২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মৃতিতে ও অনুভবে ইতিহাসবিদ

-

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
১৯৭৬-৭৭ সালের কথা। দিনক্ষণ এখন আর মনে নেই। লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসার নাজিমে আলা বিশিষ্ট অনুবাদক ও লেখক আল্লামা মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ রহ: আমাকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে ড. মঈনুুদ্দীন আহমদ খানের বাসায় নিয়ে যান। উদ্দেশ্য তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তিনি তখন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান। আল্লামা মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ রহ: তাকে বলেন, এ ছেলেটি আমার ভাইপো, হাদিসে কামিল পাস করেছে। বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক। আপনার কাছে এনেছি, তার দেখাশোনা করবেন। খান সাহেব বলেন, ‘পড়ালেখা করলে ভালো করতে পারবে’। সে সময় আল্লামা মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ রহ:-এর প্রতি খান সাহেবের যে শ্রদ্ধা ও বিনয় দেখেছি সেটা এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল। খান সাহেব ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন বাড়ি এলে ‘নুরুল আনোয়ার’সহ অনেক আরবি কিতাবের জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আল্লামা মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ রহ.-এর কক্ষে বসে তার সাথে মতবিনিময় করে সমাধান খুঁজতেন।
যথাসময়ে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। আমার ঝোঁক ছিল বাংলা সাহিত্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতি। বাবা চাইতেন ধর্মীয় কোনো বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করি। গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমার শিক্ষক শামসুল আলম ইসলামের ইতিহাসে ভর্তির পরামর্শ দেন। স্যারের যুক্তি ছিলÑ আমার যেহেতু মাদরাসার ব্যাকগ্রাউন্ড, এটিই আমার উপযুক্ত ক্ষেত্র। কারণ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির মূল তথ্য-উপাত্ত আরবি-উর্দুতে নিহিত। পরবর্তীতে এ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার পথ অবারিত হবে। অবশেষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের প্রতিটি স্তরে ড. মঈনুুদ্দীন আহমদ খান আমাকে পাঠদান করেন। তার জ্ঞান, গবেষণা, অগাধ মনীষা, প্রখর বুদ্ধির দীপ্তি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পারঙ্গমতা আমাদের বিমোহিত করতো। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবাধ বিচরণ তার সৃজনশীল প্রতিভার বহুমাত্রিকতা প্রমাণ করে। প্রাথমিক থেকে স্নœাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত প্রথম বিভাগ ও স্বর্ণপদক পাওয়া এ মনীষী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স করেন এবং ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কানাডার ম্যাকগিল বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। পরবর্তীতে উপমহাদেশের খ্যাতনামা প্রতœতাত্ত্বিক গবেষক ড. আহমদ হাসান দানির তত্ত্বাবধানে ‘ফরায়েজি আন্দোলন’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন। পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলি শাখায় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজে রাজনীতি বিজ্ঞানের ‘সেমিনার ইন ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্স’ অধ্যয়ন করেন। ম্যাকগিল বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রখ্যাত গবেষক, পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা প্রাচ্যবিদ ও কানাডার ম্যাকগিল বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথের (১৯১৬-২০০০) সান্নিধ্যে আসেন এবং তার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করতে গিয়ে ড. খানের চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হয়। ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস তার অধীত বিষয় হলেও দর্শন, পদার্থ, রসায়ন ও এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্সের প্রতি তার ঝোঁকপ্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান বদিউর রহমান ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর শব্বির আহমদ তার অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মাস্টার্স শেষে ড. মঈনুুদ্দীন আহমদ খানের তত্ত্বাবধানে এমফিল কোর্সে ভর্তি হই। তখন আমার আয়ের তেমন কোনো উৎস ছিল না। রাজধানী থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য বাংলাদেশ টাইমসের পটিয়া সাবডিভিশনাল করেসপনডেন্ট হিসেবে কাজ করতাম। এতে শুধু পকেট খরচ জুটত। ড. মঈনুুদ্দীন আহমদ খান বিশ^বিদ্যালয়ের বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের মিটিংয়ে বারবার চেষ্টা করে আমার জন্য মাসিক স্কলারশিপ মঞ্জুর করান। স্যারের প্রতি এ কৃতজ্ঞতা আমি সারা জীবন স্মরণ করব। পরবর্তীতে এমফিল কোর্সের প্রথম পার্টের লিখিত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে পিএইচডি কোর্সে ট্রান্সফার হওয়ার আবেদন করি। ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড অব অ্যাডভ্যান্স স্টাডিজের অধিবেশনে আমার আবেদন অনুমোদিত হয়। প্রায় ১০ বছর আমি স্যারের সাথে নিবিড়ভাবে গবেষণাকর্মে প্রবৃত্ত হই। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তার অনুমোদন নিয়ে কলকাতা, লক্ষেèৗ, দিল্লি, তুঘলকাবাদ, করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মক্কা ও মদিনা সফর করি। আমার অভিসন্দর্ভের পাতায় পাতায় তার স্মৃতি জড়িত। কত দিন তার বাসায় গেছি এবং কতবেলা খেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। দু-তৃতীয়াংশ গবেষণাকর্ম শেষ হলেও অনিবার্য কারণে তার অধীনে আমি পিএইচডি থিসিস সুসম্পন্ন করতে পারিনি। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শাহ মুহাম্মদ শফিকুল্লাহর তত্ত্বাবধানে শিরোনাম ঈষৎ পরিবর্তন করে নতুনভাবে পিএইচডি কোর্সে নিবন্ধিত হই। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় সিন্ডিকেট আমাকে পিএইচডি দেয়। ঢাকা ও লক্ষেèৗ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসররা আমার থিসিস মূল্যায়ন করেন।
ড. মঈনুুদ্দীন আহমদ খান ছিলেন সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী। আন্তর্জাতিক মানের স্কলার হয়েও তার ব্যবহার ছিল মার্জিত। আচরণ ছিল পরিশীলিত। গৌরব ও অহংবোধ থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বিমুক্ত। বসনে ছিলেন একেবারে সাদাসিধে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায়, নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, জিকির আসকার ছিল তার নৈমিত্তিক আমল। মসজিদে গিয়ে ফজরের সালাত আদায়ে তাকে যতœবান দেখা যেত। প্রায় প্রতি বছর রমজানে ইতিকাফে বসতেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বাকর রা:-এর ৪২তম অধস্তন পুরুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ শিক্ষাগুরু চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামে ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গত ২৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। ওই দিন বাদ জোহর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে জানাজা শেষে লোহাগাড়ার চুনতিতে দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার ইন্তেকালে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি আজীবন জ্ঞানচর্চা ও ইতিহাস অন্বেষক হিসেবে তৎপর ছিলেন। সারা দেশে ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ী।
প্রফেসর ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খানের কর্মজীবন ছিল ছাত্রজীবনের মতো উজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয়। ১৯৬১ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ইসলামাবাদে ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে ওই বিভাগে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি এ বিভাগে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৭ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রথম মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯০ সালে বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা শাহ আবদুল জব্বার রহ: প্রতিষ্ঠিত বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালে চট্টগ্রামের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা ভিসি নিযুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে তার ১৮টি মৌলিক গ্রন্থ। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী গবেষণা জার্নালে বহু নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। তিনি দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামাজিক ইতিহাস, মুসলিম সামাজিক ব্যবস্থাপনা, বিশ্বব্যাপী সংস্কার আন্দোলন, ফারাবির চিন্তাদর্শন, ইবনে খালদুনের সমাজদর্শন, শহিদ তিতুমীরের আন্দোলনের স্বরূপ প্রভৃতি বিষয়ে ১০০টি মৌলিক নিবন্ধ রচনা করেন। তার লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছেÑ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব ঋধৎধরফর গড়াবসবহঃ, গঁংষরস ঈড়সসঁহরঃরবং ড়ভ ঝড়ঁঃয ঊধংঃ অংরধ: অ নৎরবভ ঝঁৎাবু, ঞরঃঁসরৎ ধহফ যরং ভড়ষষড়বিৎং রহ ইৎরঃরংয ওহফরধহ জবপড়ৎফং, গঁংষরস ংঃৎঁমমষব ভড়ৎ ভৎববফড়স রহ ইবহমধষ (১৭৫৭-১৯৪৭), ঝবষবপঃরড়হং ভৎড়স ইবহমধষ এড়াবৎহসবহঃ ৎবপড়ৎফং ড়হ ডধযধনর ঞৎরধষং (১৮৬৩-১৮৭০), অ নরনষরড়মৎধঢ়যরপধষ ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় গড়ফবৎহ ওংষধসরপ রহ ওহফরধ ধহফ চধশরংঃধহ ১৭০০-১৯৫৫), ওহঃবফৎহধঃরড়হধষ ওংষধসরপ ঈড়হভবৎভবহপব, ঋবনৎঁধৎু ১৯৬৮, ঙৎরমরহ ধহফ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঊীঢ়বৎরসবহঃধষ ঝপরবহপব: ঊহপড়ঁহঃবৎ রিঃয গড়ফবৎহ ডবংঃ, ঝবপঁষধৎরংস, ঝপরড়ষরংধস ধহফ যিধঃ হবীঃ?, অ ঈড়সঢ়বৎধঃরাব ঝঃঁফু ড়ভ ঈড়সসঁহরঃু জবংঢ়ড়হংব ঃড় উরংধঃবৎ গধহধমবসবহঃ রহ ঔধঢ়ধহ ইধহমষধফবংয ধহফ ঝড়ঁঃয অংরধ, ঝড়পরধষ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ইধহমষধফবংয ঁহফবৎ ঃযব ইৎরঃরংয জঁষব. ওংষধসরপ জবারাধষরংস, ফারায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস, ইসলামে দর্শনচিন্তার পটভূমি, যুক্তিতত্ত্বের স্বরূপ সন্ধান, প্রাচ্য বনাম প্রতীচ্য।
চিন্তার স্বাধীনতা ও পরিধি নিয়ে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেন। এ ক্ষেত্রে ইমাম হাসান বসরির চিন্তাদর্শনে তিনি বেশ প্রভাবিত মনে হয়। ‘ফ্রিডম অব চয়েস অ্যান্ড ডিটারমিনিজম’র মতো জটিল একটি বিষয়কে সহজভাবে উপলব্ধির জন্য মঈনুদ্দীন আহমদ খানের সাথে কথা বলেছেন তার ছাত্র মাসুদ জাকারিয়া। মাসুদ জাকারিয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ‘আসাবিয়াকেন্দ্রিক ইবনে খালদুনের রাজনৈতিক চিন্তা’ নিয়ে ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খানের তত্ত্বাবধানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।
‘পুনর্পাঠ’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান বলেন, ‘ফ্রিডম অব চয়েস’ মানে হলো কর্মের স্বাধীনতা; অর্থাৎ আপনি যেটা করতে চান, সেটা স্বাধীনভাবে করার সামর্থ্য থাকা। আর ‘ডিটারমিনিজম’ হলো স্বাধীনতার উল্টো, মানে বাধ্যবাধকতা। এ কথাটা এসেছে তাকদিরের বিশ্বাস থেকে। তাকদির মানে হলোÑ আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্ট জীবের ইচ্ছা এবং কর্মধারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্ধারণীকে তাকদির বলা হয়। আপনি তাকদিরের বাইরে কোনো কিছু করতে পারবেন না। আল্লাহ আপনার জন্য যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এর মধ্যেই আপনাকে থাকতে হবে। যেমন ধরুনÑ আল্লাহ গরু সৃষ্টি করেছেন। এরপর গরুর জীবন রক্ষা করতে এবং প্রতিপালনে তার রিজিক ও পাওনা বরাদ্দ করে দিয়েছেন। এটিকে বলে ‘ডিটারমিনিজম’। একটি গরুর জন্য তার রিজিক আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঘাসপাতার মধ্যে, গরু হাজার চেষ্টা করেও নিজের শরীরকে মোটাতাজা করতে গোশত খেতে পারবে না। গোশত তার রিজিকের মধ্যে নেই। একটি বিড়ালের জন্য আল্লাহ রিজিক নির্ধারণ করে দিয়েছেন গোশতের মধ্যে, বিড়াল ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচতে পারবে না। এটি হলো তাকদির।
দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আমার শিক্ষাগুরু জ্ঞানতাপস ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খানের জীবনের সব ভুলত্রুটি ও বিচ্যুতি মার্জনা করুন। তার নেক আমলগুলো কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চতর দারাজাত নসিব করুন, আমিন। হ
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement