২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভ্রান্ত তথ্য ভ্রান্তির সহায়ক

-

গত ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক নয়া দিগন্তে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম সাল বনাম ২০২০ সাল’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় বাংলাভাষার বয়সকাল ভুল লেখা হয়েছে বলে এক শিক্ষক আমাকে দেখালেন। আগ্রহী হয়ে সেটি পড়তে গিয়ে আরো বেশ কিছু স্বীকৃত ইতিহাসের বিকৃত ব্যাখ্যানির্ভর যুক্তি দেখে আমি হতবাক। রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র ও কোনো প্রামাণ্য বইয়ে যা কিছু লেখা ও বলা হয় তা সবই আমাদের এই উপমহাদেশের বেশির ভাগ পাঠক-শ্রোতা স্বতঃসিদ্ধ বলে এককালে গ্রহণ করতেন। কিন্তু এসব প্রচারমাধ্যমকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অপপ্রচারেও যে ব্যবহার করা হয়, তা আজকাল অনেকেরই বোধগম্য। আর তাই দেশী অনেক লেখকের কোনো তথ্যসংক্রান্ত ঐতিহাসিক বইয়ের বলতে গেলে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া যেমনি পাঠক খুঁজে পাওয়া ভার, তেমনি নিত্যকার টিভি ও সংবাদপত্রও ভ্রান্ত তথ্য পরিবেশনের কারণহেতু সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকা ভার।
বিকৃত ব্যাখ্যা ১ : ‘হাজার বছর আগে কোনো বাঙালি ছিল না, বাংলা ভাষা ছিল না এবং বঙ্গ, বাংলা ইত্যাদি নামে কোনো দেশ বা জনপদ ছিল না... বাংলা ভাষা নিয়ে শত শত গুণ বেশি মানসম্পন্ন গবেষণা হচ্ছে পশ্চিমা দুনিয়ায় এবং সব গবেষণার হালনাগাদ উপসংহার হলোÑ ভাষাটির বয়স সাত শত বছরের বেশি হবে না।’
স্বীকৃত ইতিহাস : পশ্চিম বাংলার প্রাচীন রাঢ়, কোটিবর্ষ, তাম্রলিপ্ত এবং এর সমসাময়িক আমাদের পুণ্ড্রবর্ধন, চট্টগ্রাম ও সম্ভবত সিলেট। এর পরবর্তী গৌড়, কর্ণসুবর্ণ, রংপুর ও ময়মনসিংহ। তৎপরবর্তী ৯টি দ্বীপের নদীয়া ছাড়াও বর্তমান ২৪ পরগনা, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ, নোয়াখালীÑ এগুলো খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী হতে উৎপত্তি হওয়া কতিপয় দ্বীপের সমষ্টি বলে ভূতত্ত্ববিদদের অভিমত। এগুলোর সমষ্টিগত আধুনিক নাম ‘বাঙালা’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৬ ও ১৩৭-এ বলেছেন, ‘প্রাচীন বাংলা ভাষার মৌলিক নিদর্শন খুব বেশি নাই। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দী হইতে আরম্ভ করিয়া ১২ শ শতাব্দীর শেষভাগের মধ্যে নিঃসংশয়রূপে বাংলা ভাষায় রচিত হইয়াছে একমাত্র চর্ঘাগীতিকা, যা হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা। যেমন, অপনে রচি রচি ভবনির্বানা। মিছেঁ লোঅ বন্ধাবত্র আপনা।।’ তদ্রƒপ অভিন্ন মতে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরাও ঊহপুপষড়ঢ়ধবফরধ ইৎরঃধহহরপধ, াড়ষ-১৭, ঢ়ধমব-১৪৩-এ লিখেছেন, “ঞযব ড়ষফবংঃ ফড়পঁসবহঃং ধৎব ইঁফফযরংঃ ফরফধপঃরপ ঃবংঃং, পধষষবফ পধৎুধ-ঢ়ধফধং (‘ষরহবং ড়হ ঢ়ৎড়ঢ়বৎ ঢ়ৎধপঃরপব’), যিরপয যধাব নববহ ফধঃবফ ঃড় ঃযব ১০ঃয ধহফ ১১ঃয পবহঃঁৎরবং ধহফ ধৎব ঃযব ড়ষফবংঃ ঃবংঃরসড়হু ঃড় ষরঃবৎধঃঁৎব রহ ধহু ওহফড়-অৎুধহ ষধহমঁধমব.” (বৌদ্ধদের সবচেয়ে পুরনো উপদেশমূলক গ্রন্থাংশ হলো ১০ম ও ১১তম শতাব্দীর চর্যা-পদাবলী (সঠিক চর্চার কবিতা পঙ্ক্তিগুলো), যা ভারতীয় আর্য ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো সাহিত্যের প্রমাণ। অতএব, হাজার বছরের বাঙালি বলা অযৌক্তিক নয়।
বিকৃত ব্যাখ্যা ২ : ‘পারসিকরা অনাদিকাল থেকে শিয়া... খোদ ইরান থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতে হাজার হাজার অগ্নি-উপাসক দক্ষিণ ভারতে এসেছে মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য।’ অবশ্যই সে জন্য এবং ১৮ শতাব্দী নয়, বরং ভারতে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার (১১৯৩ খ্রি.) আগেই তারা আশ্রয় নিয়েছিল। ঐতিহাসিক তথ্য হলো: দশম শতাব্দীর পর হতে জরোয়াস্তারপন্থী অনেক অগ্নি-উপাসক ধর্মান্তরিত হওয়ার আশঙ্কায় ভারতে এসে দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটে আশ্রয় নেন। তারা মূলত কৃষিজীবী। ভারতে তারা নানা পেশা ছাড়াও ব্যবসায়ও কেউ কেউ নিয়োজিত হন। ইরানে আরব অভিযান চলে হজরত ওমর রা:-এর খেলাফতকালে ৬৩৪ থেকে ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে। হজরত আলী রা:-এর খেলাফত ৬৫৬ থেকে ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। তা লাভের আগেই তার পক্ষে এ দাবির সমর্থকরাই শিয়া মতবাদের জন্মদাতা। ইরানে রাষ্ট্রধর্ম শিয়া করা হয় শাহ আব্বাস-১ এর ১৫৮৭ থেকে ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্বকালে। তাই শুরু থেকে সকলে সেখানে শিয়া হননি। বালুচ, কুর্দি ও তুর্কিরা এখনো সে দেশে সুন্নি ও সংখ্যালঘু।
বিকৃত ব্যাখ্যা ৩ : ‘সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে বাঙালি সমাজের ভদ্রলোকেরা কেবল বংশ গৌরবের জোরে অনেক তুখোড় যোগ্য রাজনীতিবিদকে পদানত করে নেতৃত্বের জায়গাগুলো দখল করে নিলেন। বগুড়ার নবাব মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়... নওয়াব আলী চৌধুরীর পরিবার... ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমুদ্দীন, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, নোয়াখালীর আবদুল হামিদ চৌধুরীদের কাছে মওলানা ভাসানীরা টিকতে না পেরে ভদ্রলোকের সমাজ থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ধরে এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেন।’
ঐতিহাসিক তথ্য মতে, আমাদের ভদ্রলোকের সমাজ হতে যারাই অগ্রাধিকার পেয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বে এসেছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও বিবেচ্য ছিল। তারা সবাই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। বাংলার বাইরে অন্য কোথাও কারো রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি না থাকায় কেউ কেউ সর্বভারতীয় নেতাÑ এ কথা বলা যায় না। যদি তা না হতো তবে এমনকি শেরেবাংলা আলাদা দল গঠন না করে বরং জিন্নাহর আদেশ অগ্রাহ্য করায় মুসলিম লীগ থেকে ১৯৪২ সালে বহিষ্কৃত হয়েও জিন্নাহকে অনুরোধ করিয়ে চার বছর পরে ১৯৪৬ সালে তাকে সে দলে ফিরতে হয়েছে কেন? (প্রখ্যাত ভারতীয় সম্পাদক রাজমোহন গান্ধীর ঁহফবৎংঃধহফরহম সঁংষরস সরহফ, ঢ়-২০৩) না বগুড়ার, না বাঙালি, না নবাব বরং তারা মওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয় উত্তর প্রদেশের সর্বভারতীয় খেলাফত নেতা। অন্য দিকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর দাদা হলেন নওয়াব আলী চৌধুরী, যিনি বাঙালি মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯২১ সালে মন্ত্রী হয়েছিলেন। বাংলা বলতে না পারলেও সুশিক্ষিত ও সুদক্ষ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পশ্চিম বাংলার লোক হলেও আকৃষ্ট ছিলেন এখানকার প্রতি, যেখানে বিরোধী মতে ছিল না তার মতো কোনো ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৯ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় এখানে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠিত করেছিলেন। কেউ তাকে ধরে আনেননি। হ


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে?

সকল