২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্নীতিতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

-

কিছু দিন পরপরই দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগবাণিজ্যর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, তাদের শক্তির উৎস কোথায়? মূলত তারা সাহস পান তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়দাতাদের কাছে থেকে। তবে ব্যতিক্রমভাবে কেউ পদ-পদবি থেকে পেয়ে থাকেন। এখন লাল, নীল, সাদা নানা রঙ-বেরঙের রাজনৈতিক দলে বিভক্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিছু হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যানার হাতে নিয়ে নেমে পড়েন। এ কথা ঠিক, রাজনীতি মন্দ বিষয় তা নয়; কিন্তু শিক্ষকদের পেশাভিত্তিক রাজনৈতিক বিষয়টি দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। যারা শিক্ষার্তীদের পাঠদান করাবেন তারাই যদি রাজনীতির সংস্পর্শে এসে পদ-পদবির লোভে আটকা পড়ে যান, দ্বন্দ্ব বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন তা হলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবেন? দেশে যেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে; তা সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার। শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেয়। বাস্তবে দেশের কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্রই যখন এমন, তখন অন্য খাতের দুর্নীতির কথা না বলাই ভালো।
সম্প্রতি প্রকাশিত এমসিসি ‘বাংলাদেশ স্কোর কার্ড-২০২০-২১’ শিরোনামের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও কোনোভাবেই উন্নতি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের (এমসিসি) মূল্যায়নে বাংলাদেশের অবস্থান। চলতি অর্থবছরে ২০২০-২১ দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অধিকারসহ ১৩টি সূচকে ফের রেড জোনে (খারাপ অবস্থান) নাম উঠেছে। এর আগের তালিকায় ২০১৯-২০ ছিল একই জোনে ১২টি সূচক। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে ফিসক্যাল পলিসি (রাজস্বনীতি)। আর ২০১৮-১৯ সালে ছিল ১১টি এবং ২০১৭-১৮ সালে ছিল সাতটি সূচক। ২০টি সূচকের মধ্যে অধিকাংশই লাল চিহ্ন হওয়ায় এবারো মিলল না যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের (এমসিএফ) বিশাল অঙ্কের অনুদান। মূলত স্কোর কার্ডের উন্নতির ভিত্তিতে এ ফান্ডে যুক্ত হয় বিভিন্ন দেশের নাম। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর চেষ্টা করেও এ ফান্ডে যুক্ত হতে পারছে না। উপরোন্তু স্কোর কার্ড উন্নতির ক্ষেত্রে অনেকটাই রাজনীতি যুক্ত রয়েছে।
এ ছাড়া ২৩ জানুয়ারি ২০২০ বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) তাদের বার্ষিক দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৯ প্রকাশ করেছে। সূচক অনুযায়ী ০-১০০ স্কেলে বাংলাদেশ ২৬ স্কোর পেয়েছে, যা ২০১৮-এর সমান। ১৮০টি দেশের মধ্যে শীর্ষ স্কোর, অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে কম, এমন দেশ থেকে গণনা করে বাংলাদেশ ১৪৬তম স্থান পেয়েছে, যা ২০১৮-এর চেয়ে তিন ধাপ ওপরে। সর্বনি¤œ স্কোর, অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি, এমন দেশ থেকে গণনা করে এবার বাংলাদেশ ১৪তম, যা ২০১৮-এর চেয়ে এক ধাপ ওপরে। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এবারো বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনি¤œ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনি¤œ। অর্থাৎ পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ আমাদের দেশের অবাধ দুর্নীতি। তাহলে অতি সহজেই বোঝা যাচ্ছে, আমরা দুর্নীতির কোন প্রান্তে অবস্থান করছি এবং দেশের উন্নয়নের বড় অন্তরায় কোনটি?
নিঃসন্দেহে দুর্নীতি! দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সাথে দুর্নীতির নিবিড় সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা যায়। আমাদের দেশে দুর্নীতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। দুদকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুর্নীতির মামলায় ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৯৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৩৯০ জনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। দুদকের মামলায় গত পাঁচ বছরে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের ৯৭ শতাংশের বেশি ছোট পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধি।
কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্নীতি থেকে বড় বড় ধরনের দুর্নীতিগুলোর অর্ধশতাধিক শতাংশই হচ্ছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ঘিরে। কেননা রাজনীতি এসব দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার অপব্যবহারে করে প্রকট কিংবা বড় ধরনের দুর্নীতি করতে সাহায্য করছে। এ জন্যই দেশীয় রাজনৈতিক অঙ্গন চাই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা সাথে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে। সরকারি পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির কোনো কাজকে কেবল তখনই রাজনৈতিক দুর্নীতি বলা হয়, যখন সেটি তার দাফতরিক কাজের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকে। এটি আইনের ছদ্মবেশে করা হতে পারে বা প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে করা হতে পারে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দুর্নীতির মধ্যে আছে ঘুষ, চাঁদাবাজি, চাটুকারিতা, স্বজনপ্রীতি, সঙ্কীর্ণতাবাদ, পৃষ্ঠপোষকতা, প্রভাব বিস্তার, রাজনৈতিক যোগাযোগভিত্তিক সুবিধালাভ ও অর্থ আত্মসাৎ। দুর্নীতির কারণে মাদক পাচার, হুন্ডি, মানবপাচার ইত্যাদির মতো সংগঠিত অপরাধ সহজ হয়। অনেক সময় রাজনৈতিক অঙ্গন আর দুর্নীতি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
এটি যেন একটি দেশীয় সংস্কৃতিতে কিংবা নয়া ট্রেন্ডে পরিণত হয়ে গেছে? সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। সুতরাং এমন নানা প্রাঙ্গণে রাজনীতিকে জড়ানো হয়ে থাকে অবাধে দুর্নীতি করার লক্ষ্যে। হোক তা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, খোদ রাজনৈতিক অঙ্গন কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিকাংশই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দ্বারা দুর্নীতি। তবে দুর্নীতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনের হস্তক্ষেপ একালে বেশি নাকি সেকেলে বেশি ছিল তা অনুমেয় নয়!
সমসাময়িককালে দেশে দুর্নীতির ভয়াবহতা বিরাজ করছে। প্রতি সপ্তাহে আমাদের দেশে শত কোটি টাকার হাতিয়ে নেয়ার বা স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগের মতো দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। পাশাপাশি রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এই দুর্নীতির পরিমাণ যেন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে দলগুলোর মধ্যে শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে যে উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা রয়েছেন তাদের ছাঁটাই করতে হবে। বরখাস্তই শেষ নয়; কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে তাদের। একই সাথে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিলে রাজনীতিতে অনেকাংশে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। সর্বোপরি শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও আপসহীনতা ও কার্যকর কঠোর বিচারব্যবস্থা। হ
ধষধসরহরংষধসহধংরস@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার অবৈধ গাড়ি কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগে বিভেদ শরীয়তপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার আবাদ মিরসরাইয়ে ৩ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আলুতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা ফরিদপুরের পদ্মাপাড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ২৩ এস্কেভেটর ও ৮ ট্রাক ফেলে পালালো বালুদস্যুরা বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা গলাচিপায় নির্বাচনী মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাটোরে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে শোকজ হোসেনপুরে গ্রামের গ্রাহকরা দিনে এক ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না ঈদগাঁওতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ৭ প্রার্থীকে জরিমানা গাজীপুরে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন

সকল