২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : ছাদবাগানের গুরুত্ব

-

বাংলাদেশের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে আছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন। বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্ব¡াস, ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড় প্রতি বছর ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ দেশে। গ্রাম ও শহরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি তাপমাত্রা, ফলে মাত্রাতিরিক্ত গরম; নেই মুক্ত হাওয়া ও বুকভরে শ্বাস নেয়ার মতো উন্মুক্ত পরিবেশ। বিদ্যুৎ, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনারের ব্যবহার শহরের মুক্ত বায়ুকে দূষিত করছে রোজ। ফলে মানুষ পরিণত হয়েছে যন্ত্রমানবে।
শহরে পর্যাপ্ত গাছপালা নেই প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, যা সবচেয়ে বেশি দরকার। তবে শহরে এখন চোখে পড়ে ভবনগুলোতে ছাদবাগান। অনেকে শখের বসে, অনেকে ই-কৃষির আওতায় শাকসবজি, ফলমূল, বাগান, নার্সারি ও হরেক রকমের ফুলচাষ করছেন। এতে অনেকে নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করছেন, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে এবং অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাছপালা অক্সিজেন ত্যাগ করে; তা আমরা গ্রহণ করে বেঁচে থাকি। অন্য দিকে আমরা যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি, তা গাছপালা গ্রহণ করে। শহরে প্রতিদিন শিল্পকারখানায় পণ্যদ্রব্য উৎপাদনে টন টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। শোধন না হওয়ায় এতে শহরের মাটি পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে। কলকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া দূষণ বাড়াচ্ছে। ক্রমেই শহর বসবাসযোগ্য পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন চর্ম, যৌন, হার্টস্টোক, ক্রনিক ডিজিজ ও কিডনিজনিত সমস্যায়, যার অন্যতম কারণ শহরের দূষিত পরিবেশ।
বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলাগুলোয় শত শত, হাজার হাজার ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবনের ছাদে বাগান করে সবুজ পরিবেশের সমাহার গড়তে পারলে পরিবেশ ঠাণ্ডা ও শীতল থাকবে এবং অক্সিজেনের সরবরাহ বেশি হবে; শহরের মানুষ মুক্ত পরিচ্ছন্ন হাওয়া বুকভরে নিতে পারবে। প্রতিটি ভবনে ছাদবাগান হলে শহরের পরিবেশের ভারসাম্য অবস্থা ফিরে আসবে। শাকসবজি, ফলমূল, ফুলের বাগান, বনায়ন হলে পরিবারের সুষম খাদ্য যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি শাকসবজি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সঙ্কট হ্রাস পাবে। বাজারব্যবস্থায় অতিরিক্ত দামের স্থানে স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ সবজি রফতানি করে। শহরের প্রতিটি বাড়িওয়ালা একটু সময় করে ছাদবাগান করে নিজেদের উৎপাদিত সবজি দিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারলে দেশে উৎপাদিত বাকি শাকসবজি, ফলমূল বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
ই-কৃষির আওতায় শহরের প্রতিটি শিক্ষিত পরিবার এটি করতে পারে। নিজেদের উৎপাদিত এসব সবজি, ফলমূল স্বাস্থ্যকর। শহরের অনেক মানুষ ছাদবাগানে এগিয়ে আসছে। পুঁইশাক লাউশাক, মরিচ গাছ, ঢেঁডস, টমেটো, পটোল, চিচিঙ্গা, মাশরুম ও শসা ইত্যাদি সবজি আর ফল হিসেবে আম, কাঁঠাল, লিচু, কমলা, বরই, জলপাই, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ছাদবাগানে উৎপাদন হচ্ছে। শহরে এখনো অনেক ভবনে ছাদবাগান দেখা যায় না। প্রতিটি ভবনে ছাদবাগান শুরু করলে সবুজ পরিবেশের সমাহার যেমন গড়ে উঠবে, তেমনি ঠাণ্ডা, শীতল ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এক পরিবেশ দৃষ্টিগোচর হবে সবার চোখে; যা শহরের পরিবেশের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি করবে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ ই-কৃষির আওতায় তাদের ভবনগুলোতে ছাদবাগান শুরু করেছে।
জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল সমুদ্রতে হারিয়ে যাবে, যার কারণ অত্যধিক তাপমাত্রায় বরফ গলে যাচ্ছে; এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা এখন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে এখনই দায়িত্ব নিতে হবে, উদ্যোগী হতে হবে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণের গ্রাম কিংবা শহরে প্রতিটি বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটে, খোলা জায়গা সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে। দেশ, জাতি ও বিশ্বের শান্তিপূর্ণ অবস্থান গড়তে গাছপালা লাগানোর বিকল্প নেই। সরকারি-বেসরকারি ও প্রতিটি মানুষের অবস্থান থেকে শহরের প্রতিটি ভবনে ছাদবাগান এবং গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে বাগান, বৃক্ষরোপণ অব্যাহত রাখতে হবে। শহরের প্রাণ ফেরাতে ছাদবাগানের বিকল্প নেই।হ
লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা কলেজ।


আরো সংবাদ



premium cement