২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অম্লান জিয়াউর রহমান

-

বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে আলোর মশাল হাতে সাহসিকতা, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
১৯৭১ সালে জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সঙ্কটময় মুহূর্তে তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অদূরদর্শিতার ফলে রাজনৈতিক আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণের সুযোগে, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী রাতের অন্ধকারে দেশের নিরীহ মানুষের ওপর অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী থেকে ঘুমন্ত শিশু কেউ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি।
এ দিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ‘সোয়াত’ নামে সেনা ও অস্ত্রভর্তি একটি জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ সময় জিয়াউর রহমানের কর্মস্থল চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার লে কর্নেল জানজুয়া তাকে পাঠান সেই অস্ত্র খালাস তদারকি করতে। পথিমধ্যে জিয়াকে অলি আহমদের থেকে প্রাপ্ত সতর্কবার্তা এবং ঢাকার হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে অবগত করেন ক্যাপ্টেন খালেক। জিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ফিরে আসেন হেড কোয়ার্টারে। কোয়ার্টার গার্ডের সামনে কর্তব্যরত একজন বাঙালি সৈনিকের কাছ থেকে স্টেনগান ছিনিয়ে নিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন ‘উই রিভোল্ট’। লে. আজম ও সাথে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের নিরস্ত্র করে আটক করেন এবং ফিরে আসেন সেনানিবাসে। জানজুয়াসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসারদের আটক করে তাদের হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান বাঙালি সেনা সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
‘যুদ্ধজয়ের দিনগুলি’ নামক স্মৃতিকথায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ‘তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে এ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণার মাধ্যমে নির্দেশনাহীন জাতি একটি সঠিক দিকনির্দেশনা পেল; যার ফলে সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র জনতা যুদ্ধে যোগদানে অনুপ্রাণিত হয়। অন্যদের মতো আমিও সেই ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে যোগদানের পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় পুরো জাতি অংশগ্রহণ করেছিল। তাই এটা ছিল একটা জাতীয় জনযুদ্ধ।’
প্রফেসর রেহমান সোবহানের মন্তব্য, ‘২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ এবং পরে সারা বিশ্বের মানুষ একজন অপরিচিত মেজরের কণ্ঠ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পায়’। (সোবহান, ১৯৯৩ : ৩৩)
মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ তার ‘ইধহমষধফবংয, অঃ ডধৎ’ বইয়ে লিখেছেনÑ ‘১৭ রিহমং ড়ভ ঃযব ঊধংঃ চধশরংঃধহ ৎরভষবং ভৎড়স ঈধঢ়ঃধরহ ড়হ ঃযবরৎ ধিু ঃড় লড়রহ জধভরয় রহ ঃযব পরঃু ধিং রহঃবৎপবঢ়ঃবফ নু তরধ ধঃ ৮.০০ ঐড়ঁৎং ড়হ গধৎপয ২৬. ঞযবু বিৎব ঃযবহ রহ পড়-ড়ঢ়বৎধঃবফ রিঃযরহ ভড়ৎপব. অষষ ঃযব ঃৎড়ড়ঢ়ং ঃযবহ ঃড়ড়শ ধহ ড়ধঃয ড়ভ ধষষবমরধহপব ঃড় ইধহমষধফবংয. ঞযব ড়ধঃয ধিং ধফসরহরংঃৎধঃবফ নু তরধ ধঃ ১৬.০০ ঐড়ঁৎং ড়হ গধৎপয ২৬. ঞযবৎবধভঃবৎ যব ফরংঃৎরনঁঃবফ ৩৫০ ংড়ষফরৎং ড়ভ ঊধংঃ ইবহমধষ জবমরসবহঃ ধহফ ধনড়ঁঃ ২০০ ঃৎড়ড়ঢ়ং ড়ভ ঊধংঃ চধশরংঃধহ জরভষবং ঃড় াধৎরড়ঁং ঃধংশ ভড়ৎপবং ঁহফবৎ পড়সসধহফ ড়ভ ধহ ড়ভভরপবৎ বধপয. ঞযরং ঃধংশ ভড়ৎপবং বিৎব সবহফ ভড়ৎ ঃযব পরঃু. ঞযব যিড়ষব পরঃু ড়ভ ঈযরঃঃধমড়হম ধিং ফরারফবফ রহঃড় াধৎরড়ঁং ংবপঃড়ৎং ধহফ বধপয ংবপঃড়ৎ ধিং মরাবহ ঃড় ধ ঃধংশ ভড়ৎপব. অভঃবৎ যধারহম সধফব ঃযরং ধৎৎধহমবসবহঃ, তরধ সধফব যরং ভরৎংঃ ধহহড়ঁহপবসবহঃ ড়হ ঃযব জধফরড় ড়হ গধৎপয ২৬. ওহ ঃযরং ধহহড়ঁহপবসবহঃ ধঢ়ধৎঃ ভৎড়স ংধুরহম ঃযধঃ ঃযবু বিৎব ভরমযঃরহম ধমধরহংঃ চধশরংঃধহ ধৎসু যব ধষংড় ফবপষধৎবফ যরসংবষভ ধং ঃযব ঐবধফ ড়ভ ঃযব ঝঃধঃব.’
ড. কর্নেল অলি আহমদ লিখেছেনÑ ‘জিয়া উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন। আসল খসড়ার বিষয়বস্তু ছিলÑ ‘আমি মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং নিজকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করছি।’ এই ঘোষণায় জিয়া সব বাঙালি সেনা অফিসার, সৈনিক, প্যারামিলিটারি, পুলিশ, আনসার এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ২৫-২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি জান্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। তিনি এ ব্যাটালিয়নের অফিসারদের নামও ঘোষণা করেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণসমর্থন ও বাংলাদেশেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান। {রাষ্ট্রবিপ্লব, সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম}
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রয়েছেন জনসাধারণের হৃদয়ের মণিকোঠায়। ১৯৭৫ সালের বিয়োগান্ত পটপরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক অস্থির পরিস্থিতিতেও জাতিকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আবারো কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেন জিয়াই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিল্লুর রহমান খানের ভাষায়, ‘১৯৭৫ সালে আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে জাতি যখন নেতৃত্বের সঙ্কটে ভুগছিল, তখন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব কুশলতা আমাদের গোটা জাতিকে আশীর্বাদ ধন্য করেছে এবং শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা দিয়েছে।’ প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন, ‘তরধ ংধাবফ ইধহমষধফবংয ধৎসু ভৎড়স ধহ রসঢ়বহফরহম ফড়ড়স’ .
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, সশস্ত্র গণবাহিনীর প্রতিবিপ্লব প্রচেষ্টা, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার অপতৎপরতা, নেতৃত্বশূন্যতা, অফিসারদের ভীতিপ্রবণতা, সর্বোপরি সেনাবাহিনীর রাজনীতিকীকরণের বিষবৃক্ষ সবার অজান্তে ফুল ও ফলে গোটা প্রতিষ্ঠানকে ধবংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রম, কোমল ও কঠিনের সমন্বয় কৌশল, অসীম সাহস, দৃঢ়তা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থানে ফিরিয়ে দেয়।’ বলেছেন ড. আবদুল লতিফ মাসুম।
বাংলাদেশের প্রতিটি কঠিন সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন জিয়াউর রহমান। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা যেখানে ব্যর্থ ঠিক সেখানেই জিয়াউর রহমান হয়েছেন সবচেয়ে সফল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে, রাষ্ট্রপতি হয়ে মাত্র সাড়ে চার বছরে, গণমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে নির্মাণ করেছিলেন উদার ও আধুনিক ধারায়। প্রবর্তন করেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের। বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ফলে অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশকে পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন বিশ্ব দরবারে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকবেন তার দেশপ্রেম এবং কীর্তির মাঝে। হ
লেখক : লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement