শিক্ষায় দায়মুক্তির ‘অজুহাত’
- মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
- ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কঠিন এক বাস্তবতার সম্মুখীন। এক বছর কেটে গেল নানা তিক্ত অভিজ্ঞতায়। পরীক্ষা নেয়া যায় কি না এ নিয়ে বিকল্প খোঁজা হলো। শেষপর্যন্ত এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে হলো যা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী কারোরই মনঃপূত হয়নি। অটোপাস দিয়ে শিক্ষার একটা বড় জট কাটানো সম্ভব হয়েছে ঠিকই; কিন্তু অর্জিত শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। হয়তো এ ভার জাতিকে অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে। তবুও বলতে হবে আমাদের মতো দেশে এ সমস্যা মোকাবেলায় এটাই ছিল একমাত্র বিকল্প।
অটোপাস নিয়ে যেমন অভিভাবকরা খুশি নন। বিষয়টি শিক্ষার্থীরাও ভালোভাবে দেখছেন না। তাই ২০২১ সালে আর কোনো অটোপাস নয়, এটি প্রায় নিশ্চিত। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে যেমন আশ^স্ত করেছেন, তেমনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নানামুখী কার্যক্রমে এমনটিই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা হোক এটিই সবাই আশা করেন। পাসের চেয়ে জানার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব বহন করে। এটি পরীক্ষা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মানের ক্রমবিকাশে পরীক্ষা মুখ্য ভূমিকা রাখে। পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি বেগবান করতে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন এখনো টেকসই একটি পদ্ধতি। তবে সেই মূল্যায়ন হতে হবে যথাযথ ও সঠিক প্রক্রিয়ায়।
২০২১ শিক্ষাবর্ষে দিন যতই গড়াচ্ছে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যদিও এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। তবুও এমন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত বলে কোনো কথা নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। তবে আশার কথা, দেশের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। চলতি মার্চ মাসের ৩০ তারিখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বসবেন তাদের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ থাকলেও কার্যত শিক্ষার্থীরা আর ঘরবন্দী নেই। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউশন থেকে শুরু করে কোচিং সেন্টারগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস না করাতে পারলেও বাসায় মিনি কোচিং খুলে ঠিকই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছেন। দেশের সব জায়গার পরিস্থিতি মোটামোটি একই রকম, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
যেহেতু এ বছরেরও দুটো মাস শেষ হয়ে তৃতীয় মাসের দ্বিতীয় দিন আজ। এখনো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরানো সম্ভব হয়নি। বিলম্ব করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি আমলে নিয়ে এখনই কাজ করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের। নতুবা এর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে। চাইলেও সেটি নিরসন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরবর্তী স্বল্প সময়ে কিভাবে এই ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়া যায় তারই একটি মাস্টার প্লান দরকার। প্রয়োজনে জাতীয় ছুটি ছাড়া সব ঐচ্ছিক ছুটিকে এ শিক্ষাবর্ষে বাদ দেয়া যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাসের সুবিধা রাখাও দরকার হয়ে পড়বে বলেই মনে হয়। এই সমস্যা আগে তেমন একটা লক্ষ করা না গেলেও এ বছর অবশ্যই এ রকম জটিলতা দেখা দেবে।
ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে, অনেক অভিভাবকই সন্তানদের ব্যাপারে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, গেল একটি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো পড়াশোনা হয়নি, তাই তারা পড়াশোনায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। জ্ঞানের এই শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে ইতোমেধ্য সন্তানদের নিয়ে তারা শিক্ষকের পিছু দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। আর একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষক সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে কোচিং ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। যতটুকু জানা যায়, শিক্ষানীতির কাজ চলমান। অচিরেই তা আইনে পরিণত হবে। হয়তো সেখানে আর এ সুযোগ থাকবে না।
আমাদের সবসময় সমস্যার মূলে গিয়ে এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আশা করা যায়, তখনই হয়তো এর সঠিক উপায় বেরিয়ে আসবে। উদাহরণস্বরূপ মাধ্যমিক পর্যায়ের কথা বলা যেতে পারে। এই স্তরের বেশির ভাগ শিক্ষকের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞানই হলো কোচিং বা টিউশন বাণিজ্য। প্রশ্ন হচ্ছেÑএ জন্য কি শিক্ষকরা শুধু একাই দায়ী? বিষয়টি এত সরল নয়। এছাড়া তাদের আর কিইবা করার আছে। চাকরিজীবনে একটিও পদোন্নতি নেই। ছিটেফোঁটা দু-চারটা যাও-বা হয়ে থাকে; তা গোনায় আনার মতো নয়। এভাবে শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চলতে পারে? তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব কি কারো নেই?
কেন মাধ্যমিক শিক্ষাকে একটি গতিশীলতায় আনা যাচ্ছে না। পদ্ধতি বদলে কেন তাদের শিক্ষার দিকে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। কেন তাদের ব্যবসা সফল শিক্ষক হওয়ার রাস্তাটি সহজ করা হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগে উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না, এটা মাধ্যমিকের জন্য অনেক বড় লজ্জার। আজ যদি উচ্চশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষকদের গুণগত মানের কথা ভাবা হতো, দেয়া হতো বিবিধ সুযোগ সুবিধা, তাহলে আজকে মাধ্যমিকের শিক্ষকদের নিয়ে এত কথা হয়তো বলতে হতো না। কোচিংবাজের অভিধায় অভিযুক্ত হতে হতো না।
মাধ্যমিকের অগ্রগতির ধারা রুদ্ধ করে ব্লক পোস্ট বানিয়ে যতই গুণগত শিক্ষার কথা বলা হোক না কেন, তা প্রায় অসম্ভব। একটা পর্যায়ে মাধ্যমিক আর কলেজ এই প্রকট দ্বন্দ্বে মাধ্যমিককে ছিটকে পড়তে হবে। হ
লেখক : সাহিত্যিক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা