১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেক আইডি বিড়ম্বনা

-

করোনা মহামারীর সময়ে সবারই যেন খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এর মাধ্যমে মানুষ খুব অল্প সময়েই চেনা-অচেনা এবং কাছে-দূরের সবার সাথেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। এর মাধ্যমে অনেকের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠছে যাদের চিনি নাÑ নাম ঠিকানা সত্যি কি না, তাও জানি না। আবার এই প্লাটফর্মে নিজেদের মতামত, ইচ্ছা, প্রতিবাদ সবকিছু নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারি।
বছরেও যাদের সাথে দেখা বা কথা হয় না, ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা তাদের সাথেও প্রতিনিয়ত দেখা করতে বা কথা বলতে পারি। তাই খুব সহজেই অচেনা কাউকে বিশ্বাস করে ফেলি। এতে করে উপকার হলেও কখনো কখনো তা আমাদের বিপদের মুখে ফেলেও দেয়। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, ফেসবুকে এখন মানুষ নানা রকম সমস্যা যেমন প্রতারণা, ফেক আইডি বিড়ম্বনা এবং আইডি হ্যাকজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এমন বিড়ম্বনা এখন অহরহ ঘটে চলছে। মূলত নিজের দোষেই আমরা নিজের সমস্যা ডেকে আনি। তার কারণ হলো, অচেনা কাউকে ফ্রেন্ড বানানো, তাদের কাছে নিজের পার্সোনাল কিছু আদান-প্রদান করা, বিভিন্ন লিংক ওপেন করা, আইডি লগইন করে পাসওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা। এভাবেই আমাদের আইডি হ্যাক হওয়ার কবলে পড়ে এবং আমরা প্রতারিত হই।
আইডিতে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয়, জেন্ডার, ব্যক্তিগত তথ্য, কর্মক্ষেত্র, ছবি, পড়াশোনার স্থানসহ ব্যক্তিগত বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে যারা, মূলত সেগুলোকে ‘ফেক আইডি’ বলা হয়ে থাকে। আইডির মালিক বুড়ো নাকি ছেলে, বোঝার কোনো উপায় থাকে না। বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়ে উভয়েই ফেক আইডি খুলতে পারে। ফেসবুকে একটু ভালোভাবে নজর দিলেই দেখা যাবে, মানুষের নাম ব্যতীত বিভিন্ন নাম যেমন কষ্টের পাহাড়, অবুঝ বালক, চাঁদের আলো, দুষ্ট মিষ্টি মেয়ে, নীলপরী, হালকা বাতাসে লুঙ্গি আকাশে, মন মানে না, বলো না তুমি আমার এমন ইত্যাদি নামে ফেসবুক আইডি খোলা হচ্ছে। এমনকি মানুষের নামেও আইডি খোলা হয়; কিন্তু বোঝার উপায় নেই যে সেটা ফেক নাকি রিয়েল আইডি। ফেক আইডির বিড়ম্বনার শিকার হয়ে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং কখনো বা মানসম্মান হারিয়ে ফেলেন। ফেক আইডি বিড়ম্বনার পাশাপাশি নাম বিড়ম্বনাও নতুন নয়।
অনেক সময় বুঝতে না পেরে আমরা অনেককেই আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা দেই। একপর্যায়ে তাদের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি কেউ কেউ ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অথবা পরকীয়ার মতো জঘন্যতম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এভাবেই পরিচয় ও কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের বিভিন্ন পার্সোনাল কথাবার্তা, অশ্লীল ছবি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতা চালিয়ে যায়। এমনও আছে, পরিচয়ের এক সময় কখনো কখনো কোনো ‘প্রেমিকা’র অশ্লীল ছবি ভাইরাল করার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
ফেক আইডির পাল্লায় পড়ে এমন হাজারো হয়রানির শিকার হয় মানুষ। করোনাকালে মানুষ বিভিন্ন পণ্য ফেসবুক পেইজ কিংবা গ্রুপের মাধ্যমে অর্ডার করে। অনেক অসাধু ও ব্যবসা-সম্পৃক্ত লোক ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে দেয় আর মানুষ হয় প্রতারিত। অনেক ফেক আইডির আড়ালে থাকা মানুষের সম্মুখীন হয়েছি এবং বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে কিছুদিন আগে এক ছেলে আমার বান্ধবীর নামে ফেক আইডি খোলে এবং সেখানে আমার বান্ধবীর নাম, ছবি, ঠিকানা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসহ সব কিছু অ্যাড করেছিল এবং আমার বান্ধবীর পরিচিত সবাইকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত।
এমনকি অনেকের সাথে চ্যাটিংও করত। এতে করে আমার বান্ধবী গভীর ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। এর কিছুদিন আগে আমার আরেক ফ্রেন্ড অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে এক ফেক আইডির কবলে পড়ে টাকা পাঠায় এবং তৎক্ষণাৎ সেই আইডি আমার ফ্রেন্ডকে ব্লক করে দেয় আর সে হয় প্রতারণার শিকার। এভাবেই হাজারো মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ফেসবুকে ফেক আইডি বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া কি সম্ভব?
মনে হয় নিজে থেকে একটু সচেতন হলেই ফেক আইডি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। আমাদের উচিতÑ অচেনা কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা না দেয়া, বিভিন্ন ব্রাউজারে ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন না করা, কোনো লিংক সম্পর্কে না জেনে তা ওপেন করা। অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারেও সচেতন হওয়া জরুরি। নিজের ফেসবুক আইডি অন্যের সাথে শেয়ার না করা দরকার। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে শেয়ার না করা উচিত। এভাবেই আমরা সচেতন হতে পারি আর প্রতারণা এবং ফেসবুকে আইডি বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পারি। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement

সকল