২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কিভাবে কাজ করে নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিন

-

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে বর্তমান বিশ্বে দুই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হচ্ছে। একটিকে আমরা বলি কনভেনশনাল ভ্যাকসিন, অপরটিকে নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিন। লাইভ হোল সেল ভ্যাকসিন, কিল্ড হোল সেল ভ্যাকসিন, সাব-প্রোটিন ভ্যাকসিন, টক্সয়েড ভ্যাকসিন প্রভৃতি কনভেনশনাল ভ্যাকসিনের উদাহরণ। মেসেঞ্জার আরএনএ এবং লাইভ ভাইরাল ভ্যাক্টর ভ্যাকসিন নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিনের উদাহরণ।
নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিন প্রধানত দুই প্রকার : ডিএনএ ভ্যাকসিন এবং আরএনএ ভ্যাকসিন। যে জীবাণু দিয়ে মানুষ আক্রান্ত হয় সেই জীবাণুর শুধু জেনেটিক কোড ব্যবহার করে যে ভ্যাকসিন তৈরি হয় তাকেই নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিন বলে।
ডিএনএ ভ্যাকসিনের টেকনোলজি হলো, ভ্যাকসিনকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাংসে প্রবেশ করানোর পর তা সেলের সাইটোপ্লাজম হয়ে নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে ট্রান্সক্রিপশন তথা ডিএনএকে আরএনএতে রূপান্তর করে। রূপান্তরিত আরএনএ তার পর সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে এবং ট্রান্সসেøশন তথা প্রোটিন তৈরির কাজ শুরু করে।
আরএনএ ভ্যাকসিন সরাসরি সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে সরাসরি ট্রান্সস্লেশন প্রক্রিয়ায় প্রোটিন তৈরি শুরু করে। নিউক্লিয়াসে প্রবেশের প্রয়োজন হয় না।
নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
এখানে বি-সেল এবং টি- সেল এই উভয় ধরনের ইমিউন রেসপন্স হয়।
যে জীবাণুর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি হয় তার কোনো জীবিত অংশ ভ্যাকসিনে থাকে না। ফলে ভ্যাকসিন ট্রাইগারিং কোনো ইনফেকশনের চান্স নেই।
কম খরচ, ইফেক্টিভ, কস্ট-ইফেক্টিভ এবং অল্প সময়ে অনেক সহজে অনেক বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে।
বুস্টার ডোজের প্রয়োজন হতে পারে।
ভঙ্গুর, স্বল্পস্থায়ী ও আল্ট্রা-কোল্ড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু ডিএনএ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে আল্ট্রাকোল্ড তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরএনএ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়।

আরএনএ ভ্যাকসিনের বৈশিষ্ট্য :
প্রথমত, এটি নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিনের মধ্যে সহজ সরলতম ভ্যাকসিন। এখানে শুধু স্পেসিফিক জিনকে এনকোড করা হয়।
দ্বিতীয়ত, খুব অল্প সময়ে কম খরচে এক সাথে প্রচুর ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায়।
তৃতীয়ত, কাজ করার পরপরই ভেঙে যায় ফলে মানব কোষের আর কোনো অংশের ক্ষতিসাধন করতে পারে না।
চতুর্থত, ব্যবহার বেশ নিরাপদ কারণ এদের তুলনামূলক কম ইমিউনোজেনিসিটি গুণসম্পন্ন যার কারণে সাইড এফেক্ট কম হয়।
পঞ্চমত, নিওক্লিওসাইড মডিফিকেশনের কারণে এর ইন্ন্যাট ইমিউন রেসপন্স কমে যায় বটে কিন্তু এর ফলে ভ্যাকসিনের স্থায়িত্ব ও ট্রান্সসে­শন ক্ষমতা বেড়ে যায়।
ষষ্ঠত, আরএনএ ভ্যাকসিনকে নিউক্লিয়ার ব্যারিয়ার পার হওয়ার প্রয়োজন হয় না বলে মানব ডিএনএকে সুরক্ষিত রেখেই কার্য সম্পাদন করতে পারে।
আরএনএ করোনা ভ্যাকসিন দু’ভাবে ব্যবহার করা হয়। নন-ভাইরাল ভেক্টর আরএনএ ভ্যাকসিন এবং লাইভ ভাইরাল ভেক্টর আরএনএ ভ্যাকসিন।
ফাইজার-বাযেয়োএনটেক ও মডার্নার মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনগুলো নন-ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন, কারণ এতে লিপিড ন্যানোপার্টিকেলকে নন-ভাইরাল ভ্যাক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন, স্পুটনিক-ভি লাইভ ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। কারণ এতে জীবিত এডেনো ভাইরাসের মডিফাইড ভার্সন ভেক্টর বা বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
করোনাভাইরাসের কেন্দ্রে থাকে আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিক এসিড হলো একধরনের নিউক্লিক এসিড। এই নিউক্লিক এসিডের মধ্যেই থাকে করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড বা ব্লু প্রিন্ট। এই জেনেটিক কোডই পুরো ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা একে ভাইরাসের ব্রেইনও বলতে পারি।
করোনাভাইরাসে অন্তত তিনটি অতি সংবেদনশীল অংশ আছে, যাদের কারণে মানব শরীরে ভাইরাস ঢোকার সাথে সাথেই এন্টিজেনিক রিঅ্যাকশন হয় এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। করোনাভাইরাসের সারফেসে থাকে স্পাইক প্রোটিন, যা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। এ ছাড়াও ভাইরাসের কেন্দ্রে থাকা আরএনএ এবং তাকে তোয়ালের মতো পেঁচিয়ে থাকা নিওক্লিওক্যাপ্সিড প্রোটিনও এন্টিজেনিক গুণসম্পন্ন। টিকার মূল উদ্দেশ্য হলো মানব শরীরে এই নির্দেশনা ঢুকিয়ে দেয়া যেন সে করোনাভাইরাসের মতো স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে যেন এই মিথ্যা স্পাইক প্রোটিনের উপস্থিতিতে আমাদের ইমিউন সেল ভবিষ্যতের জন্য অ্যান্টিবডি ও মেমোরি সেল তৈরি করে রাখে। ভবিষ্যতে সত্যিকারের করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে শরীরের এই ইমিউন সেলগুলো ভাইরাসকে চিনে ফেলে এবং আক্রমণ করে মেরে ফেলে।
এই ফাইজার-বায়োন্টেক ও মডার্না- এই দুটি ভ্যাকসিনকে মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন বলে। কারণ এখানে আরটিফিসিয়ালি মেসেঞ্জার আরএনএ ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে তা দিয়ে ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যবহার করে। এই জেনেটিক কোডটি আর কিছুই না, বরং তা হলো করোনাভাইরাসের সারফেসে থাকা স্পাইক প্রোটিন তৈরি করার নির্দেশনা।
ভাইরাসের এই জেনেটিক কোড নিয়ে মেসেঞ্জার আরএনএ যখন মানুষের শরীরে টিকার মাধ্যমে ঢোকে, তখন এরা মানুষের শরীরের কোষের নিউক্লিয়াসে থাকা ডিএনএকে বলে তোমরা এখন ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরি করো। কিন্তু স্পাইক প্রোটিন তৈরি হওয়ার পর আমাদের শরীরের ইমিউন সেলগুলো এই স্পাইক প্রোটিনগুলোকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি এবং মেমোরি সেল তৈরি করে রাখে যেন এরকম স্পাইক প্রোটিনওয়ালা সত্যিকারের করোনাভাইরাস ঢুকলেই চিনে ফেলে এবং আগেই তৈরি করে রাখা অ্যান্টিবডি দিয়ে ভাইরাসকে মেরে ফেলে। এমআরএনএ ভ্যাকসিন ন্যাচারাল ইনফেকশনের মতোই আচরণ করে বিধায় এতে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন মেটারিয়ালকে লিপিড ন্যানো পার্টিকেলের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতে এটির সহজ সংরক্ষণ হয় এবং মানুষের সেলের লিপিড বাই-লেয়ার মেমব্রেন ভেদ করে ভেতরে ঢোকে। সেলের ভেতরে সাইটোপ্লাজমে ঢুকার পর মেসেঞ্জার আরএনএ’র নির্দেশনা মোতাবেক মানব কোষের ডিএনএ তার কাজটি করে। তবে ভ্যাকসিনটি অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণ অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতোই। যেহেতু মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন কোনো সক্রিয় জীবাণু থেকে তৈরি হয় না সুতরাং এই ভ্যাকসিন কখনো ইনফেকশন করতে পারে না। আবার এর এন্টিজেন সেলের ভেতরে তৈরি হওয়ার কারণে মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনে সেলুলার ও হিউমোরাল- এই দুই ধরনের ইমিউনিটি তৈরি হয়।

মেসেঞ্জার আরএনএ এর ইতিবৃত্ত :
১৯৬১ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম ন্যাচারাল মেসেঞ্জার আরএনএ আবিষ্কার করে। ১৯৭৮ সালেই প্রথম লিপিড ন্যানো পার্টকেলে মেসেঞ্জার ঢুকিয়ে সেলের ভিতর প্রবেশ করানোর টেকনোলজি আবিষ্কৃত। ১৯৮৪ সালে সেলের বাইরে ল্যাবরেটরিতে প্রথমবারের মতো মেসেঞ্জার আরএনএ ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৮৯ সালে মেসেঞ্জার আরএনএভিত্তিক ড্রাগ আবিষ্কারের কন্সেপ্ট বের করেন। ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো মেসেঞ্জার আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন আবিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে মেসেঞ্জার আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে সেলুলার বা টি-সেল মেডিয়েটেড ইমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব তার ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৯৫ সালে মেসেঞ্জার আরএনএ’র ব্যবহারে হিউমোরাল ইমিউনিটির ধারণা এবং একে এনকোড করে আবিষ্কার করা ভ্যাকসিনকে ক্যান্সারের চিকিৎসায় কাজে লাগানো শুরুর ধারণা তৈরি হয়।
নিওক্লিওসাইড মডিফাইড আরএনএ যে নন-ইমিউনোজেনিক সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা জন্মে ২০০৫ সালে। নিউক্লিওসাইডকে মডিফাই করে আরএনএ’র স্থায়িত্ব বাড়ানো এবং প্রোটিন তৈরির টেকনিক সম্পর্কে ধারণা আবিষ্কার করে ২০০৮ সালে। মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রথমবারের মতো মেসেঞ্জার আরএনএ’র ব্যবহার শুরু ২০০৯ সালে। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ফ্লু এবং রেস্পিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস স্পেসিফিক মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু। ২০১৭ সালে মেসেঞ্জার আরএনএ ক্যান্সার ভ্যাকসিনের মানুষের ওপর ট্রায়াল চলে। মেসেঞ্জার আরএনএ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয় ২০২০ সালে।
মেসেঞ্জার আরএনএ ’র সুবিধা ও অসুবিধাগুলো :
মেসেঞ্জার আরএনএ’র বেশ কিছু সুবিধাজনক অবস্থান আছে যা অন্যান্য ট্রেডিশনাল ভ্যাকসিন থেকে আলাদা। যেমন- এমআরএনএ ভ্যাকসিন ডিজাইন করা সহজ এবং প্রডাকশন স্পিড অনেক বেশি।
জরুরি প্রয়োজনে অতি অল্প সময়ে অনেক ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় এবং মানব কোষের ডিএনএ’র কর্মকাণ্ডে কোনো বিঘœ সৃষ্টি করে না। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে সেল-মেডিয়েটেড এবং হিউমোরাল ইমিউনিটি- এই দুই ধরনের ইমিউনিটি তৈরি হয়। কিন্তু ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিনে সাধারণত হিউমোরাল ইমিউনিটি অর্থাৎ অ্যান্টিবডি মেডিয়েটেড বা বি-সেল মেডিয়েটেড ইমিউনিটি তৈরি হয় কিন্তু সেল-মেডিয়েটেড ইমিউনিটি বা টি-সেল ইমিউনিটি তৈরি হয় না। তবে এমআরএনএ ভ্যাকসিন একটি ভঙ্গুর ভ্যাকসিন। অনেক কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে না পারলে এটি নষ্ট হয়ে যায়। এমআরএনএ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে আল্ট্রা-কোল্ড (-৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় (যেমন, ফাইজার-বায়োন্টেক) যা অনেক গরিব দেশের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তবে অন্য মেসেঞ্জার আরএনএ যেমন মডার্না, কিউর ভ্যাক এবং ওয়ালভ্যাক্স ইত্যাদির সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এতে কম তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না। মডার্না ভ্যাকসিন -২৫ থেকে -১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়, যা আমাদের প্রত্যেকের ঘরে থাকা ফ্রিজেই সম্ভব। এমনকি মডার্না ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত অক্ষত রাখা যায়। অপেক্ষাকৃত বেশি তাপমাত্রায় সহনীয় ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রক্রিয়ার গবেষণা দেশে দেশে এখন চলমান।
মেসেঞ্জার আরএনএ হলো ল্যাবরেটরিতে প্লাজমিড ডিএনএ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে আরএনএ পলিমেরেজ এঞ্জাইমসহ আলাদা করা একটি অংশ যার মধ্যে করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড বা নির্দেশনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এই মেসেঞ্জার আরএনএ’র শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এর সাথে সিন্থেটিকালি ৫-ক্যাপ এনালগ যুক্ত করা হয়।
কিভাবে জেনেটিক কোড সমৃদ্ধ এমআরএনএ মানব কোষে ঢোকে (ট্রান্সফেকশন) :
একটি ভ্যাকসিনকে সফলতার পর্যায়ে নিতে গেলে মেসেঞ্জার আরএনএ’র পর্যাপ্ত পরিমাণ হোস্ট সেলের সাইটোপ্লাজমে জায়গা করে নিতে হবে। কিন্তু মেসেঞ্জার আরএনএ’র সাইজ হোস্ট সেল মেমব্রেনের ছিদ্রের সাইজের চেয়ে বড় এবং নিগেটিভলি চার্জড। ফলে হোস্ট সেল মেমব্রেনে সহজে ঢুকতে পারে না।
ভ্যাকসিন আকারে মেসেঞ্জার আরএনএ যেন সহজেই ভ্যাকসিনযোগ্য মানুষের হোস্ট সেলের ভেতর ঢুকতে পারে সে জন্য বিভিন্ন উপায়ে সেলের ভেতর ঢোকার ব্যবস্থা করা হয়। আর মেসেঞ্জার আরএনএ’র কাজ সেলের সাইটোপ্লাজমে না ঢোকা পর্যন্ত শুরুই করতে পারে না।
যে পদ্ধতিতে মেসেঞ্জার আরএনএ বা জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল মানব কোষে ঢোকে, সে পদ্ধতিকে ট্রান্সফেকশন বলে। ট্রান্সফেকশন মানে ইনফেকশন বাই ট্রান্সফরম্যাশন। ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা এমআরএনএ ম্যাটেরিয়ালের ভেতর যখন করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড ঢুকিয়ে হয়, তা সরাসরি মানব কোষে ঢুকতে পারে না। জেনেটিক কোড-সমৃদ্ধ এই এমআরএনএকে যুৎসই বাহকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। লিপিড ন্যানোপার্টিকেল হলো এ ধরনের একটি বাহক। এমআরএন সরাসরি মানব কোষে ঢুকতে না পারায় একে ন্যানোপার্টিকেলের ভেতর ঢুকানো হয়। লিপিড ন্যানোপার্টিকেল লিপিড সলিউবল হওয়ায় এমআরএনএসহ মানব কোষের ভেতর সহজেই ঢুকে যায়। এই প্রক্রিয়াই হলো ট্রান্সফেকশন।
মানব কোষের ভেতরে সহজেই এমআরএনএ যেন ঢুকতে পারে সে জন্য কয়েকটি ভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হয়। এই নন-ভাইরাল উপায়গুলো ভেক্টর হিসেবে কাজ করে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সফেকশন ও ট্রান্সডাকশন সম্পর্কে জানা জরুরি।
ট্রান্সফেকশন হলো অ-ভাইরাল পদ্ধতিতে মানব কোষে নিউক্লিক এসিড ঢুকানোর প্রক্রিয়া।
আর ট্রান্সডাকশন হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে বিদেশী ডিএনএ ভাইরাল ভেক্টরের মাধ্যমে অন্য কোষে (এখানে মানব কোষ) ঢুকানো হয়। হোস্ট কোষে একটি বিদেশী জিন ঢুকানোর এগুলো সাধারণ সরঞ্জাম।
প্রথমত, খালি আরএনএ বাফার সলিউশনে মিশ্রিত করে সরাসরি চামড়ার নিচে ইঞ্জেকশন আকারে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। তবে এর মাধ্যমে যে ইমিউন রেসপন্স হয় তা দুর্বল মানের এবং ইঞ্জেকশনের পরে খুব দ্রুত তা নিঃশেষ হয়।
দ্বিতীয়ত, রিকম্বিন্যান্ট মেসেঞ্জার আরএনএ’র সাথে ক্যাটায়োনিক পলিমার মিশ্রিত করে শরীরে ঢুকালে তা সহজেই সেলের ভেতর ঢুকে যায়। প্রোটামিন নামক একটি ন্যাচারাল ক্যাটায়োনিক পেপ্টাইড দিয়ে মেসেঞ্জার আরএনএকে এনক্যাপসুলেট করে ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তৃতীয়ত, ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে মেসেঞ্জার আরএনএকে লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের ভেতর ঢুকার টেকনিক আবিষ্কার হয় ১৯৮৯ সালে। প্রথমবারের মতো মানুষ জানতে পারে যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি মেসেঞ্জার আরএনএ’র ভেতর একটি নির্দিষ্ট প্রাণীর জেনেটিক কোড ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে অন্য একটি প্রাণীর কোষে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। তার পর এই জেনেটিক কোডের নির্দেশনায় ওই অন্য প্রাণীর কোষের মেশিনারি ব্যবহার করে প্রোটিন তথা অ্যান্টিবডি তৈরি করা যায়। প্রোটিন তৈরির এ ধারণা থেকেই মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সফলতা পেয়ে যায়।
চতুর্থত, ইলেকট্রোপোরেশন যেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ইলেকট্রনিক ইম্পালস দেয়া হয়, যাতে সেল মেমব্রেনের ছিদ্র বড় হয়ে সহজেই জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল সেলের ভেতর ঢুকে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে জিন গানও বলা হয়।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয় ২০০৮ সালে। বায়োন্টেক ও মডার্না এই উভয় কোম্পানি যথাক্রমে ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে আর্টিফিসিয়ালি মেসেঞ্জার আরএনএ উৎপাদন শুরু করে। মেসেঞ্জার আরএনএ টেকনিক ব্যবহার করে ইনফ্লুয়েঞ্জা, জিকা ভাইরাস? সাইটোমেগালোভাইরাস ও চিকুনগুনিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্লু খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা এর বিরুদ্ধে মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে ব্রত হয়। শেষ পর্যন্ত ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে ফাইজার-বায়োন্টেক এবং ১৯ ডিসেম্বর মডার্নার টিকা ইমার্জেন্সি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
মেসেঞ্জার আরএনএকে লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের ভেতর এনক্যাপসুলেট করে হোস্ট সেলের ভেতর সহজেই ঢুকানোর টেকনিক ২০১৮ সালে এফডিএ কর্তৃক অনুমোদন পায়।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং ট্রেডিশনাল ভ্যাকসিনের মধ্যে কাজের বিস্তর ব্যবধান। ট্রেডিশনাল ভ্যাকসিন বলতে করোনাভাইরাসের জীবিত দুর্বল বা মৃত অংশ পুরো অংশ বা এর প্রোটিন সাব-ইউনিট ব্যবহার করে যে ভ্যাকসিন তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাস তৈরি করে নিতে হয় অনেক বেশি খরচ করে এবং অনেক সময় অসাবধানতাবশত ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। এভাবে তৈরি অনেক ভ্যাকসিন বিশেষ করে ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন দিয়ে মূলত হিউমোরাল অ্যান্টিবডি তৈরি হয় কিন্তু মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনে প্রোডাকশন খরচ কম, খুব দ্রুত অনেক ভ্যাকসিন তৈরি করা যায় এবং জেনেটিক কোড ব্যবহার করার কারণে সেল-মেডিয়েটেড এবং হিউমোরাল- এই দুই ধরনের ইমিউনিটিই এখানে তৈরি হয়। যেমন- মডার্না এমআরএনএ-১২৭৩ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি মাত্র দুই দিনেই ডিজাইন করে ফেলেছে। ফাইজার-বায়োন্টেক কোম্পানির মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরিতে ১১০ দিন লাগার কথা বলা হলেও প্রকৃত প্রোডাকশন সময় মাত্র ২২ দিন। এ জন্য দুই সপ্তাহ লাগে প্লাজমিড ডিএনএ থেকে মলিকুলার ক্লনিং এবং পিউরিফাই করতে, চার দিন লাগে ডিএনএ থেকে আরএনএতে রূপান্তর করতে আর বাকি চার দিন লাগে মেসেঞ্জার আরএনএকে লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে।
বর্তমানে দুই ধরনের মেসেঞ্জার আরএনএ ব্যবহৃত হচ্ছে।
একটি হলো নন-এমপ্লিফাইং অথবা কনভেনশনাল মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন, আরেকটি হলো সেল্ফ এমপ্লিফাইং মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন (এসএ- এমআরএনএ)। দুই আরএনএ ভ্যাকসিনের কাজের ধরন ভিন্ন। ফাইজার-বায়োন্টেক ও মডার্না কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন হলো কনভেনশনাল মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনের উদাহরণ। এখানে যে পরিমাণ মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনের ভেতর থাকে ঠিক সে পরিমাণই ব্যবহার মানুষের সেল ব্যবহার করতে পারে, এর বেশি নয়। সুতরাং এখানে কতটুকু ডোজ দিলে কাজ হবে তা নির্ধারিত হয় ভ্যাকসিনের সাথে থাকা মেসেঞ্জার আরএনএ’র পরিমাণের ওপর। এসএ- এমআরএনএ ভ্যাকসিন মানুষের কোষের ভেতর ঢুকে নিজে নিজেই র্যাপ্লিকেট করে। ফলে ভ্যাকসিন তৈরিতে সামান্য পরিমাণ মেসেঞ্জার দিলেও পরে কোষের ভেতর ঢুকে নিজের চাহিদামতো র্যাপ্লিকেট করে নিতে পারে। এখানে প্রয়োজন হয় আরএনএ ডিপেন্ডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম।
সেকেন্ড জেনারেশন মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন :
আমেরিকার ক্লিনিক্যাল-স্টেজ বায়োটেকনোলজি কোম্পানি হলো ‘গ্রিটস্টোন বায়ো’ নামক কোম্পানি যাদের কাজই হলো ক্যান্সার, সংক্রামক রোগের ইমিউনোথেরাপি এবং ভ্যাকসিন উৎপাদন। এই কোম্পানির আবিষ্কৃত ‘এসএ-এমআরএনএ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন’ ফেজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। এটি হলো সেকেন্ড জেনারেশন সারসকভ-২ ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন বুস্টার ডোজ ব্যবহারে কাজে লাগবে। ভ্যাকসিনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে স্পাইক প্রোটিনসহ অন্য আরো যেসব এন্টিজেনিক প্রোটিন কম্পোন্যান্ট সারসকভ-২ ভাইরাসে আছে- তার বিরুদ্ধেও অ্যান্টিবডি তৈরি এবং টি-সেল নির্ভর কাজ করতে পারে। ফলে এই ভ্যাকসিন প্রায় সব রকমের ভ্যাকসিন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেই কাজ করবে।
ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে :
জেনেটিক কোড-সমৃদ্ধ এমআরএনএকে মানব কোষে ঢুকানোর আরেকটি টেকনিক হলো লাইভ ভেক্টর ব্যবহার করা। এদেরকে লাইভ ভেক্টর বলে। এসব ভেক্টর লাইভ ভাইরাসও হতে পারে আবার ব্যাকটেরিয়াও হতে পারে। একটি ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে যখন অন্য একটি মডিফাইড ভাইরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তা আবার মানব কোষের ভেতর ঢুকানোর জন্য যে প্রক্রিয়া তাকেই বলে ট্রান্সডাকশন। যেমন- শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করা মডিফাইড এডনোভাইরাসের ভেতর করোনাভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ঢুকানো হয়। পরে তা আবার ভ্যাকসিনে আকারে মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর তা মানব কোষকে আক্রান্ত করে।
ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনের ইতিবৃত্ত : ভাইরাল ভেক্টর হলো একধরনের বাহক যারা অন্য জীবাণুর জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে মানুষের সেলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। এভাবে একটি জীবাণুর জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে বাহকের মাধ্যমে অন্য একটি সেলে ঢুকিয়ে দেয়াকে ট্রান্সডাকশন বলে। মলিকুলার বায়োলজিস্টরা ১৯৭০ সাল থেকেই এ ধারণার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাইরাল ভেক্টরগুলো জিন থেরাপি ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ভাইরাল ভেক্টর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে জিকা ভাইরাস, রেস্পিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ার ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়ে গিয়েছিল।
ভাইরাল ভেক্টরের বৈশিষ্ট্য :
এরা দুর্বল ভাইরাসের মডিফাইড ভার্সন। তবে ভাইরাল ভেক্টরগুলো কখনো কখনো প্যাথজেনিক হলেও তা মডিফাই করে নন-প্যাথজেনিক করা হয়।
এগুলো কম টক্সিক এবং স্থায়িত্ব সম্পন্ন।
এ ভ্যাকসিনের টেকনোলজি হলো এতেও করোনাভাইরাসের আরএনএ’র জেনেটিক কোড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখানে বাহক হিসেবে একটি কম ক্ষতিকর মডিফাইড ভার্সনের ভাইরাস ব্যবহৃত হয়। এসব ভাইরাস হলো রেট্রো ভাইরাস, লেন্টি ভাইরাস, আল্ফা ভাইরাস র্যাবডো ভাইরাস।
এখানে ভেক্টর হিসেবে মডিফাইড ভার্সনের ভাইরাস ব্যবহৃত হলেও এর কারণে বা করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডের কারণে মানুষের শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন হয় না। করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডসহ এই এডেনোভাইরাসটি যখন ভ্যাকসিন আকারে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তখন ইঞ্জেকশন সাইটের মাংসপেশির সেলের ভেতরে ভাইরাসটি ঢোকার পর র্যাপ্লিকেট করতে শুরু করে। কিন্তু এই র্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় এডেনোভাইরাস তৈরি না হয়ে জেনেটিক কোডের নির্দেশনা অনুযায়ী স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়। এই ভ্যাকসিন সেলের ভেতরে এন্টিজেনিক ম্যাটেরিয়াল স্পাইক প্রোটিন তৈরি করার ফলে সাইটোটক্সিক টি-সেল এবং বি-সেল রেসপন্স হয়। যেহেতু এদের আচরণ ন্যাচারাল ইনফেকশনের মতোই, সুতরাং ভাইরাল ভেক্টর আরএনএ ভ্যাকসিন একটি শক্তিশালী ভ্যাকসিন। ভেক্টর হিসেবে ব্যবহৃত এডেনোভাইরাসটির বিশেষ গুণ হলো এটি মানব শরীরের ডিভাইডিং ও নন-ডিভাইডিং এই উভয় ধরনের সেলকে আক্রান্ত করতে পারে। আর অসুবিধা হলো অনেক লোকই এ ধরনের এডেনোভাইরাস দ্বারা আগেই আক্রান্ত হয়ে ইমিউনিটি তৈরি হয়ে থাকলে নতুন করে এই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত না হওয়ায় অ্যান্টিবডি রেসপন্স কম পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সমস্যা দূর করার জন্যই মানুষকে আক্রান্ত করা এডেনোভাইরাসকে ভাইরাল ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহার করা হয় শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করা দুর্বল মানের ভাইরাস, তাও আবার মডিফাই করা এডেনোভাইরাস, যা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় ব্যবহার করা হয়।
লাইভ এটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিন প্রয়োগে লোকাল ইনফেকশন হয় ওই অরিজিনাল করোনাভাইরাস দিয়েই। ফলে ইমিউনো কম্প্রোমাইজড রোগীদেরকে এই লাইভ এটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে সত্যিকার ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার চান্স থেকে যায়। কিন্তু ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন প্রয়োগে সে ধরনের ইনফেকশনের কোনো সম্ভাবনা থাকে না; কারণ ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনে জেনেটিক কোড দেয়া থাকে করোনাভাইরাসের, মানুষের কোষে র্যাপ্লিকেশন হয় এডেনোভাইরাসের কিন্তু প্রডাকশন হয় করোনাভাইরাসের মতো স্পাইক প্রোটিন।
এভাবেই দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় এন্টিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এসব টিকা দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি ‘স্পাইক প্রোটিন’ তৈরি করতে হবে। এই স্পাইক প্রোটিনগুলো তৈরি হওয়ার পর মানব আক্রান্ত কোষের বাইরে চার দিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপরিভাগের স্পাইক প্রোটিনের মতো লেগে থাকে। এদের উপস্থিতির কারণেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে অ্যান্টিবডি দরকার হয় সেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে আমাদের শরীরে থাকা ইমিউন সেল (টি এবং বি লিম্পোসাইট)।
স্পাইক প্রোটিনগুলো আমাদের শরীরের সেল দিয়েই তৈরি করা। আবার এই স্পাইক প্রোটিনগুলো শরীরে তৈরি হওয়ার পরপরই আমাদের শরীরের ইমিউন সেলগুলো স্পাইক প্রোটিনগুলোকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিই এবার ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। তাহলে বোঝা গেল এসব টিকায় প্রকৃতপক্ষে কোনো ভাইরাস নয়।
এপ্রিল, ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ছয়টি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। তার দু’টি হলো ইবোলাভাইরাস ভ্যাকসিন এবং চারটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন যেমন- অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুটনিক-ভি, জনসন অ্যান্ড জনসন ও কনভিডেসিয়া। বর্তমানে ভেক্টর হিসেবে এডনোভাইরাসের বিভিন্ন সেরোটাইপ ব্যবহৃত হচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকায় মডিফাইড শিম্পাঞ্জি এডেনোভাইরাস, স্পুটনিক-ভি তে এডেনোভাইরাস সেরোটাইপ-২৬ এবং সেরোটাইপ-৫, জনসন অ্যান্ড জনসনতে এডেনোভাইরাস সেরোটাইপ-২৬ এবং কোনোভিডেসিয়াতে সেরোটাইপ-৫ ব্যবহার করা হয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকায় শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করত যে সাধারণ সর্দি লাগার ভাইরাস বিজ্ঞানীরা সেটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে তার সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক কোডের কিছু অংশ জুড়ে দিয়েছেন।
ভারতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাকসিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে যার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি লাইভ ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে; যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। তবে এখানে এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজে এডেনোভাইরাসের দু’টি ভিন্ন সেরোটাইপ ব্যবহার করা হয়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান

সকল