১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বীপ জেলা ভোলার সমস্যা

-

বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলা। ৩৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ একটি জেলা। এর সাথে সরাসরি সড়কপথে কোনো জেলার সম্পর্ক নেই। এমনকি এই জেলার অন্তর্ভুক্ত মনপুরা উপজেলায় যেতে হলেও নদীপথে লঞ্চ, ট্রলার অথবা স্পিডবোটে যেতে হয়।
ভোলা দিন দিন ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। দেশের সব প্রান্ত থেকে মানুষের আনাগোনা দিন দিনই বাড়ছে। কেননা এখানে রয়েছে বেশ কিছু পর্যটন স্পট। এ ছাড়াও প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যে ঘিরে আছে দ্বীপ জেলা ভোলা।
ভোলায় আসা-যাওয়ার অন্যতম বাহন লঞ্চ। এ জন্য যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে লঞ্চঘাট। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, লঞ্চঘাট তৈরি হলেও প্রয়োজনীয় আর কোনো সুবিধা এখনো গড়ে তোলা হয়নি। ঘাটগুলোতে প্রায়ই যাত্রীদের ছোটখাটো দুর্ঘটনা অথবা অন্য কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ২৯টি লঞ্চ ও ফেরিঘাটের মধ্যে ১৬টিতে কোনো পন্টুন নেই। বাকি ১৩টিতে যা আছে সেটি প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট নয়।
প্রায়ই দেখা যায়, পন্টুন থাকে নদীর মাঝে। পানিতে হেঁটে অথবা নৌকা করে পন্টুনে যেতে হয়। তারপর সেখান থেকে লঞ্চে উঠতে হয়। এতে করে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পন্টুনে যেতে নড়বড়ে যে অস্থায়ী কাঠের সেতু বানিয়ে দেয়া হয় সেটা সবসময়ই হয় ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানির তোড়ে সেটি সহজেই ভেঙে যায়। এ কারণেও হরহামেশাই বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বালু ফেলে তৈরি করা হয় অস্থায়ী রাস্তা। যেটা পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। পানির তীব্র স্র্রোতে ছয় মাসের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে যায় এসব রাস্তা।
যেসব ঘাটে পন্টুন নেই সেগুলোতে যাত্রীদের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কী দুঃসাহসিক ঝুঁঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে হয় সেটা বর্ণনাতীত। লঞ্চে উঠতে গিয়ে এ পর্যন্ত অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত। লঞ্চে উঠতে সাহায্য করে যেসব নৌকা সেগুলো সবসময় ঘাটে থাকে না। বাধ্য হয়ে ঢাকাগামী এবং ঢাকাফেরত যাত্রীদের পানিতে নেমেই লঞ্চে উঠতে হয় অথবা লঞ্চ ত্যাগ করতে হয়। যেটা মহিলা, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীদের জন্য অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। নৌকা এবং লঞ্চের যে দূরত্ব সেটি অতিক্রম করে লঞ্চে ওঠা সত্যিকার অর্থে দুঃসাহসিক কাজ।
বিভিন্ন উৎসব বিশেষ করে ঈদের সময় প্রতিটি ঘাটে মানুষের প্রচুর ভিড় থাকে। তখন স্বজনের সাথে ঈদ করতে এসে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন।
এ ছাড়া কোনো রোগী এসব ঘাট দিয়ে কোনোভাবেই লঞ্চে ওঠানো যায় না। বাধ্য হয়ে পন্টুন যেখানে আছে সেখানকার ঘাটে নিয়ে যেতে হয়। যার ফলে অতিরিক্ত ব্যয়সহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী ও তার পরিবারের লোকজনকে।
শুধু যে যাত্রীদের সমস্যা সেটি মোটেও নয়। লঞ্চ এই জেলা থেকে পণ্য পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভোলা থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। তা-ও প্রতিটি ঘাটে বা সুবিধাজনক ঘাটে ওঠানো-নামানো সম্ভব হয় না। যে ঘাটে পন্টুন আছে অনেক দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ব্যবসায়ী বা কৃষকদের তাদের পণ্য সেসব ঘাটে নিয়ে যেতে হয়, যার ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি ভোগান্তির সৃষ্টি করে। গুনতে হয় অতিরিক্ত হাজার হাজার টাকা। অনেকসময় পণ্য নষ্ট হয়ে যায় বারবার গাড়িতে ওঠা-নামা করানোর কারণে।
যেহেতু লঞ্চগুলো রাজধানী ঢাকা থেকে যাওয়া আসা করে। সে জন্য তারা বিভিন্ন ঘাটে রাতের বিভিন্ন সময়ে যাত্রী নামিয়ে থাকে। ঘাটগুলোতে কোনো যাত্রীছাউনি না থাকায় যাত্রীদের ওই গভীর রাতেই গন্তব্য অভিমুখী হতে হয়। যার ফলে এ পর্যন্ত অনেক যাত্রী ছিনতাই রাহাজানির শিকার হয়েছেন। ঈদের মৌসুমে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। যেখানে টার্মিনাল তথা পন্টুনই নেই, সেখানে যাত্রীছাউনি না থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সাধারণ মানুষ বারবার আশায় বুক বাঁধে সুনির্দিষ্ট পন্টুন ও যাত্রীছাউনিসহ আধুনিক ঘাট নির্মাণের।
ভোলার বেশির ভাগ মানুষ নদীপথে যাতায়াত করে। তাই ভোলা রুটে চলমান লঞ্চে সবসময়ই যাত্রীদের চাপ থাকে। আর পন্টুন না থাকায় ১২ মাস এভাবেই দুর্ভোগের শিকার হতে হয় ভোলাবাসীকে।
ভোলার অন্যতম একটি পরিচিত ঘাট হলো দেউলা ঘাট। ৩০-৪০ বছরের পুরোনো এ ঘাট থেকে দৈনিক শতশত যাত্রী লঞ্চে ওঠা-নামা করে। তাদের যে কী নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় সেটি ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। কখনো পানিতে নেমে, কখনো ট্রলার দিয়ে, কখনো বা হেঁটে তাদেরকে লঞ্চে উঠতে-নামতে হয়। বিশেষ করে শীতকালে যেন একটা নিষ্ঠুর যন্ত্রণা পোহাতে হয় যাত্রীদের। কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে হয় তাদের।
এমন সম্ভাবনাময় জেলায় যদি এত দুর্ভোগ অতিক্রম করে মানুষের যাতায়াত করতে হয় তবে সেটি আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। আধুনিক ঘাটের অভাবে ভোলাবাসী নিজেদের বঞ্চিত ও অবহেলিত ভাবে। তারা তাদের অধিকার চায়। বারবার তাদের কষ্টের কথা জানায় দায়িত্বশীলদের কাছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ভোলাবাসীর এ দুঃখ লাঘবে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন বা বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ এগিয়ে আসেনি এখন পর্যন্ত। অথচ ঘাটগুলোতে পন্টুন ও যাত্রীছাউনির ব্যবস্থা করা হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও ভোলাবাসী উপকৃত হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ভোলা অভিমুখে লঞ্চ ভ্রমণ।
এ বিষয়ে ভোলার নেতাদেরসহ নদীবন্দরের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কাম্য। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement
৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭

সকল