২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্ম র ণ

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ

-

আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব নবাব স্যার সলিমুল্লাহর জন্ম ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলে ১৮৬৬ সালে। তিনি ছিলেন মুসলিম বাংলার নবজাগরণের পুরোধা, বঙ্গভঙ্গের মহানায়ক, প্রখ্যাত শিক্ষাব্রতী, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ। তিনি নবাব খাজা আহসানউল্লাহর পুত্র। সলিমুল্লাহ বিদেশী শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে গৃহে শিক্ষা লাভ করেন। কর্মজীবনে কিছুকাল ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে দায়িত্ব পালন (১৮৯৩-১৮৯৫) করার পর ১৯০১ সালে পিতার মৃত্যু হলে নিযুক্ত হন পরিবারের প্রধান (নবাব)। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনিই রাজনীতিতে প্রথম সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তদানীন্তন ভারতের নবগঠিত ব্যবস্থাপক সভায় কোনো মুসলমান নির্বাচিত না হতে পারায় আগা খাঁ, নবাব মুহসীনুল মুলক, নবাব ভিকারুল মুলক, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ মুসলিম নেতার সাথে মিলে তিনি ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর বড় লাট (ভাইসরয়) লর্ড মিন্টোর (১৯০৫-১৯১০) সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা ব্যবস্থাপক সভা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় মুসলমানদের আলাদা নির্বাচনের দাবি জানান। সলিমুল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য ঢাকায় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন (১৯০৬) আহ্বান করেছিলেন।
মুসলিম সমাজে রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য সেই সম্মেলনে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনে নেতৃত্ব দান (১৯০৬) করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের তিনিই প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, যা বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), তার প্রতিষ্ঠাতা। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকায় একটি এতিমখানা (সলিমুল্লাহ এতিমখানা, আজিমপুর) একটি মেডিক্যাল কলেজ (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা), একটি কলেজ (সলিমুল্লাহ কলেজ, টিপু সুলতান রোড, ঢাকা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীনতম একটি ছাত্রাবাস (সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) ও একটি রাস্তার (সলিমুল্লাহ রোড, নারায়ণগঞ্জ) নামকরণ হয়েছে।
এ দেশের অনুন্নত মুসলমান সমাজকে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তার অবদান অবিস্মরণীয়। উপমহাদেশের উত্তর প্রদেশের অনুন্নত মুসলমানদের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদের যে অবদান, তার সাথে নবাব সলিমুল্লাহর অবদানের তুলনা করা যায় সহজেই। মুসলমানদের অবস্থার উন্নতিকল্পেই তিনি ব্রিটিশ শাসকের কাছে বঙ্গবিভাগের দাবি পেশ করেন। বলা যায়, তার একক প্রচেষ্টায়ই তদানীন্তন বড় লাট লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে হিন্দুসমাজ ও কংগ্রেসের উগ্রবাদী আন্দোলনের চাপে সরকার বঙ্গভঙ্গ রহিত (১৯১১) করতে বাধ্য হয়। এতে নবাব সলিমুল্লাহ অত্যন্ত ব্যথিত হন। নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (১৯০৬) গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে সলিমুল্লাহ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগে নবাব ভিকারুল মুলকের সভাপতিত্বে মুসলিম নেতাদের এক অধিবেশনে নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব অনুসারেই শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, পশ্চাৎপদ মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার আদায় ও রক্ষার উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ ৪৪ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন।
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন আবুড়ী
তথ্য ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ


আরো সংবাদ



premium cement

সকল