে। সরকারের একার পক্ষে গ্রামীণ জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। গ্রামীণ নেতৃত্ব উন্নয়নের নতুন মডেল ও কৌশল উদ্ভাবন করতে পারে। গ্রামীণ সমাজে কখন কী কী করতে হবে, কী ধরনের পদক্ষেপ নিলে গ্রামীণ উন্নয়ন সম্ভব ও গ্রামবাসী উপকৃত হতে পারে- এসব ক্ষেত্রে গ্রামীণ নেতৃত্বই সঠিকভাবে বুঝতে পারে।
সাধারণ মানুষকে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করে গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে গ্রামীণ নেতৃত্ব। সরকারি নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে গ্রামীণ নেতৃত্ব। একটা গ্রামীণ সমাজে কখন কী প্রয়োজন সব বিষয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে গ্রামীণ নেতৃত্ব। একজন আদর্শবান গ্রামীণ নেতা সমাজকে ঢেলে সাজাতে যেমন পারেন তেমনি সমাজের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণেও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখেন। যেমন- গ্রামের রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ, স্কুল, মাদরাসা, খেলার মাঠ সব সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ ও পুনঃসংস্কারে এগিয়ে এসে গ্রামীণ উন্নয়নে অবদান রাখেন। তৃণমূল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও এগিয়ে নিতে আদর্শবান গ্রামীণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই।
এ দেশের প্রতিটি গ্রামে উন্নয়ন করা গেলে দেশব্যাপী উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে, তবে তার জন্য ন্যায়নিষ্ঠবান নেতার প্রয়োজন। একটি মুদ্রার যেমন দু’টি পিঠ থাকে তেমনি বাংলাদেশের গ্রামীণ নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তার বিপরীত নয়। একজন নেতা সমাজে যেমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তেমনি চাইলে তিনি অবিচার করতে পারেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানব-উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোর যে কঙ্কাল চিত্র তা সবার দৃষ্টিগোচর। কারণ তারা এসব বাজেট ও সরকারি অর্থায়নের বেশির ভাগ পকেট ভর্তি করে থাকেন। যার ফলে আজো গ্রাম ও শহরের আকাশ-পাতাল তফাত। গ্রামীণ সমাজে অনেক সময় ঝগড়া, বিবাদ, মারামারি, জমিজমাসংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো তারা মীমাংসা না করে আরো জটিল করে থাকেন। এতে করে দুর্বলরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন এমনকি অনেক সময় টাকা নিয়ে তারা সত্য গোপন করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। অনেক সময় ব্যক্তিগত কোনো রাগ, ক্ষোভ বা পারিবারিক বিষয়ে কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে তারা চলমান সমস্যা সমাধান করেন না, বরং আরো তা বৃদ্ধি করেন। সমাজ উন্নয়নে তাদের অবদান যে ক্ষীণ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার দিকে নজর দিলেও দেখতে পাই। তারা গ্রামের সাধারণ মানুষকে রিলিফের চাল, গম বিভিন্ন নামে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতার জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে টিউবওয়েল, গরু ও ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি সরকারি বা বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সাহায্যগুলো না দিয়ে তা বিক্রি করে দেন।
একটি আদর্শবান সমাজ বিনির্মাণে একজন গ্রামীণ আদর্শবান নেতৃত্ব যেমন রোলমডেল, ঠিক তেমনি একটি সমাজ ধ্বংস, অসামাজিকতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বৃদ্ধি করতেও তারাই মুখ্য। একটি পরিবারের বাবা-মা অথবা প্রধান যদি ভালো হয় তবে পরিবারটা ভালো হবে আশা করা যায়। ঠিক তেমনি একটি ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শবান ও সুশীলসমাজ গঠনে আদর্শবান নেতৃত্ব দরকার। তাই আদর্শবান নেতৃত্ব গঠনে ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, বলিষ্ঠ ও শিক্ষিত মানুষের নেতৃত্বে আশার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

 


আরো সংবাদ



premium cement