১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সন্তানদের অর্থপূর্ণ সময় দেয়া

-

সোস্যাল মিডিয়ায় দুই-তিন মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ হয়তো অনেকেরই চোখে পড়েছে। ক্লাসরুমে একজন শিক্ষয়িত্রী খুব ছোট্ট একটি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?’ মেয়েটি উত্তর দিচ্ছে, ‘আমি বড় হয়ে মোবাইল ফোন হতে চাই!’ এমন রহস্যপূর্ণ এবং অপ্রত্যাশিত উত্তরে শিক্ষক খুব অবাক হলেন। এর কারণ জানতে চাইলে ওই মেয়েটি বলল, ‘আমার আব্বু-আম্মু বাসায় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে মোবাইল ফোন, আমাকে ভালোবাসে না। তারা মোবাইল ফোনই সবসময় হাতে অথবা কোলের মধ্যে রাখে; কিন্তু আমাকে কোলে নেয় না, আমাকে ফোনের কাছেও যেতে দেয় না। সবসময় আব্বু আম্মু মোবাইল ফোনের দিকেই তাকিয়ে থাকে, আমি ডাকলেও আমার দিকে তাকায় না অথবা বিরক্ত হয়ে একটু তাকায়। আর বেশি সময় তাকিয়ে থাকে মোবাইল ফোনের দিকে! তাই আমি বড় হয়ে যদি একটা মোবাইল ফোন হতে পারি, তাহলে তখন আব্বু-আম্মু ঠিকই আমাকে তাদের কোলে রাখবে, আমার দিকেই তাকিয়ে থাকবে, আমাকেই বেশি আদর করবে।’
মেয়েটির এই উত্তর শুনে ওই শিক্ষক পুরো হতভম্ব হয়ে গেলেন। মা-বাবার স্নেহ, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মনের ভেতরে কষ্ট নিয়ে থাকা ওই অবুঝ মেয়েটির এই সরল অনুভূতি ওই শিক্ষককেও নাড়া দিলো। কারণ, তিনি নিজেও স্কুল থেকে বাসায় গিয়ে নিজের সন্তানের সাথে যে আচরণ করেন, তার সাথেই মিল পেয়ে গেলেন মেয়েটির মা-বাবার আচরণের। মেয়েটি যেন সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো! ওই শিক্ষক ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত হতে শুরু করলেন।
আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারছি না, এই দৃশ্য বা চিত্রগুলোই এখনকার অপ্রিয় বাস্তবতা। কিন্তু এর ফল কোনোভাবেই ভালো হতে পারে না। এখনকার অনেক মা-বাবাই সাংসারিক কাজে হোক বা চাকরির ব্যস্ততায় হোক বা মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে হোক বা মার্কেটে ঘোরাঘুরিতে হোক বা অন্য কোনো সামাজিক ক্ষেত্রে হোক; এসব জায়গায় তারা অনেক সময় দিতে পারলেও নিজের আদরের সন্তানকে আর আলাদাভাবে একটু সময় দিতে পারছেন না! কিন্তু এটা যে নিজের পরিবারের জন্য বা নিজের সন্তানের জন্য কত বড় অপূরণীয় ক্ষতি, তার দীর্ঘমেয়াদি কুফল যে কত মারাত্মক; সেগুলো হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে যাচ্ছে অন্তত সেসব দেশগুলোর সেসব পরিবার, যারা শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত এবং নিজেদের সন্তানের ব্যাপারে উদাসীন। আমাদের দেশেরও অনেক পরিবারেই এখন ওই ‘খারাপ বাতাস’ ঢুকেছে এবং এখানেও তার কুপ্রভাব স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। মা-বাবা যদি সন্তানকে সময় না দেন, তাহলে ওই সন্তান কোথাও না কোথাও তো তার সেই সময়টি ব্যয় করবেই। অনেক মা-বাবা নিজের থেকেই সন্তানকে এমন সব ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে দেন, মিশতে দেন, ঘুরতে দেন, যেখান থেকে তার ভালো কিছু শিখে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং নিজেই বিপথে চলে যাওয়ার, নষ্ট হয়ে যাওয়ার, বখে যাওয়ার শতভাগ আশঙ্কা আছে। ছোট শিশুরা তো সবসময় অনুকরণপ্রিয়। তারা যা দেখে, যা শোনে, সেটিই নিজের মধ্যে রপ্ত করে। সন্তানকে শুধু বাইরে বের না হতে দিলেই সমস্যার পুরো সমাধান হবে না। বাড়ির ভেতরেও সন্তানের সাথে আচরণে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। কারণ, যে মা-বাবা অত্যন্ত সামাজিক, সে পরিবারের সন্তান সাধারণত সামাজিকই হয়। ধর্মীয় পরিবেশে বড় হওয়া কোনো সন্তান সাধারণত ধার্মিক হয় অথবা ধর্ম বিদ্বেষী হয় না। পরোপকার করতে দেখা কোনো পরিবারের সন্তান পরোপকারী হয়। মা-বাবাকে ঝগড়া করতে দেখা, গালি দিতে দেখা সন্তানরা বেশি শেখে ঝগড়াঝাটি, গালি দেয়া শেখে।
এখন অনেক পরিবারের অনেক সন্তানই মা-বাবার সঙ্গ না পেয়ে সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। একজন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ বলেছেন, ‘আপনি আপনার সন্তানকে এক লাখ টাকার একটা পুরস্কার কিনে দিয়েও ততটা খুশি করতে পারবেন না, যতটা খুশি তাকে করতে পারবেন, তার সাথে কয়েক ঘণ্টা সুন্দরভাবে সময় ব্যয় করে।’
সম্প্রতি বোরকা পরিহিত এবং ব্যাট হাতে, বল হাতে এক মা তার সন্তানকে খেলার সাথী হিসেবে খেলার মাঠে একটু সঙ্গ দিয়েছেনÑ এই দৃশ্যটি সারা দেশের মানুষ দেখেছেন এবং বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। ওই মা প্রশংসিত হয়েছেন। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন খুব অল্প মানুষ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যারা সমাজ-সংসার বিবর্জিত এবং চিহ্নিত ও বিচ্ছিন্ন বলা যায়। ওই মেয়েটির এত প্রশংসিত হওয়ার যতগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি তার সন্তানকে সময় দিয়েছেন। কেউ যদি তার নিজের সন্তানের সাথে খেলার সাথীর ভূমিকায়, বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই প্রশংসিত হবেন।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সন্তানদের জন্য মা-বাবার অবদান এত বেশি যে, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে নিজের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত কোনো সন্তান যদি সারা জীবনও তার মা-বাবার সেবা-যতœ করে যায়, তবুও সেটি সেই মা-বাবার অবদানের তুলনায় খুব কমই। কিন্তু সন্তানের সেই বুদ্ধিটুকু হওয়ার সময়টা পর্যন্ত দায়িত্ব মা-বাবারই। সে দায়িত্বে কোনো অবহেলা থাকলে সেই সন্তানও ঠিক মতো মা-বাবার সেবা করার শিক্ষাটা গ্রহণ করতে পারবে না। সন্তানকে শিষ্টাচার শেখানো, তাকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা, তাকে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা শিখিয়ে দেয়া, সর্বোপরি সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে না তোলা পর্যন্ত তাদের পেছনে মা-বাবাকেই সময় দিতে হবে। হ
লেখক : প্রধান নির্বাহী, কুষ্টিয়া প্রকাশন
ইমেইল : rabbulislam@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল