২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মুসলিম সংস্কৃতি প্রসঙ্গে

-

আমার এক নিকটাত্মীয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে এবং একটি ছাত্রীনিবাসে থাকে। তার কিছু অভিজ্ঞতা শুনে অবাক হলাম। বিষয়টি যেহেতু মুসলিম জাতিসত্তা ও মুসলিম পরিচিতির সাথে সম্পৃক্ত, তাই এটি একাধারে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। সে আমাকে জানাল, আজকাল বেশ কিছু মুসলিম মেয়ে পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন এবং অন্য কিছু দিবসে হাতে শাঁখা ও মাথায় সিঁদুর দেয়। এটা বেশি ঘটে থাকে চারুকলা ও সঙ্গীত বিভাগে। কিছু মুসলিম মেয়ে পূজায় শাঁখা-সিঁদুর পরে শরিক হচ্ছে এবং সে দিনের জন্য নতুন কাপড় কেনে। সে আরো বলল, হিন্দু মেয়েরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, মুসলিম মেয়েরা এরকম করে কেন? তারা তো ঈদের দিন এ রকম করে না।
মুসলিম পরিচয় ও জাতিসত্তা সম্পর্কে বিভ্রান্তি এর কারণ বলে মনে হয়। ইসলাম অন্য ধর্মের লোকদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ^াসী। তাদের সংস্কৃতি তারা চর্চা করবে, এ ব্যাপারে তাদের সব অধিকার রয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি মুসলিমদের গ্রহণ করতে হবে। মক্কায় অবতীর্ণ সূরা আল কাফিরুনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের এবং আমার ধর্ম আমার’। এই আয়াতের অনেক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে একই সাথে বলা হয়েছে, অন্য জাতির ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণ গ্রহণ করা হবে না। ‘আমার ধর্ম আমার’ বলার তাৎপর্য এটাই। এর অর্থ, অন্য ধর্মের বিশ^াস ও সংস্কৃতি মুসলিমরা গ্রহণ করতে পারে না। রাসূল সা: নিজেও অন্য ধর্মের সংস্কৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন। সব ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম ও অমুসলিম সংস্কৃতির পার্থক্য দেখিয়ে দিয়েছেন, যাতে মুসলিম স্বাতন্ত্র্য স্পষ্ট হয়।
মুসলিম জাতিসত্তা সম্পর্কে অনেকের ধারণা পুরোপুরি নেই। অথচ এটা জানা দরকার। না জানলে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। আমার এক নিকটাত্মীয়ের নাম নাজমুস সাকিব। তাকে কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার নামের উৎস কী? এ দেশের মুসলিমরা কেন সব খাবারের ক্ষেত্রে হারাম-হালালের বিষয়টি মেনে চলে? কেন বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী ও কিশোরী মাথা ঢেকে চলে ও ওড়না পরে? কেন তারা মদ-জুয়াকে নিষিদ্ধ মনে করে? কেন বাংলাদেশের মুসলিমরা স্র্রষ্টা একজন এবং তার শরিক নেই মনে করে? কেন প্রায় সব ঘরে কুরআন আছে? কেন তা তিলাওয়াত করা হয়? এ রকম আর কোনো গ্রন্থ আছে কি? প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এটাই যে, এসব এসেছে ইসলাম থেকে, কুরআন থেকে, রাসূল সা: থেকে। এসবের উৎস কোনো স্থান বা কোনো দেশ নয়। রাসূল সা: ছাড়া অন্য কোনো নেতা নয়। উপরিউক্ত বিষয়গুলো বুঝলে আমরা মুসলিম জাতিসত্তা ভালো করে বুঝতে পারব।
নামকরণ সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। সারা বিশে^ মুসলিমরা তাদের নাম প্রধানত আরবিতে রাখে। স্থানীয় ভাষার কিছু অংশ নিলেও যেমনÑ ইন্দোনেশিয়া; কিন্তু মূল অংশ আরবি। আজকাল অনেকে আরবি ঐতিহ্যের নাম বদলিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। অনেকে বাংলা নাম চালু করার পক্ষে। কিন্তু এটা হবে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের বিরোধী। আমাদের নামের ঐতিহ্য থাকতে হবে। আরেকটি কথা। আমরা অনেকে ডাকনাম রাখি আলাদা করে। কিন্তু এ রকম ধারা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। মূল নামেরই একটি অংশ দিয়ে ডাকা হয়। যেমনÑ মোহাম্মদ জাফর। তাকে জাফর বলে ডাকা হয়। তার জন্য ডাকনাম বকুল, শিমুল ইত্যাদি রাখা হয় না। এই ঐতিহ্য চালু হওয়া ভালো যে, আমরা ডাকনাম আলাদা করে না রেখে মূল নামেরই একটি অংশ দিয়ে ডাকব। যেমন আগেই উল্লেøখ করেছি। আরেকটি উদাহরণ, যেমনÑ মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসাইনকে হোসাইন বলে ডাকা যায়। এ জন্য আলাদা করে হীরা, মুক্তা, আরজু, খোকন এসব নাম রাখার দরকার নেই। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন। ইমাম, আলেম ও অন্যান্য মুসলিম নেতাকে এই লেখার সব ক’টি বিষয় বিবেচনা করে জনমত সৃষ্টি করার জন্য অনুরোধ করছি। হ
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement