২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুসলিমদের ইতিহাস পাঠ ও জাতীয় চোখ

-

‘ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।’ কথাটি এডওয়ার্ড হালেট কারের। এই সংলাপ আমাদেরকে বর্তমান থেকে অতীতে হারাতে বলে না। বরং অতীতকে বর্তমানে এনে ভবিষ্যতের দিশা নির্দেশ করে। কারণ আমাদের বর্তমান অতীতের নিঃশ্বাস থেকে বেরিয়ে বিশেষ অবয়ব লাভ করেছে। ফলে বর্তমানকে বুঝে তার লাগাম হাতে নিতে হলে অতীতকে না বুঝে এগোনো যায় না। আর ভবিষ্যৎ আপন হাতে তারাই সাজাতে পারে, বর্তমানের উত্থান-পতনের শাহরগে যাদের হাত! ডাচ ইতিহাসবিদ জন হুজিংগা অতএব বলেন, ‘ইতিহাস হলো সেই বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন, যাতে কোনো সভ্যতা নিজেই তার উত্থান-পতনের অতীত ব্যাখ্যা প্রদান করে।’
এর মানে সত্যিকার ইতিহাস ভুলে গেলে আমাদের ‘আজ’ যেমন ‘আমাদের’ হবে না, তেমনি হারাব আগামীকালকে। ইতিহাস নিজেই এক বারুদ এবং বারুদের গুদামঘর। এ কোনো প্রাচীন ইতিবৃত্তের প্রতœতত্ত্ব নয়। এ এক অনিরুদ্ধ স্রোত, এক স্বাধীনতা ও জীবনের নবনির্মাণ। কিন্তু সে কেবল মানুষের যাপনের বয়ান নয়। সে সময়ের, স্থানের এবং মানুষের সমন্বিত চিত্র ও চরিত্রের স্মরক। তার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়, মানুষ, সভ্যতা ও মানুষের পৃথিবী। ফলে মানুষ ও তার কর্মকাণ্ড এখানে হাজির হয় নিরন্তর। সমাজ-সভ্যতা, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, দর্শন, স্থাপত্য, যুদ্ধ, আইন প্রভৃতির ধারাক্রম ভেসে উঠতে থাকে সেলুলয়েডের ফিতার মতো। ইতিহাস এসবের শুধু অবগতি দেয় না, বরং এসবের ভালো-মন্দ পার্থক্য করা এবং বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও সরবরাহ করে। সেই ক্ষমতার সাথে সম্পর্ক দৃষ্টি উন্মোচনের। যে দৃষ্টি খুলে গেলে কালের দেহকে শুধু নয়, আত্মাকেও প্রত্যক্ষ করা যায়। যারা সেটি পড়তে ও ধরতে ও সেই আলোকে উচিত করণীয় সম্পাদন করতে পারে, কাল তাদের জন্য উচ্চাসনের দরজা খুলে দেয়।
ইতিহাসের একান্ত প্রয়োজন যথার্থতা, বস্তুনিষ্ঠতা। যার মধ্যে থাকবে অতীতে প্রকৃতই যা ঘটেছিল, তারই ইতিবৃত্ত। মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ও সত্যনিষ্ঠ ঘটনাচক্রের ভেতর-বাইরের স্বরূপ প্রকটিত হবে তাতে। আরবিতে ইতিহাসকে বলে তারিখ। এর মানে হলো, সময়ের পরিচয়দান, সময় বিষয়ক তথ্যদান। আরব ঐতিহাসিকরা একে দেখেন এমন এক শাস্ত্র হিসেবে, যাতে বিভিন্ন গোত্র, বংশ, ভূখণ্ড ও ব্যক্তিদের ঘটনাবলির বিবরণ ও বিশ্লেষণ থাকে বা বিশ্বের ঘটনাচক্রের দিনকাল যাচাই ও বিবৃত হয়।
জানা কথা যে, গ্রিক শব্দ ঐরংঃড়ৎরধ থেকে এসেছে ঐরংঃড়ৎু। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬০-৫৪৬) তার গবেষণাকর্মের শিরোনামে শব্দটি ব্যবহার করেন প্রথমে। এর অর্থ হলো সত্যের অনুসন্ধান ও তদন্ত। বাংলায় ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘ঐতিহ্য’। ইতিহ-এর সাথে আস মিলে হয়েছে ইতিহাস। এর মানে হলো, এমনই ছিল বা এরূপ ঘটেছিল। অর্থাৎ ইতিহাস হচ্ছে, অতীতের এমন বিবরণী, যা আসলে এমনই ছিল, যেমন আছে বিবরণে। ঐতিহ্য বা সুকৃত অতীত ও এর পক্ষ-প্রতিপক্ষের কালো-ধলো, রূপ-রূপান্তর দৃশ্যমান হবে সেই বিবরণে। আধুনিক ইতিহাসের জনক বলে পরিচিত লিউপোল্ড ভন রাঙ্ক তাই ইতিহাসকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, ‘যা আসলেই ঘটেছিল, তাকে খুঁজে বের করা এবং তার সঠিক বিবরণই হচ্ছে ইতিহাস।’
ইতিহাসের পাঠকমাত্র জানেন যে, ইতিহাসের অধ্যয়ন দুই ভাগে হতে পারে। একটি ভৌগোলিক অবস্থানগত, অপরটি বিষয়বস্তুগত। ইতিহাসের উপাদান হচ্ছে সেসব লিখিত-অলিখিত তথ্য-প্রমাণ, যার ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
যেভাবেই বলি না কেন, ইতিহাস আসলে এক অনুসন্ধানী ধারা। আই, আর ফ্লিন্ট এবং সি এইচ ওমানের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায়, এ এক সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য মানুষের কার্যাবলি লিপিবদ্ধ করা। এ প্রচেষ্টা যেকোনো জাতি ও সভ্যতার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিহাস আমাদের কিভাবে সমৃদ্ধ করে? ইবনুল আসির লিখেন, পূর্ববর্তী লোকদের জীবন ও কর্মকে মনে করিয়ে দেয় ইতিহাস। ক্ষতিকর দিকগুলোকে ধরিয়ে দেয়, কল্যাণকর বিষয়গুলোকে অবলম্বন করতে শেখায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা দিয়ে সে সমৃদ্ধ করে আমাদের। বস্তুত সে বিকাশ ঘটায় বুদ্ধিবৃত্তির। এর মাধ্যমে জমিয়ে রাখা যায় মানুষের মজমা।
এই যে মানুষের মজমা জমিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটানো, অতীতের বহু প্রজন্ম ও শতাব্দীর অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করা, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইতিহাস নিজেদের পরিচয় ও শেকড়কে সংরক্ষণ করে। আধিপত্যবাদী প্রতিটি জাতি ও রাষ্ট্র চায় অন্য জাতিগুলোর পরিচয় ছিনতাই করতে, শেকড় কেটে ফেলতে। এটি করতে পারলে সংশ্লিষ্ট জাতি যেমন প্রাণশক্তি হারাবে, তেমনি সে মনের দিক থেকে হতে থাকবে অন্যের অধীনস্থ। এদের দাস বানানোর জন্য আর যুদ্ধ করতে হয় না, স্বেচ্ছায় তারা বরণ করে নেয় অন্যের দাসত্ব, গোলামি। এর মধ্যে কল্পনা করে মুক্তি ও আরাম। নিজেদের ইতিহাসের সত্যিকার রূপ প্রজন্মের সামনে হাজির না থাকার বিপদ হলো, তারা কেবল অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়, তা নয়, তারা পরাণুকরণ ও হীনম্মন্যতায় ডুবে যায়। ফলত ইতিহাসের সত্যিকার অনুসন্ধান কেবল জ্ঞানগত প্রয়োজনে অপরিহার্য, তা নয়, দেশ ও মিল্লাতের মুক্তি ও অগ্রগতির জন্যও এটি আবশ্যক।
এ বহুমাত্রিক প্রয়োজন পূরণে ইতিহাসের চর্চায় মুসলিম মনীষীদের বিচরণ কোনোকালেই সীমিত থাকেনি। সেই হিজরি প্রথম শতকে ওরওয়া ইবনে যুবাইর (৭১২), আবান বিন ওসমান ইবনে আফফান (৭২৩), ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (রা:) (৭৩৫) ছিলেন এ ধারার নেতৃত্বে। এর পরে দেখব ইবনে শিহাব যুহরি (৭৪১), মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (৭৬১), আবু মিখনাফ (৭৭৪), হিশাম ইবনে কালবি (৮১৯), আল ওয়াকিদি (৮২৩), ইবনে হিশাম (৮৩৫), ইবনে সাদ (৮৪৫), খালিফা ইবনে খাইয়াত ( ৮৫৪), ইবনু আবদিল হাকাম (৮৭১), ইবনে কুতাইবাহ (৮৮৯), আদ দিনাওয়ারি (৮৯১), বালাজুরি (৮৯২) ইয়াকুবি (৯০০), ইবনে ফাদলান (৯২২ এর পরে), মুহাম্মদ ইবনে জারির আত তাবারি (৮৩৮-৯২৩), আবু মুহাম্মদ হাসান আল হামদানি (৯৪৫), আবু বকর ইবনে ইয়াহইয়া আসসুলি ( ৯৪৬), আলী আল মাসউদি (৯৫৫), সিনান ইবনে সাবিত (৯৭৬), কাযি আন নুমান (৯৭৪), ইবনুল কুতাইয়া (৯৭৭), আসসাগানি (৯৯০)... এগুলো প্রথম দিককার বিভিন্ন ধারার মুসলিম ঐতিহাসিকদের সব নাম নয়, কিছু অগ্রগণ্য কিছু নামমাত্র।
পরবর্তী অগ্রগণ্যদের মধ্যে দেখব আল মুকাদ্দাসি (১০০০), ইবনুল ফারাদি (১০১২), ইবনে মিশকাওয়াহ (১০৩০), আল উতবি (১০৩৬), আল মুসাব্বিহি (১০৩০), আল বেরুনি (১০৪৮), হিলাল ইবনে আল মুহাসসিন আস সাবি (১০৫৬), ইবনে হাযম উন্দুলুসি (১০৬৩), ইউসুফ ইবনু আবদিল বার (১০৭১), খতিবে বাগদাদি (১০৭১), আবুল ফজল বায়হাকি (১০৭১), জাহিরুদ্দিন নিশাপুরি (১১৭৫), ইবনে হাইয়ান (১০৭৫), আল উরদি (১০৮৫), আবু উবাইদ আবদুল্লাহ আল বাকরি (১০৯৪), কাযি ইয়াজ (১১৪৯), ইবনুল কালানিসি (১১৬০), মুহাম্মদ আল বাইদাক (১১৬৪), ইবনে আসাকির (১১৭৬), উসামা ইবনে মুনকিয (১১৮৮), ইবনে রুশদ (১১৯৮), ইমামুদ্দিন ইসফাহানি (১২০১), আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযি (১২০১), আবদুল লতিফ বাগদাদি (১২৩১), ইয়াকুত হামাবি (১১৭৯-১২২৯), ইবনুল আসির (১১৬০-১২৩১), বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ (১২৩৫), মিনহাজ উস সিরাজ (১২৬০ পরবর্তী), ইবনুন নাদিম (১২৬৯), আবু শামা (১২০৩ থেকে ১২৬৮ এর মধ্যে), ইমাম কুরতুবি (১২৭৩), আবদুল আজিজ আল মালজুযি (১২৯৮), ইবনে খাল্লিকান (১২৮২), ইবনু আবদিল জাহির (১২৯৩), মুহাম্মদ ইবনে আলী রাওয়ান্দি (১১৭৯-১২২৯), যাহিরুদ্দিন নসর মুহাম্মদ আওফি (১২৪৯), সিবত ইবনুল জাওযি (১২৫৬), হামদুল্লাহ মুস্তাওফি (১২৮১), ইবনে বিবি (১২৮১ এর পরে), আতা মালিক জুওয়াইনি (১২৮৩), ইবনুত তিকতাকা (১৩০২), ইবনে ইবহারি (১৩১২), ইবনে বতুতা (১৩৬৯), ইবনুল খাতিব (১৩৭৪), ইবনে আবি যার (১৩২০), ইবনুল ফুওয়াতি (১৩২৩), ওয়াসসাফ (১৩২৩), আমির খসরু (১৩২৫), আবুল ফিদা (১৩৩১), আন নুওয়াইরি (১৩৩২), আল মিযযি (১৩৪১) আযযাহাবি (১৩৪৮), জিয়াউদ্দিন বারানি (১৩৫৭), ইবনে খাতির (১৩৭৩), রাশিদুদ্দিন হামদানী (১৩৯৮), ইবনুল ফুরাত (১৪০৫), আল মাকরিযী (১৪৪২), ইসমাইল ইবনে আল আহমার (১৪০৬), ইবনে খালদুন (১৪০৬), ইবনে হাযার আসকালানি (১৪৪৯), শরফুদ্দিন আল ইয়াজদি (১৪৫৯), বদরুদ্দিন আইনি (১৪৫১), ইবনে তাগরিবিরদি (১৪৭০), আশিকপাশা যাদে (১৪৮১), তুরশুন বেগ (১৪৮৮ পরবর্তী), মীর খোন্দ (১৪৯৮), ইমাম সাখাবি (১৪৯৭), জালালুদ্দিন সুয়ুতি (১৫০৫), ইদরিস-ই বিতলিসি (১৫২০), ইবনে ইয়াস (১৫২২), মুজিরুদ্দিন উলাইমি (১৫২২), জহিরুদ্দিন বাবর (১৫৩০), মুহাম্মদ খাওয়ান্দা মীর (১৫৩৫), মাতরাকই নাসুহ (১৫৬৪), হুকা সাদেদ্দিন এফেন্দি (১৫৯৯), মোস্তাফা আলী (১৬০০), মোস্তাফা সেলানিকি (১৬০০), আবুল ফজল আল্লামি ইবনে মুবারক (১৬০২), আবদুল কাদির বাদায়ুনি (১৬১৫), আবুল কাশেম ফেরেশতা (১৬২০), নিযামুদ্দিন আহমদ (১৬২১), আহমদ মুহাম্মদ আল মাক্কারি (১৬৩২), ইস্কান্দার বেগ মুনশি (১৬৩২), খাতিব চেলেবি (১৬৪৭), ইবরাহিম পেচেবি (১৬৫০), মোস্তফা বিন আবদুল্লাহ হাজ্জি খলিফা (১৬৫৬), ইনায়েত উল্লাহ কামবুহ (১৬৭১) মুহাম্মদ সালেহ কামবুহ (১৬৭৫), ইভিলিয়া চেলেবি (১৬৮২ পরবর্তী), আবুল ফজল মামুরি (১৭০০), মোস্তাফা নাইমা (১৭১৬), সিলাহদার ফিন্দিকলিলি মেহমেদ আগা (১৭২৩), মুহাম্মদ আল ইফরানি (১৭৪৭), মির্জা মেহদি খান আস্তারাবাদি (১৭৬০), মুহাম্মদ আল কাদেরি (১৭৭৩), আহমেদ রেশমি এফেন্দি (১৭৮৩), খলিল আল মুরাদি (১৭৯১), গোলাম হোসাইন সলিম (১৮১৭), আবদুর রহমান আল জাবারতি (১৮২৫), আহমেদ চেভদেত পাশা (১৮৯৫), আহমদ ইবনে খালিদ আন নাসির (১৮৯৭), থেকে নিয়ে শিবলি নোমানি (১৯১৪), স্যার সৈয়দ আমির আলী (১৯২৮), আল্লামা সোলায়মান নদবি (১৯৫৩), মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ মিয়া (১৯৭৫), মেহের আবদুল হক (১৯৯৫), সৈয়দ শামসুল্লাহ কাদরি (১৯৫৩), রহমত ফরুখাবাদি (১৯৯৩), খালিক আহমদ নেযামি (১৯৯৭), বাহিত ইতিহাসবিদদের যে ধারা, তা এখন জারাফুল ইসলাম ইসলাহি, ইরফান হাবিব, এহসানুল করিম, মোবারক আলী, ইসমাইল রেহান, আলী আল সাল্লাবি, রাগিব সারজানি, গোলাম আহমদ মোর্তজাসহ বিপুলসংখ্যক সৃষ্টিশীল হাতের বিচিত্র বুননে ঋদ্ধ ও গতিমান।
বাংলাদেশে মুসলিমদের ইতিহাসচর্চার ধারা কম গতিমান নয়। তেমন পেছনে না গেলেও আমরা দেখি, ক’দিন আগেই এখানে ইতিহাসচর্চা করেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহিম (১৯৮১), আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ (১৯৮৪), কে আলী (১৯৯৯), এম আকবর আলী (২০০১), মুহাম্মদ ইসহাক (২০০৫), আবদুল করিম (২০০৭), মোহাম্মদ মোহর আলী (২০০৭), আহমদ হাসান দানি (২০০৯), ড. আশকার ইবনে শাইখ (২০০৯), আবদুল মান্নান তালিব (২০১১), এ এফ সালাহুদ্দিন আহমদ (২০১৪), মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (২০১৪), এ বি এম হোসেন (২০২০), এ কে এম মোহসিন (২০২১)।
এসব ঐতিহাসিকের বাইরে রয়ে গেছে গুরুত্ববাহী বহু নাম। যাদের গ্রন্থাবলি কালোত্তর বিভার অধিকারী। কিছু ইতিহাসলেখক এখনো কাজ করছেন আমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ব্যাকুলতাসহ। সেসব নামও গুরুত্ববহ।
এই বিপুল, বিস্তর লেখকদের কলম বিচিত্র রচনারাজির যে সঞ্চয় তৈরি করেছে, এ নিয়ে হতে পারে বহুমাত্রিক গবেষণা। এর নানা দিক ও দিগন্তকে পর্যালোচনার আলোতে এনে আজকের পাথেয় নির্দেশ একান্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণে তরুণ মেধা ও প্রত্যয়গুলোর এগিয়ে আসা এমন এক কর্তব্য, যা সম্পাদিত হওয়ার সাথে যুক্ত আছে মুসলিমদের অতীতের সাথে বর্তমানের সংলাপের সিলসিলা। এই সিলসিলা দেখিয়ে দেয়, আমরা কোথায় আছি, কোথায় থাকা উচিত ছিল? এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সময়ের সঙ্কটপাঠের এমন চক্ষু, যা কেবল ঘটমান চক্রকে দেখে না, এর আড়ালের স্বরূপকেও প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়। এতে তৈরি হয় সামাজিক চিন্তার ব্যক্তিত্ব। যার শেকড় থাকে অতীতের গহিনে, আত্মপরিচয়ের জমিতে সে বিস্তার করে ডালপালা। এবং ক্রমে ক্রমে সেগুলো জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক হিসেবে আকাশের দিকে মাথা উত্তোলন করে।
এই অবনমনের শতাব্দীগুলোতে মাথা উত্তোলনের প্রয়াস মুসলিম দুনিয়ায় কম হচ্ছে না। কিন্তু ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে বার্তা নিয়ে জাতীয় চোখ দিয়ে কালের মর্মপাঠে ভুল করলে অতীতের হাতে যেমন মার খেতে হয়, তেমনি মার খেতে হয় বর্তমান ও ভবিষ্যতের হাতেও! হ
লেখক : কবি, গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement