১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি প্রসঙ্গে

-

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। কিন্তু দেশের বেসরকারি শিক্ষকেরা দীর্ঘ দিন ধরে বৈষম্যের শিকার। অথচ তাদের মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ এবং সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন দেশের শিক্ষাবিদরা। 

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বড় অংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেবা দান করে আসছেন। বেশির ভাগ শিক্ষক বেসরকারি হওয়া সত্ত্বেও তারা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত। 

বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদরাসা-কলেজের শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। ফলে অন্য জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকতে হয়। স্থানীয়ভাবে নিয়োগদানের কারণে তাদের বদলি কঠিন ছিল; কিন্তু সরকার বর্তমানে কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, বিভাগের মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেখানে পদ শূন্য রয়েছে; সেখানকার যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক বদলির সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রথমে বদলি হতে আগ্রহী আবেদনকারী শিক্ষকদের মধ্যে শূন্যপদ পূরণ করতে পারে কমিশন। এরপর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্র্ণদের মধ্য থেকে অবশিষ্ট শূন্যপদ পূরণ করা যেতে পারে। এর ফলে অন্য জেলায় কর্মরত শিক্ষকরা নিজের বাড়িতে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি অন্য জেলায় থাকতে যে বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, সেটি থেকেও স্বল্প বেতনের শিক্ষকরা রেহাই পাবেন। 

গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, বৈষম্য দূরীকরণ ও শিক্ষাব্যবস্থার মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওই কমিটি নীতিমালা সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করে থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষকসমাজ সাধুবাদ জানায়। বেসরকারি শিক্ষকদের প্রত্যাশা, যৌক্তিক ও মানসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলিব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হবে। 

এমপিও নীতিমালা-সংশোধন হতে যাচ্ছে। শিক্ষকসমাজের প্রত্যাশা, এ নীতিমালার মাধ্যমে তাদের দৈন্য, সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্যের অবসানের দরজা খুলবে। এমপিও নীতিমালা ১৯৯৫ থেকে এমপিও নীতিমালা ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৮-এর বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ধারায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলিব্যবস্থার নির্দেশনা থাকলেও আজ পর্যন্ত বদলিব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষকসমাজ হতাশায় ভুগছেন। 

দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলিব্যবস্থা চালু করা একান্ত জরুরি বলে মনে করেন পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক। শিক্ষার মান বাড়াতে বদলি ব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই। ‘ দৈনিক শিক্ষার বার্তা’ সূত্রে জানা যায়, সরকার ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বদলিব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলিপদ্ধতি চালু করতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও নীতিমালা সংশোধন ও পর্যালোচনা কমিটির প্রতি অনুরোধ করেছেন দল ও মত নির্বিশেষে সব পর্যায়ের শিক্ষক সংগঠন। বদলিব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকদের মধ্যে গতিশীলতা আসবে, নতুন পরিবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষক পেলে উপভোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দীর্ঘ দিন একই জায়গায় একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের ফলে শিক্ষকদের মধ্যে যে একঘেয়েমি তৈরি হয় তা দূর হবে। শিক্ষকরা স্থানীয় কোন্দলে জড়াতে পারবেন না এবং শিক্ষকদের এসিআর বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলিব্যবস্থা চালু হলে তাদের প্রাইভেট, কোচিং, গাইড ও নোটবাণিজ্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করায় শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির গড়ে ওঠা চক্র বদলির কারণে ভেঙে যাবে, ফলে শিক্ষার ও শিক্ষকের মান বাড়বে। অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নীতিবহির্ভূতভাবে তাদের চাকরিচ্যুতি, বহিষ্কার ও ম্যানেজিং কমিটির নির্যাতন কমে যাবে। এতে ভালো শিক্ষকদের কদর বাড়বে, মেধাবী প্রার্থীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষকতায় অবশ্যই ভালো শিক্ষক আসবেন। ভালো-মন্দ শিক্ষক বদলির মাধ্যমে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার সব স্তরে শিক্ষার মান সমন্বয় হবে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মান প্রায় সমান হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলি করা সহজ হবে। এতে তাদের কর্মতৎপরতা বাড়বে। পাশাপাশি আন্তঃযোগাযোগও বাড়বে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদানবিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহায়ক হবে। বদলিব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সব স্তরের শিক্ষকের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে ইনডেক্সধারী বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করতে পারে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করে সহজে বদলি হতে ইচ্ছুক শিক্ষকদের সমপদে বদলির ব্যবস্থা করা যায়। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শূন্যপদের তালিকা নিয়ে ইনডেক্স অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠান পছন্দের তালিকায় দেয়ার সুযোগ, স্বামী-স্ত্রীর কাছাকাছি প্রতিষ্ঠানে বদলি ও নিজ এলাকায় বদলির সুযোগকে অগ্রাধিকার দেয়া হলে সন্তান, বাবা-মায়ের সান্নিধ্য এবং বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের সন্তানের সান্নিধ্য পাওয়ার পথ সুগম হবে। হ

লেখক : উপাধ্যক্ষ, রোকনউদ্দিন মোল্লøা গার্লস ডিগ্রি কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ

 


আরো সংবাদ



premium cement