২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : তথ্যপ্রযুক্তির নামে কী হচ্ছে

-

সুশিক্ষা অর্জনই হচ্ছে পৃথিবীতে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন আগে গাছের পাতা পুড়িয়ে কালি করে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে কলাপাতায় লেখা হতো। প্রযুক্তির যুগে পুরো বিশ্বই এখন হাতের নাগালে। আর তা সম্ভব হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের কারণে। তথ্যপ্রযুক্তি দেশকে উন্নত করছে; কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার সবাই করতে পারছে কি? সরকার প্রযুক্তি খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। এর ফল আশানুরূপ নয়। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, বিদ্যালয়ে এমএমসি ক্লাস প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। এত বছর প্রশিক্ষণ ও বাজেট প্রণয়নের পরও ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এখনো ভালোভাবে স্যাররা ক্লাস নিতে অভ্যস্ত নন। কারণ অন্য শিক্ষকরা তা কভার করতে পারছেন কিন্তু বয়োবৃদ্ধ একজন শিক্ষক শুধু কম্পিউটার বন্ধ ও খুলতে পারছেন। আমাদের দেশ প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাক সবাই চায়, কিন্তু ইউরোপের সাথে তালমিলিয়ে বা টেক্কা দিয়ে নয়। শুধু বৈদেশিক রেমিট্যান্স আর অর্থনীতি ভালো হলেই শিক্ষা খাতে উন্নয়ন হবে, তা ভাবা ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, সৃজনশীল প্রস্তুতি সব বিষয়ে প্রয়োগ তালগোল পাকানো মাত্র। আদেশ বস্তুবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের অবস্থান, কাজ ও শিক্ষার সমীক্ষা তথা পুরো জাতির ভারটা ফিল্ডে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারাই ভালো জানেন। অতীত মানসিকতার দৃষ্টিভঙ্গির ইতি ঘটছে সত্য, কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি, তা আগে ভেবে দেখতে হবে। স্বল্পসময়ে অল্প অভিজ্ঞতা আর অতি উৎসাহী মানসিকতা আমাদের ক্ষতিই বয়ে আনবে। তৃতীয় শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে গরুর দেখাদেখি ব্যাঙ ঘাস খাওয়া শুরু করেছিল; সে গরুর মতো মোটা হতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেট ফুলে আকাশে উড়ছিল। আমাদের এমন অবস্থা যেন না হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ তথ্যপ্রযুক্তির কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সরকারকে সামান্য কিছু কর দিয়ে জনগণকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে ও করছে। ডাটা এমবি ব্যবহার, কলড্রপ, নেটওয়ার্ক আপ-ডাউন, নেটওয়ার্ক গতি ধীর করে রাখা, স্ক্র্যাচকার্ডে শর্তগুলো ছোট করে লেখা, সাবানের বিজ্ঞাপনের মতো ঘনঘন খোলস পাল্টিয়ে বিভিন্ন সিম বের করা ও মোবাইলের আকৃতি পরিবর্তন করা। হুজুগেই আমরা বেশি বিশ্বাসী। দেশের ১৬ কোটি মানুষের সবার হাতেই এখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেন? আমরা কি ইউরোপ হয়ে গেছি? পাঁচ টাকা রোজগার করে ১০ টাকার ‘ফুটানি’ দেখানোর চিন্তা করি। জমিতে বদলা দিয়ে বিড়ি টেনে বিদেশ গিয়ে সেখান থেকে এসে বেনসন সিগারেট টানি। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে কিছু ব্যবহার ও বিনোদনের তকমা দিয়ে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ শোষণ করে নিচ্ছে। আর এখন সবাই আমরা ‘জিরো থেকে হিরো’ ভাব। হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, কানে হেডফোন; সাপোর্টিং হিসেবে আছে ইমো, ভাইভার, মেসেঞ্জার, ফেসবুকÑ আরো কত কী। সঠিক ব্যবহার সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য, কিন্তু এগুলোর অপব্যবহারে নীতি-নৈতিকতার হানি, বাকস্বাধীনতা হরণ, ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অন্যায় অপরাধ ও সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়া; নৈতিক শৃঙ্খল ও পরকীয়া ইত্যাদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আরো উসকে দিচ্ছে। বহু নারী পুরুষের সংসার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বেড়ে যাচ্ছে অপরাধ; কমে যাচ্ছে সংসারের প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা। কোম্পানিগুলোও তাদের মাদারবোর্ড ও মোবাইলের ডিসপ্লে ও কভারটা একটু পরিবর্তন করেই বলে দিচ্ছেÑ আরো এগিয়ে যাও। শেষ পর্যন্ত সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছি। জাতি হিসেবে আমরা সচেতন নই। আমরা সবসময় সব ক্ষেত্রে আবেগে গা ভাসাই, এখানেই আমাদের ভুল। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহারে বয়স, পেশা, আয় ইত্যাদি আমলে নিয়ে আইন করে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। নতুন প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বাউণ্ডুলে স্বভাব পরিহার করে আমরা সবাই সচেতন হই, সাশ্রয়ী জীবনে ফিরে আসিÑ এই হোক আজকের অঙ্গীকার।
ওয়াছিরুল হাসান (সুমন)
সহকারী প্রধান শিক্ষক, বদরের নেছা উচ্চবিদ্যালয়
দাগনভূঞা, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement