২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : লাগামহীন বাড়িভাড়া রোধ করুন

-

১৯৬১ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে তিন বছরের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকার। ওই অধ্যাদেশের মেয়াদ শেষে ১৯৬৩ সালে প্রণীত ও প্রবর্তিত হয় নতুন অধ্যাদেশ। এ অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ১৯৬৪ সালে প্রণীত বিধিমালাটি ১৯৮৫ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ১৯৯১ সালে ওই অধ্যাদেশ অনুসরণ করেই জারি হয় ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’। বাড়িভাড়া আইন ১৯৯১ এর ৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাড়িভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক বৃদ্ধি করা হলে ওই অধিক ভাড়া কোনো চুক্তিতে ভিন্নরূপ কিছু থাকা সত্ত্বেও আদায়যোগ্য হবে না। আইনের ১৩(১) ধারা মোতাবেক, বাড়িভাড়ার রসিদ ভাড়াটিয়াকে দিতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়া নিয়ে রসিদ দেন না। আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী বাড়িভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের। দেশে বাড়িভাড়া আইন হয়েছে কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করার কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে এ আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। তাই বাড়িভাড়ার নৈরাজ্য দূর করতে আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ১৯৯১ বাড়িভাড়া আইন অনুযায়ী, ডিসিসি’র ৯০টি ওয়ার্ডের (বর্তমানে আরো কিছু ওয়ার্ড রয়েছে ঢাকার দু’টি সিটি মিলে) ১০ কর অঞ্চলে ৭৭৩টি এলাকায় জীবনযাত্রার মান অনুসারে ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এতে পাকাবাড়ির ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ প্রতি বর্গফুট চার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ টাকা। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডিসিসি আবাসিক এলাকাকে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছেÑ ১. প্রধান সড়কের পাশে ২. গলির ৩০০ ফুটের মধ্যে এবং ৩. গলির ৩০০ ফুটের বাইরে। এ ছাড়া আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এ তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। হোল্ডিং নম্বর, নির্মাণের সময়, কাঠামো নির্মাণশৈলী, অবস্থান ও পজেশন হস্তান্তরের শর্তের ওপর ভিত্তি করে ভাড়ার তারতম্য হতে পারে। কিন্তু ডিসিসির এসব নিয়ম বাড়ির মালিকরা মানছেন না। এর শিকার হয়েছেন রাজধানীর ৯০ শতাংশ মানুষ। যখন তখন ভাড়া বাড়িয়ে ভাড়াটিয়াদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। তিন লাখ বাড়িওয়ালার কাছে জিম্মি প্রায় ১.৫০ কোটি মানুষ। বছরের শুরুতেই বেড়েছে বাড়িভাড়া, গত ২৮ বছরে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৬০০ শতাংশ। ভাড়াটিয়াদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিচ্ছেন। ডিসিসির নির্ধারিত ভাড়ার ছয়-সাত গুণ বেশি ভাড়া আদায় করলেও বাড়িওয়ালারা সে অনুপাতে কর দিচ্ছেন না। সরকার যদি স্বল্পমূল্যে বাড়ি তৈরি করে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে ভাড়ার টাকায় বরাদ্দ দেয়, তাহলে এ সমস্যা অনেক কমে আসবে। বাড়িভাড়া আইন থাকলেও তা তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। প্রতি বছরই একাধিকরবার বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে বাড়িভাড়া। সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরছি : ১. ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করা। ২. ভাড়াটিয়াদের সাথে চুক্তি সম্পাদন। ৩. এলাকাভিত্তিক প্রতি বর্গফুট অনুসারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ। ৪. বাড়িভাড়ার পাকা রসিদ প্রদান। ৫. এক মাসের বেশি থাকলে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ না নেয়া। ৬. বিনা কারণে বাড়িভাড়া না বাড়ানো। ৭. আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা প্রয়োগ করা। ৮. পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে মানুষের বাসস্থানের চাহিদা পূরণ করা। ৯. সরকারি কোয়ার্টার নির্মাণ করে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ভাড়া দেয়া। ১০. এলাকাভেদে বাড়িভাড়া নির্ধারণের পাশাপাশি দুই বছরের আগে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি না করা। ১১. এলাকাভেদে মোড়ে মোড়ে বাড়িভাড়া রেটের চার্ট স্থাপন। ১২. প্রত্যেক হোল্ডিং নাম্বারের বিপরীতে বাড়ির মালিকদের ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করা। ১৩. ভাড়াটিয়ারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভাড়া পরিশোধ করা। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ কর পাবে। ১৪. বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সমস্যার সমাধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন। হ
নাসির উদ্দীন মুন্সী
আজীবন সদস্য-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন


আরো সংবাদ



premium cement

সকল