২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত: ঘুচে যাবে বেকারত্বের অভিশাপ

-

জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদেরকে কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকতে হয়। কেউ চাকরিজীবী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউবা উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে অধিক জনসংখ্যা। আর এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সে অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, যার কারণে বেকারত্ব অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ।
বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে বেকারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের প্রথম ইচ্ছাই থাকে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি সীমিত। ফলে এই বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা বেকার হয়ে যায়। তারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যদি আত্মকর্মসংস্থানে নিজেদের নিয়োজিত রাখে তা হলে তারা নিজেরা বেকারত্বের অভিশাপ হতে রক্ষা পাবে আর মানবসম্পদে পরিণত হবে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। জমিও বেশ উর্বর। তাই কোনো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি স্বল্প পুঁজিতে নিজেদের জমি কিংবা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ফলফলাদির চারা, নার্সারি, সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, মাছের খামারসহ যার যার অঞ্চলভেদে বিভিন্ন চাহিদা অনুযায়ী কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা যায়, এসব কাজের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাবলম্বী হওয়া যায়। তবে লোকলজ্জার ভয়ে এসব কাজে অনেকেই যেতে চায় না, যার জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও দায়ী অনেকাংশে।
যখন কোনো শিক্ষার্থী অনার্স, মাস্টার্স পাস করে এসব কাজে যোগদান করে, তখনই পাড়া-মহল্লার লোকজন বলাবলি করবে, এত বছর পড়াশোনা করে এখন কৃষিকাজ করে।’ কিন্তু তাদেরকে কে বোঝাবে যেকোনো পেশাই ছোট নয়। ছোট হলো কোনো কাজ না করে অলসভাবে থেকে ‘বাপের অন্ন’ ধ্বংস করা। আর অলস মস্তিষ্ক হলো ‘শয়তানের কারখানা’। যারা বসে থাকে অলসভাবে তাদের দ্বারাই সমাজে নানা ধরনের অপকর্ম সংঘটিত হয়। যারা কাজের ভেতরে থাকে তাদের চিন্তা-চেতনা সবসময় কাজকে ঘিরেই। একসময় আমাদের দেশে কুটিরশিল্পের বেশ কদর ছিল; ছেলে বুড়ো সবে মিলে উদ্দীপনা নিজে কাজ করত। তবে আধুনিকতা আর শিল্পবিপ্লবের কারণে সেই ঐতিহ্যগত কুটিরশিল্প আমরা হারাতে বসেছি। তবে সবার যথাযথ চেষ্টায় আবার কুটিরশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বেতের কাজ, নকশিকাঁথা, বাঁশের কাজ, মাটির শিল্প, মাদুর ও শীতলপাটি, পাটের কাজ, কাপড়ের ব্যাগ, রেশম শিল্প, তাঁত ও জামদানি, কাগজ ও প্লাস্টিক, মৃৎশিল্প, ধাতব কাজ, লবণ, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, গণ-আসন প্রভৃতি শিল্পের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। অনেকে প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করে দালালের মাধ্যমে অধিক সম্পদের লোভে অবৈধ পথে বিদেশে যায় এবং পথে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। কিন্তু তারা যদি ওই টাকা দিয়ে দেশেই কোনো কাজে যোগদান করত তা হলে, আর এত কষ্ট করা লাগে না। কিন্তু তা না করে প্রতি বছরই এমন ঘটনার সংবাদ দেখতে হয়। বিদেশে কোনো পেশাকেই নিচু চোখে দেখা হয় না।
বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীরা কঠোর সাধনার দ্বারা খ্যাতি লাভ করেছেন। আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সামান্য একজন বাদাম বিক্রেতা ছিলেন। কিন্তু তার অগাধ নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। দেখা যায়, ছাত্ররা শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য মুখস্থ করে। এ থেকে বেরিয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে যেন পাস করে যেকোনো শিক্ষার্থী বসে না থেকে কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শ্রেণিগত বৈষম্যের কারণে অভিজাত শ্রেণীর এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণীও এ শিক্ষায় আগ্রহ প্রকাশ করে না।
দেশে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতেও শিক্ষা নিয়ে নিজেকে দক্ষ করা সম্ভব। বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। অনলাইনেও উদ্যোক্তা হওয়া যায়। ই-কমার্স, ই-টিউশন, করেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। যারা বেকার তাদের কাছে এ পৃথিবীটা অন্ধকার লাগে। আকাশের রঙধনুও ভালো লাগে না। সীমাহীন চাপ থাকে বুকে। পরিবারের দায়িত্ব, সংসারের চিন্তা যার কারণে অনেকেই এই চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ জন্য এসব আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ কমিয়ে আনতে পারে আত্মহত্যা। আর এ জন্য দরকার সরকার, সমাজ, পরিবারসহ সবার সহযোগিতা। বেকারত্বের অভিশাপ হতে এই আত্মকর্মসংস্থানই পারে মুক্তি দিতে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
abdemmunib7@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement