২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সামরিক বাহিনীর সম্মান মানে, দেশের সম্মান

-

সামরিক বাহিনীতে অনেকেই জেনারেল হন বটে, কিন্তু সব জেনারেল সামরিক কমান্ডার বা মিলিটারি লিডার হতে পারেন না। তাদের মধ্যে অনেকেই শোভাবর্ধন বা নিজস্ব স্বার্থ হাসিল ছাড়া দেশ-জাতি তো দূরের কথা, নিজস্ব বাহিনীরও তেমন কোনো কাজে আসেন না। মিলিটারি লিডার হতে হলে লিডারশিপ কোয়ালিটি খুবই প্রয়োজন। দুর্দান্ত সাহসিকতা, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি অধীনস্থদের আস্থা ও বিশ্বাস ব্যতিরেকে কোনো জেনারেল সামরিক বাহিনীতে সফল হতে পারেন না। চারিত্রিক দৃঢ়তা, নেতৃত্বদানের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, বিপদে ঝুঁকি গ্রহণ ইত্যাদি গুণ অতীব প্রয়োজন। অধীনস্থদের নিরাপত্তা, স্বার্থ, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো ও তাদের দেখভাল করার মাধ্যমে কমান্ডাররা আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করেন, যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে কঠিন সময়ে তার নেতৃত্বে সেনাদল শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এই গুণাবলির সমন্বয়ে একজন মিলিটারি কমান্ডার বা সামরিক নেতা ছিলেন জেনারেল কোদানদেরা সুবাইয়া থিমাইয়া সংক্ষেপে ‘কে এস থিমাইয়া’ (১৯০৬-১৯৬৫) হিসেবে পরিচিত; যিনি ছিলেন ইন্ডিয়ার সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ প্রধান এবং ১৯৫৭ সালের ৭ মে থেকে ১৯৬১ সালের ৭ মে পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সাহসিকতা, শৌর্য-বীর্য, সম্মান ও গৌরবের সাথে সেনাপ্রধান হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে বৃহৎ এক বাহিনী পরিচালনায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং অন্যদের কাছে রোলমডেলে পরিণত হয়েছেন। ১৯০৬ সালের ৩০ মার্চ বাবা থিমাইয়া ও মা সিতাম্মার সন্তান হিসেবে, ভারতের কর্নাটকের কোদাগুর জেলার (পূর্বে কোওগ্রা নামে পরিচিত) মাদিকিরিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার আগে ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে তার ছিল অত্যন্ত ঈর্ষণীয় ও সফল ক্যারিয়ার। তিনি সম্ভবত একমাত্র ভারতীয় অফিসার যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি ব্রিগেডকে কমান্ড করেছিলেন। ১৯৬১ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৬৪ সালে তাকে সাইপ্রাসে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং কর্তব্যরত অবস্থায় ১৯৬৫ সালে সেখানেই হার্ট অ্যাটাকে ইহধাম ত্যাগ করেন।
জেনারেল থিমাইয়া ছিলেন অধীনস্থ ও ইন্ডিয়ার জনগণের কাছে দেবতার মতো। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আতিশয্যে অনেকেই তাকে ‘ঞরসসু’ বলে ডাকতেন। অধীনস্থদের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষার্থে তিনি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কখনো পিছপা হতেন না। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার একটি দুর্দান্ত ও যুগান্তকারী সাহসী ভূমিকা তাকে ইন্ডিয়ার সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
১৯৫৯ সালের ঘটনা। ভারতের অমৃতসরে অবস্থিত ৫ জাঠ রেজিমেন্টের একজন অফিসার ও তার স্ত্রীকে বিদায় জানানোর জন্য সেই ইউনিটের কিছু অফিসার সস্ত্রীক রেলস্টেশনে যান। সেখানে কিছু রাজনৈতিক সন্ত্রাসী অফিসারদের স্ত্রীদের উত্ত্যক্ত এবং একজন ক্যাপ্টেনের স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে। তখন অফিসাররা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে তারা কাছেই একটি সিনেমা হলে আত্মগোপন করে। কর্নেল জ্যোতি মোহন সেন ছিলেন ৫ জাঠ রেজিমেন্টের অধিনায়ক। ঘটনা শুনে তিনি কালবিলম্ব না করে সেখানে সেনা পাঠান এবং সিনেমা হল ঘেরাও করে সেই দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করেন। এদের নেতা তৎকালীন পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং কাইরনের ছেলের হাত গাড়ির পেছনে বেঁধে রাজপথে টেনে-হিঁচড়ে জনগণকে দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসা হয়।
ছেলেকে ছাড়াতে পরের দিন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ক্যান্টনমেন্টে যান। শোনা যায়, তাকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর কোনো প্রোটোকলও দেয়া হয়নি, ভেতরে তাকে হেঁটে যেতে হয়। এ ঘটনার পর সারা দেশে হইচই পড়ে। এ ব্যাপারে জবাবদিহি করার জন্য ইন্ডিয়ার পার্লামেন্টে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কে এস থিমাইয়াকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তিনি খুবই সংক্ষেপে শুধু বলেন, "ওভ ও পধহ'ঃ ঢ়ৎড়ঃবপঃ ঃযব ংধহপঃরঃু ড়ভ সু ঈধঢ়ঃধরহ'ং রিভব ভৎড়স ধ ঃবৎৎড়ৎরংঃ, যড়ি পধহ সু অৎসু রিষষ ঢ়ৎড়ঃবপঃ ঃযব ংড়াবৎবরমহঃু ড়ভ ড়ঁৎ গড়ঃযবৎষধহফ!" অর্থাৎÑ একজন সন্ত্রাসীর হাত থেকে যদি আমার একজন ক্যাপ্টেনের স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করতে না পারি, তাহলে শত্রুর হাত থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব কিভাবে রক্ষা করব! সেনাপ্রধানের এ জবাব শুনে সংসদ সদস্যদের আর কিছু বলার ছিল না। সবাই পিনপতন নীরবতা অবলম্বন করেন। আর সেনাপ্রধান হিম্মত, সম্মান, গৌরবের সাথে বুক উঁচু করে বীরদর্পে ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসেন। এরপর ইন্ডিয়াতে আর সামরিক বাহিনীর কারো প্রতি কোনো কটাক্ষ করার দুঃসাহস অদ্যাবধি কেউ দেখায়নি।
এভাবেই বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে জেনারেল থিমাইয়া পরিচিত হলেন, ‘অ ঝড়ষফরবৎং’ এবহবৎধষ, ধ সধহ’ং সধহ; ঃযব অৎসু যরং ংড়ঁষ, ঐরং ংড়ঁষ, ঃযব অৎসু’ হিসেবে। আর উদাহরণ সৃষ্টি করলেন সামরিক বাহিনীর সম্মান ও মর্যাদা কিভাবে সমুন্নত রাখতে হয়। হ
লেখক : সামরিক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
hoque2515@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি ২৫ জুন বুড়িচংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

সকল