১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : করোনাকালে সাংবাদিকতা : পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট

-

সাংবাদিকতা মানেই হলো সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সৃষ্টির কল্যাণে লেখনীর মাধ্যমে সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালনই সাংবাদিকতা। নতুন কিছু জানার জন্য সদা কৌতূহলী, সত্য প্রকাশের জন্য সদা নির্ভীক যে সত্তা তার নাম সাংবাদিক। করোনাকালে সাংবাদিকতা হলো, এ পেশার মূল আদর্শ ও উদ্দেশ্য হাসিল করা। সাংবাদিকতার আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে একবাক্যে বলতে হবেÑ সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থেকে লেখনীর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে সৃষ্টির অকল্যাণকে দূর করার নামই সাংবাদিকতা। সৎ ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ আর সমাজবিরোধীদের দমন করাই হলো সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য।
করোনাভাইরাসের মহামারীর জন্য গোটা বিশ্বে এক ভয়াবহ ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চার দিকে শুধু লকডাউন, আইসোলেশন, আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংবাদ। আর এসব সংবাদ সংগ্রহ করে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছেন যে নির্ভীক সৈনিক তার নাম সাংবাদিক।
সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়। সাংবাদিকদের কোনো দিন নেই, কোনো রাত নেই, নেই কোনো মহামারী বা লকডাউন।
করোনাভাইরাসের মহামারীর জন্য গোটা বিশ্বে যে দীর্ঘকালীন জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা আগে কখনো হইনি। এ যেন অদৃশ্য শত্রুর বিরূদ্ধে এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যারা প্রাণবাজি রেখে প্রথম সারিতে থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে সাংবাদিক অন্যতম। লকডাউনে শহরের সবাই ঘরে থাকলেও শেষ মানুষটির ঘরে ফেরার খবর দেয়া অথবা পথে থাকা পথশিশুটির অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার খোঁজ নেয়ার জন্য পথে থাকতে হয় তাকে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যে কয়েকটি খাতের সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে সাংবাদিক অন্যতম। এরই মধ্যে অনেক সাংবাদিক ভাইবোন এতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং আমরা হারিয়েছি আমাদের অমূল্য সম্পদ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। কখনো খবর সংগ্রহের নেশায় আবার কখনো পেশার তাগিদে সাংবাদিকরা মুখোমুখি হচ্ছেন আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
সাংবাদিকতা পেশার এক অন্যতম মহান দিক মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়েছে এই মহামারীতে। আমাদের মানবিক সাংবাদিকরা কখনো ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন মানুষের দ্বারে, কখনো হাসপাতালের সামনে পড়ে থাকা স্বজনহীন অচেতনকে পানি পান করিয়েছেন আবার কখনো খাবার তুলে দিয়েছেন অনাহারে থাকা কোনো দিনমজুরের মুখে।
করোনার জন্য গোটা বিশ্বময় ব্যাপক হারে প্রাণহানির পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশেও প্রাণহানির মাধ্যমে দিতে হচ্ছে খেসারত, পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি, বসবাস করতে হচ্ছে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। বড় পরিতাপের বিষয়, এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে হারাতে হচ্ছে দেশবরেণ্য ব্যক্তি সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের লোক, উচ্চপদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকসহ ব্যবসায়ী বণিকদের। করোনাকালে এমন দুরবস্থার চিত্র ও ঘটনাবলি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক হিসেবে নিবেদিত প্রাণের অধিকারী হয়ে যারা অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন সেই সাংবাদিকরা অবশ্যই সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থেকে লেখনীর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে হবেন চিরস্মরণীয়।
দুনিয়ায় যত মহান পেশা আছে তার মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম। সব দুর্যোগ ও মহামারীতে ২৪ ঘণ্টা সামনের সারিতে থেকে নির্ভয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। আমাদের সাংবাদিকরা নিজেদের জীবন ও পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াইয়ের যে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তার যোগ্য কোনো প্রতিদান আছে কি না তা জানা নেই।
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সালাম ও ধন্যবাদ জানাই সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ আমাদের প্রথম সারির সব যোদ্ধাদের। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা তাদের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক শক্তি দান করুন। তাদের সামনে রেখেই ইনশা আল্লাহ আমরা একদিন এ যুদ্ধ জয় করব, হারিয়ে দেবো মহামারীকে। হ
লেখক : উপাধ্যক্ষ, রোকনউদ্দিন মোল্লা গালর্স ডিগ্রি কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement