২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভাবক কে এবং কেন?

-

ভারতে মোগল সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহি ধর্ম টিকেনি। শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা শিকোহ কাশ্মিরি পণ্ডিতদের সাহায্যে ‘সীরী আকবর’ নামে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উপনিষদের অনুবাদ ছাড়াও তার লেখা পাঁচটি গ্রন্থের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের মিলন সাধনের চেষ্টায় লেখা মজমা উল বাহরাইন বা দুই মহাসমুদ্রের মিলনও ব্যর্থ হওয়ার কারণ বোঝার চেষ্টা যতই নিরর্থক, ততই অর্থবোধক হলো লেনিনের ‘ইতিহাসের সঙ্গে বিবাদ করে মূর্খরাই’, এই অপ্রিয় সত্যটি। ইতিহাসের ধারায়ই ভারতে উদ্ভাবিত দ্বিজাতি তত্ত্বের নব্য সংস্করণে ত্রি-জাতি তত্ত্ব সংযোজিত হওয়ার সাক্ষ্য হলো আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বতঃসিদ্ধ ঐতিহাসিক সত্যটি হলো, ঢাকায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লিগের জন্মের ২০ বছর এবং ১৯৩০ সালে জিন্নাহর পুনরুল্লেখেরও ৪২ বছর আগে দ্বিজাতি তত্ত্বটির উদ্ভাবক হলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮)। কারণটি ছিল ভাষা নিয়ে উগ্র হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতা। এমন সত্যটি চাপা পড়ার কারণ তত্ত্বটির ধারাবাহিকতার শেষান্তে ভারত ভাগের দায়ে জিন্নাহ ও মুসলিম লিগকে সাম্প্রদায়িকতার দায়ে অভিযুক্ত করায় এর মূল কারণটি পরবর্তী ও বর্তমান প্রজন্মের প্রায় সবারই অজানা।
মূলত হিন্দু ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘হিন্দু মেলা’ নামে একপ্রকার জাতীয় পুনরুত্থান প্রসঙ্গে দুর্গা শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের ‘দ্বিজেন্দ্র লাল রায় : জীবন ও সাহিত্য’ নামক বইয়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেÑ ‘১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল জনকিন সাহেবের বাগানে এ মেলার প্রথম অধিবেশন হয়েছিল। সত্যেন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রমুখ এই মেলার বিভিন্ন অধিবেশনের জন্য স্বদেশী গান লিখেছিলেন।’ এর ৯ বছর পরে ১৮৭৬ সালে ‘সঞ্জীবনী সভা নামে প্রতিষ্ঠা হওয়া আরেকটি স্বদেশিক সভা প্রসঙ্গে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তার রচনাবলী, প্রথম খণ্ডের ‘অতরণিকার’ দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘জ্যোতিদাদা এক গুপ্ত সভা স্থাপন করেছেনÑ একটা পোড়া বাড়িতে তার অধিবেশন, ঋগবেদের পুথি; মড়ার মাথার খুলি আর খোলা তলোয়ার নিয়ে তার অনুষ্ঠান’; রাজনারায়ণ বসু তার পুরোহিত, সেখানে আমরা ভারতÑ উদ্ধারের দীক্ষা পেলাম।’
কলিকাতায় ‘হিন্দু মেলা’ অনুষ্ঠানের ওই ১৮৬৭ সালে সাবজজ স্যার সৈয়দের বেনারসে বদলি হন যখন সেখানে ‘মুসলমানের ভাষা’ বলে উর্দু বর্জনের আন্দোলন শুরু হয়। যেহেতু তার বৈজ্ঞানিক সঙ্ঘ নামক প্রতিষ্ঠানে হিন্দু ও মুসলমানের যৌথ পরিচালনায় অনেক পাঠ্যপুস্তকের হিন্দি ও উর্দু অনুবাদ এবং উর্দু ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হতো দ্বিভাষিক দৈনিক পত্রিকা, সেহেতু হিন্দি ব্যতীত উর্দুতে প্রকাশনা বন্ধের দাবিতে তার বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয় তীব্র জনরোষ। ১৮৮২ সালে যখন সৈয়দ রাজপ্রতিনিধির বিধান পরিষদের সদস্য; তখনো শিক্ষা কমিশনে উর্দু ব্যবহারের কারণে তার বিরুদ্ধে হিন্দুরা তীব্র আপত্তি তোলেন। প্রথম বেনারসে পাওয়া মনোকষ্টে অসাম্প্রদায়িক স্যার সৈয়দ ১৮৭৫ সালে আলিগড়ে প্রতিষ্ঠা করেন মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল, যা ১৮৭৭-এ কলেজ এবং মৃত্যুর বেশ পরে তার স্বপ্নের ‘মুসলিম ক্যামব্রিজ’ বলে ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।
১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেস নামের রাজনৈতিক দলকে প্রতিরোধার্থে পরের বছর ২৭ ডিসেম্বর সৈয়দ আহমদ প্রতিষ্ঠা করেন অল ইন্ডিয়া মোহামেডান এডুকেশনাল কংগ্রেস। তৎসত্ত্বেও কংগ্রেস দলে সমর্থন লাভের প্রত্যাশায় তাকে দেয়া চিঠির প্রত্যুত্তরে ১৮৮৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অ্যালান অকটোভিয়ান হিউম ও উদ্যোগী তথা বম্বের হাইকোর্টের প্রথম ব্যারিস্টার বদরুদ্দিন তায়েবজির উদ্দেশে তিনি লিখেছিলেন, ‘জাতীয় কংগ্রেস নামে কী বুঝায়, তা আমি বুঝি না। এটা শুধু আমার সম্প্রদায়েরই নয়, ভারতের জন্যও ক্ষতিকর বলে মনে করি।’ তৎপরবর্তী ১৪ মার্চ মিরাটের জনসভায় তিনি আরো দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘ও ড়নলবপঃ ঃড় বাবৎু, ঈড়হমৎবংং রহ ধহু ংযধঢ়ব ড়ৎ ভড়ৎস যিধঃবাবৎ, ডযরপয ৎবমধৎফং ওহফরধ ধং ড়হব হধঃরড়হ.’ আকার ও গঠনে যাই হোক, তাদের প্রত্যেককেই আমি আপত্তিকর মনে করি, যারাই ভারতকে এক জাতি বলে মনে করেন।) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. জয়ন্তী মৈত্রের গঁংষরস চড়ষরঃরপং রহ ইবহমধষ, ১৮৫৫-১৯০৬, ঢ়ধমব-১৯২, ১৯৬, ২০৬ ধহফ ঘধৎবংয কঁসধৎ লধরহ'ং গঁংষরসং রহ ওহফরধ, অ ইরড়মৎধঢ়যরপধষ উরপঃরড়হধৎু, ঠড়ষ-১১, চ-১৭৬)
উর্দু বিরোধিতার কারণ : হিন্দু পবিত্র গ্রন্থের মূল ভাষা ছান্দস সত্ত্বেও আর্যদের সাহিত্যের ভাষা, সংস্কৃতকে ‘দেবভাষা’ বলে গণ্য করা হয়, যা থেকে উর্দু ছাড়াও উৎপন্ন হওয়া হিন্দি, মারাঠা, গুজরাটি ও বাংলা ভাষা লেখা হয় দেব নাগরী লিপিতে অর্থাৎ বাম থেকে ডানে এবং ছাদ বা মাত্রাযুক্ত অক্ষরে। ফার্সি শেখা কিছু হিন্দি ভাষাভাষী অন্য ভাষাভাষীদের সাথে মুসলমান শাসনামলের শুরু থেকে একত্রে সেনা ক্যাম্পে থাকায় সূচিত, এই ভাষার নাম উর্দু হওয়ার কারণ তুর্কি ভাষায় ‘উর্দু’র অর্থ ‘সৈন্য’ এবং এর পোশাককে উর্দি বলে। কিছু তুর্কি শব্দসহ ভাষাটি আরবি ও ফার্সি শব্দে সমৃদ্ধ। এর আলাদা বৈশিষ্ট্যে, হিন্দি ব্যাকরণ অভিন্ন রেখে আরবি বর্ণমালায় সেমিটিক লিপির ডান থেকে বামে লেখার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। তাই এর বিরোধিতায় এমনকি ১৯৪৭-এ উপমহাদেশ ভাগের পরই ভারতে প্রায় দুই কোটি মুসলমান ও হিন্দুর এই ভাষার ওপর উত্তর প্রদেশের স্কুলসহ সব দফতরে জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রায় ২০ বছর পরে প্রত্যাহার করে এটিকে অন্যতম জাতীয় ভাষা বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, তাজমহলের পরে ভারতকে মুসলমানের দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার ‘উর্দু গজল’ বলে ঊহপুপষড়ঢ়ধবফরধ ইৎরঃধহহরপধ. ঠড়ষ-১৭, চধমব-১৪৬-এ রয়েছে স্বীকৃতি।
ড. রফিউদ্দিন আহমদের ঞযব ইবহমধষ গঁংষরসং ১৮৭১-১৯০৬, ঢ়ধমব-১৩১ মতে, উপমহাদেশীয় মুসলমানের মধ্যে উর্দু ভাষাও অন্যতম বন্ধন বলে ১৯১০ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভারতের প্রখ্যাত সম্পাদক, রাজমোহন গান্ধীর ‘টহফবৎংঃধহফরহম গঁংষরস গরহফ’ নামক বইয়ের ১৫৪ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত, ১৯৪২ সালে জিন্নাহর জোরালো বক্তব্যটি হলো, ঞযব ফরভভবৎবহপব নবঃবিবহ ঐরহফঁং ধহফ ঃযব গঁংষরসং রং ফববঢ় ৎড়ড়ঃবফ ধহফ রহবৎধফরপধনষব. ডব ধৎব ধ হধঃরড়হ রিঃয ড়ঁৎ ড়হি ফরংঃরহপঃরাব পঁষঃঁৎব ধহফ পরারষরুধঃরড়হ, ষধহমঁধমব ধহফ ষরঃবৎধঃঁৎব, ধৎঃ ধহফ ধৎপযরঃবপঃঁৎব, ষবমধষ ষধংি ধহফ সড়ৎধষ পড়ফবং, পঁংঃড়সং ধহফ পধষবহফধৎ, যরংঃড়ৎু ধহফ ঃৎধফরঃরড়হং, ধঢ়ঃরঃঁফবং ধহফ ধসনরঃরড়হং .’ ভারত ভাগরোধে শেষ মুহূর্তেও কংগ্রেসের মীমাংসার চেষ্টা বিফল হওয়ার কারণ জিন্নাহর তীক্ষè যুক্তির অনমনীয়তা, যা তার বিরোধিতার হয়তো আরো একটা কারণ।
ইয়র্কের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক স্টিভেন আই উইলকিনসনের জবষরমরড়ঁং চড়ষরঃরপং ধহফ ঈড়সসঁহধষ ঠরড়ষবহপব, ঢ়ধমব-৪ মতে জিন্নাহর সে যুক্তিগুলো ছিল, গঁংষরসং... যধাব হড় ধহফ ও ৎবঢ়বধঃ, হড় ংুসঢ়ধঃযরবং রিঃয ঃযব ঐরহফঁং ... বি বধঃ ঃযব পড়;ি ঃযব ঐরহফঁ ড়িৎংযরঢ়ং রঃ. বি ধফসরঃ হড় ৎবষরমরড়ঁং রহবয়ঁধষরঃু, ঃযব ঐরহফঁ ষরাবং নু পধংঃব... বি পধহ হড়ঃ ষরাব ঃড়মবঃযবৎ, উল্লেখ্য, কলকাতা, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার লাহিড়ীর ‘ইবহমধষর গঁংষরস ঞযড়ঁমযঃ, ১৮১৮-১৯৪৭, চধমব-৪৫ মতে, কোরবানিতে বাংলায় গরু জবাইকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ায় ১৮৮২ সালে বোম্বেতে দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠা করেন ‘গো রক্ষনী সভা’ যা ক্রমে আন্দোলনে রূপ নিলে মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বিহার প্রভৃতি স্থানে দাঙ্গা হয়। উল্লেখ্য, গরু জবাইকে কেন্দ্র করেই ৭০০ বছর আগে ১৩৫০ সালের দিকে মুসলমানরা সিলেট দখল করেছিল। হ


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন

সকল