২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রাহ্মণ্যবাদ ও প্রতিরোধী মতবাদ : তারানাথের দৃষ্টিতে

-

বাংলার ইতিহাস অধ্যয়নে লামা তারানাথ (১৫৭৫-১৬৩৪) বেশ গুরুত্বপূর্ণ । ‘তারানাথ’ বলে খ্যাত হলেও তার মূল নাম ‘কুন-ডগা স্নিং-পো’। লামা তথা শিক্ষক ও ধর্মগুরু ছিল তার পদবি। বৌদ্ধদের কালচক্রতন্ত্রী ঔড়-হধহ সম্প্রদায়ের গুরু ছিলেন তিনি। বৌদ্ধ কালচক্র মতবাদের কয়েকটি ভিত্তিগ্রন্থ রচনা করেন তারানাথ। ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে তরুণ তারানাথ রচনা করেন ঐতিহাসিক গ্রন্থ ফমড়ং-ফড়ফ-শঁহ-নুঁহ’, এর মানে হচ্ছে ‘যা সকল ইচ্ছা পূর্ণ করে’। তার অন্যতম গ্রন্থ ১৬০৮ সালে তিব্বতি ভাষায় রচিত ফঢ়ধষ ফঁং শুর 'শযড়ৎ ষড়'র পযড়ং নংশড়ৎ মুর নুঁহম শযঁহমং হুবৎ সশযড় তথা ‘হিস্ট্রি অব বুদ্ধিজম ইন ইন্ডিয়া’। তার বইয়ে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। অজাতশত্রুর রাজত্বকাল থেকে তের শতকে মুসলিম বিজয় অবধি বর্ণনা করেছেন তারানাথ। বাংলার ইতিহাসে এটি একটি আকরগ্রন্থ।
বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তিস্থলে তারানাথ গভীরভাবে লক্ষ করলেন এর অবনতি। তার কালে এর যে বিপর্যয় দেখা যায়, তিনি একে হাজির করেন পর্যবেক্ষণমূলক আলোচনায়।
তিনি দেখান, বৌদ্ধধর্ম প্রায় সম্পূর্ণরূপে ওই সব বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল যেসব বাতিল করে বুদ্ধ স্বয়ং তার মৌলিক ধর্মীয় আদর্শ প্রচার করেছিলেন। প্রচলিত হিন্দুধর্ম থেকে এ ধর্মের পার্থক্য নির্ণয় অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কেন?
গৌতম বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার শুরু করেন খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে। তিনি চার দিকে দেখছিলেন বিপর্যয়; মানুষের বিপন্নতা। গভীর ভাবনা-চিন্তা থেকে চারটি মূল সত্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং এগুলোর প্রচারে নিয়োজিত হন। সত্যগুলো হচ্ছেÑ ক. সংসার দুঃখময়; খ. নিশ্চয়ই দুঃখের কারণ রয়েছে; গ. দুঃখের অবসান হওয়া উচিত; ঘ. এর যথার্থ উপায় জানা উচিত। বুদ্ধ প্রচার করেন, আটটি উপায় অবলম্বন করলে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একে বলা হয় ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ।’ এগুলো হচ্ছেÑ ক. সম্যক দৃষ্টি; খ. সৎ সঙ্কল্প; গ সৎ বাক্য; ঘ. সৎকর্ম; ঙ সৎ জীবন; চ. সৎ চেষ্টা; ছ. সৎ স্মৃতি এবং জ. সম্যক সমাধি।
বুদ্ধের এ প্রচার ভোগ ও বিলাসকে আঘাত করে; তবে শরীরের ওপর নিপীড়নকেও স্বীকার করেনি। তিনি শেখান বিশেষ সাধনপন্থা, মুক্তির জন্য। এই মুক্তির নাম ‘নির্বাণ’। পরম মুক্তি পেতে হলে পুনর্জন্মের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনটি বিষয়ের ওপর খুব গুরুত্ব দেন বুদ্ধ। সেগুলো হচ্ছেÑ শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা। শীল হচ্ছে হিংসা, মিথ্যা, বিলাস প্রভৃতির পথ পরিহার করা। সমাধি হচ্ছে ধ্যান আর প্রজ্ঞা হলো বোধি।
গৌতম বুদ্ধের এ প্রচার ব্রাহ্মণ্যবাদকে আঘাত করছিল গোড়া থেকে। এ ছিল ব্রাক্ষণ্যবাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দুঃশাসনের প্রতিবাদ।
ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্যের জবাবি প্রতিক্রিয়া ভারতে নানাভাবে হচ্ছিল। এমনকি হিন্দুসমাজও প্রকম্পিত হচ্ছিল নানা আন্দোলনে। প্রথম দিকের উপনিষদ এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাবমুক্ত নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যবর্তীকালে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধিৎসা খুব বড় হয়ে দেখা দেয়। পরিব্রাজক ও শ্রমণ নামে পরিচিত একদল সন্ন্যাসী এই নতুন চিন্তার অগ্রদূত ছিলেন। বৈদিক যুগের পরবর্তী যুগে চতুরাশ্রমের প্রথা ছিল। এই চতুরাশ্রমের শেষ দু’টি আশ্রমে, অর্থাৎ বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস পর্বে, উচ্চতর বর্ণের লোকেরা অভ্যস্ত পরিবার ও সমাজবন্ধন এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস পায়।
বেদের অধিকার ও তার ওপর প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে অস্বীকার করে জন্ম নেয় নানা আন্দোলন। সে সময় সমাজে পশুবলির মাধ্যমে যজ্ঞানুষ্ঠান খুব বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাকে অনুমোদন করেনি নতুন এই ধারা।
ব্রাহ্মণরা বেদকে ঐশী গ্রন্থ হিসেবে দাবি করতেন, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বেশির ভাগই অব্রাহ্মণ ছিলেন এবং ব্রাহ্মণদের বর্ণশ্রেষ্ঠত্বের দাবিও অগ্রাহ্য করেছিলেন। ব্রাহ্মণদের প্রাধান্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্ণভেদ ব্যবস্থাও তারা মানেননি। দেবদেবীর পূজায় তারা অবিশ্বাসী ছিলেন। মানুষের জীবনে স্বর্গীয় দাক্ষিণ্যের উপযোগিতাও তারা অস্বীকার করেছিলেন।
এদের আন্দোলনে মূল বিষয় ছিল বৈদিক ঐশিত্বকে প্রত্যাখ্যান ও যজ্ঞ-প্রথার বিরোধিতা। বৈদিক ধর্মের বিরুদ্ধে এই প্রতিক্রিয়ার দু’টি ধারা ছিল। একটি ধারাকে বলা হয় ‘নাস্তিক্যবাদী’। এ ধারাটি বৈদিক দেবদেবী ও ব্রাহ্মণ প্রাধান্যের প্রয়োজনীয়তা সরাসরি অস্বীকার করেছিল। অপর ধারাটি ছিল আস্তিক্যবাদী ও একেশ্বরবাদী। এই ধারায় ব্যক্তিগত দেবতার সন্তোষ বিধানের জন্য, ভক্তিকেই একমাত্র উপায় বলে মনে করা হতো। এই দ্বিবিধ প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রাচীন ভারতে আজিবিক, বৌদ্ধ, জৈন, শৈব ও বৈষ্ণবÑ এই চারটি ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। এরা সবাই আধ্যাত্মিক সত্যের উৎস হিসেবে বেদের অব্যর্থতার এবং মুক্তির উপায় হিসেবে বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। শৈব ও বৈষ্ণব ধর্ম যথাক্রমেÑ বৈদিক দেবতা শিব ও বিষ্ণুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। তাই এদের ‘সংস্কারবাদী’ বলা হয়। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগুলো বৈদিক দেবদেবীকে অস্বীকার করেছিল, তাই এদের প্রচলিত ‘ধর্মমতবিরোধী’ বলা হয় ।
কিন্তু এই যে আস্তিক্য ও নাস্তিক্যের দুই ধারায় এর বিন্যাস, একে কবুল করেননি মাওলানা আবুল কালাম আযাদ। তিনি দেখান, ব্রাহ্মণ্যবাদ যাকেই নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেখত, তাকেই বলত ‘নাস্তিক’। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ভারতজুড়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। শৈব ও বৈষ্ণব ধর্ম হিন্দু ভাবধারাকে কবুল করে নেয়। কিন্তু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের চ্যালেঞ্জ ছিল সবল ও ব্যাপক। ফলে এর বিরুদ্ধে নাস্তিকতার অভিযোগ আরোপ ছিল তীব্র। আযাদের মতে, এ দুই ধর্মের মধ্যে বিশুদ্ধ সত্য হয়তো ছিল। কিন্তু দুই ধর্মের নানা গ্রন্থে নাস্তিকতার অনুপ্রবেশ ব্রাহ্মণ্যবাদের কারসাজিও হতে পারে। কেননা পরে ধর্ম দু’টি যে চেতনা থেকে শুরু হয়, তা থেকে ছিটকে পড়ে। লামা তারানাথের ভাষায়, ধর্মের প্রবর্তক যার বিরোধিতা করে ধর্মের সূচনা করেন, ধর্ম চলে যায় তারই বিরুদ্ধে এবং এতে প্রবেশ করে বৈদিক রীতি ও রেওয়াজ। জৈনদর্শন ভারতের প্রাচীনতম অসনাতন ধর্মদর্শনের অন্যতম। ‘জিন’ শব্দ থেকে ‘জৈন’ শব্দের উৎপত্তি। ‘জিন’ অর্থ বিজয়ী। জৈন মতে, যিনি ষড়রিপুকে জয় করেছেন, যথার্থ সাধনার বলে রাগ, দ্বেষ, কামনা-বাসনা জয় করে যারা মুক্তি বা মোক্ষলাভ করেছেন তারাই জিন। জৈন ঐতিহ্যে এরকম ২৪ জন মুক্ত পুরুষের কথা উল্লেখ করা হয় , যাদের ‘তীর্থঙ্কর’ বলা হয়। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম হলেন ঋষভদেব এবং সর্বশেষ হলেন বর্ধমান বা মহাবীর। মহাবীর গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন। জৈন দর্শনের মূল কথা হলোÑ সাধারণ অভিজ্ঞতায় আমরা জগতকে যেভাবে জানি, তাই সত্য ও যথার্থ। জগতে বস্তুর অস্তিত্ব আছে বলে কোনো এক বা অদ্বিতীয় পরমসত্তার কল্পনা করা নিরর্থক। এসব বস্তু জীব ও অজীব নামে দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত। দেহ যেমনই হোক, প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুর মধ্যেই জীব বা আত্মা আছে। বিদ্যমান জৈন ধর্ম দাবি করে, ‘এ আত্মা অবিনাশী, কিন্তু ঈশ্বরের সৃষ্ট নয়।’ জীবন্ত প্রাণী হত্যা না করা, সব জীবের প্রতি ঐকান্তিক অহিংসাই জৈন ধর্মের অপরিহার্য মূলনীতি। তীর্থঙ্কররাই জৈন দর্শনে ঈশ্বরের স্থলাভিষিক্ত। শেষাবধি জৈনরা তাই ঈশ্বরের পরিবর্তে তীর্থঙ্করদের পূজা করে থাকেন।
জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বর্ধমান মহাবীর জ্ঞাতৃপুত্র ছিলেন গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক। জ্ঞাত্রিক অর্থ ক্ষত্রিয়। জ্ঞাতৃপুত্র মানে ক্ষত্রিয়-পুত্র। ঐতিহাসিকভাবে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে, আর ঐতিহ্যগতভাবে আনু. ৫৯৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহাবীরের জন্ম। তিনি বাংলায় এসেছিলেন ধর্মপ্রচারে। জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম বাংলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়। এ ছিল এখানকার মানুষের প্রতিরোধের আশ্রয়। জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি বাংলা ও বিহারের জনগণের আত্মরক্ষার সংগ্রামে এ সময় প্রধান ভূমিকা পালন করে। আর জনগণের আর্য-আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধ শক্তিকে অবলম্বন করেই বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি দীর্ঘ দিন এ এলাকার প্রধান ধর্ম ও সংস্কৃতি রূপে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। স্থানীয়রা বিপুলভাবে গ্রহণ করে ধর্মদ্বয়।
এ ভূমিতে আর্যবিরোধিতার মূল কারণ শনাক্ত করতে গিয়ে আবদুুল মান্নান তালিব লিখেছেনÑ ‘সেমেটিক ধর্মানুসারীদের উত্তর-পুরুষ হিসেবে এ এলাকার মানুষের তৌহিদবাদ ও আসমানি কিতাব সম্পর্কে ধারণা থাকাই স্বাভাবিক ও সম্ভবত তাদের একটি অংশ আর্য আগমনকালে তৌহিদবাদের সাথে জড়িত ছিল। এ কারণেই শের্কবাদী ও পৌত্তলিক আর্যদের সাথে তাদের বিরোধ চলতে থাকে।’
লামা তারানাথ দেখিয়েছেন, খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতকের মধ্যেই বৌদ্ধধর্ম বিপন্ন দশায় উপনীত হয়। এর আগে সে হারিয়েছে নিজস্বতা। বাংলা ও বিহারে এভাবেই টিকে থাকতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তার পরও শেষ রক্ষা হচ্ছিল না। যে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ, তারই মন্দ উপাদানগুলো অনুপ্রবেশ করে বৌদ্ধবাদে। তাদের নানা প্রথা ও আচারাদি ভারবাহী করে তোলে বৌদ্ধদর্শন। অথচ তার শক্তি ছিল নির্ভার সরলতায়। সে ছিল সহজিয়া জীবনবোধ। বুদ্ধদেবের প্রচারের কেন্দ্রে ছিল সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষ। ফলে তাদের মুখের ভাষা ‘মাগধি’কে তিনি গ্রহণ করেন, সংস্কৃতের বদলে। ব্যবসায়ী, কারিগর ও কৃষিজীবীরা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিছু ব্রাহ্মণও গ্রহণ করেন এ মতবাদ। কিন্তু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে মূলত সাড়া দেয় ক্ষত্রিয়রা। এ জন্য তাদেরকে ত্যাগ করতে হয় যুদ্ধের বৃত্তি। কারণ এ দুই মতবাদে ছিল অহিংসার বাণী। নিম্নশ্রেণীর মানুষের জন্য এতে ছিল আশ্রয়ের আশ্বাস। সাধারণ মানুষ মানবিক জীবন ও মর্যাদার প্রয়োজনে তার দিকে এগিয়েছিল দ্রুত। এর প্রভাব ব্রাহ্মণ্যবাদের ভিতকে পর্যন্ত এক সময় কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ অবধি ঘুরে দাঁড়ায় ব্রাহ্মণ্যবাদ। নিজের মধ্যকার অনেক কিছু বদলায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বদলায় বৌদ্ধবাদকে।
ফলে আমরা দেখি, খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকেই বৌদ্ধদের মধ্যে প্রতিমার উপাসনা শুরু হয়ে গেছে! যে মঠগুলো আগে ভোগ ও বিলাসের বিপরীতে অনাড়ম্বর জীবনের আহ্বানে ছিল সরব, সেখানে বানের বেগে প্রবেশ করল দুর্নীতি। একেক মঠে গড়ে ওঠে সম্পদের পাহাড়। বলির প্রথাও ধারণ করে তুঙ্গ আকার। তারানাথ উল্লেখ করেছেন, বিক্রমশীলা বিহারে একজন বলি-আচার্যেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিংবা বুদ্ধজ্ঞানপদ রাজা ধর্মপালকে তার বংশের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ৯ লাখ দুই হাজার তোলা রুপা ব্যয় করে ‘হোম’ অনুষ্ঠান করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এমনটি হতে পারত কেবল ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে। বুদ্ধের শিক্ষা ছিল এসবের বিরোধী। তারানাথের ভাষায়, তখনকার বৌদ্ধবাদ সর্ব প্রকার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদিতে লিপ্ত হয়, যেগুলো সম্পর্কে স্বয়ং বুদ্ধ ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন।
ভিক্ষুদের দক্ষিণা গ্রহণের প্রথা এখানে লাভ করে তীব্রতা। ব্রাহ্মণ্যবাদ দক্ষিণাকে কেবলই নিজের করে রেখেছিল। বৌদ্ধবাদ একে বিস্তৃত করে যেকোনো শ্রেণীতে। কারণ ভিক্ষু হতে পারত যে কেউ।
জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে ছিল নানা রকম সাদৃশ্য। উভয় ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন ক্ষত্রিয়। ব্রাহ্মণদের গোঁড়ামিকে প্রত্যাখ্যান করে উভয় ধর্মের বিকাশ। বেদের ঐশিত্ব ও কর্তৃত্ব উভয়ের দ্বারাই হয়েছিল প্রত্যাখ্যাত। বৈদিক পশুবলি প্রথার বিরুদ্ধে ছিল উভয়ের অবস্থান। জাতিভেদকে সরাসরি আক্রমণ না করলেও উভয় ধর্ম ছিল বর্ণাশ্রমের বিরোধী ।
কিন্তু দেখতে দেখতে এ দুই মতবাদ ও সংস্কৃতিতে জয়ী হয়ে প্রবেশ করল ব্রাহ্মণ্যবাদ। ফলে উৎপীড়িত জনতার মুক্তির আশা হতাশার বালুচরে খাবি খেতে থাকে। গণমনে তৈরি হয় নতুন প্রতীক্ষা, কোন সে ব্যবস্থা, যে আসবে মুক্তির নিশ্চয়তা নিয়ে? এমনই এক বাস্তবতায় বাংলায় প্রবেশ করে ইসলাম।হ
লেখক : কবি, গবেষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী

সকল