২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধ

-

পাকিস্তানের দখলদারিত্ব থেকে এ দেশের মাটি ও মানুষের মুক্তির পর ৫০ বছর পার হতে চলেছে। আগে এ দেশের মানুষ ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের অধীনে। তারও আগে শাসন করে গেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি। ব্রিটিশদের উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ব বাংলার জনগণ একীভূত হয়েছিল পাকিস্তানের সাথে। উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিমবান্ধব একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ যেখানে সর্বাগ্রে সুরক্ষিত হবে। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই দেখা গেল, এ দেশের মানুষ সংগ্রাম শুরু করেছে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। প্রথমে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য, তার পর স্বাধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর অবশেষে পাকিস্তানের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন একটি দেশ, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও লাল-সবুজে আঁকা জাতীয় পতাকা অর্জিত হয়। স্বাধীনতা আমাদের গৌরব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক ও সম্পূরক। এতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণ আমরা যে অঞ্চলে বসবাস করছি, তা ছিল পশ্চাৎপদ। একসময় এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, ছিল না উচ্চ আদালতের কোনো সুব্যবস্থা। তার পর বিশ্ববিদ্যালয় হলো, বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার খানিকটা বন্দোবস্ত হলো, একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অবসান ঘটল, ’৪৭ সালে আমরা পাকিস্তানের সাথে একীভূত হলাম। কিন্তু তার পরও পূর্ব বাংলার মানুষ অবহেলিতই রয়ে গেল। শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি, চিকিৎসাসেবা সব দিক দিয়েই আমাদের পশ্চাৎপদ করে রাখে পাকিস্তানিরা। তাই ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আমাদের ভেতরে বঞ্চনার একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়। আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলি, আমাদের ভাষাটা পর্যন্ত তারা মেনে নিতে রাজি হয়নি। ফলে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আগরতলা মামলা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে আমরা স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাই। একাত্তরে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি। বাঙালি মুসলমানরা মুক্তি পায় পাকিস্তানি দুঃশাসনের জাঁতাকল থেকে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, এ কথা ঠিক। হজরত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ:, আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানী রহ:সহ থানভী ঘরানার আলেমরা এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর যে উদ্দেশ্যে এর প্রতিষ্ঠা, সে উদ্দেশ্যের ওপর রাষ্ট্রনায়করা অটল থাকতে পারেননি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার চর্চা সেখানে সঠিকভাবে হয়নি। নেয়া হয়নি ইসলামী আদর্শনির্ভর ‘কল্যাণরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠারও কোনো উদ্যোগ। প্রায় শুরু থেকেই স্বৈরশাসনে দেশ পরিচালিত হয়ে এসেছে এবং সেই ধারার প্রভাব পাকিস্তানে এখনো প্রকট। ফলে সাধারণ নাগরিক, বিশেষত বাংলাদেশের মুসলমানরা হতাশ হয়ে পড়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি। বাংলাদেশের মুসলমানরা বঞ্চিত হতে থাকে নিজেদের জীবনযাপনের মৌলিক অধিকার থেকেও। যেমন, এখানে বড় ধরনের শিল্পায়নের উদ্যোগ নিতে চাইত না কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন নিরঙ্কুশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী তার কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা। অথচ তারা ক্ষমতাও হস্তান্তর করেনি। উপরন্তু পাঞ্জাবি সেনাচক্র জিঘাংসা মনোবৃত্তি নিয়ে হামলে পড়ল বাংলাদেশের জনগণের ওপর। ২৫ মার্চের ভয়ঙ্কর কাল রাতের সৃষ্টি করল, তখন এ দেশের জনগণের জন্য স্বাধীনতা অর্জন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। ইসলামের কল্যাণের নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ইসলামিক কল্যাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না, আবার আমাদের ওপর জুলুমও করা হবে, স্বাধীনতা ছাড়া তখন আর উপায় কী?’
ডা: পিনাকী ভট্টাচার্য লিখিত ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ বইতে পাকিস্তানি স্কলার বিচারপতি আল্লামা তকী উসমানির একটা উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লামা তকী উসমানী ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকদের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এই দেশের ওপর অত্যাচারের নগ্ননৃত্য এতভাবে, এতরকমে হয়েছে যে, সে গল্প অসম্ভব জটিল। এ ছাড়া বাংলার কোণে কোণে এত অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে যে, তার শুমার করা মুশকিল। এখানে যে কিয়ামত নেমে এসেছিল তা আমাদের পাপের ফসল। ৯০ হাজার সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ছিল মূলত প্রকৃতির প্রতিশোধ।’ (জাহানে দিদাহ, করাচি, ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ৩৮৭-৩৮৮) মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারি মুক্তিযুদ্ধের সময় হজরত হাফেজ্জী হুজুর যিনি ছিলেন হজরত আশরাফ আলী থানভীর খলিফা এবং থানভী ঘরানার প্রত্যক্ষ সমর্থনে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেনÑ হুজুর, এক দিকে ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান, আরেক দিকে বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধ; আমরা কোন দিকে যাবো? হাফেজ্জী হুজুর রহ: তখন স্পষ্টভাবে বলেন, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করেছে। সুতরাং তারা জালিম। জুলুম আর ইসলাম কখনো এক হতে পারে না। এটি তো ইসলামের সাথে কুফরের যুদ্ধ নয়; বরং এটি হলো জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।’
স্মর্তব্য, এই দেশের একশ্রেণীর বাম ঘরানার বুদ্ধিজীবী সর্বদা ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নিয়ে বিষোদগার ও নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। মূলত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান অর্জিত হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র। নইলে আরেকটা কাশ্মির অথবা হায়দরাবাদ বা সিকিমের ভাগ্যবরণ করতে হতো এ দেশের ১৮ কোটি মানুষকে। ’৪৭ সালের পাকিস্তান অর্জন ও ’৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়।
’৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় ‘ইনশা আল্লাহ’র মাধ্যমে এবং দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বর রেডিওতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ দেশবাসীকে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া আদায়ের জন্য ও একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, চতুর্থ খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানি পাবলিশার্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা-৩১৪)। যে দেশের স্বাধীনতার সূচনা হয়েছে ‘ইনশা আল্লাহ’র মাধ্যমে, সমাপ্তি ঘটেছে ‘আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ’ কামনার মাধ্যমে, সে দেশের মুসলমানদের কোণঠাসা করে রাখার কোনো সুযোগ নেই এবং সে দেশের মুসলমানরা সবসময়ই মাথা উঁচু করে থাকবে ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে। বহু মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত নামাজ দোয়া পড়ে অভিযান চালাতেন। মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক পরিবারের কাছে লিখিত এই জাতীয় বহু পত্র ‘একাত্তরের চিঠি’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আগে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেয়া হয় তাতে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে জিহাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে বিশ^বাসীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। তাতে বঙ্গবন্ধু বলেন, গধু অষষধয নষবংং ুড়ঁ ধহফ যবষঢ় রহ ুড়ঁৎ ংঃৎঁমমষব ভড়ৎ ভৎববফড়স, ঔড়ু ইধহমষধ. অর্থাৎ এ মুক্তি সংগ্রামে আল্লাহ তোমাদের রহমত করুন এবং সাহায্য করুন, জয় বাংলা। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, চতুর্থ খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানি পাবলিশার্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা-২৩২)
মূলধারার কোনো ওলামা-মাশায়েখ রাজাকার ছিলেন না। তৎকালীন জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংগৃহীত রাজাকার বাহিনী (চধৎধ গরষরঃরধ) ছিল স্থানীয় অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত সাধারণ নাগরিক। আর্কাইভ থেকে বেতনভাতাভোগী রাজাকারদের তালিকা বের করা গেলে বিস্ময়কর তথ্য বেরিয়ে আসবে। সে সময় রাজাকারদের দৈনিক তিন টাকা ও তিন সের চাল দেয়া হতো। স্বাধীনতার দলিল দস্তাবেজ পর্যালোচনা করলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, বেশির ভাগ রাজাকারের মুখে দাড়ি নেই এবং গায়ে ইসলামী পোশাক নেই। অথচ নাটকে ও সিনেমায় রাজাকারের মুখে দাড়ি লাগিয়ে, টুপি ও জোব্বা পরিয়ে ইসলামকে হেয় করা হয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল জুলুম ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। এটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। গবেষক ড. তারেক মুহাম্মদ তওফিকুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী ‘মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতনের মতো অনৈতিক, অপরাধমূলক ও যুদ্ধাপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী ও অভিযুক্ত রাজাকার বাহিনীর একটি বিরাট অংশই এসেছিল ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে। এই বিরাট অংশের রাজাকার সদস্যদের কেউ এসেছে আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ, পিডিপি, কেএসপির মতো দল থেকে এবং বাকিরা এসেছে রাজনৈতিক পরিচয়মুক্ত সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে। (বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেম সমাজের ভূমিকা ও প্রভাব (১৯৭২-২০০১, ঢাকা, ২০০৭, পৃষ্ঠা-৪৫) সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামী জজবা ও মূল্যবোধের কোনো সঙ্ঘাত নেই। যারা এ নিয়ে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করতে চায়, তাদের অভিসন্ধি ও উদ্দেশ্য মহৎ নয়।
ইসলামপন্থী দু-চারটি দল পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং সেটি ছিল তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে পক্ষে-বিপক্ষে দল থাকে। সত্যিকার কোনো অন্যায় বা অপরাধের জন্য ব্যক্তিবিশেষ দায়ী হতে পারেন। কিন্তু পুরো আলেম সমাজ বা ইসলামপন্থীদের দায়ী করা মোটেই সমীচীন নয় এবং কাম্যও নয়। দাড়ি, টুপি, জোব্বা, পাগড়ি, পর্দা নিয়ে হেয় ও তাচ্ছিল্য করার অসুস্থ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রচণ্ড বিরোধিতা ইদানীং ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর সুপরিকল্পিত প্রয়াস চালানো হচ্ছে। কথায় কথায় মৌলবাদী ও রাজাকার অভিধায় ব্যক্তিবিশেষকে বা আলেম-ওলামাদের চিহ্নিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার একটি অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কোনো কোনো কর্মকর্তা যে ভাষায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা তাদের পদমর্যাদা বা আচরণবিধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথায় শালীনতা ও সৌজন্যবোধের কমতি দেখা যায়। পরিসংখ্যান নিলে পরিষ্কার হবে, যেসব সামরিক ও বেসামরিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনো জীবিত আছেন, তারা নিয়মিত নামাজি, কুরআন তিলাওয়াতকারী ও সুন্নাতের পাবন্দ। পৃথিবীর কোনো দেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে রাজনীতিক বা গণমাধ্যমকর্মী বা বুদ্ধিজীবী কটাক্ষ বা বিষোদগার করেন, না।
স্বাধীনতার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৪০ টাকায়। দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর। ভারত ও পাকিস্তান মিলে বিশ্ববাজারে যে পরিমাণ গার্মেন্ট রফতানি করে বাংলাদেশ একাই করে এর চেয়ে বেশি। বাংলাদেশী এক টাকার বিনিময়ে পাকিস্তানি দুই রুপি পাওয়া যায়। সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। গণতন্ত্রচর্চা ও ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে জনগণ যদি বঞ্চিত থেকে যায় তা হলে সুযোগ বুঝে ‘তৃতীয় শক্তি’ রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হয়। ইতিহাসে এমন নজির ভূরিভূরি। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠেছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। বিভেদ-বিভাজনের পথ পরিহার করে দেশের সব নাগরিককে আস্থায় এনে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। অবারিত লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে সম্পদ পাচারের গলিপথ বন্ধ করা না গেলে গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় সাবাড় করে ফেলবে। দেশের সম্পদ লোপাট করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে, তারা কোনোক্রমেই দেশপ্রেমিক নয়। একদিন তাদের আইনের আওতায় আসতে হবে। পৃথিবীর রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ইতিহাস এর সাক্ষী। হ
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement