২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অ ভি ম ত : শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে করণীয়

-

আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপে প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীতকরণ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক ঝরে পড়ছে। মাধ্যমিক স্তরে একজন শিক্ষার্থীর সুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা ও মানসিক বিকাশ জরুরি। এ স্তরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ায় আমাদের মানবশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এখানেই সম্ভাবনাময়ী দক্ষ জনশক্তির একটি বিশাল অংশ জীবনের শুরুতেই হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের পেছনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকার যে বিনোয়োগ করছে তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। অন্যদিকে তাদের পরিবারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা যা শিখল তা খুব সহজেই ভুলে যায়।
শিক্ষার্থীদের এই অকালে ঝরে পড়া বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, অভিভাবকদের অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের কারণেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরেপড়ে। প্রাকৃতিক নানা বৈরী পরিবেশের সাথে খাপ খায়য়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। প্রতি বছর ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বন্যাও হয়েছে বেশ কয়েকবার। ফসলি জমিসহ কৃষকরা নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সুতরাং যেকোনো বছরের তুলনায় ঝরে পড়ার এই সংখ্যা আগামীতে ব্যাপক হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে তাই এর সঠিক পরিসংখ্যান বলা মুশকিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বিশে^ প্রায় এক কোটির মতো শিশু আর কখনো স্কুলে ফিরবে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গরিব দেশগুলো শিক্ষা খাতে খরচ কমাতে বাধ্য হবে। এরই প্রভাবে বিপুল শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কা বিশ^ময় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে যেহেতু করোনা অতিমারীর নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষাব্যস্থায় পড়েছে। অন্যান্য খাতগুলো কিছুটা হলেও এ ক্ষতি পুষিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার সেই দুরবস্থা এখনো কাটেনি। যদিও অনলাইন-ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে সেই ক্ষতি পূরণের চেষ্টা চলছে।
করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। এ অবস্থায় দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত এমনটাই ধরে নেয়া হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি সঙ্কুচিত হয়ে আসায় নি¤œ ও স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় এই খাতের শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবার অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ও শিল্প কারখানার শ্রমিক ছাঁটাইয়ে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এসব পরিবারের শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরেপড়ার আশঙ্কা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। আর এই অতিমারী যতই দীর্ঘায়িত হবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে। সেই সাথে বাড়বে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যাও।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন এই সমস্ত বন্যাকবলিত, দরিদ্র ও নি¤œআয়ের পরিবারের কত সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এটাই এখন দেখার বিষয়। করোনাকাল অতিক্রান্ত হলে এসব পরিবারের বিপুল শিক্ষার্থী দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করার সক্ষমতা হারাবে এটাই স্বাভাবিক। দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কারণ, এর ওপরই নির্ভর করছে দেশে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরেপড়বে। নাকি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।
সরকারের উচিত এ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমে সম্পৃক্তকরণের নিমিত্তে পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সেটি হতে পারে বিশেষ কোনো সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে। যেহেতু সচ্ছল পরিবারের তুলনায় দরিদ্র পরিবারে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার সংখ্যা অনেক বেশি। অন্যদিকে শহরের চেয়ে মফস্বল এলাকায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও বেশি। এর সাথে অন্যান্য কারণগুলো তো আছেই। তাই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের জন্য সরকারকে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। যদি এখনই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে এ সব শিক্ষার্থী ক্রমেই ঝুঁকিতে পড়বে। আগামী বছরগুলোতেও এ ঝরেপড়ার হার আরো বাড়তে থাকবে। যা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধাগ্রস্ত হবে।
সেই সাথে এই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় ও শনাক্তকরণে প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে সমাজের সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসবে না। যেহেতু দেশের করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে জীবন ও জীবিকার তাগিদে আশ্রয় খুঁজছেন। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে এলাকাভিত্তিক জরিপ ছাড়া এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বের করা দুরূহ ব্যাপার। এই জরিপ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েই শিক্ষা প্রশাসন কাজটি সম্পন্ন করবে, যাতে এটি কাগজে-কলমে নামমাত্র কোনো জরিপে পরিণত না হয়।
যেসব শিক্ষার্থী শহরে ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছে তাদের মধ্যে এমন অনেক শিক্ষার্থীও আছে যাদের অভিভাবকদের পুনরায় শহরে ফিরে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই। বা তারা জীবন-জীবিকার কারণে জায়গা বদল করেছেন। এমন সব আভিভাবকের সন্তানদের নিকটস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়টি সহজভাবে ভাবতে হবে। যদি তাদের পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে টিসি আনা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে তারা ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের বেতনাদি পরিশোধ করতে হতে পারে। এটি নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই করোনার মধ্যেও বেতন ও পরীক্ষার ফি আদায়ের অভিনব কৌশল আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল