১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমেরিকানদের শিক্ষা নিতে হবে

-

প্রথমেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডির জন্য শুভ কামনা ও কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
তারা করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে ঘোষণা করার পর এক টুইটবার্তায় আমরা মানবাধিকার অক্ষুণœ রাখতে এবং এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি বলে আশাবাদ ব্যক্ত করি এবং ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমার টুইটে সাড়া দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাস চলে যাকÑ এটাই আমার চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা।’
ওই বিষয় নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক। ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার বিষয়ে, বিজ্ঞানকে সম্মান করা এবং বিরোধীদের সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে দেশের সব নিয়মকানুন, আদর্শ ও ঐতিহ্যকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের কাছে আমার এ জন্য প্রতিবাদ। আমরা যদি এ ধরনের আচরণের নিন্দা করি, আশা করি জাতিকে সুস্থ করার এবং পুনরুদ্ধারের একটি মুহূর্ত হিসেবে নির্বাচন শুরু করা যেতে পারে। তা হলে কি ওইগুলোকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে আমরা নিয়মবিধি ও শৃঙ্খলাকে সর্বোত্তমভাবে সমুন্নত করতে পারি না?
দ্বিতীয় পয়েন্টেও আমার সোজাসাপ্টা বক্তব্য হলো : চলুন আমরা প্রেসিডেন্টের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। এটাকে আমরা জেগে ওঠা বা সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের মহামারীতে এরই মধ্যে দুই লাখ আট হাজার মানুষকে হারিয়েছে। কারণ আমরা একটি দেশ হিসেবে ভাইরাসকে গুরুত্ব দেইনি। আমরা নতুনভাবে ভাইরাসকে অধিক হারে মানুষকে আক্রান্ত করতে দেখছি। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন এই সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা গত জুন মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। বহু মহামারী বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
পরীক্ষা বৃদ্ধি করার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নজরে আসছে। কিন্তু অপরটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং সারা বিশ্বের মানুষ এখন মহামারীতে শ্রান্তক্লান্ত।
আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে অস্স্থু হয়ে যাচ্ছি। আমরা মানুষের সাথে যোগাযোগ ও মেলামেশার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। আমরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে চাই। আমরা সামাজিক জীব। কিন্তু ভাইরাস আমাদের সেই সহজাত সামাজিকতাকে কেড়ে নিয়েছে। এখন অরিগনে আছি। দেখলাম, সবাই আমরা এখন বেশি অসতর্ক, বিশেষভাবে দেশের কিছু অংশে ভাইরাস মারাত্মকভাবে আঘাত হানেনি এবং সেখানকার মানুষ তাদের বন্ধু-বান্ধবদের হারায়নি অথবা দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বাইরে রেফ্রিজারেটর পার্ক করে রেখে লেনদেন করা হচ্ছে। এই শৈথিল্য মারাত্মক। দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ১ জানুয়ারির মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তিন লাখ ৬৩ হাজার মার্কিন নাগরিক মৃত্যুবরণ করবে। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দীর্ঘ ৪ বছরেরও বেশি সময়ের যুদ্ধে মোট যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৯ মাসের মহামারীতে তার চেয়েও অনেক বেশি আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যু হবে। ইনস্টিটিউট পরামর্শ দিচ্ছে, ৯৫ শতাংশ আমেরিকান কেবল মাস্ক পরলে (সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মতো) এখন থেকে বছরের শেষ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন। একটি দেশ হিসেবে এখনো আমরা স্মরণ করি, নাইন-ইলেভেনের হামলায় আমাদের প্রায় তিন হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। কিন্তু ইনস্টিটিউটের মডেল হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, ডিসেম্বরের শেষে আমরা প্রতিদিন এই সংখ্যক মানুষকে মহামারীর কারণে হারাব অর্থাৎ প্রতিদিন তিন হাজার আমেরিকান মৃত্যুবরণ করবে।
মহামারী বিশেষজ্ঞ ল্যারি ব্রিলিয়ান্ট যিনি তার ক্যারিয়ারের প্রাথমিক পর্যায়ে বসন্ত রোগ নির্মূলে সহায়তা করেছেন; তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, এই ভাইরাসও আমরা ধ্বংস করতে পারব। এই ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা দেখলাম, অন্যান্য দেশ সার্বজনীনভাবে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, পরীক্ষা, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং অন্যান্য উপায় উপকরণ ব্যবহার করছে।
দেশ হিসেবে আমাদের কাছে উপায় উপকরণ এবং সম্পদ রয়েছে; যে ক্ষেত্রে আমরা দুর্বল সেটা হলো, আমাদের ইচ্ছাশক্তি। টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক প্রস্তাব দেন যে, তিনি ও অন্যান্য পূর্বপুরুষ তথা দাদা-দাদীরা, যে ভাইরাস আমাদের অর্থনীতিকে অচল করে দেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চাইতে বরং মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করতেন। আমেরিকার প্রতিবাদকারীরা মাস্ক না পরেই স্টোরে ভাঙচুর করছেন এবং চিৎকার করে বলছেন, ‘আপনারা মাস্ক খুলে ফেলুন, এটা মিথ্যা। এটাকে খুলে ফেলুন।’
স্টোর ও রেস্টুরেন্টের চাকরিজীবীরা ক্লায়েন্টদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মাস্ক পরলে কয়েকটি দেশের বিশেষত পুরুষদের সাথে তুলনা করলে আমেরিকানরা মাস্ক পরার কারণে নিজেদের অপরাধী হিসেবে মনে করে। এক জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরাকে দুর্বলতার লক্ষণ বলে মনে করে। একইভাবে আমেরিকার কিছু মানুষ মনে করে, মাস্ক পরা না পরাটা তাদের স্বাধীনতা। মাস্ক পরা হচ্ছে শিষ্টাচার ও দায়িত্বশীল আচরণ। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যারা মাস্ক পরার নিন্দা করে তারাই আবার ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব বা দায়িত্বশীলতায় বিশ্বাস করে বলে দাবি করে। মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করা যে মদ্যপান করে গাড়ি চালনার মতোই, এখনো তারা তা উপলব্ধি করে না। প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লোক মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালায় এবং তারা বছরে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করে। এর ফলে আশপাশের এক লক্ষ লোকের জীবন নি®প্রভ ও বিবর্ণ হয়ে যায়। বেপরোয়া আমেরিকান যারা মাস্ক পরে না, পরবর্তী তিন মাসে তারা মৃত্যুবরণ করবে।
মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো মাস্ক পরিধান এড়িয়ে যাওয়ার মতোই বিপজ্জনক। এ ধরনের লোকদের বড় অংশই পুরুষ। মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর জন্য আমেরিকায় নারীদের চেয়ে তিন গুণ পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আমরা নিয়মবিধি পরিবর্তন করে ফেলতে পারি এবং মাতাল হয়ে কলঙ্কজনকভাবে গাড়ি চালানো অব্যাহত রাখি। সম্ভবত ট্রাম্পের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে প্রচণ্ড আঘাত এসেছে; তাতে মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন জাতীয় নিয়মবিধি তৈরি করার সুযোগ পাবে। এটি অসাধারণ ব্যাপার যে, এমনকি মাস্ক পরিধান করাকেও বিতর্কিত করা হচ্ছে। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী দমন করার জন্য ১০০ বছরেরও বেশি আগে মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা বিবেচনা করে মাস্ককে বিতর্কিত করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। (তখনো মাস্কের বিরোধিতা করা হয়েছিল) লানসেটের ১৭২টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে মুখের মাস্ক তাৎপর্যজনক হ্রাস করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে ধারণা জানা গেছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে মাস্ক পরার নির্দেশে মার্কিন জনসংখ্যার অর্ধেক মাস্ক পরলে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারে। এশিয়ায় তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, জাপান, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে। কারণ এসব দেশের মানুষ মাস্ক পরতে আগ্রহী। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, জনাকীর্ণ হংকং এ কোভিড-১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ জনের স্থলে মাত্র একজন মারা গেছে। সেখানকার সংক্রামক ব্যাধি বিশেষ ডা. কুউক ইয়াং ইউয়েন আমাকে বলেছেন, এর সহজ কারণ হচ্ছেÑ হংকংয়ের ৯৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরে থাকেন।
ডা: ইউয়েন বলেন, কোনো দেশের জনগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে কেবল চার সপ্তাহ মাস্ক পরলে এমনকি তারা টিকা ছাড়াই সেখানে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারবে। গত মে মাসে সত্যিকারের উৎসাহ ব্যাঞ্জক একটি ঘটনা ঘটেছে। মিসৌরীতে দু’জন নরসুন্দরের কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পরও তারা এবং তাদের ১৪০ জন কাস্টমার মাস্ক পরে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার পরও তাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।
মাস্ক আমাদের চাকরি এবং জাতীয় অর্থনীতিকেও রক্ষা করে। গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করে, জাতীয়ভাবে মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হলে সেটা লকডাউনের বিকল্প হতে পারে। লকডাউন বন্ধ করে কেবল মাস্ক পরলেই অর্থনীতিকে এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। প্রখ্যাত প্রজনন শাস্ত্রবিদ ও নোবেল বিজয়ী জোশুয়া লিডারবার্গ বলেছেন, নতুন রোগের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে জয়ী হবো। এখন পর্যন্ত কারোনা মোকাবেলায় আমরা ব্যর্থ হওয়ার কারণে দুই লাখ আট হাজার আমেরিকানকে হারিয়েছি। সুতরাং ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছেন। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক পরে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। হ
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর :
মুহাম্মদ খায়রুল বাশার


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

সকল