প্রত্যাশা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার
- আজহার মাহমুদ
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
২০ ফেব্রুয়ারি ছিল ‘বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস’। ২০০৭ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলোর সাথে সাথে বিপজ্জনক দিকগুলোর ওপরে দৃষ্টি দেয়াও আবশ্যক মনে করে জাতিসঙ্ঘ।
ন্যায়ের ব্যাখ্যা করতে গেলে পাওয়া যাবে সুবিচার, মানবতা, মনুষ্যত্ব, দুর্নীতিমুক্ত থাকা। এসব সমাজে প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রতিষ্ঠা করা হবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ। আয় বৈষম্যহীনতা ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান না থাকা, সামাজিক সাম্য ইত্যাদি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত। কিন্তু এসব শর্তের কোনোটাই এখন আমাদের চার পাশে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না।
আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যে সময়কে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ‘শ্রেষ্ঠ যুগ’ বলা যায়। জীবনযাপনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমরা নানা সুবিধা ভোগ করছি। সমাজের এত উন্নতিতে আমাদের জীবনযাপনের মানেরও অনেক পরিবর্তন আসার কথা ছিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, উন্নত মানুষদের দ্বারা একটি ন্যায়ভিত্তিক উন্নত সমাজব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা তা পারিনি। কিন্তু কেন? এত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারকবাহক আধুনিক মানুষেরা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছেÑ এ কথা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আসলে সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যা আমাদের চিন্তায়, চেতনায়, মননে, বিবেকে, বুদ্ধিতে! আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজে বাস করার আশা বুকে পোষণ করি, কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা কখন, কোথায়, কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোন গুণাবলির কারণে সেই সভ্যতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল তা জানার চেষ্টা কখনো করি না।
ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিকভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে না সেখানে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কল্পনা করা হাস্যকর। বর্তমান সময়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মুখের কথা নয়। এই সমাজে এখন অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে শক্তভাবে। এখানে ন্যায়বিচার আশা করা অনেকটা আকাশ-কুসুমের মতো।
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা থাকতে হবে ব্যাপক। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক উত্তরণ অসম্পূর্ণ। আমাদের পদচারণা এখনো গণতন্ত্রের ক্রান্তিকালের আবর্তে ঘূর্ণায়মান এবং এটিকে সুসংহত করার সার্বিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ থেকে আমরা আজকের বাস্তবতায় বহুদূরে অবস্থান করছি। তথাপি, একটি তুলনামূলক নবীন গণতন্ত্র হিসেবে এ দেশের গণতান্ত্রিক অবকাঠামোগুলো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে এবং স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় হোঁচট খেয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। নাগরিক সমাজও তেমনিভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে বিকশিত হতে পারেনি। এ জন্য প্রয়োজন সুশাসন। সুশাসন কিংবা ন্যায়বিচার ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত। যার মাধ্যামে বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ন্যায়ভিত্তিক সমাজের বিকাশ, তথা উদার গণতন্ত্র আমাদের সবার প্রত্যাশা। কিন্তু এটি হঠাৎ করেই আসবে না। আমাদের সবাইকেই এই স্বাভাবিক বিকাশের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়। এ জন্য তাড়াহুড়ো করলে হবে না। তবে শুধু সুশাসন হলে হবে না; এর সাথে নৈতিকতা, মানবতা এবং মনুষ্যত্বও থাকতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য এসব বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। সমাজের সব নাগরিকের থাকতে হবে ঐক্য। তবে ভিন্নমত থাকতে পারে। এজন্য কারো ওপর আঘাত হানা যাবে না। কিন্তু বর্তমানে আমরা ভিন্নমতের মানুষকে সহ্য করতে পারি না। তাদের ওপর অন্যায় অবিচার সবচেয়ে বেশি হয়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
ন্যায়বিচার আর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায় থাকাটা জরুরি। আর ন্যায়ের স্বার্থে অবশ্যই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। অন্যায়মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা গেলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা যেমন সহজ হয়ে আসবে, তেমনি ন্যায়বিচারও সবক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব যদিও সহজ বিষয় নয়, তবুও মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। তাই এ দেশ, এ সমাজকে যারা ভালোবাসেন, তারাই পারবেন এ সমাজকে ন্যায়ভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করতে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগনি কলেজ, চট্টগ্রাম
azharmahmud705@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা