নতুন দল গণ অধিকার পরিষদ
- মো: সায়েদ আফ্রিদী
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল ‘গণ অধিকার পরিষদ’। এ রাজনৈতিক দলের স্লোগান ঘোষণা দেয়া হয়েছে ‘জনতার অধিকার আমাদের অঙ্গীকার’। তাদের এ রাজনৈতিক দলের চারটি মূলনীতি। এগুলো হলো- গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। নতুন এই দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি, নুরুল হক নুর। ছয় মাস মেয়াদে ৮৩ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বেড়ে উঠা সংগঠন আজকের গণ অধিকার পরিষদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সফল কোটা সংস্কার আন্দোলন। শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল না এ আন্দোলন। সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিস্তার লাভ করে। সবার দাবি একটিই- কোটা বৈষম্য থেকে মুক্তি। অতঃপর দফায় দফায় ছাত্রদের আন্দোলন শক্তিশালী হতে থাকলে সরকার একপর্যায়ে কোটা বিলুপ্তি ঘোষণা করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। পরবর্তী ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনের নেতারা শুরু থেকে সবার সমর্থন এবং ভালোবাসা পেয়ে আসছে। যার ফলে শুধু কোটা আন্দোলন করেই থেমে থাকেনি। পরে ছাত্রদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও রাজপথে সোচ্চার ছিল।
ডাকসু নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর এ নির্বাচন। সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা তাদের অবস্থান এবং গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে নির্বাচনে লড়বে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েও পরবর্তীতে নিজেরা আলাদা প্যানেল করে নির্বাচনে অংশ নেয়। নিজেদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দিতে ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায় অনবরত প্রচার-প্রচারণা চালায়। নির্বাচন নিয়ে নানান মতবাদ, কারচুপি থাকলেও ভিপি এবং সমাজসেবা পদে জয়লাভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই নেতা। এ যেন বহুল প্রতীক্ষিত একটি স্বপ্ন ছিল হাজারো পদপ্রার্থীর। যেখানে নুরুল হক নুর ১১ হাজার ছয় ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
সেখান থেকেই নুরদের সফলতা। তার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সব অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে সবসময় রাজপথে সোচ্চার হয় ছাত্র নেতারা তথা- নুরের প্যানেল। তখনই নতুন দল গঠন নিয়ে আভাস পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নিজেদের আরো সংগঠিত করতে একে একে তৈরি করতে থাকে যুব অধিকার পরিষদ, মহিলা অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, পেশাজীবী অধিকার পরিষদ এবং প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেই আজকের অবস্থানে এ দল। ডাকসু ভিপির ইতিহাসে এটিই প্রথম যে কি না ক্ষমতাসীনদের হাতে ১১ বার হামলার শিকার হয়েছেন। এখনো ডজনখানেক মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ডাকসু হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। যেখানে অনেকেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে ছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে এত অল্প সময়ে এতটা বিস্তৃতি কোনো দল বা সংগঠন আজ পর্যন্ত হতে পারেনি। তিন-চার বছরের ব্যবধানে নিজেদের অবস্থান, নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা, নিজেদের আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন নেতারা। ছড়িয়ে গেছে পাড়া-মহল্লায় মেহনতি মানুষের দোরগোড়ায় তাদের এই সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নাম।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে- এ সংগঠনের বৃহৎ একটি শক্তি হচ্ছে তারুণ্য। এরই মধ্যে ছাত্র, যুব অধিকার পরিষদের কমিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। যেটা প্রমাণ করে, কতটা গ্রহণযোগ্যতা তারুণ্যের এ রাজনীতি। এ ছাড়া বর্তমানে ৫৮টি দেশে কমিটি হয়েছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের। এটিও অনেক বড় একটি অর্জন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে নেতারা জানান দিচ্ছেন তাদের সংগঠন নিয়ে। কাজ করছেন প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা, সঙ্কট নিয়ে। নিজের দেশের যেমন প্রতিনিধিত্ব করছে, ঠিক তেমনি নিজ দলের কাজকর্ম পৌঁছে দিচ্ছে বিদেশের মাটিতে।
তবে কেমন হবে আগামীর দিনগুলো?
কতটা মূল্যায়ন করবে তৃণমূলকর্মীদের এই দল? আর দেশের মানুষকে আশা-আকাক্সক্ষা কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হবে সেটিই এখন মুখ্য। বাংলাদেশের এই দোষারোপের রাজনীতিতে তারাও কোণঠাসা হবে কি না? তারাও ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের ঠোঁট আটকে দেবে কি না? সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সদুত্তর পাওয়া যাবে তখনই যখন ক্ষমতায় যাবে। কেননা ক্ষমতার আগে অনেকেই অনেক আশার ফুলঝুরি দিয়ে থাকেন।
নতুন এই দলকে নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন। অনেকে এটাও মনে করেন, বর্তমান সরকারের বা বিএনপির সাথে বি-টিম করে রাজনীতি করছে নুররা। যদিও দলের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর সবসময় বলেন, যেই ক্ষমতাসীনরা বারবার আমাদের রক্তাক্ত করে, আমাদের ওপর বারবার হামলা-মামলা করে তাদের হয়ে আমরা কিভাবে কাজ করি? তার পরও ২০২৩ সালের নির্বাচনে কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে যদি ওই ধরনের কোনো চিন্তাধারা থাকে নতুন এই রাজনৈতিক দলের। অথবা সে উত্তর সময়ে বলে দেবে।
তবে দল বর্তমান পরিস্থিতি একটি ভিত্তি তৈরি করছে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। বর্তমান পরিস্থিতি আগামীর কিছু আভাস দিয়ে থাকে। সেই হিসেবে বলা যায়- জেল-জুলুম দিয়ে খুব বেশি চাপিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। মোদিবিরোধী আন্দোলনে ৫৪ জন কারাবন্দী হয়েও সংগঠন থেকে পিছু হটেনি; বরং সবাই দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে অধিকার আদায়ের জন্য প্রস্তুত। যদিও কয়েকজন নেতাকর্মী এখনো কারাবন্দী তা সত্ত্বেও বলা যায় বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। সুতরাং আইনের লড়াইয়েও যে একটি শক্ত ভিত্তি আছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বারবার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হামলার শিকার হয়েছেন নুরসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মী। কিন্তু কেউই পালিয়ে যাননি। কেউ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আড়ালে চলে যাননি; বরং বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এখন অফিস তৈরি হচ্ছে, আনন্দ মিছিল হচ্ছে, জনসমাগমও হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়।
এটিই শক্তি একেকটি রাজনৈতিক দলের। ছাত্র, যুবক সবাই মিলে দেশের জন্য এভাবে কাজ করে গেলে একটি সময় এই সংগঠন গণমানুষের দল হিসেবে রূপান্তরিত হবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। কেননা স্বাধীনতা-উত্তর দু’টি দল বারবার ক্ষমতায় আসছে। তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কী লুকিয়ে আছে সবই এ দেশের মানুষ জানে ও বুঝে।
ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে যারা অপশাসন করে তাদের এ দেশের মানুষ চেনে। এ দেশের মানুষের বৃহৎ একটি অংশ চায় নতুন কিছু হোক। নতুন কেউ আসুক। যারা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের চেতনা নিয়ে কাজ করবে, দেশের মানুষকে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ উপহার দেবে, মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করবে। তাদের সব মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে, পাশাপশি দেশের দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি বর্তমান সময়ে চলছে সেটি অচলায়তনে রূপান্তরিত হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য সবসময় শুভকামনা। যেকোনো রাজনৈতিক দল যদি প্রকৃত দেশীয় চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যায়- কোনো অপশক্তি তাদের রুখে দেয়ার সাহস নেই। জয় হবেই এমন অদম্য ইচ্ছেশক্তির। সেই দিকে গণ অধিকার পরিষদ যদি এগিয়ে যেতে পারে নিজেদের প্রকৃত অর্থে দেশের জন্য ডেডিকেটেড করে নিজেদের সব কার্যক্রমে যদি স্বচ্ছতা থাকে তবেই এ দল এগিয়ে যাবে একটি সময়। তবে নেতাকর্মীদের ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বারবার বাধা-বিপত্তি আসবে তবুও হার মানা যাবে না। হামলা-মামলা নিয়েই নিজেদের গন্তব্যের দিকে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। ক্ষমতা, টাকার লোভে হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। কেননা একটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তার অন্যতম মাপকাঠি আর্থিক স্বচ্ছতা, কথা দিয়ে কথা রাখা এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা।
এ দল যেহেতু গণমানুষের টাকায় চলবে সে ক্ষেত্রে টাকা আয়-ব্যয়ের হিসাব পরিষ্কারভাবে জনতার সম্মুখে উপস্থাপন করতে হবে। তাহলেই বারবার মানুষ তাদের জন্য টাকা, শ্রম ব্যয় করবে। কেননা এ পর্যন্ত এ সংগঠন মোটামুটি বড় বড় ধকল সহ্য করেছে। লাখ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু টাকার জন্য কোনো কাজ আটকে থাকেনি। পাবলিক ফান্ড রেইস করার সাথে টাকা দিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাই মানুষের এই আস্থা ধরে রাখতে হবে। এখন থেকে এসব বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। আরো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে তাদের হিসাব-নিকাশ। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে একতার বিকল্প নেই। কোনো গ্রুপিং করা যাবে না। দল থেকে দল হওয়া রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বিপর্যয়। শুরুটা ভালো ছিল এই দলের। এই সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে দলের প্রথম সারির নেতা থেকে কর্মীদের সচেতন হতে হবে। আগের মতো দেশের যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে যেকোনো অপশাসন, দুর্নীতির বিপক্ষে।
এ দেশের রাজনীতিতে ভালো কিছু হোক। রাজনীতির নামে প্রতারণা না করে প্রকৃত অর্থে দেশের হয়ে কাজ করুক রাজনৈতিক দলগুলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ রেখে দেশের হয়ে কাজ করুক। দেশের সুনাম দেশ ও বিদেশে চলমান থাকুক এটিই কামনা করছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি সুন্দর রাষ্ট্র চাই যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। থাকবে না স্বজনপ্রীতি, সহিংসতা, দুর্নীতি, দুর্নাম।
লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক
ফোরাম, ঢাকা কলেজ শাখা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা