১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আন্তর্জাতিক তথ্যের কিছু অসঙ্গত কথা

-

গত ২৪ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাহিনী’ এবং কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অব:)-এর ‘বঙ্গবন্ধুর একটি ঐতিহাসিক অবদান’ শিরোনামে দু’টি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। উভয় লেখায় বই হতে দেয়া উদ্ধৃতি যদি ভুল না হয়ে থাকে, তবে এর একটি করে বক্তব্য আন্তর্জাতিক তথ্যের অসঙ্গতিÑ যা অগ্রাহ্য করা অসাধ্য। তাই এমন বই যেন প্রাচীনকাল হতে চলে আসা তথ্যের বৈপরিত্য, কল্পনানির্ভর নয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতির এই উপমহাদেশীয় প্রবণতারই ধারক। অজস্রের মাত্র দু’টি অতি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো :
ক) ‘রামায়ণে প্রক্ষেপ প্রবেশ করায় বিশুদ্ধ রামায়ণ আবিষ্কার করা দুরূহ হইয়া পরিয়াছে।’ Ñ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডা: অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ১ম খণ্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় করা মন্তব্য।
খ) ‘বৌদ্ধ প্রভাবের ফলে ব্রাহ্মণ্য মতাশ্রয়ী হিন্দু সমাজে যে শূন্যতা সৃষ্টি হইল পুরাণগুলি সেই শূন্যতাকে অনেকাংশে পূর্ণ করিতে পারিয়েছিল।’Ñ একই বইয়ের ৬২০ পৃষ্ঠায় তারই মন্তব্য। তবে এর আরো স্পষ্ট ব্যাখ্যায় বিশ্ববসু তার ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের হাজার জিজ্ঞাসা’ বইয়ের ১০ পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘মনগড়া চমকপ্রদ কল্পনারঙিন গল্পের পর গল্পে যেসব ব্যাখ্যা তারা করার চেষ্টা করেছে, তাদেরই নাম ‘পৌরাণিকী কথা,’ যার সমষ্টির নাম পুরাণ।’ মোদ্দা কথায়, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবাহে ব্রাহ্মণ্যবাদকে সতেজ রাখার প্রয়াসে প্রায় হাজার বছরব্যাপী ৩৬ খানা পুরাণ রচনার সার্থকতা এক স্বীকৃত সত্য। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও অনুরূপ প্রথার উদ্দেশ্যগত প্রয়োগের বহু নজির আমরা কি রাখছি না?
কনফেডারেশন : (অর্থ-বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের মৈত্রী)
ডা: জাফরুল্লাহর তথ্য মতে, ‘১৯৭১-এর ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর লন্ডন যাত্রার প্রাক্কালে একটা সম্পর্ক (কনফেডারেশন) অব্যাহত রাখতে প্রেসিডেন্টের দুইবারের অনুরোধে দেয়া শেখ মুজিবকে তার প্রতিশ্রুতির কথা ভুট্টো স্মরণ করায়ে দেন।’ কিন্তু তার উদ্ধৃত অন্তত ‘অ্যা লিগেসি অব ব্লাড’ বইয়ের ৫ পৃষ্ঠায় এমন কথা লেখা নাই। বরং লেখক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস শেখ সাহেবরই কথার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, “ও যধাব ধ নরম ংপড়ড়ঢ় ভড়ৎ ুড়ঁ. বি ধৎব মড়রহম ঃড় শববঢ় ংড়সব ষরহশ রিঃয চধশরংঃধহ... ঃরষষ ও যধাব ঃধষশবফ রঃ ড়াবৎ রিঃয ড়ঃযবৎং.” (প্রথম লাইনটির অর্থে, তোমার জন্য একটি খবর নিয়ে এসেছি’ বলে বিকৃতভাবে লেখা হয়েছে বইটির বাংলা অনুবাদ ‘রক্তের ঋণে’র ২০ পৃষ্ঠায় ২৫ নম্বর লাইনটিতে। অথচ অর্থ হলো : তোমার জন্য আমার কাছে একটি বিশেষ বড় সংবাদ আছে। আমরা পাকিস্তানের সাথে কিছু ‘লিংক’ রাখতে যাচ্ছি। কিন্তু অন্য সকলের সঙ্গে আলাপের পূর্বে এ ব্যাপারে তোমাকে আর কিছু বলতে পারছি না। এমন কথার ভিত্তিতে পরবর্তী প্যারায় মাসকারেনহাস তার অনুমানে লিখেছেন, “অঢ়ঢ়ধৎবহঃষু ইযঁঃঃড়, ফঁৎরহম ঃযব পড়ঁৎংব ড়ভ ংড়সব ষবহমঃযু ঢ়ৎরাধঃব পড়হাবৎংধঃরড়হ... যধফ ঃধষশবফ যরস রহঃড় ধহ ঁহফবৎংঃধহফরহম ভড়ৎ ধ ষরহশ রিঃয চধশরংঃধহ,” (স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় (এর অর্থ, প্রকৃতপক্ষে না-ও হইতে পারে) যে, লন্ডনে পাঠাবার প্রাক্কালে মুজিবের সাথে সুদীর্ঘ ব্যক্তিগত কথোপকথনে পাকিস্তানের সাথে একটি ‘লিংক’ রাখার বুঝ-ব্যবস্থার কথা তাকে বলা হয়। কিন্তু এরই বিকৃতি রূপ হলো ‘ঐ আলোচনাতেই পাকিস্তানের সাথে ‘লিংক’ রাখার ব্যাপারে রাজি করানো হয়, বলে ‘রক্তের ঋণ’-এর পূর্বোল্লিখিত পৃষ্ঠার ৩১ লাইনে লেখা হয়েছে। বাংলায় অনূদিত এই বইটি মাসকারেনহাসের নামের ওপরে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩২ বছরে লাখো পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু মূল ইংরেজিটির বহু তথ্য বর্জন ও বিকৃতির এটা একটি অদ্ভূত প্রমাণ।

আন্তর্জাতিক তথ্য
১৯৭০-এর নির্বাচনে বা আগে ৬ দফার বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া না হলেও নির্বাচন-পরবর্তী ১৯৭১-এর ৩ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে নির্বাচিত সব এমপিএ এবং এমএন এর শপথ করানো হয় এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, যা বস্তুত কনফেডারেশনেরই প্রতিচ্ছবি এবং এটাই আমাদের জাতীয় রাজনীতির ছবি। ওই বছর ২৩ মার্চ মরহুম তাজউদ্দীন আহমদের দেয়া ৬ দফাভিত্তিক সংবিধান মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হয় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে। ফলে আলোচনা ভেঙে যাওয়ায় হলো সেনাঅভিযান। প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদের মাধ্যমে একটি নিষ্পত্তির মার্কিন উদ্বেগ ভারত নস্যাৎ করে দিয়েছিল ’৭১ সালে। অতঃপর যুদ্ধবিরতি ও সমঝোতার জন্য রাশিয়ার সমর্থনে পোল্যান্ডের একটি সংশোধিত রেজুলিউশন (কার্যত সেই ৬ দফাভিত্তিক কনফেডারেশনের পরিণামগত বাস্তবায়নে) ১৯৭১-এ যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে ১৫ ডিসেম্বর উত্থাপিত হয় জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে।
কিন্তু এর কপি ছিঁড়ে ফেলে ক্রন্দনরত ভুট্টো ত্বরিত গতিতে বিশ্বসংস্থার সে সভাকক্ষ হতে বের হয়ে যান। ফলে প্রস্তাবটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকারের অগত্যা প্রেরিত নির্দেশে পরদিন ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় তাদের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এতদ সত্ত্বেও বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের কনফেডারেশন করতে চাওয়ার আদৌ কোনো ভিত্তি থাকার কথা নয়।

ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার
কর্নেল (অব:) আবদুল হকের তথ্য মতে, ‘ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবের মধ্যে এ বিষয়ে কথোপকথনে ইন্দিরা গান্ধীর ইচ্ছামতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ ভারতীয় সেনার শেষ দলটি বাংলাদেশের মাটি ত্যাগ করে।’ কিন্তু এমন কথাটি ভারতীয় লে. জে. জেএফআর জ্যাকবের ঝঁৎৎবহফবৎ ধঃ উধপপধ বইয়ের ১৫১ পৃষ্ঠায় আদৌ সমর্থিত নয়। তার কথায়, “ঝযবরশয গঁলরন ধিং শববহ ড়হ শববঢ়রহম ওহফরধহ ঞৎড়ড়ঢ়ং... ও ঃড়ড়শ ঃযরং ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু ঃড় ারংরঃ উধপপধ ধহফ পধষষ ড়হ গঁলরন. অ ভবি ফধুং ষধঃবৎ ঃযব ইধহমষধফবংয এড়াবৎহসবহঃ ৎবয়ঁবংঃবফ ভড়ৎ ঃৎড়ড়ঢ়ং ...ড়ঁৎ রহাড়ষাবসবহঃ রহ ইধহমষধফবংয পধসব ঃড় ধহ বহফ.” [শেখ মুজিব আরো কিছু সময় ভারতীয় সেনা রাখতে আগ্রহী থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হন তাদের শিগগিরই প্রত্যাহারে, যা মার্চে শুরু হয়। শিষ্টাচারসংক্রান্ত বিদায়ী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সুযোগে ঢাকা আসি এবং শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। (বইটির ১৫২ পৃষ্ঠার পরেই ওই বিদায়ী কুচকাওয়াজের ছবি আছে, যা জন্মদিন ১৭ মার্চ নয় বরং ২৩ মার্চের, যে দিনটি হয়তো তাদের বেছে নেয়ার কারণ, বছরখানেক আগেও এখানে ছিল ‘পাকিস্তান দিবস,’ অর্থাৎ ১৯৪০-সালে ‘লাহোর প্রস্তাব’ গ্রহণের দিন) এর কিছু দিন পরেই বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ আসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য চৌকি নির্মাণের, যা দ্বারা তারা চাকমা উপজাতীয়দের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ অনুরোধ রক্ষা করে বাংলাদেশের সাথে ‘আমাদের’ সম্পৃক্ততার অবসান হয়।] হ


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক

সকল